স্বাধীনতা দিবসে পড়তে পারেন যে বইগুলো

কোনো জাতি বা জনপদ সহজে স্বাধীন হতে পারে না। বিশেষত যাদের কলোনি হওয়ার ইতিহাস আছে তারা তো নয়ই। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ কোনো কলোনি না হিসেবে না থাকলেও পশ্চিম পাকিস্তানিরা শাসনের অবস্থা এমন করেছিল যে পূর্ব বাংলার মানুষেরা বেঁচে ছিল দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মতো। এরপর ক্ষোভ, প্রতিবাদ, আন্দোলন।

কোনো জাতি বা জনপদ সহজে স্বাধীন হতে পারে না। বিশেষত যাদের কলোনি হওয়ার ইতিহাস আছে তারা তো নয়ই। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ কোনো কলোনি না হিসেবে না থাকলেও পশ্চিম পাকিস্তানিরা শাসনের অবস্থা এমন করেছিল যে পূর্ব বাংলার মানুষেরা বেঁচে ছিল দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মতো। এরপর ক্ষোভ, প্রতিবাদ, আন্দোলন। ২৫ মার্চ মধ্যরাত্রিতে সামরিক বাহিনীর ধ্বংসাত্বক কর্মকাণ্ড ও গণহত্যা। সে ইতিহাস কমবেশি সবারই জানা। নানা সময় ফিকশন ও নন-ফিকশনে উঠে এসেছে এসব ঘটনা। জনপ্রিয় ও অজনপ্রিয় বইয়ে আছে ২৫ মার্চের কথা। আজ আমরা জানব এমন কিছু বইয়ের কথা যেখানে ২৫ মার্চ উঠে এসেছে।

রাইফেল রোটি আওরাত: আনোয়ার পাশার লেখা উপন্যাস এটি। কিন্তু উপন্যাস হলেও সেখানে বাস্তব ও ফ্যাক্ট স্পষ্ট। এটিকে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম উপন্যাসও বলা হয়। উপন্যাসটি আনোয়ার পাশার নিজের বয়ানে লেখা। তিনি উত্তম পুরুষে ২৫ মার্চ রাত থেকে এর পরবর্তী কিছু দিনের ঘটনা লিখেছেন। এ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র সুদীপ্ত শাহীন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক। বস্তুত আনোয়ার পাশা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক। সুদীপ্তর মধ্য দিয়ে নিজেকেই এঁকেছেন।

আনোয়ার পাশা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার কারণে ২৫ মার্চ কালরাত্রি দেখেছিলেন কাছ থেকে। রাইফেল রোটি আওরাতে তিনি নিজের দেখা ঢাকা ও তার পরিস্থিতির বর্ণনাই দিয়েছেন। প্রামাণ্য দলিলই হয়ে ওঠে তাই এটি।

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর আনোয়ার পাশা ঘাতক আলবদর কর্তৃক অপহৃত ও নিহত হন। আনোয়ার পাশা স্বাধীন দেশের নতুন ভোর দেখে যেতে না পারলেও আমাদের জন্য রেখে গেছেন নতুন ভোরের বার্তা। যদিও মানুষ তাঁকে বেশি চেনে এই উপন্যাসটি দিয়ে তবে তাঁর রচিত আরো কিছু গল্প, উপন্যাস, কাব্যগ্রন্থ, প্রবন্ধ রয়েছে।

একাত্তরের দিনগুলি: জাহানারা ইমাম রচিত বইটিও মুক্তিযুদ্ধকালীন ঘটনাবলির বয়ান। ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে বসবাস করতেন জাহানারা ইমাম। তার ছেলে রুমি সে সময় আমেরিকায় পড়াশোনা করতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু দেশের পরিস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নেয়।

জাহানারা ইমামেম একাত্তরের দিনগুলিতে ২৫ মার্চের আগে থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের নানা ঘটনাবলীর উল্লেখ পাওয়া যায়। যুদ্ধ চলাকালীন রুমি যতবার বাড়িতে আসে তার সঙ্গে পরিবারের কথোপকথন থেকে পাওয়া যায় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পের কথা, তাদের যুদ্ধের কথা। এমনকি ঢাকাতেও রুমি ও তার একটা অ্যাকশন করে। বাড়ির ট্যাঙ্কিতে লুকিয়ে রাখে অস্ত্র।

একাত্তরের ডায়েরী: সুফিয়া কামাল রচিত এ বইতেও মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নানা ঘটনা জানা যায়। বইটি শুরু হয়েছে ১৯৭০ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে। কবি সুফিয়া কামাল লেখালেখির পাশাপাশি নানা সামাজিক কাজেও যুক্ত ছিলেন। সে কারণে সমাজের নানা ধরনের মানুষের সঙ্গেও তার সংযুক্তি ছিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটছিল। সেসব থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বিভিন্ন ঘটনা আছে বইটিতে। সেই সঙ্গে আছে উত্তাল সময়ে লেখা কিছু কবিতা।

দ্য ক্রুয়েল বার্থ অব বাংলাদেশ: আর্চার কে ব্লাডের লেখা এ বই। পুরো নাম দ্য ক্রুয়েল বার্থ অব বাংলাদেশ—মেমোয়ার্স অব অ্যান আমেরিকান ডিপ্লোম্যাট। আর্চার কেন্ট ব্লাড ১৯৭১ সালে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের কনসাল জেনারেল নিযুক্ত হয়েছিলেন। ক্র্যাকডাউনের সময় পশ্চিম পাকিস্তানিরা ঢাকায় যে নৃংশসতা চালিয়েছিল তা বিশ্বের কাছে যেন পৌঁছতে না পারে সেজন্য নানাভাবে বিদেশী নাগরিকদের পূর্ব পাকিস্তান থেকে বের করে দিচ্ছিল। কিন্তু আর্চার ব্লাড তার কিছুটা দেখেছিলেন আর তা নিয়ে একটি টেলিগ্রাম বার্তা পাঠিয়েছিলেন। এটি ‘দ্য ব্লাড টেলিগ্রাম’ নামে পরিচিত। তিনি তার দ্য ক্রুয়েল বার্থ অব বাংলাদেশের শুরুতে লিখেছেন, ‘একাত্তর নিয়ে লিখতে বসে আমার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে। কারণ আমার বহু বন্ধুর মুখ ভেসে উঠছে, যারা শহীদ হয়েছে।’

আরও