স্ক্যাবিস (Scabies) একটি অত্যন্ত সংক্রামক চর্মরোগ, যা পরজীবী মাইট (Sarcoptes scabiei var. hominis) দ্বারা সৃষ্টি হয়। এটি ত্বকের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শের মাধ্যমে দ্রুত ছড়ায়। স্ক্যাবিস সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা হলে এটি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হতে পারে। এ লক্ষ্যে স্ক্যাবিস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো নিজে জানলে এবং অন্যকে জানানোর মাধ্যমে উপকার পাওয়া সম্ভব হবে।
স্ক্যাবিসের লক্ষণগুলো চিনে নিতে হবে
তীব্র চুলকানি, বিশেষ করে রাতে বেশি হয়।
ত্বকে লাল ফুসকুড়ি ওঠে, ছোট ফোসকা ও দাগ হয়।
ত্বকে পাতলা, ধূসর বা লাল রঙের দাগ (মাইটের গর্ত)।
এগুলো হাতের আঙুলের ফাঁকে, কব্জি, কনুই, বগল, নিতম্ব, যৌনাঙ্গ ইত্যাদি স্থানে বেশি দেখা যায়।
স্ক্যাবিস কীভাবে ছড়ায়
স্ক্যাবিস সাধারণত ত্বকের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়, যেমন হাত ধরা, আলিঙ্গন করা বা যৌন সংস্পর্শ।
এটি সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত কাপড়, তোয়ালে বা বিছানার চাদরের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে, তবে এটি কম সাধারণ।
স্ক্যাবিস প্রতিরোধের উপায়
ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা: নিয়মিত গোসল করা ও পরিষ্কার কাপড় পরা।
সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়ানো: স্ক্যাবিস ধরা পড়লে অন্যদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
ব্যবহৃত কাপড় ও বিছানাপত্র পরিষ্কার করা: সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত কাপড়, তোয়ালে, বিছানার চাদর গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং কাপড় আয়রন করে পরুন।
পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা: স্ক্যাবিস ধরা পড়লে পরিবারের অন্য সদস্যদেরও চিকিৎসা করা উচিত, এমনকি তাদের কোনো লক্ষণ না থাকলেও।
স্ক্যাবিসের চিকিৎসা
স্ক্যাবিসের চিকিৎসা সঠিকভাবে করা হলে এটি সম্পূর্ণভাবে নিরাময় হয়। চিকিৎসার জন্য সাধারণত টপিক্যাল ক্রিম (যেমন পারমেথ্রিন) এবং ওরাল ওষুধ (যেমন আইভারমেক্টিন) ব্যবহার করা হয়।
তবে চিকিৎসা শুরু করার আগে অবশ্যই একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।
স্ক্যাবিস সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর করা
স্ক্যাবিস শুধু অপরিচ্ছন্ন বা দরিদ্র লোকদের হয় না, এটি যে কারো হতে পারে।
স্ক্যাবিস শুধু শারীরিক সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়, বাতাস বা পানির মাধ্যমে নয়।
স্ক্যাবিসের জটিলতা
স্ক্যাবিস সঠিকভাবে চিকিৎসা না করা হলে ত্বকে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হতে পারে।
ক্রাস্টেড স্ক্যাবিস (Crusted Scabies) একটি গুরুতর রূপ, যা দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন।
সামাজিক সচেতনতা
স্ক্যাবিস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কমিউনিটি লেভেলে প্রচারণা চালানো উচিত।
স্কুল, কলেজ ও কর্মস্থলে স্ক্যাবিসের লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সম্পর্কে তথ্য প্রদান করা উচিত।
স্ক্যাবিস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও সঠিক চিকিৎসা নেয়ার মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করা সম্ভব।
লেখক: চর্ম, যৌন, অ্যালার্জি ও হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন কনসালট্যান্ট, ল্যাবএইড অ্যাস্থেটিক অ্যান্ড লেজার লাউঞ্জ
ল্যাবএইড লি. (ডায়াগনস্টিকস) কলাবাগান, ঢাকা।