কোষ্ঠকাঠিন্য

কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়? প্রতিরোধে করণীয়

অত্যন্ত পরিচিত একটি স্বাস্থ্য সমস্যা কোষ্ঠকাঠিন্য। অন্যান্য ঋতুর তুলনায় শীতকালে এ সমস্যা একটু বেশি দেখা যায়।

অত্যন্ত পরিচিত একটি স্বাস্থ্য সমস্যা কোষ্ঠকাঠিন্য। অন্যান্য ঋতুর তুলনায় শীতকালে এ সমস্যা একটু বেশি দেখা যায়। মূলত পায়খানা কষা বা শক্ত হওয়া এবং সপ্তাহে তিনবারের কম মলত্যাগ হওয়াকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলে। এ অবস্থায় এক-দুইদিন পরপর মলত্যাগের বেগ হয় এবং শুষ্ক ও কঠিন মল নিষ্কাশিত হয়। মলত্যাগের পর মনে হয় পেট ঠিকমতো পরিষ্কার হয়নি। দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগলে পায়ুপথে পাইলস বা অর্শ রোগ ও অ্যানাল ফিশার বা গেজের মতো জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা এড়িয়ে চলা সম্ভব কারণ নানা কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। যেমন—

  • ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া: ফাইবার বা আঁশ মলে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। ফলে মল নরম হয় ও সহজেই শরীর থেকে বের হয়ে আসে। কিন্তু খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ না থাকলে মল শক্ত হয়ে যায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।
  • পর্যাপ্ত পানি পান না করা: পানি খাদ্যের সঙ্গে মিশে মলকে ভারী ও নরম করে। এতে পরিপাকতন্ত্রের ভেতর দিয়ে মল চলাচল সহজ হয়। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
  • মলত্যাগের বেগ এলে তা চেপে রাখা: মলত্যাগের বেগ এলে তা যদি আটকে রাখা হয় তাহলে শরীর ক্রমেই সেখান থেকে পানি শুষে নিতে থাকে। পেটের ভেতর মল জমিয়ে রাখলে সেটা দিন দিন আরো শক্ত হতে থাকে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।
  • শারীরিক পরিশ্রমের অভাব: নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম করলে আমাদের পরিপাকতন্ত্র সচল থাকে। এতে স্বাভাবিকভাবে মল বেরিয়ে আসে। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
  • মানসিক চাপ ও বিষণ্নতা: অনেক সময় মানসিক চাপ, কোনো কিছু নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকা বা বিষণ্নতায় ভুগলে স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে। ফলে নিয়মিত মলত্যাগ হয় না।
  • ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: ট্রামাডল বা ওপিয়েট জাতীয় ব্যথার ওষুধ, আইবুপ্রোফেন, আয়রন ট্যাবলেট, ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট ও কেমোথেরাপিতে ব্যবহৃত কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।

এছাড়া থাইরয়েড, ডায়াবেটিস ও মলাশয়ের কোনো রোগের কারণেও কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে।

কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে যেসব শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে

কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রক্তস্বল্পতা, ক্লান্তি, অনিদ্রা, চোখের নিচে কালি পড়া, মাথা ঘোরা, কোমর ব্যথাসহ নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা যত তীব্র হয়, রোগী তত বেশি দুর্বল ও হীনম্মন্য হয়ে পড়ে। এতে অলসতা বৃদ্ধি ও মনোযোগ হ্রাস পায়। দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে চর্মরোগ যেমন চুলকানি, ব্রণ, মুখে ঘা, মেছতা ইত্যাদি হতে পারে। প্রস্রাবের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এছাড়া দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্যের ক্ষেত্রে প্রধান যে দুটি সমস্যা হয় তা হলো পাইলস ও অ্যানাল ফিশার। ফলে মলত্যাগের সময় রক্তপাত ও প্রবল যন্ত্রণা অনুভূত হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য দিনের পর দিন অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগের কারণে মলদ্বার দেহের বাইরে চলে আসতে পারে, যাকে বলা হয় রেকটাল প্রোল্যাপস। তাই কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব এটি প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।

লক্ষণ

কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে—

  • পেট ফাঁপা
  • বমি ভাব
  • খাবারে অরুচি
  • মুখে দুর্গন্ধ
  • গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা
  • শুষ্ক ও শক্ত চাকার মতো মলত্যাগ হওয়া
  • মলত্যাগে অনেক বেশি সময় লাগা
  • মলত্যাগ করতে অধিক চাপ প্রয়োগের ফলে মলদ্বারে ব্যথা অনুভূত হওয়া
  • অধিক সময় ধরে মলত্যাগ করার পরও অসম্পূর্ণ বা পেট পরিষ্কার হচ্ছে না এমন মনে হওয়া
  • মলদ্বারের আশপাশে ও তলপেটে ব্যথা অনুভূত হওয়া

প্রতিরোধে করণীয়

যেসব কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে সেগুলো এড়িয়ে চলার মাধ্যমে সহজেই এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এজন্য—

  • পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ রয়েছে এমন খাবার খান।
  • অতিরিক্ত তেল-মসলা ও ভাজাপোড়াজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • পর্যাপ্ত পানি পান করুন। প্রতিদিন কমপক্ষে ২ লিটার।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ইসবগুলের ভুসি অত্যন্ত কার্যকর। দিনে দুবার এটি খেতে পারেন।
  • নিয়মিত শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করুন।
  • মলত্যাগের বেগ এলে তা চেপে রাখবেন না।
  • মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হোন। মন ভালো থাকে এমন কাজ করুন।
  • কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন বা ওষুধ পরিবর্তন করে নিতে পারেন।

লেখক: কনসালট্যান্ট ল্যাবএইড লি.

(ডায়াগনস্টিকস), কলাবাগান

আরও