গ্রিনল্যান্ড হাঙর

সবচেয়ে দীর্ঘজীবী প্রাণী থেকে মানুষের আয়ু বাড়ানোর সম্ভাবনা খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা

২০১৬ সালে একটি গবেষণায় প্রথম নিশ্চিত করা হয়, গ্রিনল্যান্ড হাঙর পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘজীবী মেরুদণ্ডী প্রাণী। তাদের গড় আয়ু প্রায় ৪০০ বছর। অন্তত ২৭২ বছর থেকে ৫০০ বছর পর্যন্ত হতে পারে এই হাঙরের আয়ু। এখন বিজ্ঞানীরা জানার চেষ্টা করছে কীভাবে এই হাঙর এত দীর্ঘজীবী হয়।

গ্রিনল্যান্ড হাঙর সম্পর্কে বহুদিন ধরেই বিজ্ঞানীদের আগ্রহ। ঠাণ্ডা সমুদ্রের গভীরে বসবাসকারী এই ধীরগতির প্রাণীগুলো সারা বছর বরফ শীতল পরিবেশে টিকে থাকতে পারে। এই হাঙরের জীবনকাল এত দীর্ঘ যে, কেউ কেউ ঔপনিবেশিক যুগ থেকে আজও বেঁচে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এর দীর্ঘায়ুর রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করছেন।

২০১৬ সালে একটি গবেষণায় প্রথম নিশ্চিত করা হয়, গ্রিনল্যান্ড হাঙর পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘজীবী মেরুদণ্ডী প্রাণী। তাদের গড় আয়ু প্রায় ৪০০ বছর। অন্তত ২৭২ বছর থেকে ৫০০ বছর পর্যন্ত হতে পারে এই হাঙরের আয়ু। এখন বিজ্ঞানীরা জানার চেষ্টা করছে কীভাবে এই হাঙর এত দীর্ঘজীবী হয়।

একটি আন্তর্জাতিক গবেষক দল সম্প্রতি গ্রিনল্যান্ড হাঙরের জিনোম ম্যাপিং সম্পন্ন করেছে। এতে দেখা গেছে, এই হাঙরের জিনোম মানুষের জেনোমের চেয়ে দ্বিগুণ বড় এবং এটি অন্য হাঙর প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বড়। গবেষণার সময় প্রায় ৯২ শতাংশ ডিএনএ সিকোয়েন্স করা হয়েছে, যা হাঙরের জীবনীশক্তি এবং দীর্ঘ আয়ুর কারণ সম্পর্কে নতুন দিকনির্দেশনা দিচ্ছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রিনল্যান্ড হাঙরের জিনোমে প্রায় ৭০ শতাংশ ‘জাম্পিং জিন’ নামে পরিচিত ডিএনএ উপাদান রয়েছে। সাধারণত এগুলো ক্ষতিকর বলে বিবেচিত হয়। কারণ এরা ডিএনএতে মিউটেশন ঘটায়। তবে গ্রিনল্যান্ড হাঙরের ক্ষেত্রে এই জিনগুলো ডিএনএ মেরামতের প্রক্রিয়াকে আরো কার্যকর করেছে। ফলে ডিএনএর ক্ষতি মেরামত হয়ে দীর্ঘ আয়ুর পথ সুগম হয়েছে।

গবেষকরা মনে করছেন, ডিএনএ মেরামতকারী এই জিনগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিলিপি তৈরি করে গ্রিনল্যান্ড হাঙরের জিনোমের অখণ্ডতা বজায় রেখেছে। এর ফলেই এই হাঙরগুলো এত দীর্ঘ সময় ধরে বেঁচে থাকতে সক্ষম হয়েছে।

গবেষণার জন্য গ্রিনল্যান্ড হাঙরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বিশেষ অনুমতির মাধ্যমে। গবেষকরা মনে করেন, এই গবেষণা শুধু দীর্ঘ আয়ু নয়, বরং গ্রিনল্যান্ড হাঙরের সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ২০১৯ সালের আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকায় গ্রিনল্যান্ড হাঙর সংকটাপন্ন প্রজাতি হিসেবে উল্লেখিত।

গ্রিনল্যান্ড হাঙরের ডিএনএ মেরামত প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা থেকে মানুষের আয়ু বাড়ানোর নতুন পথ বের হতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডিএনএ মেরামত প্রক্রিয়াকে আরো কার্যকর করতে যদি গ্রিনল্যান্ড হাঙরের জিনের কার্যপ্রণালী মানুষের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়, তাহলে সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন লাভ সম্ভব হতে পারে।

গবেষকরা মনে করেন, এ থেকে এমন ওষুধ তৈরি করা যেতে পারে, যা মানুষের ডিএনএ মেরামত প্রক্রিয়াকে উন্নত করবে এবং ক্যানসারের মতো জটিল রোগ প্রতিরোধে সহায়ক হবে।

গ্রিনল্যান্ড হাঙরের জীবনী ও ডিএনএ গবেষণা শুধু বিজ্ঞানের জন্য নয়। বরং মানবজাতির ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য ও আয়ুষ্কাল বাড়ানোর এক নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে।

আরও