ব্রিটানিক এক্সপ্লোরার: ইংল্যান্ডের প্রথম বিলাসবহুল স্লিপার ট্রেন

ব্রিটানিক এক্সপ্লোরারকে ঠিক সাধারণ ট্রেন বলা চলে না; এটি যেন এক চলমান শিল্পকর্ম। লন্ডনের বিখ্যাত ডিজাইন স্টুডিও আলবিয়ন নর্ড-এর ডিজাইনে এটি নির্মিত, যেখানে ট্রেনের প্রতিটি কেবিন, ডাইনিং কার এবং অবজারভেশন কারে ফুটে উঠেছে ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী বাড়িঘর এবং বাগানগুলোর সৌন্দর্য।

আগামী গ্রীষ্মে ইংল্যান্ডের রেল ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় যুক্ত হতে চলেছে—ব্রিটানিক এক্সপ্লোরার। ২০২৫ সালের জুলাই মাস থেকে লন্ডন থেকে শুরু করে কর্নওয়াল, লেক ডিস্ট্রিক্ট এবং ওয়েলসের নয়নাভিরাম রুট ধরে চলবে এই ট্রেন। ঐতিহাসিক রুট ধরে চলবে ব্রিটানিক এক্সপ্লোরার, যা প্রকৃতির মাঝেই বিলাসবহুল অনুভূতির স্বাদ দেবে।

রোমাঞ্চকর যাত্রার সূচনা

ব্রিটানিক এক্সপ্লোরারকে ঠিক সাধারণ ট্রেন বলা চলে না; এটি যেন এক চলমান শিল্পকর্ম। লন্ডনের বিখ্যাত ডিজাইন স্টুডিও আলবিয়ন নর্ড-এর ডিজাইনে এটি নির্মিত, যেখানে ট্রেনের প্রতিটি কেবিন, ডাইনিং কার এবং অবজারভেশন কারে ফুটে উঠেছে ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী বাড়িঘর এবং বাগানগুলোর সৌন্দর্য। এর সবুজ এবং ক্রিমের মনোমুগ্ধকর প্যালেট, মার্বেল টেবিলের টপ, প্লাশ সোফা এবং ট্রম্প ল'য়েল প্যাটার্নের কার্পেট এক বিলাসী অভিজ্ঞতা দেয়।

বিলাসবহুল স্যুট ও ভ্রমণসঙ্গী

ব্রিটানিক এক্সপ্লোরার ট্রেনে রয়েছে ১৮টি কেবিন, যার মধ্যে রয়েছে ৩টি গ্র্যান্ড স্যুট এবং ১৫টি সুইট। প্রতিটি কেবিনে সোফা, বিছানা এবং নিজস্ব বাথরুম সহ আরামদায়ক বসার জায়গা, যা যাত্রীদের একান্তে রোমাঞ্চ উপভোগ করতে সাহায্য করবে।

এই বিলাসের জন্য অবশ্য মূল্যও কম নয়। তিন রাতের এক আকর্ষণীয় যাত্রার জন্য খরচ পড়বে প্রায় ১১ হাজার পাউন্ড।

উদ্ভাবনী ডাইনিং

এই ট্রেনের ডাইনিং কারগুলির নাম মালভা এবং স্যামফায়ার। যেখানে যাত্রীরা মিশে যাবেন এক জমকালো বাগানের পরিবেশে। পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্রিটিশ শেফ সাইমন রোগান এই ডাইনিং কারের দায়িত্বে থাকবেন। বিশেষ মেনুতে স্থানীয় খাবারের স্বাদ মিলবে। যা ব্রিটেনের প্রাকৃতিক দৃশ্যের সঙ্গে মিল রেখে তৈরি করা হয়েছে।

প্রকৃতির মাঝে বিলাসিতা

ব্রিটানিক এক্সপ্লোরারের অন্যতম আকর্ষণীয় অংশ হলো এর অবজারভেশন কারের বার, যা ভিক্টোরিয়ান সময়ের মেডিসিনাল পরিবেশে তৈরি। এখানে সেলফোনের আলোয় নয়, প্রকৃতির আলোতেই যাত্রীরা অনুপ্রাণিত হবেন। বারটিতে থাকবে বোটানিক্যাল ককটেল এবং বিখ্যাত ব্রিটিশ জিনের সমাহার।

ঐতিহাসিক গৌরব

ব্রিটানিক এক্সপ্লোরার ট্রেনটি মূলত ১৯৭০-এর দশকের ইন্টারসিটি রেল মার্ক ৩ কারিয়েজ থেকে সংস্কার করা হয়েছে। এই ট্রেনটি ব্রিটেনের ঐতিহাসিক রেল ঐতিহ্যকে সম্মান জানিয়ে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে রেল চলাচলের এক নতুন দিগন্তের সূচনা ঘটেছিল প্রায় ২০০ বছর আগে।

রোমাঞ্চকর গন্তব্য

ব্রিটানিক এক্সপ্লোরারের তিনটি রুটের প্রতিটিই দারুণ মনোমুগ্ধকর। কর্নওয়ালের পথটি নিয়ে যায় পেনজান্সের খাড়া উপকূল ধরে এবং লস্টউইদিয়ালের চারপাশের ছোট্ট গ্রামগুলোর দিকে। লেক ডিস্ট্রিক্ট, যা অনেকের মতে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য, সেখানে হ্রদ এবং পর্বতের মায়াবী সংমিশ্রণ। আর ওয়েলসের রুটটি স্নোডোনিয়ার পর্বতশ্রেণী থেকে শুরু করে পেমব্রোকেশায়ারের সৈকত পর্যন্ত বিস্তৃত।

প্রতি মুহূর্তে নতুন দৃশ্য, বিলাসবহুল খাবার, আর ট্রেনের ঐতিহ্যের মাঝে যেন জীবনটা আরও বৈচিত্র্যময় হয়ে ওঠে। ব্রিটানিক এক্সপ্লোরার শুধু একটি যাত্রা নয়, এটি এক ভ্রমণের গল্প, যা আপনার মনোজগতে আজীবন রয়ে যাবে। খবর সিএনএন।

আরও