চলমান কভিড-১৯ অতিমারীর অভিঘাত সবচেয়ে বেশি পড়েছে দেশের যুবসমাজের ওপর। এ অভিঘাতের মাত্রা প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া যুবগোষ্ঠীর ওপর তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব এবং প্রযুক্তিগত বৈষম্য এ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সর্বোপরি একটি বিচ্ছিন্ন যুবসমাজে পরিণত করছে। যুবসমাজের এ বিচ্ছিন্নতাবোধ সমাজে নানা অসংগতি তৈরি করছে। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে যুবসমাজের এ বিচ্ছিন্নতাকে আরো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম, বাংলাদেশ এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ‘বাংলাদেশের বিযুক্ত যুবসমাজ: কে, কেন এবং কীভাবে’ শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল সংলাপের আয়োজন করা হয়।
সংলাপে শুভেচ্ছা বক্তব্যে নাগরিক প্লাটফর্মের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বিযুক্ত/বিচ্ছিন্ন যুবসমাজ নিয়ে এ আলোচনায় চারটি বিষয়কে বিশ্লেষণের চেষ্টা করা হয়েছে। ১. ‘বিযুক্ত যুবসমাজ’ একটি অর্থবহ প্রত্যয় কিনা? বিযুক্ত, বিচ্ছিন্ন বা অসংযোজিত এ যুবসমাজকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়; ২. বিযুক্ত/বিচ্ছিন্ন যুবসমাজের অন্তর্ভুক্ত কারা এবং কেন? ৩. অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা থেকে তরুণদের বিযুক্ত/বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণ পর্যালোচনা এবং ৪. গতানুগতিক যুবকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান ও নীতির পাশাপাশি এ বিযুক্ত/বিচ্ছিন্ন যুবসমাজের জন্য অর্থবহ ও কার্যকর সমাধান অনুসন্ধান। তিনি আরো বলেন, পিছিয়ে পড়া এবং বিযুক্ত যুবদের আলাদা করে দেখতে হবে।
ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জি সংলাপের প্রারম্ভিক বক্তব্যে জলবায়ু পরিবর্তনের পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, টেকসই খাদ্য উৎপাদন ও আহরণের ক্ষেত্রে যুবদের সামনে এগিয়ে আসতে হবে। করোনা বাস্তবতায় যুবদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ তিনি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে যুবদের যদি উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত করতে হয় তাহলে ইন্টারনেটের আওতা আরো বৃদ্ধি করতে হবে। যুবদের কাছে দক্ষতা ও চাকরি সম্পর্কিত সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে হবে।
উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক গবেষক মাহা মির্জা বলেন, নীতি পরিকল্পনা ও আলোচনায় দেশের যুবসমাজের জন্য যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে তা মোকাবেলার উদ্যোগ নেই। সব যুবগোষ্ঠীকে সমান গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় দেখতে হবে। ট্রান্সজেন্ডার অধিকার কর্মী এবং বৈশাখী টেলিভিশনের সংবাদ পাঠিকা তাসনুভা আনান শিশিরও বলেন, পিছিয়ে পড়া যুবদের বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির জন্য আইন, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য যে প্রয়োজন রয়েছে তার অভাবের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
ফিজিক্যালি-চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (পিডিএফ) প্রতিবন্ধী অধিকার কর্মী যোশীয় সাংমা চিবল বলেন, প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য এখনো সমাজে বিভিন্ন পর্যায়ে বৈষম্য রয়েছে। তিনি মন্তব্য করেন, শিক্ষা ব্যবস্থা ও কর্মসংস্থানে প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য বৈষম্য দূর করার জন্য বিশেষভাবে কাজ করতে হবে।
যুবদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে তাদের উন্নয়নের মূল ধারায় এনে অর্থনীতিতে অবদান রাখার সুযোগ দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন শামীম আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক, ইয়ুুথ এনগেজমেন্ট ফর সাসটেইনেবিলিটি (ইয়েস), বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে তিনি নীতিগুলো শুধু শহরকেন্দ্রিক না রাখার সুপারিশ দেন। চা শ্রমিকদের প্রতি বৈষম্যের কথা তুলে ধরে মোহন রবিদাস, চা শ্রমিক অধিকার কর্মী এবং সভাপতি, জাগরণ যুব ফোরাম বলেন, এ গোষ্ঠীর যুবদের শিক্ষা থেকে বিমুখ রাখা হয় এবং চা বাগানের বাইরের পৃথিবী থেকে তারা প্রায় বিযুক্ত, তাই তারা নিজেদের কথা তুলে ধরতে পারেন না। বিডিওএসএনের প্রজেক্ট ম্যানেজার জিমি আমির বিযুক্ত যুবদের সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করার সুপারিশ করেন।
সংলাপে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে যুব প্রতিনিধিরা, সাংস্কৃতিক কর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, আদিবাসী, দলিত, প্রতিবন্ধী, শ্রমিক, এনজিও প্রতিনিধি, ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তা এবং সমাজকর্মী অংশগ্রহণ করে তাদের মতামত তুলে ধরেন।