বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও উপাচার্য। বর্তমানে তিনি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের অন্যতম উপদেষ্টা, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পরিষদ ও স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি। বাংলা একাডেমির অনারারি ফেলো এবং শিক্ষা, প্রশাসনিক ও মুক্তিযুদ্ধে একাধিক স্বর্ণপদক বিজয়ী। সম্প্রতি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে
আপনি
বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব
নেয়ার আগে
ও বর্তমান
অবস্থার মধ্যে
কেমন পরিবর্তন
লক্ষ করছেন?
আমি উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার আগে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, অবকাঠামোগত সুবিধা, শিক্ষার গুণগত মান ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমি এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শুরুতে আমাদের শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল ১৪৪, শিক্ষক ১২ জন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ২১ জন ও ১০ হাজার বর্গফুটের একটি ভবন। বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ৩৫০-এর অধিক এবং শিক্ষাদানের জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে পাঠদানের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া ক্লাসরুম, ল্যাব, লাইব্রেরি, কমনরুম, খেলাধুলার আয়োজন, ক্যান্টিন ও শিক্ষা উপকরণের সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। আমার মতে, সবচেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে শিক্ষার মানোন্নয়নের প্রয়োগ। তাছাড়া একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নিষ্ঠার সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা, সময়মতো শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট প্রদান ও নিয়মিত কনভোকেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষার মানোন্নয়নে
আপনারা কী
কী পদক্ষেপ
নিয়েছেন?
উচ্চশিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের জন্য বেশকিছু বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সেগুলো হলো পাঠদান ও মূল্যায়ন পদ্ধতির যুগোপযোগীকরণ, নতুন ও যুগোপযোগী কোর্স কারিকুলাম প্রবর্তন। প্রকৌশল শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত এবং অভ্যন্তরীণ সমতার লক্ষ্যে আগে অনুমোদিত বিভিন্ন প্রোগ্রামের কারিকুলাম পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও উন্নয়ন করা হয়েছে। জ্ঞানী-গুণী, অভিজ্ঞ ও উচ্চশিক্ষিত পর্যাপ্ত পূর্ণকালীন শিক্ষক এবং খণ্ডকালীন শিক্ষক সংখ্যা কম রাখা হয়েছে। অভিজ্ঞ বহিরাগত শিক্ষক দিয়ে মাঝে মাঝে ক্লাস নেয়া ও সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করা, বুলেটিন প্রকাশ, গবেষণা উৎসাহিত করার জন্য সেন্টার অব এক্সিলেন্স সৃষ্টি ও মানসম্মত জার্নাল প্রকাশ ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
মেন্টরের মাধ্যমে প্রতিদিনের অগ্রগতি পর্যালোচনা, মনিটরের মাধ্যমে ছাত্র-শিক্ষকদের উপস্থিতি-অনুপস্থিতির পর্যালোচনা, ক্লাস শুরুর আগে কোর্স আউটলাইন সরবরাহ করা, সম্পূর্ণ নকলমুক্ত পরিবেশে মিডটার্ম ও ফাইনালসহ প্রয়োজনীয় মূল্যায়ন যথাসময়ে গ্রহণসহ যোগ্য, মেধাবী এবং সীমিত সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ মেধাবী শিক্ষার্থী ভর্তির উদ্দেশ্যে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে সীমিতসংখ্যক ছাত্রছাত্রী ভর্তি করছে। ভর্তির পর এসব শিক্ষার্থীকে বিশেষ পদ্ধতির টিউটোরিয়াল কাম কাউন্সেলিং এবং মেন্টরিং সিস্টেমের প্রবর্তন করা হয়েছে। প্রতি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথম পাঁচজন ও শেষের পাঁচজন শিক্ষার্থীর নিবিড় শিক্ষণ-প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিদেশী
বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে
আপনাদের কোনো
এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম
রয়েছে কী?
আমরা অ্যাসোসিয়েশন অব কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটির মেম্বারশিপ লাভ করেছি। ৩৮টি বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শিক্ষা ও গবেষণা সম্পৃক্ততা রয়েছে। তাছাড়া ব্রিটেনের নর্দাম্ব্রিয়া ইউনিভার্সিটি ও সেন্টপেট্রিক্স ইন্টারন্যাশনাল কলেজের সঙ্গে একটি বিনিময় চুক্তি রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল স্টাডিজের সঙ্গে একটি গবেষণা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
সহশিক্ষা
কার্যক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থীদের অবস্থান
কেমন?
শিক্ষার্থীদের মননশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তথা বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, বহিঃক্রীড়ার সুবিধা সম্প্রসারণ, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবস পালন, বার্ষিক বনভোজন, দেশে-বিদেশে শিক্ষাসফর, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার, বিদ্যমান ডিবেটিং, ফটোগ্রাফি, রিসার্চ, সাংস্কৃতিক ও ল্যাংগুয়েজ ক্লাবকে আরো গতিশীল করা হয়েছে। সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ ও গুণগত মান উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রাখতে আমাদের কোনো ক্লাসে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩৫-এর বেশি রাখা হয় না এবং আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১ ঃ ২১ রাখা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের
গ্রন্থাগারে শিক্ষার্থীদের
জন্য কী
কী সুযোগ-সুবিধা
রয়েছে?
ইউজিসি প্রবর্তিত অত্যাধুনিক পাঠদান, শিক্ষণ ও মূল্যায়ন অব্যাহত রয়েছে। শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত শিক্ষা উপকরণ তথা বিভিন্ন ক্লাসরুম, ল্যাব ও লাইব্রেরি সুবিধা রয়েছে। লাইব্রেরিতে বর্তমানে বইয়ের সংখ্যা ১৮ হাজার ১২৮-এ উন্নীত হয়েছে। অনলাইনে প্রায় ১ কোটি বই, ৫০ লাখ জার্নাল, ম্যাগাজিন, নিউজপেপার এবং এনসাইক্লোপেডিয়াসহ অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ ব্যবহারের সুযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়
নিয়ে আপনার
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার
কথা বলুন?
ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য হচ্ছে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য উৎপাদন ও বাস্তবমুখী শিক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন। মানসম্মত শিক্ষা হচ্ছে তার চাবিকাঠি। এ দর্শন ও লক্ষ্যকে সামনে রেখে উচ্চশিক্ষার মান সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বেশকিছু বিষয়ের ওপর গভীর দৃষ্টি দিচ্ছে। সেগুলো হলো পর্যাপ্ত সংখ্যক দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকসহ বিদেশে কর্মরত খ্যাতনামা বাংলাদেশী শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ, নবাগত শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া। উন্নয়ন ও সম্প্রসারণকাজে দাতা উদ্বুদ্ধকরণ, বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিনিময় চুক্তি করার পরিকল্পনা রয়েছে। ভবিষ্যতে শহরভিত্তিক বর্তমান অবকাঠামোর ব্যাপক সম্প্রসারণ করা, শিক্ষার্থীদের জন্য ছাত্রাবাস নির্মাণ, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা, সহায়ক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নৈর্ব্যক্তিক পদায়ন, প্রশিক্ষণ ও মেধা-যোগ্যতার ভিত্তিতে সুযোগ-সুবিধা প্রদান ও প্রমোশনের ব্যবস্থা করা হবে।
আর্থিক
অসচ্ছল মেধাবী
শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের
পক্ষ থেকে
আপনারা কী
ধরনের সুযোগ-সুবিধা
দিচ্ছেন?
শিক্ষাকে সহজলভ্য করার জন্য ও মেধাবী-দরিদ্র শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা লাভের পথ সুগম করার জন্য অর্থনৈতিক সহযোগিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে মেধা লালন। তাই মেধাবী কিন্তু আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা বৃত্তি, ফি ওয়েভার, এমনকি খণ্ডকালীন কাজের সুবিধা সৃষ্টি করে দিই। আমাদের ফি হার সারা দেশে সর্বনিম্ন। এরপর বিভিন্ন বৃত্তি বাদ দিলে শিক্ষার্থীরা নামমাত্র ফি দিয়ে পড়াশোনা করে। আমরা নামমাত্র ফি নিলেও শিক্ষার মান উন্নত রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমরা প্রমাণ করেছি যে শিক্ষার মান শুধু ফির ওপর নির্ভশীল নয়। কম ফি দিয়ে উন্নত মানের শিক্ষা প্রদান যে সম্ভব সেটা অমরা প্রমাণ করেছি।
বৃত্তি
সুবিধা কেমন?
শতকরা প্রায় ২৭ দশমিক ৫৭ ভাগের অধিক ছাত্রছাত্রীকে এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রায় ৮০ থেকে ৯০ ভাগ ছাত্রছাত্রীকে কমপক্ষে ২০ ভাগ ও সর্বোচ্চ ৯০ ভাগ ফি মওকুফ করা হয়েছে। একই পরিবারের দুই সদস্য হলে একজনকে কমপক্ষে ৫০ ভাগ ফি মওকুফ করা হয়।
ছাত্রীদের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫০ ভাগ ফি মওকুফ করা হয়। মফস্বল ও অনুন্নত এলাকার ছাত্র ও সব এলাকার ছাত্রীদের আবাসিক সুবিধা নিশ্চিতে সহায়তা করা হচ্ছে। ২০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত মেধা বৃত্তি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রতি ক্লাসে পরীক্ষায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীদের প্রতিনিধি নিয়োগ ও একই ভিত্তিতে বৃত্তি পুনর্নির্ধারণ করা হয়।
কর্মক্ষেত্রে
ও চাকরির
বাজারে আপনার
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
কেমন করছে?
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা এরই মধ্যে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বহুজাতিক কোম্পানিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করছে এবং দেশ ও জাতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।