উন্নয়নশীল দেশের কাছে চীনের পাওনা ১.১ ট্রিলিয়ন ডলার

দুই দশকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে ঋণ দিয়েছে চীন। এর মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছেই পাওনা ১ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ডলার।

দুই দশকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে ঋণ দিয়েছে চীন। এর মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছেই পাওনা ১ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ডলার। সম্প্রতি পরিচালিত এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। তথ্যানুযায়ী, ঋণগ্রহীতাদের অধিকাংশই এখন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। যে কারণে বিপুল পরিমাণ অর্থ পরিশোধ বাকি রয়েছে। খবর সিএনএন।

ভার্জিনিয়ার উইলিয়াম অ্যান্ড মেরির গবেষণা ল্যাব এইডডেটার তথ্যানুযায়ী, চীনে নির্ধারিত সময়ের পর জরিমানাসহ ঋণ পরিশোধের হার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এছা্ড়া দেখা যায়, চীনের ৮০ শতাংশের বেশি ঋণদাতা বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আর্থিকভাবে সহায়তা করছে। দীর্ঘ সময় ধরে উন্নয়নশীল দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে বেইজিং অর্থ দিয়ে আসছে। এগুলো চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রস্তাবিত বেল্ট অ্যান্ড রোড পরিকল্পনার অংশ। এক দশক আগে এটি চালু করা হয়।

লাতিন আমেরিকা থেকে শুরু করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সড়ক, আকাশ ও রেলপথ যোগাযোগ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে অর্থায়ন করেছে চীন। এর মাধ্যমে ঋণগ্রহীতা দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। অর্থায়নের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে বেইজিংয়ের কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়নও হয়েছে। এতে চীন বড় ঋণদাতার উপাধি যেমন পেয়েছে তেমনি দায়িত্বজ্ঞানহীন ঋণ দেয়ার অভিযোগও এসেছে। এইডডেটার তথ্যানুযায়ী, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে চীনের সরকারি পর্যায় থেকে দেয়া ঋণের প্রায় ৫৫ শতাংশ পরিশোধকালীন পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতিতে থাকা উচ্চ সুদহার, ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে শ্লথগতি ঋণ পরিশোধে বাধা তৈরি করছে।

এক সাক্ষাৎকারে এইডডেটার নির্বাহী পরিচালক ব্র্যাড পার্কস জানান, ২০১৩ সালে যখন বেল্ট অ্যান্ড রোড পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়, তখনই অধিকাংশ ঋণ দেয়া হয়েছিল। এর সঙ্গে ছয় থেকে সাত বছরের গ্রেস পিরিয়ড দেয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধে সক্ষম না হলে গ্রেস পিরিয়ড দেয়া হয়ে থাকে। এরপর মহামারীর কারণে গ্রহীতারা আরো দুই বছর সময় পায়।

তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন। আগে চীন বিশ্বের অন্যতম ঋণদাতা হিসেবে পরিচিতি পেলেও এখন সবচেয়ে বড় ঋণ সংগ্রহকারীর খেতাব পেতে যাচ্ছে।’

২০০০-২১ সালের মধ্যে মধ্য ও নিম্ন আয়ের যেসব দেশ সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ঋণ নিয়েছে তাদের ওপর জরিপ পরিচালনা করেছে এইডডেটা। এর পরিমাণ ১ দশমিক ৩৪ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি। গবেষকরা সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ব্যাংক অব ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টের ঋণদাতাদের প্রতিবেদনকেও তথ্য হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তারা জানান, উন্নয়নশীল দেশের কাছ থেকে চীন ১ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন থেকে সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার পাবে।

এইডডেটা জানায়, ২০০৮ সাল পর্যন্ত বেইজিংকে ঋণগ্রহীতা ১০টির বেশি দেশের সঙ্গে কাজ করতে হয়নি। কিন্তু ২০২১ সাল নাগাদ এ সংখ্যা ৫৭ ছাড়িয়ে গেছে। এর মাধ্যমে চীনের ঋণ দেয়ার কার্যক্রমে পরিবর্তন আসছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের মাধ্যমে চীন যে সুনাম কুড়িয়েছে, সেটি এখন বিপরীতমুখী। তবে এসব কারণে চীনা ঋণের পরিমাণ কমছে না। চীন বিশ্বের উন্নয়ন অর্থায়নে একক বৃহত্তম সরকারি উৎস হিসেবে শীর্ষে রয়েছে। এইডডেটার তথ্যানুযায়ী, মহামারীর শুরুতে উন্নয়নশীল বিশ্বে চীনের সামগ্রিক অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি অনেকটা কমেছে। ২০১৬ সালে এ অর্থায়নের পরিমাণ যেখানে ১৫ হাজার কোটি ডলারের কাছাকাছি ছিল, ২০২০-এ তা ১০ হাজার কোটিতে নেমে এসেছে। ২০১৪ সালের পর এটি প্রথম হ্রাস।

আরও