ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে স্লিপিং ব্যাগ বেশি বিক্রি হয়

কোথাও ঘুরতে গেলেন। সমুদ্রের কিনারে কিংবা পাহাড়ের কোলে। সারাদিন হইহল্লা করেই কেটে গেল। দিন ফুরিয়ে এল রাত। ঘুমানোর পালা। ভ্রমণকে অ্যাডভেঞ্চারে রূপ দিতে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। সঙ্গে থাকা স্লিপিং ব্যাগ খুলে তাতে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়লেন। ঘুমিয়ে গেলেন। আপনি হয়তো জানেনই না, যে স্লিপিং ব্যাগে আপনি ঘুমাচ্ছেন, তা আপনারই দেশের তৈরি।

কোথাও ঘুরতে গেলেন। সমুদ্রের কিনারে কিংবা পাহাড়ের কোলে। সারাদিন হইহল্লা করেই কেটে গেল। দিন ফুরিয়ে এল রাত। ঘুমানোর পালা। ভ্রমণকে অ্যাডভেঞ্চারে রূপ দিতে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। সঙ্গে থাকা স্লিপিং ব্যাগ খুলে তাতে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়লেন। ঘুমিয়ে গেলেন। আপনি হয়তো জানেনই না, যে স্লিপিং ব্যাগে আপনি ঘুমাচ্ছেন, তা আপনারই দেশের তৈরি। বানিয়েছে আপনারই প্রতিবেশী কোনো একজন শ্রমিক। হ্যাঁ, স্লিপিং ব্যাগ এখন বাংলাদেশেই উল্লেখযোগ্য হারে উৎপাদন হচ্ছে।

বিশ্বে এখন পর্যন্ত স্লিপিং ব্যাগ সবচেয়ে বেশি উৎপাদন করে চীন। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশটিতে দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনীতির দেশটিতে বেড়েছে উৎপাদন খরচ। ফলে চীন স্লিপিং ব্যাগের ক্রয়াদেশ হারাচ্ছে। এসব ক্রয়াদেশ অন্যান্য দেশে চলে যাচ্ছে, যেখানে দক্ষ শ্রমিক আছে এবং উৎপাদন খরচ কম। এসব দেশের অন্যতম বাংলাদেশ।

কয়েক বছর আগেও এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে (ইপিজেড) অবস্থিত দু-তিনটি বহুজাতিক কোম্পানি স্লিপিং ব্যাগ উৎপাদন করত। বর্তমানে অন্তত ১০টি বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান স্লিপিং ব্যাগ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত।

আউটারওয়্যার তৈরিতে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম আছে। কালক্রমে এ খাতে বাংলাদেশ শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। বাংলাদেশে উৎপাদিত আউটারওয়্যারের মধ্যে জ্যাকেট, টেন্ট, স্কিয়িং ওয়্যার, স্পোর্টসওয়্যার হান্টার ওয়্যার, সেফটি ওয়্যার, ওয়ার্কওয়্যার ও রেইনওয়্যার উল্লেখযোগ্য। আউটারওয়্যার রফতানি করে বাংলাদেশ প্রতি বছর ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে, যাতে স্লিপিং ব্যাগের উল্লেখযোগ্য অবদান আছে।

বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি স্লিপিং ব্যাগ রফতানি করে যুক্তরাষ্ট্রে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যানুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ২২ লাখ ৫১ হাজার ডলারের স্লিপিং ব্যাগ রফতানি হয়েছে। এর আগের দুই অর্থবছরের তুলনায় এ রফতানির পরিমাণ অনেক কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে স্লিপিং ব্যাগ রফতানির পরিমাণ ছিল ৭২ লাখ ৮৩ হাজার ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে ১ কোটি ৭৫ লাখ ৪৯ হাজার ডলারে উন্নীত হয়েছিল। 

২০১৩ সালের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশী পণ্য বিনা শুল্কে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ ছিল। কিন্তু রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ২০১৩ সালের জুন থেকে বাংলাদেশের জিএসপি (জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস) সুবিধা বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে স্লিপিং ব্যাগ রফতানিতে প্রায় ১২ শতাংশ শুল্ক দিতে হচ্ছে বাংলাদেশী রফতানিকারকদের। তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র, কোরিয়া ও চীনের বিনিয়োগকারীরা প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে স্লিপিং ব্যাগ উৎপাদন করতে তাদের প্রডাকশন ইউনিট বাংলাদেশে স্থানান্তর করেছে।

বাংলাদেশে স্লিপিং ব্যাগ উৎপাদনকারী অন্যতম প্রতিষ্ঠান ইউসেবিও স্পোর্টিং লিমিটেড। তাইওয়ানভিত্তিক এ কোম্পানি চট্টগ্রামে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ কোম্পানির কর্ণধার জুলিও লিন ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশে ব্যবসা করছে। প্রধানত ইউরোপ, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশে স্লিপিং ব্যাগ রফতানি করে ইউসেবিও স্পোর্টিং লিমিটেড। তবে এ কোম্পানির স্লিপিং ব্যাগের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক রাশিয়া। স্লিপিং ব্যাগ উৎপাদনকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে টিম গ্রুপ ও স্নোটেক্স আউটারওয়্যার লিমিটেডের নাম উল্লেখযোগ্য।

স্নোটেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম খালেদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিশ্বে স্লিপিং ব্যাগের বেশ ভালো চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে স্লিপিং ব্যাগ বেশি বিক্রি হয়। স্লিপিং ব্যাগকে ভারী সেলাই পণ্য হিসেবেই বিবেচনা করা হয়।’ স্লিপিং ব্যাগের উৎপাদন নিয়ে বিশেষ সেটআপ প্রয়োজন কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘স্লিপিং ব্যাগের উৎপাদন যে অনেক কঠিন তা আমি মনে করি না। এক্ষেত্রে কারখানায় কুইলটিং সুবিধা থাকা উচিত। এরপর প্রডাকশন লাইনে জিপারের সঙ্গে অন্যান্য অংশের অ্যাসেম্বলিং করতে হবে।’ স্লিপিং ব্যাগ রফতানিতে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‌বাংলাদেশের অল্প কিছু কারখানা স্লিপিং ব্যাগ উৎপাদন ও রফতানি করে। এটি আমাদের মোট রফতানির ১ শতাংশও বহন করে না।’ তবে স্লিপিং ব্যাগ রফতানিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যেহেতু ধীরে ধীরে ভারী সেলাই পণ্য উৎপাদনের দিকে যাচ্ছে। সুতরাং আমি মনে করি, এর ভবিষ্যৎ বেশ ভালোই। কিন্তু আমাদের সবার মনে রাখা উচিত যে এটি একটি মৌসুমি পণ্য, যা বছরের নির্দিষ্ট কিছু মাসে উৎপাদন করতে হয়। এটি স্লিপিং ব্যাগ ব্যবসার একমাত্র চ্যালেঞ্জ।’

যারা ভ্রমণপিপাসু, ট্র্যাকিং ও স্কিয়িং করে তাদের স্লিপিং ব্যাগের চাহিদা বেশি। স্ক্যান্ডিনেভীয়, ইউরোপীয় এবং উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর ভ্রমণকারীদের মাঝে স্লিপিং ব্যাগ দারুণ জনপ্রিয়। চাহিদা ও জনপ্রিয়তার সমানুপাতে তরতরিয়ে বাড়ছিল স্লিপিং ব্যাগের রফতানি। কিন্তু কভিড-১৯ মহামারীর কারণে ছন্দপতন ঘটে। লকডাউন শুরু হয়। ভ্রমণের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। বন্ধ হয়ে যায় স্বাভাবিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। সংগত কারণেই ধাক্কা খায় স্লিপিং ব্যাগের রফতানি। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যানুসারে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ ২ কোটি ৫৬ লাখ ৩৫ হাজার ডলারের স্লিপিং ব্যাগ রফতানি করেছে। সে অর্থবছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, কলম্বিয়া, স্পেন, ফ্রান্স, জাপান, নরওয়ে, পোল্যান্ড ও রাশিয়ায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ স্লিপিং ব্যাগ রফতানি করেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে রফতানির পরিমাণ বেড়ে ৪ কোটি ৭৫ লাখ ৭ হাজার ডলারে উন্নীত হয়েছিল। তবে কভিড-১৯ মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক বাস্তবতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে স্লিপিং ব্যাগ রফতানি অনেক কমে যায়। বিগত অর্থবছরে বাংলাদেশের স্লিপিং ব্যাগ রফতানির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৬৩ লাখ ৬৫ হাজার ডলার। বাংলাদেশ প্রধানত যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি, জাপান, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও স্পেনে স্লিপিং ব্যাগ রফতানি করে।

বর্তমানে ভ্রমণের হার আবার বেড়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থাও স্বাভাবিক। এমন বাস্তবতায় সারা বিশ্বে স্লিপিং ব্যাগের চাহিদা আবার বেড়েছে। ফলে স্লিপিং ব্যাগের রফতানি আবার বাড়বে বলে প্রত্যাশা রফতানিকারকদের।

আরও