অস্বাস্থ্যকর বায়ু

নিজেকে রক্ষা করার উপায়

গত মঙ্গলবার বিশ্বে বায়ুদূষণে সপ্তম অবস্থানে ছিল রাজধানী ঢাকা। এর আগে চলতি মাসের শুরুতে টানা তিন দিন দূষিত বায়ুর নগরীর তালিকায় শীর্ষে ছিল ঢাকা। এমন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

বায়ু দূষণ এখন আর কেবলমাত্র একটি সমস্যা নয়—এটি একটি সংকট। এরমধ্যে আবার প্রায়ই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে উঠে আসছে ঢাকা।

একিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, স্কোর ৫১ থেকে ১০০ হলে তাকে ‘মাঝারি’ বা ‘গ্রহণযোগ্য’ মানের বায়ু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরকে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে তাকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু ধরা হয়। ৩০১ থেকে তার ওপরের স্কোরকে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ বা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ধরা হয়।

ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২ দশমিক ৫-এর উপস্থিতি। ঢাকার বাতাসে এর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানমাত্রার চেয়ে প্রায় ১৬ গুণ বেশি। একিউএয়ারের মানসূচকে মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার গড় বায়ুর মান ছিল ১৭০। এই মান নিয়ে সেদিন বিশ্বে বায়ুদূষণে সপ্তম অবস্থানে ছিল রাজধানী ঢাকা। এর আগে চলতি মাসের শুরুতে টানা তিন দিন দূষিত বায়ুর নগরীর তালিকায় শীর্ষে ছিল ঢাকা। এমন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

বায়ুদূষণ বেশি হলে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকেন সংবেদনশীল গোষ্ঠীর ব্যক্তিরা। তাদের মধ্যে আছেন বয়স্ক, শিশু, অন্তঃসত্ত্বা ও জটিল রোগে ভোগা ব্যক্তিরা। তাদের বিষয়ে বিশেষ যত্নবান হওয়া দরকার বলে পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। দূষণ রাতারাতি দূর করা সম্ভব না হলেও, আপনি এবং আপনার প্রিয়জনদের কিছু সহজ উপায়ে সুরক্ষিত রাখতে পারেন।

বায়ু দূষণ থেকে নিজেকে রক্ষা করার সহজ উপায়

বায়ু দূষণ কেবল ফুসফুসের ক্ষতি করে না; এটি মস্তিষ্ক, রক্ত, এবং মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, দূষিত বাতাসের সংস্পর্শে থাকলে রক্তাল্পতা (অ্যানিমিয়া) এবং উদ্বেগজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই নিজেকে সুরক্ষিত রাখা এখনই প্রয়োজন।

প্রতিদিন বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করুন

যেকোনো সমস্যার সমাধানের প্রথম ধাপ হলো তার পরিধি বোঝা। আপনার এলাকায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স পর্যবেক্ষণ করুন।

ঘরের ভিতরে উচ্চমানের এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন

অনেকে মনে করেন যে ঘরের ভিতরের বাতাস বাইরের তুলনায় পরিষ্কার, কিন্তু এটি সবসময় সত্য নয়। ধুলা, রান্নার ধোঁয়া, এমনকি আসবাবপত্র থেকেও দূষণ ছড়াতে পারে। তাই এইচইপিএ ফিল্টারযুক্ত ভালো মানের একটি এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন।

ভালো মানের মাস্ক পরুন

উচ্চ দূষণযুক্ত শহরে ভালো মানের মাস্ক পরা অত্যন্ত জরুরি। এন-৯৫ বা এন-৯৯ রেটেড মাস্ক ব্যবহার করুন যা পিএম ২.৫ কণাগুলি ছেঁকে রাখতে সক্ষম।

বাড়ির ভেতরে গাছ লাগান

ঘরের মধ্যে পিস লিলি, স্নেক প্ল্যান্ট বা আরেকা পাম গাছ রাখলে বায়ুর গুণমান উন্নত হতে পারে। এছাড়া, বাড়ির বাইরে গাছ বা ঝোপঝাড় লাগালে ধুলো ও দূষণ থেকে কিছুটা সুরক্ষা পাওয়া যায়।

বাইরের কার্যক্রম সীমিত করুন

যখন দূষণের মাত্রা বেশি থাকে, তখন প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুন। বিশেষ করে ভোরবেলা এবং সন্ধ্যায় বায়ু দূষণ বেশি থাকে, তাই বিকেলে বাইরে যাওয়া তুলনামূলকভাবে নিরাপদ।

পুষ্টিকর খাদ্য খান

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার, যেমন বেরি, বাদাম, এবং শাকসবজি খেলে দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব কমানো সম্ভব। এছাড়া ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ফুসফুসের জন্য উপকারী। পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

সচেতন হন

নিজের দূষণের অবদান কমানোও নিজেকে এবং অন্যকে সুরক্ষিত রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই পরিবেশে দূষণের মাত্রা কমাতে সচেতন হন। গণপরিবহন ব্যবহার করুন অথবা ছোট দূরত্বে হাঁটা বা সাইকেল চালানোর চেষ্টা করুন। পরিচ্ছন্ন বাতাসের গুরুত্ব সম্পর্কে পরিবার, বন্ধু এবং সম্প্রদায়কে সচেতন করুন। কর্মশালা পরিচালনা করুন, তথ্য ভাগ করুন, এবং স্থানীয় পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালান।

আরও