শীতের যত্ন

শীতে প্রবীণদের যত্ন নেয়া যায় যেভাবে

শীত এলেই নানা ধরনের অসুখ আক্রমণ করে। বিশেষত প্রবীণরা অসুস্থ হয়ে যান দ্রুত। অনেকেই ভয় পেয়ে যান এতে।

শীত এলেই নানা ধরনের অসুখ আক্রমণ করে। বিশেষত প্রবীণরা অসুস্থ হয়ে যান দ্রুত। অনেকেই ভয় পেয়ে যান এতে। বিশেষত প্রবীণদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম হওয়ায় তাদের সারতেও সময় লাগে অনেক। কিন্তু অল্পকিছু বিষয় খেয়াল রাখলেই এড়ানো যায় এসব। শীতে প্রবীণদের স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখা যেতে পারে

পোশাক নির্বাচন করতে হবে সতর্কভাবে: প্রবীণদের শীতের পোশাক হওয়া প্রয়োজন আরামদায়ক। মোটা কাপড় পরার চেয়ে কয়েকটি পাতলা আরামদায়ক কাপড় নির্বাচন করা যায় এ ক্ষেত্রে। এতে ঠাণ্ডা কম লাগবে। কারণ কাপড়ের স্তরে স্তরে বাতাস জমা থেকে শরীর থেকে তাপ বাইরে বের হতে বাধা দেবে। শীতে প্রবীণদের শরীরের তাপমাত্রা কমে গিয়ে হাইপোথারমিয়া হতে পারে, যার ফলে অজ্ঞান হওয়া থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত হয়। তাই শীত-পোশাক পরার ক্ষেত্রেও সচেতন হওয়া দরকার। একটি মোটা কাপড় পরার চেয়ে কয়েকটি পাতলা কাপড় পরলে শীত কম লাগবে। রাতে গলা ও কানে পাতলা কাপড় জড়িয়ে ঘুমালে ঠাণ্ডা লাগবে না।

ত্বকের যত্ন নিতে হবে: শীতে বয়স্কদের ত্বক, ঠোঁট, হাত-পা, নখসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে বাঁচাতে বিভিন্ন ক্রিমসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহার করা যায়। শীতে শরীরের অয়েল গ্ল্যান্ড থেকে তেল কম নিঃসৃত হয় বলে ত্বক খসখসে ও শুষ্ক হয়ে পড়ে। ত্বকের সুরক্ষায় ময়েশ্চারাইজার লোশন, ভ্যাসলিন, গ্লিসারিন, অলিভ অয়েল এগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। যখনই মুখ পানি দিয়ে পরিষ্কার করবেন, তখনই কোনো ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার মুখে ব্যবহার করুন।

হালকা ব্যায়াম করা: শীতে বয়স্কদের সক্রিয় রাখা ভালো। শীতের দিন শুধু শুয়ে-বসে না থেকে প্রবীণ মানুষটিকে ঘরের ভেতর হালকা ব্যায়াম করার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। ঘরের মধ্যে হাঁটাহাঁটিসহ হাত-পা নাড়াচড়া করতে বলুন। এতে শরীরে তাপ উৎপন্ন হবে, শীত কম লাগবে। তীব্র শীতে অ্যালার্জি, হাঁপানি, নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিসের মতো রোগ হয়ে থাকে। যদি কারো রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অস্টিওআর্থ্রাইটিস এ ধরনের সমস্যা থাকে, তবে শীতে সেটি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এসব রোগ প্রতিকারে এ সময় হালকা ব্যায়াম করতে হবে। ব্যায়াম করলে সর্দি-কাশি-জ্বর ইত্যাদি রোগ কম হয়।

কুসুম গরম পানি পান করা: গরম খাবার দেয়ার পাশাপাশি তাদের কুসুম গরম পানি পান করতে দিতে হবে। এছাড়া গোসল, অজু ও অন্যান্য কাজেও গরম পানি দিতে হবে। এতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। পান করার জন্য কুসুম গরম পানির সঙ্গে গরম দুধ, ফলের রস, বিভিন্ন ধরনের স্যুপ খাওয়া যেতে পারে।

ঘরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখা: প্রবীণ ব্যক্তির ঘরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন। এতে ঘর কিছুটা গরম থাকবে। এতে শীত কম লাগবে, আরাম অনুভব হবে।

ভিটামিন ডি-এর অভাব পূরণ: ভিটামিন ডি প্রবীণদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই ভিটামিনের ৯০ ভাগ আনে সূর্যের আলো। শীতে প্রবীণরা যেহেতু বাইরে কম বের হন, তাই ভিটামিনের অভাব দেখা দিতে পারে। নিয়মিত সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে ১৫-২০ মিনিট রোদে নিয়ে যাওয়া উচিত প্রবীণ মানুষটিকে। এতে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, গিঁটে ব্যথা ইত্যাদির সম্ভাবনা কমবে।

পরিমাণমতো পানি খেতে বলুন: শীতে পানির চাহিদা কম থাকায় বয়স্করা পানি কম খান। এটি কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্টসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা তৈরি করে। তাই শীতে বয়স্কদের প্রয়োজনীয় পানিসহ কেমিক্যালমুক্ত বিভিন্ন দেশী ফলের রস পান করার ব্যবস্থা করতে হবে।

পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম: বয়স্কদের প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা ঘুম শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে ঠাণ্ডা-কাশি থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে। তাই প্রবীণদের পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে।

মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষ খেয়াল রাখুন: বয়স্করা অনেক সময় বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন। ডিমেনশিয়া, আলঝেইমার ইত্যাদি। তাই তাদের আনন্দে রাখার চেষ্টা করুন। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখুন। বেশি শীতে বয়স্ক লোকদের দরকার ছাড়া বাইরে বের হতে না দেয়া ভালো। এতে শরীরের নির্দিষ্ট তাপমাত্রা কমে গিয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে পারে।

আরও