তিন কার্যদিবস ধরে দেশের পুঁজিবাজারে নিম্নমুখিতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রতিদিনই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। গতকাল প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স দশমিক ৫৩ শতাংশ পয়েন্ট হারিয়েছে। পাশাপাশি এক্সচেঞ্জটির দৈনিক লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দেশের আরেক পুঁজিবাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) গতকাল সূচক ও লেনদেন কমেছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া ও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে নিম্নমুখিতার কারণে অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা করছেন বিনিয়োগকারীরা। কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি ও ডলার সংকটের কারণে ব্যবসা পরিচালনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং এতে অধিকাংশ তালিকাভুক্ত কোম্পানির মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ কারণে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশার পারদ ক্রমেই কমছে। ফলে গতকাল পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দ্বিধাগ্রস্ততা দেখা গেছে এবং শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রির পরিমাণ ছিল বেশি। সব মিলিয়ে এসব কারণে পুঁজিবাজারে টানা দরপতন হচ্ছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় লেনদেন শুরুর পর ২ মিনিট পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী ছিল সূচক। এর পর থেকে শেয়ার বিক্রির চাপে পয়েন্ট হারাতে শুরু করে ডিএসইএক্স। মাঝে বেশ কয়েকবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে সূচকটি। দুপুর ১২টা ৫৪ মিনিট পর্যন্ত ইতিবাচক অবস্থানে ছিল ডিএসইএক্স। তবে শেষ ঘণ্টায় বিক্রয়চাপের কারণে শেষ পর্যন্ত গতকাল দিন শেষে আগের দিনের তুলনায় ৩৪ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৩৫০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে ডিএসইএক্স। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইর ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ গতকাল ১২ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ২৩১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল দিন শেষে ১০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৮৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। গতকাল সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, ওরিয়ন ইনফিউশন, সি পার্ল বিচ রিসোর্টস অ্যান্ড স্পা ও লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের শেয়ারের।
ডিএসইতে গতকাল ১ হাজার ১৯ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের কার্যদিবসে লেনদেন ছিল ১ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। গতকাল এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ৩৫৬টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ৩৪টির, কমেছে ১০৪টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২১৮টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।
খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের ২১ দশমিক ৩ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে তথ্যপ্রযুক্তি খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ দখলে নিয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। ১২ দশমিক ৪ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বিবিধ খাত। মোট লেনদেনের ৮ দশমিক ৬ শতাংশের ভিত্তিতে চতুর্থ অবস্থানে ছিল কাগজ ও মুদ্রণ খাত। গতকাল পুঁজিবাজারে পাট খাতে সবচেয়ে বেশি ৫ দশমিক ৩ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। অন্যদিকে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্নের ভিত্তিতে শীর্ষে ছিল সেবা ও আবাসন খাত।
সিএসইর নির্বাচিত সূচক সিএসসিএক্স গতকাল ৯৪ পয়েন্ট কমে ১১ হাজার ২৩৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সিএসইর সব শেয়ারের সূচক সিএএসপিআই গতকাল ১৫৬ পয়েন্ট কমে ১৮ হাজার ৭৪৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ২১১টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৫টির, কমেছে ৮২টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১০৪টির বাজারদর। গতকাল সিএসইতে ১৬ কোটি ৮০ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৩৬ কোটি ২০ লাখ টাকা।