নাটকের পরিবর্তনটাও খুব স্বাভাবিক বিষয়

বাংলাদেশের জনপ্রিয় নাট্যকার, অভিনেতা, লেখক ও পরিচালক বৃন্দাবন দাস। বাংলা টেলিভিশন নাটকের ধারা পরিবর্তনে তার ভূমিকা অপরিসীম। হাড়কিপটে, সাকিন সারিসুরি, ঘর কুটুম, পিতা বনাম পুত্র গং নামের শতাধিক নাটক ও ধারাবাহিক নাটকের রচয়িতা তিনি। নাট্যজগৎ আর ব্যক্তিজীবন নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন বৃন্দাবন দাস। সাক্ষাৎকার

বাংলাদেশের জনপ্রিয় নাট্যকার, অভিনেতা, লেখক পরিচালক বৃন্দাবন দাস। বাংলা টেলিভিশন নাটকের ধারা পরিবর্তনে তার ভূমিকা অপরিসীম। হাড়কিপটে, সাকিন সারিসুরি, ঘর কুটুম, পিতা বনাম পুত্র গং নামের শতাধিক নাটক ধারাবাহিক নাটকের রচয়িতা তিনি। নাট্যজগৎ আর ব্যক্তিজীবন নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন বৃন্দাবন দাস। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাবিহা জামান শশী

বাংলা নাটক বর্তমান সময়ে কেমন করছে বলে মনে করেন?

বাংলা নাটক বলতে আমরা বুঝি টেলিভিশন নাটককে। এটা ভালোমন্দ সব মিলিয়েই রয়েছে। কারণ বিনোদনের নানা মাধ্যম আসার কারণে মানুষের রুচির পরিবর্তন এসেছে। হয়তো কারণেই আগে যে গল্পের নাটকগুলো মানুষের ভালো লাগত এখন সেগুলো আগের মতো আর শক্ত অবস্থানে নেই। এখনকার তরুণরা ওই নাটকগুলো খুব বেশি দেখছেন না। তাই হয়তো আমরা বলি বর্তমানে নাটকের সুদিন নেই। অন্যদিকে বলা যায়, নাটক নিয়ে এখন অনেক কাজ হচ্ছে। ভিন্ন ধারার নাটক নির্মাণ করা হচ্ছে এখন। সে হিসেবে বলা যায়, এখন অনেক ভালো কাজ হচ্ছে। দর্শকের চাহিদার সঙ্গে বিনোদনের কমার্শিয়াল ব্যাপারটা নানাভাবে পরিবর্তন আসছে। সব জায়গায় তো পরিবর্তন এসেছে। নাটকের পরিবর্তনটাও খুব স্বাভাবিক বিষয়। 

অনেকেই বলেন, সময়ে ধারাবাহিক নাটকে দর্শকের আগ্রহে ভাটা পড়েছে। নাটক রচয়িতা অভিনেতা হিসেবে নিয়ে আপনার মতামত কী?

একটা সময়ে ধারাবাহিক নাটক ছিল না। তখন নাটক বলতে ছিল কেবল একক নাটক। ধারাবাহিক বলতে ১৫ দিন পর একটা নাটক হতো বিটিভিতে। তারপর প্যাকেজ নাটক এল। বেসরকারি চ্যানেল আসার পর প্রথম একক নাটক, টেলিফিল্ম প্রচার হতো। ধারাবাহিক নাটক যেটা ছিল সেটা সপ্তাহে একদিন, দুদিন করে বর্তমানে পাঁচদিন। ধারাবাহিক নাটকের প্রচলন তো বেশি দিনের না। একটা সময় টেলিভিশনের সামনে বসে মানুষ নাটক দেখত। সে সময় দর্শকদের অভিযোগ ছিল বিজ্ঞাপনের জন্য তারা নাটক উপভোগ করতে পারে না। তবে এখন কিন্তু দর্শক অনলাইনে নাটক দেখতে পারছে। বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে এখন আগের মতো নিয়মিত নাটক দেখার সুযোগ তারা খুব বেশি পাচ্ছে না। আমার মনে হয় না মানুষ ধারাবাহিক নাটক দেখে না। তারা দেখে, কিন্তু সেটা টেলিভিশনে না, অনলাইন মাধ্যমে। মানুষ এখন নাটক মনে রাখে না। কারণ তারা সিরিয়াসভাবে সেটা দেখছে না। তবে করোনার সময় মানুষ নতুন করে আগের ধারাবাহিক নাটকগুলো দেখেছে। হাড় কিপটে, সাকিন সারিসুরি, নাটকগুলো নিয়ে মানুষ প্রচুর কমেন্ট করেছে লকডাউনের সময়ে। এখন বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যমের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ওটিটি প্লাটফর্ম রয়েছে, যেখানে আন্তর্জাতিক মানের সিরিয়াল দেখছে। সে কারণে ধারাবাহিক নাটকের আবেদন হারাবে এটা স্বাভাবিক। তাই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হবে। সব মিলিয়ে তাই মনে হতেই পারে যে ধারাবাহিকের আবেদন কমে গিয়েছে।

দীর্ঘ সময় নাটকের সঙ্গে আছেন। এখনকার সময়ের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কতটা দরদ দিয়ে কাজ করেন?

আমাদের সময়ে  অভিনয় শেখার জন্য ইনস্টিটিউশন ছিল না। তাই আমাদের সময়ে থিয়েটার দলগুলো ছিল জীবনবোধের একটা ইনস্টিটিউশন। সেক্ষেত্রে অভিনয় শেখা যতটা না থিয়েটার মানুষকে জানা, তার চেয়ে বেশি সমাজকে জানার মগজটা তৈরি করে দেয়ার জায়গা। সেক্ষেত্রে আমরা কিংবা আমাদের কিছু পরের জেনারেশন যারা মঞ্চ থেকে আসছি আমাদের মূল্যবোধ, ভাবনা এসেছে মঞ্চ থেকে। অভিনয় তো অনেকেই করে, কিন্তু এই বোধটা যখন থাকে না তখন একটু বেখাপ্পা লাগে। বোধসহ যারা অভিনয় করে তাদের কাজ ভালো লাগে। তবে এই না যে মঞ্চ করলেই অভিনয় ভালো করবে। সমাজে একটা পরিবর্তন এসেছে। এর সঙ্গে মূল্যবোধের জায়গা সীমিত হয়ে গিয়েছে। এটার স্বাদ আপনি সব জায়গাতেই পাবেন। 

ডিজিটাল মাধ্যমের কারণে কি বাংলা নাটকের সঙ্গে দর্শকের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হচ্ছে?

মানুষ অনলাইনে বসে নাটক, গান আর সিনেমা দেখছে। দেশের দেশের বাইরের বিভিন্ন অনুষ্ঠান মানুষ এখন ঘরে বসেই দেখছে। মানুষের কাছে এখন অনেক বিকল্প প্লাটফর্ম রয়েছে, তাই যেটা ভালো লাগে এমনকি যেটার হাইপ থাকে সেটাই মানুষ দেখছে। আমার মনে হয় ডিজিটাল মাধ্যমের কারণে বাংলা নাটক না, শুধু আমাদের দেশের কনটেন্টের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। 

ওটিটি প্লাটফর্মে অনেকেই কাজ করছেন। আপনার এমন কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি?

অবশ্যই করব। কারণ আমার কাজ হচ্ছে স্ক্রিপ্ট লেখা, সেটা টেলিভিশন কিংবা যেকোনো মাধ্যমের জন্য হতে পারে। নির্মাতা প্রযোজক অনেকের সঙ্গেই কথা হয়েছে। ভাবনার সঙ্গে সব মিলে গেলে ওটিটির জন্য লিখব।

আপনার লেখা চিত্রনাট্যগুলো আমাদের বাস্তব জীবনের সঙ্গেও মিলে যায়, অন্যদিকে আমরা আনন্দ পাই। ভালো চিত্রনাট্য লেখার মূলমন্ত্র কী আপনার?

মানুষের জীবন নিয়ে ভাবনাই মূল বিষয়। মানবিকতা, ভালোবাসা, মায়া-মমতা এগুলো অনুভব এবং পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা থাকতে হবে। কোনো কাজের মধ্য দিয়ে আমার একটা বক্তব্য বলার থাকে। একই জিনিস দেখে আমি কোনভাবে ব্যাখ্যা করব তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। ব্যাখ্যা করার জায়গা থেকে আমি চেষ্টা করি জীবনঘনিষ্ঠ বিষয় তুলে ধরতে, তাই হয়তো দর্শকের ভালো লাগে। ভালো লাগাটা আসলে আপেক্ষিক ব্যাপার। যাকে যেটা স্পর্শ করে তার কাছে সেটা ভালো লাগে। তবে আমি চেষ্টা করি একশ্রেণীর মানুষের দুঃখ-কষ্টকে হাসিকান্না দিয়ে তাদের ভাষায় তুলে ধরার।

অভিনয়ের পাশাপাশি নাটক নির্মাণ করা কতটা চ্যালেঞ্জিং?

দুটো বিষয় একসঙ্গে খুবই কম করা হয়। অভিনয়টা আমার কাছে খুবই শৌখিন। ঈদে কিছু নাটক করি। এছাড়া আমার নিয়মিত কাজ হচ্ছে লেখা। নিয়মিত কাজে খুব বেশি সমস্যা হয় না।

আরও