কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনে হবে তথ্য কেন্দ্র

পর্যটন খাত আরো বেগবান করতে চায় সরকারি দুই সংস্থা

দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন হয়েছে ১১ নভেম্বর।

দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন হয়েছে ১১ নভেম্বর। দেশের প্রধান পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন যোগাযোগ স্থাপন চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চল কক্সবাজারের অর্থনীতিকে কয়েক ধাপ এগিয়ে নেবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি সমৃদ্ধ হবে দেশের পর্যটন খাত। সে গতিকে আরো বেগবান করতে কাজ করছে ট্যুরিজম বোর্ড পর্যটন করপোরেশন। কক্সবাজারে পর্যটকদের সহায়তায় আইকনিক রেল স্টেশনে তথ্য সহায়তা কেন্দ্র খুলতে আবেদন করেছে সংস্থা দুটি।

পর্যটন করপোরেশনের তথ্যমতে, প্রতি বছর ১০ লাখের বেশি পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণ করে। রেল স্টেশনের লক্ষ্য উদ্দেশ্যের সঙ্গে সমন্বয় রেখে ট্যুরিস্টদের সেবা দেবে প্রস্তাবিত তথ্য কেন্দ্র। এছাড়া রেল স্টেশনে মানসম্মত স্ন্যাকস কর্নার স্থাপন করা হবে। ইনফরমেশন সেন্টার থেকে ভ্রমণবিষয়ক পরামর্শ, পর্যটক তথ্যভাণ্ডার তৈরি, বিভিন্ন ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেল এজেন্ট হোটেল-মোটেল-রেস্টুরেন্টের সঙ্গে পর্যটকদের যোগাযোগ স্থাপন, পর্যটকদের নিরাপদে ভ্রমণ নিরাপত্তা বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হবে। কক্সবাজারে ট্রেন সার্ভিস চালুর পর পর্যটকের সংখ্যা বাড়তে থাকলে ট্যুরিজম বোর্ড পর্যটন করপোরেশনের কার্যক্রম আরো সম্প্রসারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. রাহাত আনোয়ার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের পর্যটন নগরী হিসেবে পরিচিত কক্সবাজার। সমুদ্রসৈকতের অপরূপ সৌন্দর্যের টানে প্রতি বছর পর্যটকরা আসেন। রেল যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে পর্যটকরা এখন কম খরচে কক্সবাজারে যাওয়া-আসা করতে পারবেন। রেলের কারণে কক্সবাজারে পর্যটক সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বাড়বে। কক্সবাজারের পর্যটন খাত বিকাশের প্রথম থেকেই পর্যটন করপোরেশন শৈবাল, প্রবাল, উপল লাবণী নামে চারটি মোটেল পরিচালনা করছে। নতুন যোগাযোগ উদ্যোগের ফলে বর্ধিষ্ণু পর্যটন খাতকে বেগবান করতে তথ্য সহায়তা কেন্দ্র খোলা জরুরি। আমরা কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনে স্পেস বরাদ্দের জন্য এরই মধ্যে আবেদন করেছি।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনটি ২৯ একর জমির ওপর নির্মিত। ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্টেশনটির ছয়তলার মোট আয়তন লাখ ৮৭ হাজার ৩৫ বর্গফুট। স্টেশনটির প্রতিদিন ৯২ হাজার পর্যটক বা যাত্রীসেবা দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে। রেলওয়ের টিকেটিং কার্যক্রম ছাড়াও শপিং মল, হেল্প সেন্টার, প্রার্থনা কক্ষ, স্পোর্টস জোন, ওয়াশরুম, রেস্টুরেন্ট, আবাসিক হোটেল, অফিস, সেমিনার কক্ষসহ বিভিন্ন বাণিজ্য সুবিধা রাখা হবে। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্টেশন ভবনে একাধিক লিফট, চলন্ত সিঁড়ি ছাড়াও পর্যটকদের শ্রেণী অনুযায়ী রেস্টরুম থাকবে। এছাড়া স্টেশনে লকার্স সার্ভিস, স্বল্প মূল্যে গোসল টয়লেট সুবিধাসহ পর্যটকবান্ধব একাধিক সুবিধা রাখবে রেলওয়ে। মূলত পর্যটকদের ভ্রমণসংক্রান্ত সুবিধার জন্য বেসামরিক বিমান পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনে তথ্য সেন্টার খোলা হচ্ছে, যা দেশের রেলওয়ে স্টেশনগুলোর মধ্যে প্রথম বলে জানিয়েছেন রেলওয়েসংশ্লিষ্টরা।

এদিকে চলতি বছরের জুলাইয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন পর্যটন মন্ত্রণালয় আইকনিক রেল স্টেশনে স্পেস কক্ষ বরাদ্দের আবেদন করেছে। স্টেশনে আসা দেশী বিদেশী পর্যটকদের নিয়মিত পর্যটনসংক্রান্ত তথ্য সেবা দিতে তথ্য কেন্দ্র খুলতে চায় মন্ত্রণালয়ের অধীন দুটি সংস্থা। এর আগে ট্যুরিজম বোর্ড থেকে গত ১১ জুলাই পর্যটন করপোরেশন থেকে জুলাই আইকনিক স্টেশনে তথ্য কেন্দ্র খোলার বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে স্টেশনে ট্যুরিজম বোর্ডের জন্য ৪০০ বর্গফুটের উন্মুক্ত স্থান পর্যটন করপোরেশনের জন্য ৪৫০ বর্গফুটের একটি কক্ষ বরাদ্দের আবেদন করেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব . মো. মঈন উদ্দিন। গত ২৬ জুলাই রেলওয়ে মহাপরিচালককে দেয়া ওই চিঠিতে আইকনিক স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন আসা-যাওয়া পর্যটকদের তথ্য সরবরাহ, পর্যটন সুবিধা ন্যায্যমূল্যে খাবার পরিবেশনে এসব স্পেস কক্ষ বরাদ্দের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজমুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট কাউন্টার ছাড়াও নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। যার কারণে পর্যটন করপোরেশন ট্যুরিজম বোর্ড থেকে তথ্য সেন্টারের জন্য আবেদন করা হয়েছে। রেলওয়ে পর্যটকদের সুবিধা, সহায়তা তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আবেদনটি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়েছে। স্টেশনের শতভাগ কাজ শেষ হওয়ার আগেই বিষয়ে নিয়ম অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট নথিপত্রে দেখা গেছে, বেসামরিক বিমান পর্যটন মন্ত্রণালয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ আগস্ট রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে ঘুনধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়াল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পের চিঠি পরিচালককে দেয়া হয়। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক (ভূসম্পত্তি) সায়মা বিনতে হুসাইন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রকল্প এখনো শেষ না হওয়ায় অধিগ্রহণকৃত জমি রেলওয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। এর পরও পর্যটনকে সহায়তার স্বার্থে চলমান প্রকল্পের পরিচালকের সঙ্গে আলোচনা বাংলাদেশ রেলওয়ে ভূসম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২০-এর আলোকে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়।

আরও