স্কোলিওসিস

মেরুদণ্ডের রোগ স্কোলিওসিস চিকিৎসা কী?

মেরুদণ্ড মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ, যা শরীরের সার্বিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

মেরুদণ্ড মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ, যা শরীরের সার্বিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। আমাদের হাঁটা, বসা কিংবা দাঁড়ানোর ভঙ্গি সঠিকভাবে বজায় থাকে, যদি মেরুদণ্ডের গঠন ও আকৃতি স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু নানা কারণে মেরুদণ্ডে স্কোলিওসিস নামক রোগ হতে পারে। এ রোগে মেরুদণ্ড এস (S) বা সি (C) আকৃতির মতো বাঁকা হয়ে যায়। ফলে শরীরের স্বাভাবিক কাঠামো অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে যায় এবং দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। তবে সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করলে স্কোলিওসিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

কেন হয়?

  • বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্কোলিওসিসের কারণ বংশগত। বাবা-মা এ রোগে ভুগে থাকলে কিংবা স্কোলিওসিস রোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • অনেক সময় গর্ভে ভ্রূণের বিকাশের সময় মেরুদণ্ড সঠিকভাবে গঠিত না হলে জন্মগতভাবেই শিশু এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
  • স্নায়বিক কোনো সমস্যা যেমন সেরিব্রাল পালসি বা মাসকুলার ডিসট্রফির কারণে মেরুদণ্ড বাঁকা হতে পারে।
  • বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মেরুদণ্ড দুর্বল হয়ে যায়, যা এ রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া বয়স্কদের ক্ষেত্রে অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা মেরুদণ্ডের ডিস্ক ক্ষয়জনিত রোগ ডিজেনারেটিভ ডিস্ক ডিজিজের কারণেও স্কোলিওসিস হতে পারে।
  • মেরুদণ্ডে কোনো আঘাত লাগলে বা কোনো কারণে মেরুদণ্ডে অস্ত্রোপচার করা হলে এর পরবর্তী জটিলতা থেকে স্কোলিওসিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
  • দীর্ঘ সময় ভুল ভঙ্গিতে বসা বা দাঁড়ানোর কারণেও স্কোলিওসিস হতে পারে। তবে এটি খুবই বিরল।

স্কোলিওসিসের লক্ষণ

  • স্কোলিওসিসের কারণে অনেক সময় মাথা সোজা রাখতে সমস্যা হয়। ফলে মাথা একপাশে হেলে থাকতে পারে।
  • কাঁধ, কোমর ও নিতম্ব একটির তুলনায় অন্যটি বেশি উঁচু বা অসমান দেখায়।
  • সামনের দিকে ঝুঁকলে বুকের এক পাশের পাঁজর বেশি উঁচু দেখা যায়।
  • একটি পা অন্যটির তুলনায় ছোট বা বড় মনে হয় এবং এতে হাঁটার ধরনে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়।
  • প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে কোমর ও পিঠে ব্যথা হতে পারে।
  • রোগের তীব্রতা বাড়লে ফুসফুসের ওপর চাপ পড়ে এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।

রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

স্কোলিওসিস বা মেরুদণ্ডের বাঁক নির্ণয়ের জন্য সবচেয়ে প্রচলিত এবং কার্যকর পদ্ধতি হলো এক্স-রে। এক্স-রের মাধ্যমে মেরুদণ্ডের বাঁকের পরিমাণ ও ধরন নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে এক্স-রে যন্ত্রের মাধ্যমে সম্পূর্ণ মেরুদণ্ডের চিত্র ধারণ করা হয় এবং কোব কোণ মাপা হয়। কোব কোণ হলো মেরুদণ্ডের বাঁক বা স্কোলিওসিসের মাত্রা নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত একটি পরিমাপ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে মেরুদণ্ডের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বাঁকা অংশের মধ্যবর্তী কোণ পরিমাপ করা হয়। কোব কোণের সাহায্যে স্কোলিওসিসের মাত্রা ও রোগীর বয়সের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা ব্যবস্থা নির্ধারণ করা হয়। মেরুদণ্ডের বাঁক যদি ১০-২০ ডিগ্রি হয়, তাহলে সাধারণত কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবে ছয় মাস থেকে এক বছর পর পর এক্স-রে করে দেখতে হবে বাঁকের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে কিনা। স্কোলিওসিসের মাত্রা ২০-৪০ ডিগ্রি হলে রোগীকে ব্রেস বা বন্ধনী পরার পরামর্শ দেয়া হয়। ব্রেস পরার মাধ্যমে মেরুদণ্ডের বাঁক নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। অর্থাৎ এটি আর বাড়ে না। পাশাপাশি মেরুদণ্ড যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রাখতে এবং পিঠ ও পেটের মাংসপেশি মজবুত করতে ফিজিওথেরাপি গ্রহণ করা যেতে পারে। রোগের তীব্রতা বেশি হলে বা বাঁকের মাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি হলে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, অর্থোপেডিক সার্জারি

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ, সিলেট

চেম্বার. ল্যাবএইড লিমিটেড (ডায়াগনস্টিক), কলাবাগান

আরও