মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির প্রাথমিক লক্ষণ

প্রায়ই অনেককে ভুগতে দেখা যায় তীব্র মানসিক অসুস্থতায়। কারণ অযত্ন-অবহেলা আর সচেতনতার অভাবে মানসিক সমস্যাগুলো গুরুতর হয়ে ওঠে।

শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই গুরুত্বপূর্ণ মানসিক স্বাস্থ্য। কিন্তু অনেক সময়ই দেখা যায় শারীরিক স্বাস্থ্যের মতো আমরা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খুব একটা সচেতন থাকি না। এ কারণে প্রায়ই অনেককে ভুগতে দেখা যায় তীব্র মানসিক অসুস্থতায়। কারণ অযত্ন-অবহেলা আর সচেতনতার অভাবে মানসিক সমস্যাগুলো গুরুতর হয়ে ওঠে।

মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হলে কীভাবে বুঝবেন?

মানসিক সমস্যাগুলোর কিছু প্রাথমিক লক্ষণ থাকে। এই প্রাথমিক লক্ষণগুলো চিহ্নিত করা গেলে চিকিৎসার প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করা যেতে পারে।

আবেগের অস্থিরতা

আবেগের অস্বাভাবিক পরিবর্তন মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির ইঙ্গিত হতে পারে। যেমন, হঠাৎ রেগে যাওয়া, হঠাৎ খুব খুশি হওয়া ইত্যাদি। কারো মেজাজ খুব দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকা বাইপোলার ডিজঅর্ডারের লক্ষণ হতে পারে।

বিরামহীন দুঃখ বা হতাশা

দীর্ঘ সময় ধরে বিষণ্ণতা বা দুঃখের অনুভূতি মানসিক অবনতির লক্ষণ হতে পারে। যদি ব্যক্তি নিজের মধ্যে আগের মতো আনন্দ বা উৎসাহ অনুভব না করেন, তবে এটি গুরুতর বিষয়। জীবন নিয়ে সবসময় নেতিবাচক ধারণা পোষণ করা, হতাশ থাকা এগুলো ডিপ্রেশনের লক্ষণ হতে পারে।

অতিরিক্ত উদ্বেগ বা শঙ্কা

অতিরিক্ত চিন্তা, ভয় বা অযৌক্তিক শঙ্কা অনুভব করাও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির লক্ষণ। অনেক সময় দেখা যায় ব্যক্তি উদ্বিগ্ন হয়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম সহজে করতে পারছেন না। ছোট ছোট বিষয়ে অত্যাধিক উদ্বিগ্ন হয়ে পড়া স্বাভাবিক আচরণ নয়। এই অবস্থা হলে অবশ্যই মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।

সামাজিক সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্নতা

যদি কেউ পরিবার, বন্ধু বা কাছের সম্পর্কগুলো থেকে হঠাৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, এটি মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি নির্দেশ করতে পারে। আগের শখ বা আগ্রহে অনীহা, বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করা, ধীরে ধীরে সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে ফেলা- এসব লক্ষণও দেখা যেতে পারে মানসিক কোনো সমস্যা হলে।

মনোযোগের অভাব

ডিপ্রেশন, এডিএইচডির মতো সমস্যার অন্যতম একটি লক্ষণ হল মনোযোগের অভাব। চিন্তাভাবনা বা কাজের প্রতি মনোযোগের অভাব, ধীরে ধীরে জিনিস ভুলে যাওয়া বা কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে না পারাও মানসিক সমস্যার লক্ষণ।

অতিরিক্ত রাগ বা আক্রমণাত্মক আচরণ

অতিরিক্ত রাগ বা আক্রমণাত্মক মনোভাব নিজের ও অন্যের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। কেউ যদি হুট করে অল্পতেই অতিরিক্ত রেগে যায়, বা রেগে গিয়ে মারমুখী হয়ে ওঠে সেটি কিন্তু জটিল মানসিক রোগের লক্ষণ হতে পারে। এক্ষেত্রে চিকিৎসা প্রয়োজন।

ঘুমের সমস্যা

মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হলে অনেকেরই ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। যেমন, কেউ অতিরিক্ত ঘুমায় বা কেউ একদমই ঘুমাতে পারেন না। ঘুমের সমস্যা শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

আত্মহত্যার চিন্তা

যদি কেউ আত্মহত্যার চিন্তা করে বা আত্মহত্যার চেষ্টা করতে চায়, তবে এটি মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির খুব গুরুতর একটি সংকেত এবং এর তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন। এমন ব্যক্তির অবিলম্বে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য প্রয়োজন।

যদি এই লক্ষণগুলোর মধ্যে একাধিক লক্ষণ কারো মধ্যে দেখা যায় এবং তা যদি ব্যক্তির দৈনন্দিন কার্যক্রমে প্রভাব ফেলে, তবে তাকে দ্রুত একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত।

আরও