দেশে ফার্নেস অয়েল প্রধানত বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহার হয়। শিল্প-কারখানায়ও এ তেলের ব্যবহার রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বলছে, জ্বালানি এ তেলের আমদানি ভালোভাবেই কমে আসছে। রাজস্ব আহরণ পর্যালোচনায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব আয় কম হওয়ার একটি কারণ হিসেবেও ফার্নেস অয়েলের আমদানি কমে যাওয়াকে উল্লেখ করা হয়েছে।
এনবিআরের আমদানি তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) দেশে মোট ৩১ লাখ ১১ হাজার টন ফার্নেস অয়েল আমদানি হয়েছে, যার আমদানি মূল্য ১৪ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। এ পরিমাণ ফার্নেস অয়েল আমদানি থেকে সরকারের রাজস্ব এসেছে ৩ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা। তবে গত অর্থবছরের একই সময়ে দেশে ফার্নেস অয়েল আমদানি হয়েছিল ৪১ লাখ ৪৮ হাজার টন, যার আমদানি মূল্য ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। তখন সরকার রাজস্ব পেয়েছিল ৫ হাজার কোটি টাকা। পরিমাণের হিসাব বিবেচনায় নিলে গত অর্থবছরের তুলনায় এ পণ্যের আমদানি ২৫ শতাংশ কমেছে।
কাস্টমস বলছে, আমদানি কমে যাওয়ায় গত অর্থবছরের তুলনায় জ্বালানি এ পণ্য থেকে রাজস্ব ১ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে। আমদানির বাইরে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির প্রতিদিন ১ হাজার ১০০ টন ফার্নেস অয়েল উৎপাদন করে আসছে। অপরিশোধিত তেল (ক্রুড অয়েল) পরিশোধনকালে ইআরএলের অধীনে এই ফার্নেস অয়েল উৎপাদন হয়।
চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এককভাবে যেসব পণ্য থেকে বড় রাজস্ব আসে এর মধ্যে ফার্নেস অয়েল অন্যতম। গত অর্থবছরের তুলনায় হিসাব করলে বেশ কমেছে এ জ্বালানি পণ্যের আমদানি। স্বাভাবিকভাবে পণ্যের আমদানি কমলে এর থেকে রাজস্ব আহরণও কমে আসে।’
বিপিসির কর্মকর্তারা জানান, বছরভিত্তিক হিসাব করলে ফার্নেসের আমদানি কমে এসেছে। কিন্তু ডলার সংকটে ঋণপত্র খুলতে না পারায় সম্প্রতি কয়লা আমদানি ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় এলএনজি সংকট। এ কারণে মূলত হঠাৎ করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ফার্নেস অয়েল আমদানির চাহিদা বেড়ে যায়। যদিও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চাহিদা অনুযায়ী, ফার্নেস অয়েল আমদানি করতে পারেনি বিপিসি। আবার ডলার সংকটে নিজস্ব প্লান্টে ব্যবহারের জন্যও সংকটকালীন ফার্নেস অয়েল আমদানি করতে ব্যর্থ হয় বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো। এখন ফার্নেস অয়েলবাহী জাহাজ আসতে শুরু করেছে।
বিপিসি ও চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, আমদানি হওয়া ২৫ হাজার টন ফার্নেস অয়েলবাহী একটি জাহাজ থেকে বর্তমানে খালাস চলছে। গত সপ্তাহে আসা এ জাহাজ ১৮ হাজার টন তেল নিয়ে ফ্লোটিংয়ে আছে। ২৫ হাজার টন ফার্নেস অয়েল নিয়ে আরো একটি জাহাজ আজ এসে পৌঁছার কথা রয়েছে।
দেশে বছরে ফার্নেস অয়েলের চাহিদার বেশির ভাগই বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিকরা নিজেরাই আমদানি করে আনছেন। এর বাইরে বিপিসি আমদানি করে। সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বিপিসির কাছ থেকেই ফার্নেস অয়েল কেনে। ইস্টার্ন রিফাইনারিতে (ইআরএল) যে তেল পরিশোধন করা হয় সেখান থেকে বছরে তিন লাখ টনের বেশি ফার্নেস অয়েল পাওয়া যায়।