পেলের হতভাগা কন্যা সান্দ্রা

ইতিহাসের সেরা ফুটবলার খ্যাত এডসন অরান্তেস দো নাসিমেন্তো ‘পেলে’ গত ২৯ ডিসেম্বর ইহলোকের মায়া কাটিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন অনন্তলোকে।

ইতিহাসের সেরা ফুটবলার খ্যাত এডসন অরান্তেস দো নাসিমেন্তো পেলে গত ২৯ ডিসেম্বর ইহলোকের মায়া কাটিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন অনন্তলোকে। মৃত্যুর পর তার জীবনের নানা কাহিনী উন্মোচিত হয়েছে। সর্বশেষ তালিকায় যুক্ত হয়েছে সম্পত্তির উইলে মেয়ের নাম যুক্ত করার ঘটনা।

খেলোয়াড় হিসেবে পেলে যখন বিশ্বব্যাপী খ্যাতির চূড়ায় সেই সময় ১৯৬৪ সালে জন্ম হয় সান্দ্রা রেজিনার। তার মা আনিসিও মাচাদোর সঙ্গে পেলের প্রণয় ছিল এবং আনিসিও ছিলেন পেলের বাসার পরিচ্ছন্নতাকর্মী। কিন্তু সান্দ্রাকে মেয়ে হিসেবে কখনই স্বীকার করে নেননি পেলে।

মাচাদো স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতির জন্য দীর্ঘ লড়াই করে ব্যর্থ হন। জীবদ্দশায় মেয়ে সান্দ্রা রেজিনাকে কখনই স্বীকৃতি দেননি পেলে। এমনকি ডিএনএ পরীক্ষায় বিষয়টি প্রমাণিত হলেও পেলের স্বীকৃতি মেলেনি। ২০০৬ সালে ক্যান্সারে মারা যান পেলের এই হতভাগা কন্যা। এবার জানা গেল, সম্পত্তির উইলে সান্দ্রাসহ সাত সন্তানের নাম রেখেছেন তিনি। তার মানে, মেয়ে হিসেবেও তার স্বীকৃতি মিলল। 

১৭ বছর আগে মারা যান সান্দ্রা। কিন্তু জীবদ্দশায় তিনি জানতে পারেননি যে বাবা তাকে একদিন অন্যতম সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি দেবেন।

মারা যাওয়ার আগে সান্দ্রার দুই সন্তানের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় পেলের। সান্দ্রার দুই সন্তান গ্যাব্রিয়েল অরান্তেস নাসিমেন্তো অক্টাভিও ফেলিনতো নেতো ২৮ ডিসেম্বর দেখা করেন তাদের নানার সঙ্গে। এই সাক্ষাৎ নিয়ে মুগ্ধ গ্যাব্রিয়েল, কেননা এটা ছিল তার মায়ের সারা জীবনের স্বপ্ন, যা পূরণ হয়নি। পেলের সঙ্গে সাক্ষাতের প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে গ্যাব্রিয়েল বলেন, খুবই শিহরিত ছিলাম, কেননা আমরা এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলাম। প্রত্যেক পরিবারেরই থাকে সংগ্রাম আর দ্বন্দ্বের গল্প, আমাদেরও ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু কখনো কখনো মিলিত হওয়া কিংবা ভালোবাসা অন্য সবকিছুকে ছাপিয়ে যায়। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।

পেলের ১৩ মিলিয়ন পাউন্ড সম্পত্তির উইলে যেহেতু সান্দ্রার নাম রয়েছে, তাই এর অংশ পাবেন তার দুই সন্তান গ্যাব্রিয়েল আর অক্টাভিও।

বিয়ে প্রেমের সম্পর্ক মিলিয়ে পেলের ঔরসে মোট সাত সন্তানের জন্ম হয়। ১৯৬৬ সালে রোজমেরি দস রেইস চোলবিকে বিয়ে করেন ব্রাজিলের কালো মানিক খ্যাত কিংবদন্তি এই ফুটবলার, যার ঘরে জন্ম হয় কন্যা কেলি জেনিফার এবং পুত্রসন্তান এডিনহোর। ১৯৮২ সালে রোজমেরির সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় পেলের। ওই সময় ১৮ বছর বয়সী টিভি প্রেজেন্টার জুজার সঙ্গে তার প্রেমের গুঞ্জন ছিল।

১৯৯৪ সালে ৫৪ বছর বয়সে সাইকোলজিস্ট গায়িকা আসিরিয়া লেমোস সিক্সাসকে বিয়ে করেন পেলে, ১৯৯৬ সালে যার গর্ভে জন্ম নেয় যমজ সন্তান জসুয়া সেলেস্তের। ছয় বছর প্রেমের পর ২০১৬ সালে পেলে বিয়ে করেন তার চেয়ে ৩২ বছরের ছোট মার্সিয়া আওকিকে। তখন পেলের বয়স ৭৬ বছর!

বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কে দুই সন্তানের জন্ম দেন পেলে, যার মধ্যে ১৯৬৮ সালে সাংবাদিক লেনিতা কার্টজের গর্ভে জন্মগ্রহণ করা ফ্লাভিয়া কার্টজকে তিনি স্বীকৃতি দিলেও সান্দ্রা জীবদ্দশায় পেলেকে বাবা বলে যেতে পারেননি। যদিও সম্পত্তির উইলে সান্দ্রার নাম রেখে তাকে মেয়ে হিসেবে মেনে নিয়েছেন পেলে। এটি সান্দ্রা জীবিত থাকা অবস্থায় জানতে পারলেন না। এটি ফুটবল রাজার বর্ণাঢ্য জীবনের এক করুণ ট্র্যাজেডি।

মার্কা ডেইলি মেইল

আরও