অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস কেন হয়? চিকিৎসা কী?

অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস বা একজিমা ত্বকের প্রদাহজনিত একটি রোগ। এটি সাধারণত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে প্রাপ্তবয়স্করাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস বা একজিমা ত্বকের প্রদাহজনিত একটি রোগ। এটি সাধারণত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে প্রাপ্তবয়স্করাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। ত্বকের এ দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাটি কখনো কখনো অত্যন্ত অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে খাবারে অ্যালার্জি, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, ত্বকের সংক্রমণ এবং হাঁপানির ঝুঁকি বেশি থাকে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ত্বকের যত্ন, ময়েশ্চারাইজার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ক্রিম বা ওষুধ ব্যবহার করলে সহজেই রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

কেন হয়?

অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হলো বংশগত কারণ। পরিবারের কারো এ রোগ হয়ে থাকলে অন্য সদস্যদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ত্বকে অতিরিক্ত স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস ব্যাকটেরিয়ার কারণেও রোগটি হয়। অনেকের ক্ষেত্রে কিছু রাসায়নিক দ্রব্য, ডিটারজেন্ট, সাবান অথবা শ্যাম্পুর সংস্পর্শেও এটি হতে পারে। অ্যালার্জি সৃষ্টি করে এমন বস্তু যেমন ফুলের রেণু, ধুলো-ময়লা, পশুপাখির পশম, উল ইত্যাদি থেকেও অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডা ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় ত্বকের আর্দ্রতা হ্রাস পায়। ফলে ত্বক রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায় এবং চুলকানির সৃষ্টি হয়, যা অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিসের ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দেয়। অনেক সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণেও রোগটি হয়ে থাকে।

লক্ষণ ও উপসর্গ

অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস বা একজিমার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে—

 ত্বক রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে ফেটে যাওয়া

 ত্বক পুরু হয়ে ওঠা।

 ত্বকে অতিরিক্ত চুলকানি ও ফুসকুড়ি হওয়া

 আক্রান্ত ত্বক লালচে বা বাদামি হয়ে যাওয়া

 ত্বক থেকে পুঁজ বা পুঁজজাতীয় তরল পদার্থ নিঃসৃত হওয়া

 উপসর্গগুলো শরীরের যেকোনো স্থানের ত্বকে দেখা দিতে পারে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে মুখ, গলা, হাত ও পা বেশি আক্রান্ত হয়।

অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিসের চিকিৎসা

রোগীর বয়স, শারীরিক অবস্থা ও রোগের তীব্রতা অনুযায়ী অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিসের চিকিৎসা করা হয়। এক্ষেত্রে ত্বকের শুষ্ক ভাব কমাতে ও আর্দ্রতা বজায় রাখতে সুগন্ধি ও রাসায়নিকমুক্ত ক্রিম বা লোশন ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়। পাশাপাশি ত্বকের প্রদাহ ও চুলকানি নিয়ন্ত্রণে হাইড্রোকর্টিসনের মতো কর্টিকোস্টেরয়েডজাতীয় মলম বা ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। সংবেদনশীল ত্বকের জন্য স্টেরয়েডের পরিবর্তে ক্যালসিনুরিন ইনহিবিটরযুক্ত ক্রিম যেমন ট্যাক্রোলিমাস বা পাইমেক্রোলিমাস অধিক কার্যকর। এছাড়া অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিসের কারণে যদি ত্বকে সংক্রমণ দেখা দেয়, তাহলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম কিংবা ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। রোগ আরো জটিল আকার ধারণ করলে ফটোথেরাপি বা আলোকথেরাপি প্রয়োগ করা লাগতে পারে এবং ইমিউনোসাপ্রেসিভ ওষুধ যেমন সাইক্লোসপোরিন, মেথোট্রেক্সেট বা প্রেডনিসোন সেবনের প্রয়োজন হতে পারে।

প্রতিরোধে করণীয়

অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস প্রতিরোধে নিয়মিত ত্বকের সঠিক যত্ন নেয়া আবশ্যক। এজন্য কিছু বিষয় মেনে চলা উচিত। যেমন

 প্রতিদিন হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করুন।

 গোসলের আগে অলিভ অয়েল বা মেডিকেল গ্রেডের তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।

 গোসলের সময় ক্ষারযুক্ত সাবানের পরিবর্তে ত্বকের জন্য নিরাপদ কোনো ক্লিনজার ব্যবহার করুন।

 গোসলের পর নরম তোয়ালে দিয়ে ত্বক আলতোভাবে মুছে নিন এবং শরীর ভেজা থাকা অবস্থায় সুগন্ধিহীন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

 দিনে অন্তত দুবার ত্বকে ময়েশ্চারাইজ করুন।

 নরম ও সুতির তৈরি পোশাক পরিধান করুন এবং পোশাক সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।

 খসখসে, সিনথেটিক ও উলের কাপড় এড়িয়ে চলুন।

 ভিটামিন ডির অভাবে ত্বক রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায়। এজন্য খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি রাখুন এবং প্রতিদিন কিছু সময় সূর্যালোকে থাকুন।

 হাতের নখ ছোট ও পরিষ্কার রাখুন। কারণ নখ বড় থাকলে অনেক সময় আঁচড় লেগে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।

 মানসিক উদ্বেগ ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। তাই মানসিক দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।

লেখক: কনসালট্যান্ট, ল্যাবএইড অ্যাস্থেটিক

অ্যান্ড লেজার লাউঞ্জ

ল্যাবএইড আইকনিক, কলাবাগান

আরও