আগামী মঙ্গলবার থেকে বাজারে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নতুন বই ‘এ প্রমিজড ল্যান্ড’। এ বই নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার একটি বৃহৎ পর্যালোচনা ছেপেছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।
এ বইয়ে উঠে এসেছে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক স্মৃতিচারণ। তবে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে রাজনীতি। নিউইয়র্ক টাইমসের পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কালো প্রেসিডেন্ট তার সময়ের বিশ্ব নেতাদের নিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণ ও মন্তব্য তুলে ধরেছেন।
এ প্রমিজড ল্যান্ড-এ বারাক ওবামার স্মৃতিচারণায় উঠে এসেছেন ভ্লাদিমির পুতিনসহ বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী নেতা। বইটিতে স্থান পেয়েছেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তবে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ হলেও স্মৃতিচারণায় স্থান পাননি ভারতের এ টানা দুইবারের প্রধানমন্ত্রী।
সর্বশেষ রাহুল গান্ধীর সঙ্গে যখন সাক্ষাৎ হয়, তখন ওবামা সাবেক প্রেসিডেন্ট। সস্ত্রীক ভারতে এসেছিলেন ২০১৭ সালে। ওই সময় রাহুলের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলাপ হয়েছিল ওবামার। রাহুল গান্ধীও সেই সাক্ষাৎ নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত ছিলেন।
‘এ প্রমিসড ল্যান্ড’-এ রাহুল সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টের পর্যবেক্ষণ, ‘রাহুল একজন নার্ভাস এবং অসম্পূর্ণ যোগ্যতার মানুষ। এমন একজন শিক্ষার্থী যে কোর্সওয়ার্ক করে এবং সব সময় শিক্ষককে মুগ্ধ করার চেষ্টা করে। কিন্তু নির্দিষ্ট বিষয়টিতে দক্ষতা অর্জনে একজন অনাগ্রহী বা গভীর আসক্তি নেই। নিউইয়র্ক টাইমসের পর্যালোচনায় এমনটি বলা হয়েছে।
বারাক ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন মনমোহন সিংহ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন প্রায় ৬ বছর। এর মধ্যে ওবামা ভারতে এসেছেন একবার, ২০১০ সালে। মনমোহন সিংও সেই সময় একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। মনমোহন সিংকে ওবামা একজন মৃদুভাষী বিনয়ী অর্থনীতিবিদ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সচিব বব গেটসের সঙ্গে মনমোহনের খুব ভালো সম্পর্ক ছিল বলে বই পর্যালোচনায় উঠে এসেছে।
২০১৫ সালে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বারাক ওবামা ভারতে এসেছিলেন স্বাধীনতা দিবসের প্রধান অতিথি হয়ে। সেই সময় ওবামার সঙ্গে মোদির ‘চায়ে পে চর্চা’ হয়েছিল। এরপর ২০১৭ সালে ফের ভারতে এসেছিলেন। তখন তিনি সাবেক। এরপরও প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে তার আলাপচারিতা হয়। কিন্তু এ প্রমিজড ল্যান্ডে ওবামার স্মৃতিচারণায় নেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রসঙ্গ।
দু’বারের প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন জো বাইডেন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। বাইডেনের সঙ্গে বারাক ওবামার সম্পর্ককে মার্কিন গণমাধ্যম প্রায়ই মজা করে ‘রমান্টিক’ বলে বর্ণনা করতো। ‘ব্রোমান্স’ শব্দটি ওই সময় বেশ চর্চা হতো। সেই বাইডেন সম্পর্কে ওবামার অভিমত, ‘বাইডেন ভদ্র, নম্র ও সৎ মানুষ। তবে উনি যদি মনে করেন যে তার প্রাপ্য কৃতিত্ব দেয়া হয়নি, তা হলে তিনি বিরক্তও হতে পারেন।’ বয়সে ওবামা ছিলেন বাইডেনের চেয়ে ছোট। সেই নিয়ে রসিকতা করে তিনি বলেছেন, ‘বয়সে ছোট বস-এর সঙ্গে কাজ করতে গেলে এমন হতেই পারে।’
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘কড়া, প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল দেয়ার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বস’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে শারীরিকভাবে অনুল্লেখযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন।
স্ত্রী মিশেল সম্পর্কে ওবামা বলেছেন, মিশেল হোয়াইট হাউসে বেশ সফল এবং জনপ্রিয় হলেও কাজের চাপ অন্যান্য নানা বিষয় নিয়ে ‘হতাশ’ ছিলেন। হোয়াইট হাউসে ব্ল্যাকবেরি ফোন পাওয়া নিয়ে কৌতুক করেছেন ওবামা। সেই ফোনটির মাইক্রোফোন এবং হেডফোন জ্যাক খুলে দেয়া হয়েছিল। এ ফোনে ২০টি বা তার কিছু বেশি কন্ট্যাক্ট নম্বর ছিল। তবে এ ফোন দিয়ে কথা বলা যেত না। অনেকটা বাচ্চাদের খেলনা ফোনের মতো ছিল।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং আমেরিকার বর্ণবাদ সম্পর্কে ওবামা বলেছে, আমেরিকান সমাজের বিভাজন অনেক গভীর। ট্রাম্প চলে গেলেও সেই বিভাজন সহসাই ঘুচবে না।
গত বৃহস্পতিবার দ্য আটলান্টিকে প্রকাশ পেয়েছে এ প্রমিজড ল্যান্ডের মুখবন্ধ। ৭৬৮ পৃষ্ঠার এ বই ১৭ নভেম্বর বইয়ের দোকানের শেলফে শোভা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নিউইয়র্ক টাইমস ও টাইমস অব ইন্ডিয়া অবলম্বনে