বাংলাদেশে কিডনি রোগের প্রাদুর্ভাব উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে প্রায় তিন কোটি ৮০ লাখ মানুষ কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত। আর গুরুত্বপূর্ণ এ অঙ্গ বিকল হয়ে প্রতিবছর মারা যায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। তবে সচেতনতা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে এর থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বিশ্ব কিডনি দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘কিডনি স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণ: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব তথ্য তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি'- (ক্যাম্পস)। সঞ্চালনা করেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ। আর আয়োজন সহযোগী হিসেবে ছিল বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশন।
এ সময় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, কিডনি রোগ বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর অন্যতম কারণগুলোর একটি। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ রোগের প্রকোপ বাড়ছে, বিশেষ করে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং স্থূলতার মতো অসংক্রামক রোগের কারণে। বিশ্বে প্রায় ৮৫ কোটি মানুষ শুধু দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত। এই সংখ্যা ডায়াবেটিস রোগীদের প্রায় দ্বিগুণ এবং ক্যানসার রোগীদের প্রায় ২০ গুণ। মৃত্যুর কারণ হিসেবে কিডনি রোগ ১৯৯০ সালে ছিল ১৯তম স্থানে, বর্তমানে রয়েছে সপ্তম স্থানে। এভাবে চলতে থাকলে ২০৪০ সালে পঞ্চম স্থান উঠে আসবে।
তিনি আরো বলেন, কিডনি রোগের সাধারণ কারণগুলো হল- অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, নেফ্রাইটিস, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান, ব্যাথানাশক ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহার, জন্মগত ও বংশগত কিডনি রোগ, মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ ও পাথুরে রোগী। একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যায়, প্রায় সব কারণই আমাদের অস্বাস্থ্যকর জীবনধারার সঙ্গে জড়িত। তাই একটু সচেতন হলেই এই রোগ প্রতিরোধযোগ্য। তাছাড়া যারা ঝুঁকিতে আছেন তাদের বছরে অন্তত দুইবার প্রস্রাব ও রক্তের ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।
বৈঠকে কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন-উর-রশিদ এ রোগকে 'নীরব দুর্যোগ' আখ্যা দিয়ে বলেন, এ রোগের জটিলতা ও চিকিৎসা ব্যয়ের আধিক্য বিবেচনায় প্রতিরোধকেই একমাত্র অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, কিডনি রোগ প্রতিরোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে। এজন্য একটি সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। বিশেষ করে বাচ্চাদের এবং যুব সমাজের মাঝে যাতে কিডনি রোগ প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন করতে হবে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজে বাচ্চাদের ফাস্ট-ফুড খাবার খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে। কেননা স্থূলতার জন্য কিডনি সমস্যা বেশি হয়।
পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. আফরোজা বেগম বলেন, শিশুদের কিডনি রোগ অনেকাংশেই প্রতিরোধ সম্ভব। কিডনি সমস্যায় থাকা বাচ্চাদের বেশিরভাগই ইউরিন ইনফেকশনেও আক্রান্ত হয়। খুব দ্রুত বাচ্চাদের চিকিৎসা করলে কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।
বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যসচিব ডা. ফরহাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য কিডনি রোগীদের সঠিক চিকিৎসা দেয়া। এখন কিডনি চিকিৎসার দুটি উপায় আছে। একটি ডায়ালাইসিস এবং কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করা। দেশের ৪৪টি জেলা সদর হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেন্টারের পরিকল্পনা আছে সরকারের। তবে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স নেই। বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন।