উচ্চসুদের হার, বৈশ্বিক মন্দা ও রফতানি হ্রাসের মতো কারণগুলোর গাঢ় প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে। বুধবার জাতিসংঘ ২০২৩ সালের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস প্রকাশ করে। সেখানে চলতি বছর ভারতের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ২০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ করা হয়। যদিও ২০২৩-২৪ অর্থবছর ঘিরে দেশটির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬ শতাংশকে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। সূত্র বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ২০ বেসিস পয়েন্ট হ্রাসের কারণ হিসেবে উচ্চসুদের হার, উন্নত বিশ্বে বিনিয়োগ ও রফতানির মন্দার ঝুঁকির কথা উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সম্ভাবনাবিষয়ক এ প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলছে, বিনিয়োগের ওপর উচ্চসুদহার ও ধীর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি দেশটির রফতানিকে দুর্বল করে। তাই চলতি বছর ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মাঝারি পর্যায়েই থাকবে বলে অনুমান করা হয়।
প্রতিবেদন অনুসারে ২০২৩ সালে বৈশ্বিক বাণিজ্য সংকোচিত হবে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ আর বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ১ দশমিক ৯ শতাংশ হারে। ভোগ্যপণ্যের চাহিদা হ্রাস, ইউক্রেনে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ ও সাপ্লাই চেইনের অব্যাহত চ্যালেঞ্জের ফলে বিশ্বব্যাপী নাজুক বাণিজ্য পরিস্থিতির কথাও উল্লেখ করা হয়।
জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে দিয়ে বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর আর্থিক অবস্থান মূলত বিনিময় হারের অবমূল্যায়ন, উচ্চঋণের খরচ এবং ক্রমবর্ধমান ঋণ সংকটের কারণে এক ধরনের অবরোধের মধ্যে রয়েছে।’ তবে তিনি আর্থিক কঠোরতার বিরুদ্ধে যুক্তি দেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি স্বল্পমেয়াদ চিন্তাভাবনা কিংবা আর্থিক কঠোরতা আরোপের সময় নয়, এটি মূলত বৈষম্যকে বাড়িয়ে তোলে, দুর্ভোগ বাড়ায় এবং এসডিজি লক্ষ্যমাত্রাগুলো নাগালের বাইরে নিয়ে যেতে পারে।’
প্রতিবেদনে ভারতের খুচরা মূল্যস্ফীতি ২০২২ সালে ৭ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ২০২৩ সালে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হবে বলে
অনুমান করা হয়। কারণ বিশ্বব্যাপী ভোগ্যপণ্যের মাঝারি মূল্য ও মুদ্রার ধীর অবমূল্যায়ন আমদানীকৃত মূল্যস্ফীতিকে খানকিটা স্বাভাবিক করতে পারে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) ২০২২ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বেশির ভাগ উন্নত অর্থনীতির তুলনায় খানিকটা পরে তাদের আর্থিক কঠোরতা জারি করে। কারণ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো মূল্যস্ফীতি হ্রাসের পাশাপাশি ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যস্ফীতির প্রত্যাশা পূরণকে অগ্রাধিকার দেয়। তাই প্রত্যাশা করা হচ্ছে ২০২৩ সাল ঘিরেও সুদের হার বাড়বে।
জাতিসংঘের এ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, উচ্চসুদহার উন্নয়নশীল দেশগুলোকে উচ্চঋণ খরচের দিকে পরিচালিত করছে। সেক্ষেত্রে ভারতের অতিরিক্ত সুদ পরিশোধের পরিমাণ হবে মোট সরকারি ব্যয়ের ৮ দশমিক ৭ শতাংশ।
প্রতিবেদন অনুসারে, বড় অর্থনীতিগুলোর তুলনায় ভারতে চার বছরের মধ্যে বেকারত্বের হার সর্বনিম্ন ৬ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে। কারণ তারা ২০২২ সালে শহর ও গ্রামীণ উভয় পর্যায়েই কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। যদিও যুব কর্মসংস্থান প্রাক-মহামারী স্তরের নিচে রয়ে গেছে, বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে। তবে সুদের হার বৃদ্ধির মাধ্যমে মূল্য স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার ছাড়াও ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং মালদ্বীপ ভর্তুকি দিয়ে খাদ্য ও জ্বালানির উচ্চমূল্যের প্রভাবকে প্রশমিত করতে সক্ষম হয়েছে।