রোহিঙ্গা সংকটের সূচনালগ্ন থেকে এ অবধি বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আবাসন নিশ্চিত করে আসছে। তবে এক্ষেত্রে মিয়ানমারেরও নিজেদের অংশের দায় স্বীকার করতে হবে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনই হতে পারে একমাত্র স্থায়ী সমাধান।
ইয়ুথ পলিসি ফোরাম (ওয়াইপিএফ) আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা সংকটে গৃহীত ব্যবস্থার জবাবদিহিতা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এ কথা বলেন বাংলাদেশের সংসদ সদস্য ও বৈশ্বিক নীতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নাহিম রাজ্জাক। তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে আসিয়ান ও চীনের ভূমিকার প্রতি জোর দেন।
ওয়েবিনারটি আয়োজনে ওয়াইপিএফে যুক্ত ছিল অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশী ও দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষার্থীদের সংগঠন অক্সফোর্ড বাংলাদেশ সোসাইটি ও অক্সফোর্ড সাউথ এশিয়ান সোসাইটি। ওয়েবিনারে নাহিম রাজ্জাক ছাড়াও বক্তব্য রাখেন মালয়েশিয়ার সিনেটর এবং প্রাক্তন সহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিউ চিন টং, যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল ক্রিমিনাল জাস্টিসের যুদ্ধাপরাধ বিষয় তদারকিতে নিয়োজিত সাবেক বিশেষ রাষ্ট্রদূত স্টিফেন র্যাপ, বার্মিজ রোহিঙ্গা সংগঠন, যুক্তরাজ্যের সভাপতি তুন খিন এবং অক্সফোর্ডের আন্তর্জাতিক শান্তি ও সুরক্ষা কার্যক্রমের পরিদর্শক কার্স্টি সাদারল্যান্ড।
ইয়ুথ পলিসি ফোরামের অন্যতম সংগঠক জহির আব্বাস ও অক্সফোর্ড বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি জাহিদুল সাজিদের সঙ্গে আলোচনাটির সম্মুখ সঞ্চালনায় ছিলেন অক্সফোর্ড সাউথ এশিয়ান সোসাইটির সদস্য গায়ত্রী দেবী।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘটিত গণহত্যা সমালোচনায় ওয়েবিনারটি অত্যন্ত সময়পোযোগী বলে মনে করেন তুন খিন। তিনি বলেন, ১৯৬২ সালের সামরিক অভ্যুত্থান-পূর্ববর্তী সময়ে রোহিঙ্গারা স্বীকৃত সম্প্র্রদায় ছিল। ১৯৮২ সালের নাগরিক আইনের পর তিনিসহ লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিকত্ব হারান। ফলে তিনি নিজে সেখানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারেননি। এ আইন আন্তর্জাতিক চলিত আইনের পরিপন্থী।
তুন খিন জাতিসংঘের প্রতিরক্ষা পরিষদে পাঁচবার তার সংগঠন থেকে এ সমস্যা তুলে ধরেন। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে তিনি গাম্বিয়ার আইনত পদক্ষেপ ও সংহতিকেও সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, আমরা গাম্বিয়ার মতো ছোট্ট একটি দেশকে আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গাদের পক্ষে অবস্থান নিতে দেখেছি। ফলে একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা জারি করা হয়েছিল। মিয়ানমারের প্রতি ছয় মাসে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা। তবে আমরা এখনো কোনো প্রতিবেদন দেখিনি।
স্টিফেন র্যাপ বলেন, আমি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে চারবার বাংলাদেশ এসেছি। যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কে রাজনৈতিক নেতা ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। দায়মুক্তি আরো অপরাধ প্ররোচিত করে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা জনসংখ্যার আকস্মিক বৃদ্ধি গণহত্যার ফল। রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছে না। অতিসত্বর এ অভিযোগগুলো দায়ের করা জরুরি। যেকোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষণে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং অবশ্যই তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এ নজির যাতে বিশ্বে সব সম্প্র্রদায়ের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে তৎপর হয়।