ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন কারণ লক্ষণ প্রতিকার

মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ বা ইউটিআই (ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন) খুবই পরিচিত একটি রোগ। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী অসংখ্য মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়।

মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ বা ইউটিআই (ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন) খুবই পরিচিত একটি রোগ। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী অসংখ্য মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। নারী-পুরুষ উভয়েই ইউটিআইতে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে পুরুষদের তুলনায় নারীদের আক্রান্তের হার বেশি দেখা যায়। সঠিক সময়ে যথাযথ চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের মাধ্যমে মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব।

মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ

আমরা যখন পানি খাই তখন তা বৃক্ক বা কিডনির মাধ্যমে ছেঁকে মূত্রনালি দিয়ে মূত্র হিসেবে বেরিয়ে যায়। আমাদের শরীরের দুটি কিডনি বা বৃক্ক, দুটি ইউরেটার, একটি ইউরিনারি ব্লাডার বা মূত্রথলি এবং ইউরেথ্রা বা মূত্রনালি নিয়ে মূত্রতন্ত্র গঠিত। এ মূত্রতন্ত্রের কোনো অংশে যদি ব্যাকটেরিয়া বা অন্য কোনো জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে তাহলে তাকে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ বলে। মূত্রনালির নিম্নাংশ সংক্রমিত হলে তাকে মূত্রথলির সংক্রমণ বা সিস্টাইটিস এবং মূত্রনালির ওপরের অংশ আক্রান্ত হলে তাকে কিডনির সংক্রমণ বা পায়েলোনেফ্রাইটিস বলে।

কারণ

মূলত মানুষের অন্ত্রে থাকা অ্যাশেরিকিয়া কোলাই নামক ব্যাকটেরিয়া মলের মাধ্যমে বাইরে আসে এবং মূত্রনালি দিয়ে মূত্রতন্ত্রে প্রবেশ করে সংক্রমণ সৃষ্টি করে। তবে অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণেও ইউটিআই হতে পারে। এছাড়া আরো যেসব কারণে মূত্রতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—

  • পর্যাপ্ত পানি পান না করা
  • দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখা
  • যৌনাঙ্গসহ নিজস্ব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখা
  • এর আগে মূত্রতন্ত্রে সংক্রমণ হওয়া
  • নারীদের গর্ভধারণ ও মেনোপজ
  • কিডনি বা মূত্রথলিতে পাথর
  • শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য
  • প্রস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া
  • টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও এইচআইভিতে আক্রান্ত হওয়া
  • কেমোথেরাপি বা দীর্ঘদিন স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ সেবন
  • প্রস্রাবের রাস্তায় নল বা ক্যাথেটার পরানো থাকা
  • যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে জীবাণু মূত্রনালিতে প্রবেশ করা বা এরই মধ্যে মূত্রনালিতে থাকা জীবাণু আরো ভেতরে চলে যাওয়া

লক্ষণ

ইউটিআইয়ের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে—

  • স্বাভাবিকের চেয়ে ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসা কিন্তু কোনোবারই যথেষ্ট পরিমাণে প্রস্রাব না হওয়া
  • রাতে বারবার প্রস্রাবের বেগ আসা
  • প্রস্রাবের সময় ব্যথা বা জ্বালাপোড়া হওয়া
  • গন্ধযুক্ত ও ঘোলাটে প্রস্রাব হওয়া
  • প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া
  • প্রস্রাবের রাস্তায় চুলকানি
  • তলপেটে ব্যথা
  • জ্বর ও জ্বরের সঙ্গে শরীরে কাঁপুনি
  • মেজাজ খিটখিটে লাগা
  • ক্লান্তি ও বমি ভাব
  • শিশুদের ক্ষেত্রে খেতে না চাওয়া ও অস্বাভাবিক আচরণ করা

চিকিৎসা ও প্রতিকার

মূত্রতন্ত্রে সংক্রমণের যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরি। না হলে সংক্রমণ কিডনি পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রস্রাব ও অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংক্রমণের তীব্রতা অনুযায়ী রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পরামর্শ দেয়া হয়। সাধারণ সংক্রমণের ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি অ্যান্টিবায়োটিক যেমন—নাইট্রোফিউরানটোইন বা ট্রাইমেথোপ্রিম/সালফামেথোক্সাজোল তিনদিন থেকে এক সপ্তাহ সেবন করলেই ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। অন্যদিকে গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি অ্যান্টিবায়োটিক সেবন বা শিরায় অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের প্রয়োজন হয়। ক্ষেত্রবিশেষে হাসপাতালে ভর্তি ও কয়েক মাস ধরে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হতে পারে।

প্রতিরোধে করণীয়

দৈনন্দিন জীবনযাপনে কিছু সচেতনতা অবলম্বন করলে মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব। এজন্য—

  • পর্যাপ্ত পানি করুন
  • পানির পাশাপাশি অন্যান্য তরল খাবার যেমন—ফলের জুস, ডাবের পানি ইত্যাদি পান করুন
  • প্রস্রাবের বেগ এলে তা আটকে রাখবেন না
  • যৌনাঙ্গে সুগন্ধি সাবান বা পাউডার ব্যবহার করবেন না
  • যৌনাঙ্গ পরিষ্কার রাখুন
  • মূত্রত্যাগ বা মলত্যাগের পর ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করুন
  • হাই কমোড ব্যবহারের সময় সেটা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন বা টিস্যু পেপার বিছিয়ে নিন
  • সুতি কাপড়ের ঢিলেঢালা অন্তর্বাস ব্যবহার করুন
  • চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয় যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন
  • এক থেকে তিন বছর বয়সী শিশুর ডায়াপার বা ন্যাপি নিয়মিত পরিবর্তন করুন

লেখক: কনসালট্যান্ট ল্যাবএইড লি. (ডায়াগনস্টিকস)

আরও