বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতাদের সমবায় সমিতির গুরুত্ব সম্পর্কে সুস্পষ্ট চিন্তা ছিল। সংবিধানের ১৩ অনুচ্ছেদে সম্পদের তিন ধরনের মালিকানার কথা বলা হয়েছে। যথা রাষ্ট্রীয়, সমবায় ও ব্যক্তিগত। ক্ষুদ্র কৃষক, সুতার, জেলে, শ্রমজীবী মানুষদের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য স্বয়ং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমবায়কে একটি অন্যতম পন্থা হিসেবে দেখেছেন। পাশাপাশি তিনি এটাও জানতেন যে কোটারি গোষ্ঠীরা সমবায় সমিতিতে অনুপ্রবেশ করে সমবায়ের প্রকৃত সম্ভাবনাকে বিনষ্ট করতে পারে। তিনি চেয়েছিলেন যে সমবায় সমিতির নেতৃত্বে প্রকৃত কৃষক, জেলে, সুতার, শ্রমিকরা থাকবেন; ধনিক শ্রেণীর মানুষ এই ধরনের শ্রমজীবীদের জন্য গড়া সমবায় সমিতিতে অনুপ্রবেশ করবে না।
প্রকৃত কৃষকদের নিয়ে গড়ে ওঠা সমবায় সমিতি তাদের কৃষিপণ্যকে অধিকতর সহজে গুদামজাত ও বিপণন করে পণ্যের প্রকৃত মূল্য পেতে পারে। একইভাবে মত্স্যজীবীরা সমবায় সমিতির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে মত্স্য আহরণের কাজে যুক্ত হতে পারেন। ফলে তারা অন্যান্য উৎস থেকে চড়া সুদে ঋণ নেয়ার চেয়ে মুক্তি পেতে পারেন। সমাজের প্রান্তিক শ্রেণীর শ্রমজীবী মানুষদের সমবায় সমিতির মাধ্যমে ক্ষমতায়ন করে তাদের মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য থেকে মুক্ত করার স্বপ্ন বঙ্গবন্ধুর ছিল। কাগজে-কলমে লক্ষ করলে দেখা যাবে আমাদের দেশে সমবায় সমিতির সংখ্যা এবং সেসব সমিতিতে সমবায়ীর সংখ্যা অনেক। কিন্তু বাংলাদেশের সমবায় সমিতিগুলোর মাধ্যমে জাতির স্থপতির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি।
বাংলাদেশী সমবায় সমিতিগুলো তাদের ঈপ্সিত লক্ষ্য অর্জন না করার পেছনে একটি প্রধান কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের বিদ্যমান সমবায় আইন। যথাযথ আইনি কাঠামো না থাকলে সরকারের দেয়া বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রকৃত সমবায়ীদের হাতে না গিয়ে বিভিন্ন কায়েমি স্বার্থবাদীর কাছে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সরকারি খাসজমি বা জলমহাল, যেগুলো কিনা পাওয়ার বরাদ্দের ক্ষেত্রে সমবায়ীদের অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা, সেখানে অনেক সময় অভিযোগ পাওয়া যায় যে তারা সেটি পান না; সমাজের অনগ্রসর গোষ্ঠীর নামে বিভিন্ন ধনিক শ্রেণীর প্রতিনিধিরা এ সুবিধা ভোগ করেন। এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে হলে আইনের মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করতে হবে যে সমাজের প্রান্তিক শ্রেণীর সদস্যদের জন্য গড়ে ওঠা সমবায় সমিতিতে ওই শ্রেণীর সদস্যরাই নেতৃত্বে থাকবেন, তাদেরকে যথাযথভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন না, এমন কেউ তাদের সমিতির নেতৃত্বে উড়ে এসে জুড়ে বসবেন না। শুধু সমবায় আইন সংশোধনের মাধ্যমেই সমবায়ীদের সব সমস্যা দূরীভূত হবে না, কিন্তু এটি অস্বীকার্য যে বিদ্যমান আইনের মৌলিক সংস্কার ছাড়া সমবায় সমিতিগুলোর প্রকৃত সম্ভাবনা অর্জন বা বঙ্গবন্ধু তথা বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন অসম্ভব। একটি সমবায়বান্ধব আইনি কাঠামো সমবায়ীদের হস্তক্ষেপ কমাতে পারে, সমবায় সমিতির সদস্যদের তাদের সমিতির কার্যক্রমের প্রতি আরো উৎসাহী করে তুলতে পারে।
সমবায় আইনের রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কিত বিধানাবলি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সরকারি কর্মকর্তাদের হাতে এখানে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। যদি কোনো সমবায় সমিতি নিবন্ধনের জন্য সমবায় অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়, তাহলে আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে আবেদনকারী ৩০ দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে আপিল করতে পারেন এবং আপিল কর্মকর্তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এ বিষয়ে দেওয়ানি আদালতে আপিল করার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে যেহেতু রেজিস্ট্রেশনের ব্যাপারে দেওয়ানি আদালতে মামলা করা যায় না, তাই সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন দাখিল করা যায়। কিন্তু রিট মামলায় হাইকোর্ট ডিভিশন সাধারণত আইনগত প্রশ্নের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু যে ক্ষেত্রে রিট পিটিশনে বিস্তারিত তথ্য-প্রমাণ বিবেচনা করতে হয়, সেখানে সাধারণত হাইকোর্ট বিভাগ রিট পিটিশন গ্রহণ করেন না।
বাংলাদেশের অংশীদারি ব্যবসা আইন, ১৯৩২ অনুযায়ী, যে অংশীদার তার অংশীদারি ফার্মের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক কোনো ব্যবসায় জড়িত থাকবে, তাকে ওই ব্যক্তিগত ব্যবসালব্ধ মুনাফা তার ফার্মের অংশীদারদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে হবে। কিন্তু আমাদের সমবায় সমিতি আইনে এ ধরনের কোনো বিধান নেই। যদি সমিতির সাধারণ সদস্যদের জন্য এমন কোনো বিধান না-ও করা হয়, অন্তত সমিতির ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের জন্য এ ধরনের বিধান চালু করা যেতে পারে, যাতে তারা সমবায় সমিতি পরিচালনায় আরো আন্তরিক ও পেশাদার হন।
সমবায় সমিতি আইনের ৪ ধারা অনুযায়ী, সরকার গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা জনস্বার্থে কোনো সমবায় সমিতিকে কোনো বিধানের প্রয়োগ থেকে কোনো শর্ত সাপেক্ষে বা নিঃশর্তভাবে অব্যাহতি দিতে পারে। যদিও ধারাটি শুধু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে ব্যবহার হওয়ার কথা, কিন্তু কার্যত এর যথেষ্ট অপব্যবহারের সুযোগ আছে। এ ধারার অপব্যবহার করে জনস্বার্থের নামে আইনের বিধানগুলো থেকে অব্যাহতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অনেক সমবায় সমিতি চালানোর সুযোগ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কোনো ম্যানেজিং কমিটি স্থগিত করা, ম্যানেজিং কমিটির এক বা একাধিক সদস্যকে বরখাস্ত করা, কাউকে ম্যানেজিং কমিটির বাইরে নিয়োগ দেয়া, অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির মেয়াদ বাড়ানো ইত্যাদি যেকোনো কিছু করার জন্য এ বিধানকে ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রশাসনের ৪ ধারার ব্যবহার নিয়ে যদিও রিট পিটিশন করা যায়, কিন্তু তা ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার। ৪ ধারা ব্যবহার করতে হলে আইনের কোন কোন বিধান থেকে এবং কতদিনের জন্য অব্যাহতি নেয়া যাবে, তা বর্তমান আইনে সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করে দেয়া উচিত। যেমন কোনো সমিতিতে অচলাবস্থা দেখা দিলে স্বল্পমেয়াদে এ ধারা প্রয়োগ করা যেতে পারে।
সমবায় সমিতিতে বিভিন্নভাবে বাইরের হস্তক্ষেপের সুযোগ আছে। যেমন যদি কোনো সমবায় সমিতিতে সরকারের ৫০ শতাংশের বেশি মূলধন থাকে বা মোট ঋণ বা অগ্রিমের ৫০ শতাংশের অধিক সরকার দিয়ে থাকে বা সরকার যদি সমিতিকে দেয়া কোনো ঋণের জামিনদার হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে সরকার বা সমবায় নিবন্ধক ওই সমিতির ম্যানেজিং কমিটিতে এক-তৃতীয়াংশ সদস্য মনোনয়ন দেবেন। এখানে সরকারকে এক ধরনের শেয়ারহোল্ডারের মতো বিবেচনা করার চিন্তা-ভাবনা পরিলক্ষিত হয়, কিন্তু বাস্তবে সরকারের সমবায় সমিতিতে মূলধন সরবরাহ বা ঋণের জামিনদার হওয়ার ক্ষেত্রে একটি কল্যাণমূলক উদ্দেশ্য রয়েছে।
সমবায় সমিতি আইন অনুযায়ী, যদি যথাসময়ে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠান করা না যায়, তাহলে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সমিতি গঠন করা যায়। এই অন্তর্বর্তীকালীন কমিটিতে সমিতির সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তারা থাকতে পারেন। এখন সরকারি কর্মকর্তারা সমবায় সমিতির ব্যাপারে কতটুকু যত্নবান হবেন বা সময় দিতে পারবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে যায়। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তারা ছাড়াও সরকার মনোনীত যে কেউ অন্তর্বর্তীকালীন কমিটিতে ঢুকতে পারার বিধানটি সমবায়ীদের ‘গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ নীতি’র পরিপন্থী। এক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সদস্য হওয়ার জন্য সদস্যদের সাধারণ সভায় অনুমোদন নেয়ার বিধান থাকা বাঞ্ছনীয়।
সমবায় আইনের ৪৩ ধারা অনুযায়ী, সমবায় সমিতির হিসাবের বার্ষিক অডিট নিষ্পত্তিকালে, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তার রিপোর্টের ভিত্তিতে সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক যদি মনে করেন কোনো সমিতির অবসায়ন হওয়া উচিত, তাহলে তিনি সদস্যদের কোনো অনুমোদন ছাড়াই সমিতির অবসায়নের নির্দেশ দিতে পারেন। বিধানটি সমবায়ের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ১৯৩ নং সুপারিশের ৬(গ) অনুচ্ছেদের পরিপন্থী; যেখানে বলা হয়েছে যে সরকার সমবায়ের ধরন এবং কার্যক্রমের সঙ্গে সংগতিপূর্ণভাবে সমবায় নিয়ন্ত্রণের জন্য কর্তৃপক্ষকে আইন অনুযায়ী এমনভাবে দায়িত্ব অর্পণ করবে, যাতে তা অন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা বা সামাজিক সংগঠনের চেয়ে কম সুবিধাজনক না হয়। কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো কোম্পানি অবসায়নের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার শুধু শেয়ারহোল্ডার বা আদালতের। তবে সমবায়ের ক্ষেত্রে যা কিনা শুধু সরকারি কর্মকর্তার। তাই আইন করা যেতে পারে যে সাধারণ সভায় সমবায়ীদের অনুমোদন ছাড়া কোনো সমবায় সমিতির অবসায়ন করতে হলে তা দেওয়ানি আদালতের মাধ্যমে করতে হবে।
কোন সমবায়ী বা এমনকি ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরাও সমবায় সমিতির নিবন্ধক বা তার দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা লিখিত পূর্বানুমতি ছাড়া সমবায় সমিতি-সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে কোনো ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে পারেন না। যদি কোনো সমবায় সমিতির সদস্য সমবায় সমিতি সম্পর্কিত কোনো অপরাধমূলক কার্যক্রম দ্বারা ক্ষতির শিকার হন, তবে তার নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর নির্ভর করার প্রয়োজনীয়তার যুক্তিযুক্ততা প্রশ্নসাপেক্ষ।
সরকারি কিছু নীতিমালা ও আইন-কানুনে সরকারি জমিজমা ইজারা বা এ ধরনের বন্দোবস্ত দেয়ার ক্ষেত্রে নিবন্ধিত সমবায় সমিতিকে প্রাধান্য দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। যেমন সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি, ২০০৯ অনুযায়ী, ২০ একরের অধিক আয়তনের কোনো জলমহাল বন্দোবস্তের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি বা অনিবন্ধিত সংগঠনকে তা দেয়া যাবে না এবং কেবল মত্স্যজীবী সমবায় সংগঠনকেই বরাদ্দ দিতে হবে। অনধিক ২০ একর পর্যন্ত জলমহাল বরাদ্দের ক্ষেত্রে যুব মত্স্যজীবী সমবায় সমিতিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে যে সরকারি কর্মকর্তারা, যাদের ওপর সমবায় সমিতির নিবন্ধন দেয়ার দায়িত্ব রয়েছে, তারা অবৈধ সুবিধার বিনিময়ে বা পারিপার্শ্বিক চাপে কোনো কোনো সমিতির কিছুসংখ্যক সদস্য কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণীতে না পড়লেও সংশ্লিষ্ট সমবায় সমিতিকে রেজিস্ট্রেশন দিয়ে থাকেন।
যেমন মো. মনিরুল ইসলাম বনাম বিজয় হালদার (২০১৩) ৪২ সি.এল.সি (এডি) মামলায় বাদী দাবি করেন, দাইপুকুরিয়া ইউনিয়ন মত্স্যজীবী সমবায় সমিতি নামে একটি সমিতিকে জলমহাল ইজারা দেয়া বেআইনি ছিল। কেননা ওই সমিতিতে এমন কিছু সদস্য ছিলেন, যাদের ভোটার তালিকার তথ্য অনুযায়ী পেশা ছিল ব্যবসা এবং তাই সমবায় সমিতিটি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি অনুযায়ী ইজারা পাওয়ার জন্য অযোগ্য ছিল। জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি অনুযায়ী, যদি কেউ কোনো প্রাকৃতিক উৎস থেকে মত্স্য আহরণ করেন এবং সেটিই তার প্রধান জীবিকা হয়, তবে তাকে মত্স্যজীবী বলা হবে। হাইকোর্ট বিভাগ আবেদনটি গ্রহণ করে জেলা প্রশাসককে পুনরায় অন্য সমবায় সমিতিকে বরাদ্দ দেয়ার জন্য আদেশ দেন। কিন্তু আপিল বিভাগ মামলাটি পর্যালোচনাকালে লক্ষ করেন যে অন্য দুটি সমবায় সমিতিতেও এমন কিছু সদস্য ছিলেন, যাদের ভোটার তালিকা অনুযায়ী পেশা হচ্ছে ব্যবসা/কৃষিকাজ। তাই আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশটি বাতিল করে পুনরায় নীতিমালা অনুযায়ী ইজারা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন। এ মামলায় দেখা যায়, বিবদমান পক্ষগুলোর কেউই আইন অনুযায়ী যথাযথভাবে প্রক্রিয়ায় নিবন্ধিত হওয়ার যোগ্য ছিল না।
বিদ্যমান আইনে নিবন্ধন না দেয়ার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করা গেলেও কোনো অযোগ্য সমবায় সমিতিকে রেজিস্ট্রেশন দেয়ার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করার কোনো সুযোগ নেই। আর শুধু সমবায় অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছেই আপিলের সুযোগ না রেখে দেওয়ানি আদালতকেও এ বিষয়ে এখতিয়ার দেয়া উচিত। এছাড়া যদি কোনো বিশেষ গোষ্ঠী বা শ্রেণীর মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কোনো সমবায় সমিতি গঠন করা হয়, তাহলে ওই শ্রেণীর বাইরে কেউ সদস্য হওয়ার যোগ্য হলে সংশ্লিষ্ট সমিতিকে নিবন্ধন দেয়া উচিত নয়।
সমবায় সমিতিগুলোকে যদি সরকার বা অন্যান্য গোষ্ঠীর সাহায্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়, তাহলে সমবায় সমিতিগুলো বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার মতো অনুদাননির্ভর হয়ে পড়বে। যদি সমবায় সমিতির সদস্যরা সমিতির চাঁদা থেকে সুদ পাওয়ার আশা নিয়ে অলসভাবে বসে থাকেন বা তাদের এই বিনিয়োগের মাধ্যমে কোম্পানি কার্যক্রমে অংশ না নিয়ে লভ্যাংশ পাওয়ার মতো মুনাফা করতে চান, তবে এ ধরনের সুদভিত্তিক মুনাফা বা লভ্যাংশ পাওয়ার প্রত্যাশা অন্যায় নয়, কিন্তু এটি একটি আদর্শ সমবায় পরিচালনার ভিত্তি হতে পারে না। কেননা সমবায়ের মূলমন্ত্র হচ্ছে স্বনির্ভরতা ও স্বশাসন। কিন্তু সমবায়ীদের এই আচরণের জন্য তারা যতটা না দায়ী, তার চেয়ে অনেক বেশি দায়ী বর্তমান আইনি কাঠামো। তাই সমবায়ীদের আরো সক্রিয় করতে হলে আইনের সংশোধনের মাধ্যমে তাদের অধিকতর ক্ষমতায়ন করতে হবে।
ড. মো. রিজওয়ানুল ইসলাম: অধ্যাপক, আইন বিভাগ
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি