ফ্যাশন ডিজাইন

ফ্যাশনবিমুখ আফসানা এখন ফ্যাশন শোর বিচারক

ছোটবেলায় মা-বাবার পছন্দে পোশাক পরতেন। কলেজ জীবনে যে সময়ে তার বান্ধবী নিজের পছন্দে নানা ডিজাইনের পোশাক পরতেন তখনো ছিলেন হাল ফ্যাশনের ব্যাপারে উদাসীন।

ছোটবেলায় মা-বাবার পছন্দে পোশাক পরতেন। কলেজ জীবনে যে সময়ে তার বান্ধবী নিজের পছন্দে নানা ডিজাইনের পোশাক পরতেন তখনো ছিলেন হাল ফ্যাশনের ব্যাপারে উদাসীন। মা-বাবার পছন্দই যেন তার পছন্দ। পোশাকের ডিজাইন বা ফ্যাশন নিয়ে তার কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। ব্যাপারটা এমন যে কিছু একটা হলেই চলবে। ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন ছিল স্থাপত্যে, অবশ্য মা-বাবা চাইতেন মেয়েকে ডাক্তার বানাবেন। দুইয়ের সমীকরণ না মেলায় শেষমেশ ভর্তি হলেন ঢাকার বিজিএমইএ ইউনিভর্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির ফ্যাশন ডিজাইন বিভাগে।

তার ফ্যাশন ডিজাইনে আসার পথ ছিল অনেকটা গল্পের মতোই। স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি একজন দেশসেরা ফ্যাশন ডিজাইনার হবেন, বসবেন ফ্যাশন শোর বিচারকের মঞ্চে। প্রথমদিকে ফ্যাশন ডিজাইন বিভাগে ভর্তি হওয়ার লক্ষ্য ছিল কেবল ডিগ্রি অর্জন; কখনো ভালো লাগা কাজ করত না। কিন্তু বই পড়ার অভ্যাস থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কয়েক মাস পর নিয়মিত গ্রন্থাগারে যাওয়া শুরু করেন। আর ফ্যাশন ডিজাইনের বই পড়তে পড়তে একসময় জগতের প্রেমে পড়ে যান। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি ফ্যাশন ডিজাইনার আফসানা ফেরদৌসীকে।

জাতীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ২৫টির বেশি শো এবং এক্সিবিশনে অংশগ্রহণ করেছেন। লন্ডন, মেক্সিকো, মালয়েশিয়া, হংকং, বার্লিন, কাজাখস্তান ভারতে প্রদর্শিত হয়েছে তার ডিজাইন করা পোশাক। শীতলপাটি থেকে পটচিত্র, জামদানি মোটিফ, আর্কিটেকচারাল স্থাপত্য কিংবা গল্প, কবিতা, দেশের পশু-পাখি সবই তুলে ধরেন পোশাকে। নকশাগুলো শৈল্পিক ছন্দে ফুটে ওঠে কাপড়ে। পোশাকে ডিজাইন করা কবিতা যেন নিয়ে যায় শৈশবে, রয়েছে প্রতিবাদ আর সচেতনতার বার্তা। নকশিকাঁথার মাধ্যমে সমাজের নানা সমস্যা যেমন ধর্ষণ, কটূক্তি কিংবা সুন্দরবন বাঁচানোর গল্পচিত্র সবই উঠে আসে তার পোশাকে। আফসানার আরেকটি নজরকাড়া কাজ হলো আপ সাইক্লিং অর্থাৎ পরিত্যক্ত পোশাককে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করা।

আফসানা এখন দেশে-বিদেশে দুই জায়গায়ই ফ্যাশন শোর বিচারক হিসেবে কাজ করছেন। কর্মজীবনের সর্বশেষ বাংলাদেশ গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রির টিম গ্রুপের সাসটেইনেবল ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। রয়েছে নিজস্ব ব্র্যান্ড আফসানা ফেরদৌসী (এএফ) তিনি লন্ডনে অনুষ্ঠিত এসডিসি ইন্টারন্যাশনাল ডিজাইন কম্পিটিশনে ২০১৮ ২০২১ সালে বসেছেন বিচারকের আসনে। ২০১৮ সালে রাশিয়ায় বিশ্বের সব চেয়ে বড় স্কিলস কম্পিটিশন ওয়ার্ল্ড স্কিলসের ফ্যাশন টেকনোলজি এবং ২০২১ সালে ফিনল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড স্কিলস স্পেশাল এডিশন কম্পিটিশনে বিচারক ফ্যাশন টেকনোলজি এক্সপার্ট হিসেবে ডাক পান তিনি। বাংলাদেশ সরকার আয়োজিত ওয়ার্ল্ড স্কিলস বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু ন্যাশনাল স্কিলস কম্পিটিশনের চিফ এক্সপার্ট বিচারক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। সোসাইটি অব ডায়ার্স অ্যান্ড কালারিস্ট আয়োজিত বাংলাদেশের এসডিসি ইন্টারন্যাশনাল ডিজাইন কম্পিটিশনের বিচারক হিসেবেও কাজ করছেন ২০১৫ সাল থেকে। ২০১৬ সাল থেকে কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর।

আফসানার কাছে ফ্যাশন নিয়ে কাজ করা মানে শুধু পোশাক ডিজাইন করা নয়। দেশের হয়ে ফ্যাশন এবং ফ্যাশনের বিদ্যা ইতিহাস সবার কাছে পৌঁছে দিতে চান তিনি। আফসানা ফেরদৌসী নামে ক্লদিং ব্র্যান্ডের মাধ্যমে নিজের দেশের তাঁত, সূচি শিল্প ঐতিহ্যকে সঙ্গে করেই দেশের বস্ত্র শিল্প আরো এগিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা তার। যতদিন বাঁচবেন ততদিন পোশাকের ডিজাইনে পরিবেশ মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলার পণ আফসানার। যে শিকড় নিয়ে কাজ করার জন্যই আফসানা ফেরদৌসীর ফ্যাশন ডিজাইনার হয়ে ওঠা সে শিকড়ের মানুষের গল্পই তুলে ধরতে চান পোশাকের ক্যানভাসে।

আরও