যুক্তরাষ্ট্রের তুলা থেকে তৈরি পোশাক রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দাবি

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানীকৃত তুলা দিয়ে তৈরি পোশাক রফতানিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়েছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবোট ও সিনেটর টেড ক্রুজকে আলাদা করে চিঠি দিয়েছে। সোমবার পাঠানো এ চিঠি সম্পর্কে

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানীকৃত তুলা দিয়ে তৈরি পোশাক রফতানিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়েছে বাংলাদেশ। বিষয়ে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবোট   সিনেটর টেড ক্রুজকে আলাদা করে চিঠি দিয়েছে। সোমবার পাঠানো চিঠি সম্পর্কে গতকাল গণমাধ্যমকে জানায় তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন।

চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বড় পোশাক রফতানিকারক দেশ। তৈরি পোশাকে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অংশীদারত্ব দশমিক ৩৭ শতাংশ। ২০২২ সালে বাংলাদেশ ৪৫ দশমিক ৭১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক রফতানি করে, যেখানে তুলা থেকে তৈরি পোশাক রয়েছে সবচেয়ে বেশি। এর পরিমাণ ৩২ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের মোট রফতানির ৭১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। করোনা মহামারীর পরও গত ১০ বছরে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বেড়েছে বার্ষিক দশমিক ৭৩ শতাংশ। এটি আগামীতে বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের শক্ত অবস্থানের ্রইঙ্গিত দেয়। বাংলাদেশের আমদানির ৯৯ শতাংশ তুলা রফতানিনির্ভর তৈরি পোশাক উৎপাদনে ব্যবহূত হয়। ফলে আমরা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তুলা আমদানিকারক দেশ হিসেবে অবস্থান গড়েছি।

বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, উচ্চমূল্যস্ফীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র তাদের দেশের মধ্যম আয়ের মানুষের সুবিধার জন্য বাংলাদেশী পোশাককে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে পারে। তারা যদি তাদের দেশ থেকে আমদানি করা তুলায় তৈরি হওয়া পোশাক তাদের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়, তাহলে তাদের কৃষকরাও উপকৃত হবেন। কারণ তখন দেশটি থেকে আরো অনেক বেশি তুলা বাংলাদেশ আমদানি করবে। এতে দুই দেশের বাণিজ্য আরো বেশি সক্রিয় হবে। বাংলাদেশে রফতানি হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের তুলা থেকে যে পোশাক তৈরি হয়, তার বড় অংশই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিক্রি হয়। সেদিক থেকে দুই দেশই লাভবান হবে এটি কার্যকর হলে।

চিঠিতে আরো বলা হয়, গত বছর বাংলাদেশ হাজার ৮০ মিলিয়ন পাউন্ড তুলা বিশ্ববাজার থেকে আমদানি করে। এর মধ্যে প্রায় ৪০৯ মিলিয়ন পাউন্ড আমদানি করা হয় যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এসব তুলা পুরোপুরি শুল্কমুক্ত আমদানি করা হয়, যা খাতের উন্নয়নে এবং আমদানিকারক রফতানিকারক উভয়ের জন্যই সুবিধাজনক। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র গত বছর তৈরি পোশাক আমদানি করে দশমিক ৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের, যার মধ্যে দশমিক ৯১ শতাংশ তুলা থেকে তৈরি পোশাক। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মোট পোশাক আমদানির ৭১ শতাংশই তুলা থেকে তৈরি পোশাক। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র গোটা বিশ্ব থেকে গত বছর ৪৭ দশমিক ৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তুলা থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করে, যেখানে বাংলাদেশ থেকে আমদানি হয় ১৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এতে প্রতীয়মান হয়, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের তুলা থেকে তৈরি পোশাক আমদানির অন্যতম বড় উৎস। বাংলাদেশ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারের তুলা আমদানি করতে গিয়ে ডিউটি বাবদ পরিশোধ করে দশমিক ৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশে আমদানি হওয়া অন্য সব পণ্যের তুলনায় অনেক বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের শক্ত অবস্থান তৈরিতে দেশটির সরকারের প্রশংসা করে চিঠিতে আরো বলা হয়, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের তুলা থেকে তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাচ্ছি। এতে যুক্তরাষ্ট্রের তুলা রফতানিতে বাংলাদেশ আরো বড় একটি গন্তব্য হতে পারে। বাংলাদেশে তুলা আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়া হয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্র যদি বাংলাদেশের তুলা থেকে তৈরি পোশাক শুল্কমুক্ত প্রবেশের সুযোগ দেয় তাহলে দেশটির উৎপাদিত তুলা রফতানি ভালো দাম পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ বাজার হয়ে উঠবে, যেটি দেশটির তুলাচাষীদের জন্যও সুবিধাজনক। অন্যদিকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাককে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারাই বেশি উপকৃত হবে। বিশেষ করে দেশটির মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য এটি একটি স্বস্তিদায়ক ব্যাপার হয়ে উঠবে।

যুক্তরাষ্ট্রের তুলা থেকে তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশের সুযোগ প্রদানে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।

বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কেও বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে আলোচনার জন্য অনুরোধ করবে বিজিএমইএ।

আরও