টানেলের ভেতরে প্রাধান্য পেয়েছে দেশীয় উপকরণ। সেগমেন্ট, ডেকোরেটিভ বোর্ড, লাইট, ফ্যান, টেলিফোন, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা, পাথর, ফায়ার প্রুফ বোর্ডসহ বিভিন্ন উপকরণ বিদেশ থেকে আনা হলেও কাঠামো নির্মাণে ব্যবহার হয়েছে বাংলাদেশের রড, অ্যাঙ্গেল ও সিমেন্ট। দেশের একাধিক কোম্পানি এসব কাঁচামাল সরবরাহ করেছে টানেল কর্তৃপক্ষকে।
দেশীয় একাধিক কোম্পানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিসিসিসিকে সিমেন্ট সরবরাহ করেছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৫০০ সিডব্লিউআর গ্রেডের অ্যাঙ্গেল-চ্যানেল এবং ৫০০ ডিডব্লিউআরএল গ্রেডের রড সরবরাহ করেছে চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি ইস্পাত পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইস্পাত পণ্য সরবরাহ করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং কোম্পানি লিমিটেড (বিএসআরএম)। চট্টগ্রামের কেএসআরএম, জিপিএইচ ইস্পাতও টানেল প্রকল্পে ইস্পাত পণ্য সরবরাহ করেছে। আইএসওর স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী, ইস্পাত পণ্য উৎপাদনে একটি কারখানার এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ইএমএস), কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (কিউএমএস) এবং ওকিউপেশনাল হেলথ সেফটি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ওএইচএমএস) বিচার করা হয়। ইএমএসের ক্ষেত্রে বায়ু, পানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঠিক মাত্রা ও নিয়ম পালনের বিষয়টি দেখা হয়। অন্যদিকে পণ্যের গুণগত মানের ক্ষেত্রে কিউএমএসের সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। টানেল প্রকল্পে ইস্পাত পণ্যের ক্ষেত্রে এ বিষয়টিই প্রধান ছিল সিসিসিসির কাছে।
দেশীয় ইস্পাত পণ্য উৎপাদকরা জানিয়েছেন, আইএসওর স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী দেশে সর্বশেষ প্রযুক্তির ইস্পাত পণ্য প্রস্তুত হলেও টানেলের জন্য সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে বিশেষভাবে তৈরি করতে হয়েছে এসব পণ্য। সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মাত্রার মধ্যে যেকোনো একটি নিশ্চিত করলেই দেশে পণ্য সরবরাহ করা হতো। কিন্তু টানেলের ক্ষেত্রে আইএসওর নির্ধারিত সর্বোচ্চ মাত্রার গুণগত মান ধরে উৎপাদন করা হয়েছে। ফলে টানেল প্রকল্পে সরবরাহ করা ইস্পাত পণ্য সবচেয়ে বেশি টেকসই বলে মনে করছেন তারা।
বিএসআরএমের তথ্য অনুযায়ী, ৫০০ সিডব্লিউআর গ্রেডের জন্য আইএসও স্ট্যান্ডার্ডের কার্বনের মাত্রা শূন্য দশমিক ১৮ থেকে শূন্য দশমিক ২২ শতাংশ, সিলিকন শূন্য দশমিক ২২ থেকে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ, ম্যাঙ্গানিজ শূন্য দশমিক ৬৫ থেকে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ, ফসফরাস শূন্য দশমিক শূন্য ৪৫-এর কম এবং সালফারের মাত্রা থাকবে শূন্য দশমিক শূন্য ৩-এর কম। দেশীয় পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে আইএসও স্ট্যান্ডার্ড ফলো করা হয়। এক্ষেত্রে কার্বন, সিলিকন, ম্যাঙ্গানিজসহ অন্যান্য উপাদান নির্ধারিত মাত্রার মধ্যে থাকলেও টানেলের জন্য উৎপাদিত পণ্য সর্বোচ্চ মাত্রায় তৈরি করা হয়েছে।
টানেলের জন্য সবচেয়ে বেশি সরবরাহ করা হয়েছে ৫০০ ডিডব্লিউআরএল (রড) গ্রেডের পণ্য। অর্থাৎ মূল কাঠামোর ওপর সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে এই রড ব্যবহার করা হয়েছে। আইএসও স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী এ গ্রেডের ইস্পাত পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে কার্বনের মাত্রা থাকতে হয় শূন্য দশমিক ৩ থেকে শূন্য দশমিক ৩২ শতাংশ, সিলিকন শূন্য দশমিক ২২ থেকে শূন্য দশমিক ২৫, ম্যাঙ্গানিজ শূন্য দশমিক ৬৫ থেকে শূন্য দশমিক ৭৫, ফসফরাস শূন্য দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ এবং সালফার শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশের কম। আইএসও স্ট্যান্ডার্ডের দুটি নির্ধারিত মাত্রার মধ্যে এসব উপাদান তৈরির নির্দেশনা থাকলেও রড উৎপাদনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মাত্রা স্পর্শ করেই তৈরি হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু টানেলের পুরো প্রকল্পে মোট ৩৭ হাজার ৫০০ টন ইস্পাতের মধ্যে ২৭ হাজার টন সরবরাহ করেছে বিএসআরএম। এছাড়া কেএসআরএম সাত হাজার টন এবং জিপিএইচ ইস্পাত সাড়ে তিন হাজার টন রড ও বিভিন্ন ইস্পাত পণ্য সরবরাহ করেছে। টানেল নির্মাণে দেশীয় কোম্পানিগুলোর সরবরাহ করা ২ লাখ ১৫ টন সিমেন্টের মধ্যে প্রিমিয়ার সিমেন্ট কোম্পানি দিয়েছে ৮৫ হাজার টন, রুবি সিমেন্ট ৭৫ হাজার টন ও কনফিডেন্স সিমেন্ট সরবরাহ করেছে ৫৫ হাজার টন।