ডিজিটাল যুগে কি স্মার্টফোন ছাড়া থাকা সম্ভব

বিশ্ব দ্রুত এগোচ্ছে। ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্ব এখন হাতের নাগালে।

বিশ্ব দ্রুত এগোচ্ছে। ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্ব এখন হাতের নাগালে। এদিক থেকে স্মার্টফোন নিত্যজীবনের প্রয়োজনীয় অংশে পরিণত হয়েছে। এটি এমন একটি ডিজিটাল হাব; যার মাধ্যমে কাজ, যোগাযোগ, বিনোদনসহ স্মৃতি সংরক্ষণেও সহায়তা করে। প্রযুক্তিনির্ভরতা বাড়ার সঙ্গে এর বিপরীত প্রশ্নও বাড়ছে। যার মধ্যে অন্যতম, ডিজিটাল যুগে কি স্মার্টফোন ছাড়া থাকা সম্ভব। ডাম্ব বা সাধারণ ফোন দিয়ে কি চলা যাবে।

টেকটাইমসে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ২০২৩ সালে সামগ্রিকভাবে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫২৫ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। ২০২২ সালের তুলনায় যা ৪ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। এ হিসেবে এটি পরিষ্কার, নিজের নখদর্পনে প্রযুক্তির হাব ধরে রাখার বিষয়টি এড়ানো সম্ভব নয়। বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ এখন স্মার্টফোন ব্যবহার করছে।

যোগাযোগের মাধ্যমে থেকে স্মার্টফোন বর্তমানে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অনবদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। মিটিং শিডিউল থেকে শুরু করে বন্ধু ও প্রিয়জনের সঙ্গে যোগাযোগ, তথ্য সংগ্রহ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারসহ বিভিন্ন কাজ এর মাধ্যমে করা যাচ্ছে। এতসব সুবিধা পেলেও স্মার্টফোন ব্যবহারে কিছু হারাতেও হচ্ছে। প্রতিনিয়ত নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ব্যক্তিমনকে ব্যস্ত রাখা, অনলাইনে সবকিছু দেখানো এক তুমুল প্রতিযোগিতা এবং নির্ভরশীলতা। ডিজিটাল লাইফ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে এটি যে উদ্বেগ বা অস্থিরতা তৈরি করবে না তা বলা মুশকিল।

সর্বত্র স্মার্টফোন ব্যবহারের সঙ্গে নির্ভরশীলতা কাটানোর জন্য ডিজিটাল ডিটক্সের ব্যবস্থাও রয়েছে। যারা এটি উদ্ভাবন করেছে তাদের মতে, এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রযুক্তির সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্ক পুনর্নির্মাণ সম্ভব। ডিটক্সের বিভিন্ন ধাপের মধ্যে সাময়িক সময়ের জন্য বিরতি নেয়ার পাশপাশি পুরোপুরি স্মার্টফোন ব্যবহার বন্ধ করে দেয়াও রয়েছে।

নকিয়া ফোনের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এইচএমডি গ্লোবাল নতুন একটি তথ্য দিয়েছে। শুধু কল ও মেসেজ পাঠানোর জন্য ফ্লিপ ফোন ব্যবহারে আগ্রহীদের পরিমাণ ৫ শতাংশ বেড়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই কয়েক হাজারের বেশি ডাম্ব ফোন বিক্রি হয়েছে। ইউরোপেও এ প্রবণতা ছড়িয়ে পড়ছে। এর অর্থ হচ্ছে সাধারণ মানুষ স্মার্টফোনের কাছে জিম্মি থাকার পরিবর্তে নিজ জীবনের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে।

২০২৩ বা বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন ছাড়া বসবাস করা আশ্চর্যজনক মনে হতেই পারে। আধুনিক জীবনের অনেক কিছুই বর্তমানে ডিজিটাল প্লাটফর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত। স্মার্টফোনের মাধ্যমে ব্যাংক লেনদেন, কেনাকাটা, যোগাযোগ থেকে শুরু করে সবই করা যাচ্ছে। 

এটি যদি না থাকে তাহলে বাস্তব জীবনের বিভিন্ন খাতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। এছাড়া সামাজিক প্রত্যাশা ও নিয়মগুলো স্মার্টফোন ব্যবহারের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। যেকোনো ইভেন্ট, আয়োজন ও সতর্কবার্তা ডিজিটাল মাধ্যমেই সবার কাছে ছড়িয়ে দেয়া হয়। তাই বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকদের মতে, স্মার্টফোন ছাড়া স্বাভাবিক জীবনযাপনে অতিরিক্ত চেষ্টা করতে হবে।

স্মার্টফোন ছাড়া বেঁচে থাকার বিষয়টি ভয়ংকর মনে হতে পারে। কিন্তু প্রযুক্তি থেকে আলাদা করে দেয়া এর লক্ষ্য নয়। এর পরিবর্তে ডিজিটাল লাইফ ও সাধারণ জীবনযাপনের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করাই মূল। অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের সঙ্গে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ও জড়িত। তবে সার্বিকভাবে স্মার্টফোন ছাড়া থাকার বিষয়টি প্রত্যেকের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আরও