হিরু ও তার সহযোগীদের ১১ কোটি টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজারের আলোচিত বিনিয়োগকারী ও সমবায় অধিদপ্তরের উপনিবন্ধক মো. আবুল খায়ের হিরু এবং তার সহযোগীরা মিলে সাতটি কোম্পানির শেয়ারদর কারসাজির মাধ্যমে ৪৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকার মূলধনি মুনাফা অর্জন করেছেন। কারসাজির ঘটনায় সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের দায়ে গত তিন মাসে তাদের ১০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা

পুঁজিবাজারের আলোচিত বিনিয়োগকারী সমবায় অধিদপ্তরের উপনিবন্ধক মো. আবুল খায়ের হিরু এবং তার সহযোগীরা মিলে সাতটি কোম্পানির শেয়ারদর কারসাজির মাধ্যমে ৪৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকার মূলধনি মুনাফা অর্জন করেছেন। কারসাজির ঘটনায় সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের দায়ে গত তিন মাসে তাদের ১০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)

কমিশনের তথ্যানুসারে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বছরের মার্চ পর্যন্ত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ঢাকা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, ফরচুন সুজ লিমিটেড, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড, ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড বিডিকম অনলাইন লিমিটেডের শেয়ার নিয়ে কারসাজি হয়। এসব কারসাজিতে মো. আবুল খায়ের হিরু, তার পিতা আবুল কালাম মাতবর, তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, তার বোন কনিকা আফরোজ, তার শ্যালক কাজী ফরিদ হাসান, তার ব্যবসায়িক অংশীদার ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, তার নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কো-অপারেটিভ লিমিটেড দেশ আইডিয়াল ট্রাস্ট কো-অপারেটিভ লিমিটেড, ফরচুন সুজ লিমিটেড এবং হিরু ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেড জড়িত ছিল। ডিআইটি কো-অপারেটিভের চেয়ারম্যান হচ্ছেন মো. আবুল খায়ের হিরু এবং কোষাধ্যক্ষ কাজী সাদিয়া হাসান। দেশ আইডিয়াল ট্রাস্ট কো-অপারেটিভের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হচ্ছেন মো. আবুল খায়ের হিরু।

কাজী সাদিয়া হাসান তার স্বামী মো. আবুল খায়ের হিরু মিলে ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে মে পর্যন্ত সময়ে ঢাকা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের শেয়ারদর কারসাজি করে কোটি ৩৪ লাখ টাকার মুনাফা করেছেন। শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকার দায়ে বছরের ২০ জুন কাজী সাদিয়া হাসান সহযোগীদের ৯৫ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি।

একইভাবে কাজী সাদিয়া হাসান সহযোগীরা গত বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর কারসাজির মাধ্যমে কোটি ৮৮ লাখ টাকা মূলধনি মুনাফা অর্জন করেছেন। কারসাজির ঘটনায় বছরের ২০ জুন বিএসইসি কাজী সাদিয়া হাসান তার সহযোগীদের ৪২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে।

দেশ আইডিয়াল ট্রাস্ট কো-অপারেটিভ লিমিটেড ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে এশিয়া ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের শেয়ারদর কারসাজির মাধ্যমে বাড়িয়ে কোটি ২৪ লাখ টাকার মূলধনি মুনাফা অর্জন করেছে। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারের অন্যতম ক্রেতা ছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের কারণে দেশ আইডিয়াল ট্রাস্ট কো-অপারেটিভকে বছরের ২০ জুন ৭২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি।

২০২১ সালের ২০ মে থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত সময়ে ফরচুন সুজ লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে  কোটি ১৩ লাখ টাকার মূলধনি মুনাফা অর্জন করেছেন আবুল কালাম মাতবর তার সহযোগীরা। ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানও সময়ে কোম্পানিটির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার কিনেছিলেন।  ফরচুন সুজের শেয়ার কারসাজিতে সংশ্লিষ্টতার কারণে আবুল কালাম মাতবর তার সহযোগীদের বছরের জুলাই কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি।

এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে গত বছরের মে থেকে ২৪ মে সময়ে ১৫ কোটি ২২ লাখ টাকা মূলধনি মুনাফা অর্জন করেছেন কনিকা আফরোজ তার সহযোগীরা। এছাড়া ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানও সময়ে কোম্পানিটির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ারে বিনিয়োগ করেছিলেন। শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের দায়ে বছরের জুলাই কনিকা আফরোজ তার সহযোগীদের কোটি ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি।

আবুল কালাম মাতবর তার সহযোগীরা ২০২১ সালের ১৫ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে ওয়ান ব্যাংক লিমিটেডের শেয়ারদর কারসাজির মাধ্যমে ১৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকার মূলধনি মুনাফা অর্জন করেছেন। এছাড়া ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ফরচুন সুজ লিমিটেডও সময়ে ব্যাংকটির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার কিনেছে। ব্যাংকটির শেয়ার কারসাজির দায়ে বছরের আগস্ট আবুল কালাম মাতবর তার সহযোগীদের কোটি টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি।

ডিআইটি কো-অপারেটিভ লিমিটেড এর সহযোগীরা কারসাজির মাধ্যমে বছরের থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত তিনদিনে বিডিকম অনলাইন লিমিটেডের শেয়ারদর বাড়িয়ে কোটি ৭০ লাখ টাকার মূলধনি মুনাফা অর্জন করেছেন। শেয়ারদর কারসাজির মাধ্যমে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করায় বছরের আগস্ট ডিআইটি কো-অপারেটিভ এর সহযোগীদের ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি।

বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বণিক বার্তাকে বলেন, সন্দেহজনক কোনো লেনদেন শেয়ারদর বৃদ্ধির বিষয়টি কমিশন নিয়মিতভাবে নজরদারি করে থাকে। এক্ষেত্রে সিকিউরিটিজ আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটলে কমিশন তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।

বিষয়ে জানতে চাইলে মো. আবুল খায়ের হিরু বণিক বার্তাকে বলেন, বিএসইসির পক্ষ থেকে সব চিঠি তিনি এখনো পাননি। চিঠি পেলে বিষয়ে আপিল করবেন।

আরও