মালাক্কা প্রণালিতে বাইপাস নির্মাণ

২৮০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ চায় থাইল্যান্ড

বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত সমুদ্রপথ মালাক্কা প্রণালিতে বাইপাস (সড়ক ও রেলপথ) নির্মাণ করতে চায় থাইল্যান্ড।

বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত সমুদ্রপথ মালাক্কা প্রণালিতে বাইপাস (সড়ক ও রেলপথ) নির্মাণ করতে চায় থাইল্যান্ড। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোয় দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন এ পরিকল্পনার কথা জানান। ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে পরিবহন খরচ ও সময় কমিয়ে আনতে ২৮০০ কোটি ডলারের প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটি। খবর ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে।

স্রেথা থাভিসিন বলেন, ‘‌প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে শিপিং টাইম গড়ে চারদিন ও খরচ ১৫ শতাংশ কমে আসবে। ২০৩০ সালের মধ্যে মালাক্কা প্রণালিতে পণ্য পরিবহন ধারণক্ষমতা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে নতুন প্রকল্প পণ্যের নির্বিঘ্ন প্রবাহ নিশ্চিত করবে।’

সরকারি তথ্যমতে, দেশটির দক্ষিণ উপদ্বীপের উভয় পাশে সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হবে। সঙ্গে যুক্ত হবে মহাসড়ক ও রেললাইন। ‘ল্যান্ডব্রিজ’ শিরোনামে প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। মালয় উপদ্বীপের সবচেয়ে সরু অংশ ক্রা ইস্থমুস খনন করা হবে। ১০০ কিলোমিটারের এ সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশটির কয়েক দশকের পুরনো প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।

থাই প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন জানান, বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ বাণিজ্যপণ্য পরিবহন হয় মালাক্কা প্রণালি দিয়ে। আগামী দিনে নৌপথটি আরো ব্যস্ত হয়ে উঠবে। বাড়বে শিপিং ব্যয়। এছাড়া এ পথে বছরে গড়ে ৬০টির বেশি সামুদ্রিক দুর্ঘটনা ঘটে।

তিনি বলেন, ‘‌ল্যান্ডব্রিজটি পরিবহন সুবিধার জন্য একটি অতিরিক্ত রুট হবে। আর মালাক্কা প্রণালির সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ বিকল্পও হবে। একই সঙ্গে এটি হতে যাচ্ছে সাশ্রয়ী, দ্রুতগতি ও নিরাপদ রুট। পশ্চিমের বন্দরটি ১ কোটি ৯৪ লাখ টন ইউনিট কার্গো হ্যান্ডেল করার সক্ষমতা রাখবে। পূর্ব দিকের বন্দরের সক্ষমতা ১ কোটি ৩৮ লাখ টন ইউনিট, যা মালাক্কা বন্দরের মোট কার্গোর প্রায় ২৩ শতাংশ।

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আরো জানান, সম্প্রতি তিনি প্রকল্পটি চীন ও সৌদি আরবের বিনিয়োগকারীদের কাছে তুলে ধরেছেন। এটি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন হলে ২ লাখ ৮০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এছাড়া থাইল্যান্ডের বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করতে সাহায্য করবে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি গত বছর ২ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি করেছে। ২০২৩ সালের জন্য ২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি প্রসারণ হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে।

দেশটির সরকারি কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার লক্ষ্যে কাজ করছে থাইল্যান্ড। বন্দর ও সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো নির্মাণে স্থানীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগ করতে পারবেন বিদেশী সংস্থাগুলোও। এক্ষেত্রে ৫০ শতাংশের বেশি মালিকানা নেয়ার অনুমতি পাবেন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা।

থাই পরিবহন, ট্রাফিক নীতি ও পরিকল্পনা অফিস অনুসারে, আন্দামান সাগরের রনং ও থাইল্যান্ডের উপসাগরের চুমফোনের গভীর সমুদ্রবন্দরগুলোর জন্য ৬৩ হাজার কোটি বাথ খরচ হতে পারে।

স্রেথা থাভিসিন বলেন, ‘ল্যান্ডব্রিজ বাণিজ্যিক ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বিনিয়োগের একটি অভূতপূর্ব সুযোগ করে দিয়েছে, যা প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরকে সংযুক্ত করে। একই সঙ্গে পূর্বের মানুষকে পশ্চিমের সঙ্গে যুক্ত করে।’

তিনি জানান, চলতি সপ্তাহ এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশনের শীর্ষ সম্মেলনে সম্ভাব্য মার্কিন বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি উপস্থাপন করা হবে। প্রকল্পে আগ্রহী মার্কিন সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে, এসএসএ মেরিন ইনকরপোরেশন, পোর্ট অব লং বিচ, ওরাকল করপোরেশন ও ওয়েবটেক।

কয়েক দশক ধরে মালাক্কা প্রণালি বাইপাসের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে আসছে থাইল্যান্ড, যা দেশটির সবচেয়ে সংকুচিত চ্যানেল প্রসারিত করবে এবং ভ্রমণ দূরত্ব প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে। তবে পরিবেশগত উদ্বেগের কারণে প্রস্তাবটি বেশ কয়েকবার ভেস্তে গেছে।

আরও