ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আমিন বাজার ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণ এবং পরিবেশ সুরক্ষার অংশ হিসেবে দেশের প্রথম বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী দুই বছরের মধ্যেই আলোর মুখ দেখবে প্রকল্পটি। তবে দহনযোগ্য বর্জ্য সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়বে সিটি করপোরেশনসহ প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা।
ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৫৪টি ওয়ার্ডের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বর্তমানে দুটি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্প দুটি হলো ৭৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আমিন বাজার ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ প্রকল্প এবং ৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক যান-যন্ত্রপাতি সংগ্রহের মাধ্যমে সড়ক পরিষ্কার ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কাজের উন্নয়ন প্রকল্প।
ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ২০০৯ সালে আমিন বাজার ল্যান্ডফিলে ৫৪ দশমিক ৮৮ একর জমিতে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম শুরু হয়। দাতা সংস্থা জাইকার প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০১৭ সালে এখানে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম সমাপ্তি ঘোষণার কথা থাকলেও ভার্টিক্যাল এক্সটেনশন (মূল ভূমির ওপর ৮০ মিটার প্রস্থ করে) বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে। আগামী এক-দেড় বছরের মধ্যে এখানে আর বর্জ্য অপসারণ সম্ভব হবে না। পরবর্তী সময়ে বর্জ্য অপসারণের প্রস্তুতি হিসেবে ৫৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮০ একর ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করেছে ডিএনসিসি। ৮০ একর ভূমির ৩০ একরে চলছে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের নির্মাণকাজ।
বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজটি করছে চীনা কোম্পানি চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএমইসি)। ৪২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হবে ১৫ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা। প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম পড়বে ১৮ টাকা ৬৫ পয়সা। প্রয়োজনীয় বর্জ্য সরবরাহ করতে না পারলে চীনা কোম্পানিকে ক্ষতিপূরণ দেবে ডিএনসিসি।
ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সিএমইসির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দৈনিক তিন হাজার টন বর্জ্য তাদের দিতে হবে। তবে কনস্ট্রাকশন বর্জ্য তারা নেবে না। বর্তমানে ডিএনসিসিতে ৩ হাজার ৫০০ টন বর্জ্য উত্পন্ন হচ্ছে। এর মধ্যে কনস্ট্রাকশন বর্জ্যই প্রায় ৪০০ টন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কনস্ট্রাকশন বর্জ্য বাদ দিলে বর্জ্য সংকটে পড়তে হবে দেশের প্রথম বর্জ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, রাজধানীর সংগৃহীত বর্জ্য কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। এর মধ্যে কনস্ট্রাকশন বর্জ্য সিএমইসি না নেয়ার ঘোষণা করেছে। অন্যসব বর্জ্যের মধ্যে কেবল কমবাস্টিবল ওয়েস্ট বা দহনযোগ্য বর্জ্যই বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহারযোগ্য। আনুমানিক হিসাবে করপোরেশনের সংগৃহীত বর্জ্যের মাত্র ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৭০০ টন বর্জ্য দহনযোগ্য। দুই বছর পর যদি বর্জ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়, তখন কমবাস্টিবল বর্জ্য সর্বোচ্চ ১ হাজার টন হবে।
সংগৃহীত কমবাস্টিবল বর্জ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ঢাকার প্রতি কেজি বর্জ্যে ৬০০ কিলোক্যালরি ক্যালরিফিক ভ্যালু থাকে। অথচ এক হাজার কিলোক্যালরি না হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব নয়। তার ওপর অধিকাংশ বর্জ্যই থাকে ভেজা। সবকিছু মিলিয়ে এ সিদ্ধান্ত সঠিক বলে মনে হচ্ছে নাম।
ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এম সাইদুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা আশা করছি, ডিএনসিসিকে বর্জ্য সংকটে পড়তে হবে না।
বর্জ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের সুবিধার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমত পরিবেশ সুরক্ষিত থাকবে এবং ল্যান্ডফিলের চাহিদা হ্রাস হবে।
প্রকল্পটির অগ্রগতির বিষয়ে বিপিডিবি সচিব মাহবুবুহর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী নৈতিক অনুমোদন দিয়েছেন। বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে বিটিংয়ে আছে। সেখান থেকে স্বাক্ষর হলেই আলোর মুখ দেখবে ডিএনসিসি তথা দেশের প্রথম বর্জ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র।