দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) খাতে ১৭ বছর ধরে কাজ করছেন মো. কায়সার হামিদ। তিনি তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) নির্বাহী কমিটির সদস্য। এছাড়া তিনি বর্তমানে এনবিএফআইগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) ভাইস চেয়ারম্যান। সম্প্রতি তিনি সিএমএসএমই খাত ও পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে—
সিএমএসএমই (কটেজ, মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ) খাত নিয়ে আপনাদের ভাবনা কী?
বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড বলা হচ্ছে সিএমএসএমই খাতকে। এ খাতে ৭৮ লাখ উদ্যোক্তা রয়েছে। এর মধ্যে ৭২ লাখই ব্যাংকের অর্থায়ন সুবিধার বাইরে। মাত্র ৬ লাখ ব্যাংক থেকে অর্থায়ন সুবিধা পেয়েছে। এক্ষেত্রে ২৪ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের চাহিদা রয়েছে। আমরা যদি তাদের সহায়তা করতে পারি তাহলে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সিএমএসএমই খাতের জন্য যে ২৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে সেখান থেকে আপনারা কী সুবিধা পেয়েছেন?
বাংলাদেশ ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরেই এসএমই, এসপিডিসহ আরো বেশ কয়েকটি বিভাগের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের তহবিল গঠন করে আসছে। বর্তমান গভর্নর দায়িত্ব নেয়ার পর সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় ২৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়েছে। আমরা এ তহবিল থেকে অর্থায়ন সুবিধা নেয়ার ক্ষেত্রে শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছি। যে গুটিকয়েক ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে আমরা তাদের মধ্যে অন্যতম। মূলত আগে থেকেই যাদের এ ধরনের ব্যবসায়িক মডেল ছিল তারাই এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এমনকি আমরা আমাদের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সম্প্রতি আবেদন করেছি। এ বছরের জুনের মধ্যে যে পরিমাণ ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা মার্চের মধ্যেই অর্জন করেছি।
তহবিল থেকে এ পর্যন্ত কত টাকা নিয়েছেন?
আমাদের প্রাথমিক প্রাক্কলিত অর্থের পরিমাণ ছিল ২৫ কোটি টাকা, যা আগেই অর্জন করে ফেলেছি। এখন আরো ১০০ কোটি টাকার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করেছি। এর বাইরেও কিন্তু নারী, নতুন উদ্যোক্তা, কৃষি ও জাইকার (জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি) তহবিল রয়েছে। সেখান থেকেও আমরা নিয়মিত পুনঃঅর্থায়ন তহবিল পাচ্ছি। ২৫ হাজার কোটি টাকার তহবিলকে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাক-অর্থায়ন তহবিলে রূপান্তর করেছে। যেহেতু আমাদের কিছুটা তারল্য সংকট রয়েছে এ কারণে ব্যাংক ও এনবিএফআইগুলো যাতে সহজেই অর্থায়ন করতে পারে সেজন্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সুবিধা দিয়েছে। আগে আমরা ঋণ বিতরণের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা পেতাম। এখন কিন্তু ঋণ দেয়ার আগেই টাকা পাচ্ছি। আমাদের বিতরণ করা ঋণের আকার বেশ ছোট। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের আমরা ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকি।
পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের সুদহার বেশ কম। এ কম সুদের ঋণ সুবিধা নিয়ে উদ্যোক্তারা নিশ্চয়ই বেশ উপকৃত হচ্ছেন?
উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে দুটি জিনিস বাধা হিসেবে কাজ করে। একটি সুদের হার এবং আরেকটি ঋণ অনুমোদন প্রক্রিয়া। পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের ক্ষেত্রে গ্রাহক পর্যায়ে ৭ শতাংশ সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে, যেটি বেশ সহনীয়। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য এটা প্রণোদনামূলক। কারণ আমরা মাত্র ২ শতাংশ সুদে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এ তহবিল পাচ্ছি। এতে আমাদের ৫ শতাংশ স্প্রেড থাকছে। আমাদের আমানত সংগ্রহের ব্যয়ের সঙ্গে যদি তুলনা করি তাহলে আড়াই থেকে তিন শতাংশের বেশি স্প্রেড পাই না। ফলে এ তহবিল থেকে আমরা ও গ্রাহক—দুজনই উপকৃত হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে অন্য বাধাগুলো অতিক্রম করতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, গ্রাহকদের কাছে কাগজপত্র থাকে না কিংবা এগুলো জোগাড় করতে তাদের কষ্ট হয়। অন্যদিকে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ অনুমোদনের প্রক্রিয়া অনেক বেশি গ্রাহকবান্ধব হওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আমাদের জন্য বড় উদাহরণ হতে পারে এনজিওগুলো। বর্তমানে তাদের ১ লাখ কোটি টাকার ঋণ পোর্টফোলিও রয়েছে। তারা কিন্তু সাধারণ কিছু কাগজপত্রের মাধ্যমে ঋণ দিচ্ছে। আমরা যদি কাগজপত্রের চেয়ে ব্যবসায়িক মডেলের দিকে গুরুত্ব দিয়ে গ্রাহকের কাছে গিয়ে সরাসরি ঋণ মূল্যায়ন করতে পারি তাহলে প্রক্রিয়াটি সহজ হবে। তখন কম সুদের বিষয়টি উদ্যোক্তাদের আরো বেশি উদ্বুদ্ধ করবে এবং ২৫ হাজার কোটি টাকার এ তহবিল গঠনের উদ্দেশ্যও সফল হবে।
সরাসরি গ্রাহকের কাছে গিয়ে সেবা দিতে গেলে তো প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ব্যয় বেড়ে যায়। পাশাপাশি বাড়তি জনবলেরও প্রয়োজন হয়। এ বিষয়টি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন?
আমি একটি নতুন মডেলের কথা শেয়ার করতে চাই। বাংলাদেশের ব্যবসায়িক মডেলে এনজিওগুলোকে এড়ানো সম্ভব নয়। অন্যদিকে জনবলভিত্তিক ব্যাংকিং সিস্টেমকেও পুরোপুরি বাদ দেয়া যাবে না। ফলে পুরোপুরি ডিজিটাল হয়ে অফিসে বসেও ঋণ দিতে পারব না, আবার এনজিওর মতো এত শাখার মাধ্যমেও ঋণ দেয়া সম্ভব হবে না। এ কারণে আমাদের একটি হাইব্রিড মডেল প্রয়োজন। বাংলাদেশ ফাইন্যান্স গত তিন বছরে উদ্যোক্তা, এনজিও এবং ডিজিটাল ওয়ালেট বা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডারদের (এমএফএস) নিয়ে অংশীদারভিত্তিক একটি সহযোগিতামূলক ব্যবসায়িক মডেল তৈরি করেছে। আমরা দেশের ১৫-২০টি জায়গায়, যেখানে আমাদের শাখা কিংবা জনবল নেই সেখানে অংশীদারদের সহযোগিতায় কৃষি, নারী ও নতুন উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন করেছি। এতে গত তিন বছরে আমাদের মোট ঋণ পোর্টফোলিওতে এসএমই খাতের অবদান ১৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আগামী তিন বছরে এটি ৪০ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে আমাদের।
বাংলাদেশ ব্যাংক চাইছে উৎপাদনশীল খাতে যাতে পুনঃঅর্থায়ন কাজে লাগানো হয়। কিন্তু সিএমএসএমই খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো বড় অংশই ট্রেডিং ও রিটেইল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এক্ষেত্রে উৎপাদনশীল খাতে তহবিলের অর্থ বিনিয়োগের উদ্দেশ্য কীভাবে সফল হবে?
আমাদের প্রত্যেকটি খাতভিত্তিক একটি লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কিন্তু এখানে শুধু লক্ষ্যমাত্রা নয় বাস্তবতার নিরিখেও ব্যবসার মডেলটি সাজানো দরকার। বর্তমানে অভ্যন্তরীণ বাজার কিন্তু যথেষ্ট বড় হয়েছে। আমাদের জনসংখ্যা ও ভোক্তা ব্যয়ের প্যাটার্ন স্থানীয় উৎপাদকদের ব্যবসায় আগ্রহ তৈরি করছে। সরকারের আমদানি নীতিগুলোও অনেক ব্যবসায়ীকে স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করছে। এটা একদিনে হওয়া সম্ভব নয়। এজন্য যে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও বড় পুঁজির দরকার সেই সহায়তা না পেলে সম্ভব হবে না। প্রাথমিকভাবে দেখি যে এসএমইতে তারা ট্রেডিং ব্যবসার দিকে ঝুঁকে পড়ে। এরই মধ্যে আমরা মূলধনি যন্ত্রপাতি ও তিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে অর্থায়ন নিশ্চিত করতে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কাজ শুরু করেছি। আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ট্রেডিং ও সেবা খাত থেকে উৎপাদনশীল খাতে এসব ব্যবসার রূপান্তর ঘটবে। এজন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারকেও নীতিগতভাবে সহায়তা দেয়ার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। ব্যবসার প্রক্রিয়াকে সহজ করতে হবে।
আপনাদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে মূলত কারা সফল হচ্ছেন?
আমরা ২০২১ সালে সিরাজগঞ্জ ও পাবনা অঞ্চলে গরু মোটাতাজাকরণ ও দুগ্ধশিল্পের জন্য ১০০ গ্রাহককে গড়ে আড়াই থেকে ১০ লাখ টাকা করে ঋণ দিয়েছিলাম। দুই থেকে চারটি গরু যাদের ছিল সেটি বেড়ে ২০টি পর্যন্ত হয়েছে। এ বছর আড়াইশ থেকে তিনশ গ্রাহককে আমরা ঋণ দিচ্ছি। যশোরের একজন নারী উদ্যোক্তা আজ থেকে চার-পাঁচ বছর আগে আমাদের কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। বর্তমানে তার পুঁজি ৪০ লাখ টাকা। তবে তার এ পথচলা সহজ ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশ ফাইন্যান্স মেয়াদি ঋণ ও চলতি মূলধন খাতে অর্থায়নের মাধ্যমে তাকে সহায়তা করেছে। জোবায়ের রহমান নামে আমাদের আরেকজন তরুণ উদ্যোক্তা আছেন। পাঁচ বছর ধরে তিনি স্থানীয় বাজারে বরই, হলুদের মতো পণ্য প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে সরবরাহ করছেন। প্রথমে আমরা তাকে ২৫ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। পরবর্তী সময়ে আরো ৫০ লাখ দিই। বর্তমানে ব্যাংকে তার সাড়ে চার থেকে পাঁচ কোটির লেনদেন রয়েছে। আমরা কিন্তু তাকে কোনো জামানত ছাড়াই ঋণ দিয়েছিলাম। বর্তমানে এ তরুণের ব্যবসা বড় হয়েছে, জামানতযোগ্য সম্পদ তৈরি হয়েছে এবং তার প্রতিষ্ঠানে ৪০ থেকে ৫০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র ইমেজ প্রসেসিংয়ের স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলাদেশে বসেই সে সফটওয়্যার তৈরি করে বিদেশী প্রতিষ্ঠানের জন্য ইমেজ প্রসেস করছে। আমরা তাকে ১৫ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠানের ভ্যালুয়েশন দেড় কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সে আউটসোর্স করছে। এক্ষেত্রে আমরা যে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হই, সেটি হচ্ছে স্টার্টআপের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তার ডেডিকেটেড ও সিরিয়াসনেস অনেক সময় কম থাকে।
দেশে জামানতসহ ঋণই প্রায় সময় খেলাপি হতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে বিনা জামানতে ঋণ দেয়ার ঝুঁকি নিচ্ছেন কী করে?
আমরা গত পাঁচ বছরে এসএমই ও সিএমএসএমই খাতে যত ঋণ দিয়েছি তার একটিও খেলাপি হয়নি। এর মধ্যে তিন বছর ধরে কভিড ছিল। এ সময়ে আড়াইশ থেকে তিনশ কোটি ঋণ দিয়েছি সিএমএসএমই খাতে। এর একটি ঋণও খেলাপি হয়নি। এক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো জামানতও ছিল না। ঋণখেলাপি হওয়ার ক্ষেত্রে দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ—একটি হচ্ছে ব্যবসার মডেল মূল্যায়ন করে আপনি অর্থায়ন করেছেন কিনা, আরেকটি হলো গ্রাহকের সক্ষমতা আছে কিনা। বাংলাদেশে সিএমএসএমই খাতে যারা উদ্যোক্তা আছেন আমার কাছে মনে হয় তারা বেশ উচ্চাভিলাষী। তারা সামনের দিকে বড় হতে চান। তাদের এ মনস্তত্ত্বের কারণে তারা কিন্তু ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে চান। এনজিওগুলোর ঋণ আদায়ের হার দেখুন, ৯৮-৯৯ শতাংশ। তারা পারলে আমরা কেন পারব না? এক্ষেত্রে নিবিড় নজরদারি ও গ্রাহক বাছাই করাটাই গুরুত্বপূর্ণ। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কারণে কিছু ঋণ খেলাপি হতেই পারে।
আপনারা এখন পর্যন্ত কতজন নারী উদ্যোক্তাকে ঋণ দিয়েছেন?
নারীদের জন্য আমাদের ‘বিজয়’
নামে একটি স্বতন্ত্র প্লাটফর্ম রয়েছে। এ প্লাটফর্মের মাধ্যমে কয়েকশ নারীকে ঋণ দিয়েছি। আমরা বেশকিছু অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি, যারা নারী উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এদের মাধ্যমে আমরা নারী উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন করছি। আমাদের এসএমই খাতের অর্থায়নের ১৫-১৬ শতাংশই পেয়েছেন নারী উদ্যোক্তারা।
সিএমএসএমই খাতকে শক্তিশালী করার জন্য আরো কী পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে মনে করেন?
আমাদের দেশে যাত্রার পর থেকেই বাণিজ্যিক মডেলে ব্যাংকিং ব্যবস্থার গোড়াপত্তন হয়েছে। এতদিনের এ চর্চা থেকে সরে আসতে কিছুটা সময় দরকার। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বুঝতে পেরেছে যে—‘স্মল ইজ বিউটিফুল’। অর্থাৎ ছোট ঋণগুলোই ভালো, খেলাপি কম। কিন্তু তার জন্য সঠিক ব্যবসায়িক মডেল তৈরি না করে বিনা জামানতে এসএমই ঋণে ঝাঁপ দিলে ভুল জায়গায় অর্থায়ন হয়ে যেতে পারে। এখানে ঋণনীতি, ব্যবসায়িক মডেল, শাখার নজরদারি ব্যবস্থা নির্ধারণের পাশাপাশি কর ব্যবস্থায়ও অনুপ্রেরণা থাকতে হবে। যারা এসএমইতে বেশি অর্থায়ন করছে তাদের জন্য কর ব্যবস্থায় প্রণোদনার সুযোগ রাখতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন ধরনের পুনঃঅর্থায়ন তহবিল রয়েছে। এসব তহবিলের সুবিধা কাজে লাগিয়ে এনবিএফআইগুলো কীভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে?
বর্তমানে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের ১১টি পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের অংশীদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছি। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যে সমস্যায় পড়েছে সেগুলো হয়েছে কিন্তু সুশাসনের অভাবে। কিছু কিছু নামে-বেনামে বড় ঋণ দেয়া হয়েছে, যেখান থেকে টাকা ফেরত আসেনি। ফলে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে কষ্ট হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখান থেকে বেরোতে চাইলে এসএমইতে আসতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের পাশাপাশি এডিবি, জাইকা, আইডিবির তহবিলগুলোও আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে পাচ্ছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমও রয়েছে, যেখান থেকে তহবিল নিয়ে আমরা ঋণ দিচ্ছি। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি তারল্য পরিস্থিতির উন্নতি করতে চাইলে সিএমএসএমই, পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে।