বৈশ্বিক
তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং উপসাগরীয় অঞ্চলের রুক্ষ আবহাওয়ার কারণে দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা
ও অকালমৃত্যুর শিকার হচ্ছেন অভিবাসী শ্রমিকরা।
উচ্চ তাপের সংস্পর্শ থেকে অভিবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষা দিতে মানসম্মত
পদক্ষেপের প্রয়োজন। একই সঙ্গে শ্রমিকদের পর্যাপ্ত বাসস্থান, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। শনিবার (২৪ জুন) উপসাগরীয় অঞ্চলের শ্রমিকদের নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা
সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
‘ঘাতক গরম:
উপসাগরীয় অঞ্চলে মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রা এবং অভিবাসী শ্রমিক’ শীর্ষক এ আলোচনার
আয়োজন করে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু)।
বক্তারা
বলেন,
উপসাগরীয় দেশগুলোতে ৩০ মিলিয়ন অভিবাসী রয়েছে, যা এই অঞ্চলের জনসংখ্যার ৫২ শতাংশ। এসব দেশের অর্থনীতি
অভিবাসীদের শ্রমের ওপর নির্ভরশীল।
অভিবাসীদের শ্রম ছাড়া তাদের ভূ-রাজনৈতিক শক্তি, সম্পদের ভিত্তি, উৎপাদন, নগরায়ন কিছুই থাকত না। ফলে এ শ্রমিক
শ্রেণীর প্রতি দায়বদ্ধতা বেশি এবং তাদের
মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
আলোচনা
সভায় রামরুর নির্বাহী পরিচালক সি আর আবরার বলেন, উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো এখন সবার জন্য স্বাস্থ্যবিমা বাধ্যতামূলক করেছে। এ স্বাস্থ্য বীমার আওতায় স্বল্প বেতনের শ্রমিকরাও
অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। বাধ্যতামূলক
স্বাস্থ্যবিমার আওতায় নিয়ে আসায় এখন তারা জরুরি চিকিৎসা ছাড়া বিনামূল্যে অন্য কোনো চিকিৎসা গ্রহণ
করতে পারেন না। এর বড় কারণ নিয়োগকর্তারা ভালো বিমা করতে পারেন না। তারা নামমাত্র বিমা করলেও পরে তা আর নবায়ন করা হয় না। ফলে
দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির মুখে পড়ছেন শ্রমিকরা।
তিনি বলেন, সরকার এবং সুশীল সমাজ বরাবরের মতো রেমিট্যান্স প্রবাহ, দক্ষতা ও আর্থিক
সক্ষমতার ওপর গুরুত্ব দেয়। কিন্তু যারা এ রেমিট্যান্স পাঠান তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়ে খুব বেশি আলোচনা
আমরা করতে দেখিনা। শুধু বাংলাদেশে নয়, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং
পাকিস্তানেও একই পরিস্থিতি। ফিলিপাইনে আমরা কিছু ভালো লক্ষণ দেখেছি। করোনা
মহামারির পর থেকে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়ে সবার নজর কাড়ে।
অ্যালায়েন্স
ফর উইম্যান মাইগ্রেট ভয়েসের মহাসচিব ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, সংশ্লিষ্ট দেশে কেউ অসুস্থ হলে সেখানে স্বাস্থ্য সেবার কোনো ব্যবস্থা নেই। একটা আশ্রয়কেন্দ্র থাকলেও সেখানেও উন্নতমানের
চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। এখন একটা বিমার ব্যবস্থা হয়েছে। বিমা ব্যবস্থায় শ্রমিক দেশে ফিরে আসলেও এর মাধ্যমে কিছুটা চিকিৎসা সে পায়।
কিন্তু শ্রমিকরা সেটাও জানেন না।
ক্রিটিক্যাল
কেয়ার স্পেশালিস্ট ডা. মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, উপসাগরীয় অঞ্চলে তাপমাত্রার প্রভাব নিয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। এখানে আসার পর মৃত দেহগুলোর
মৃত্যুর কারণে উল্লেখ থাকে স্বাভাবিক মৃত্যু অথবা হার্ট অ্যাটাক। কিন্তু বিশেষায়িত
কোনো কারণ উল্লেখ থাকে না রিপোর্টে। মাত্রাতিরিক্ত তাপ
প্রবাহ এবং মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির মাঝে কোনো সম্পর্ক আছে
কিনা তা খুঁজে বের করতে হবে।
এ সময় কিছু
সুপারিশ ও করণীয় তুলে ধরে রামরু। সেগুলো হলো— তাপের সংস্পর্শ সীমিত করতে কর্মক্ষেত্রের সময়সীমা
ক্যালেন্ডারভিত্তিক পদ্ধতির বাইরে ঝুঁকি ভিত্তিক পদ্ধতি গ্রহণ করা, কর্মস্থলে পর্যাপ্ত পানি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকা, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা নিশ্চিত করা, কিডনি রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করা এবং শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবায়
অর্থায়ন করা।
এ সময় আরো
বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের নেপ্রোলজিস্ট ডা. মো. দিলদার হোসেন
বাদলসহ আরো অনেকে।