বিশ্বের অন্যতম রহস্যময় স্থাপনা স্টোনহেঞ্জ নির্মাণের রহস্য এখন আরো পরিষ্কার হয়ে উঠছে। নতুন গবেষণায় জানা গেছে, প্রায় ৫ হাজার বছর আগে ইউরোপ থেকে নতুন জনগোষ্ঠীর আগমনের ফলে ব্রিটেনের সমাজে যে পরিবর্তন হচ্ছিল, তার প্রভাব সামাল দিতে এবং জনগণের মধ্যে ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দিতে এই বিশাল স্থাপত্য তৈরি করা হয়েছিল।
গবেষণায় উঠে এসেছে, স্টোনহেঞ্জের কেন্দ্রীয় অংশে থাকা আল্টার স্টোন নামক পাথরটি স্কটল্যান্ডের উত্তর-পূর্ব থেকে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে আনা হয়েছিল। এই ভারী পাথরটি স্থানান্তর করতে কয়েকশ থেকে কয়েক হাজার মানুষের প্রয়োজন হয়েছিল।
দুটি বড় সারসেন পাথরের নিচে আল্টার স্টোন
স্টোনহেঞ্জের নির্মাণ শুরু হয়েছিল প্রায় ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। তবে এটি বিভিন্ন সময়ে পুনর্নির্মাণ করা হয়। প্রাথমিকভাবে এতে ব্লুস্টোন এবং সারসেন নামক পাথর ব্যবহার করা হয়।
গবেষকরা বলছেন, আল্টার স্টোনকে পুনর্নির্মাণের সময় স্টোনহেঞ্জের কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছিল। এটি এমনভাবে স্থাপন করা হয়, যাতে শীত ও গ্রীষ্মকালীন সোলসটিসে সূর্যের আলো এর ঠিক মাঝখান দিয়ে প্রবেশ করে। প্রাচীন ব্রিটেনের মানুষ সূর্য, পূর্বপুরুষ এবং প্রকৃতির সঙ্গে নিজেদের সংযোগ স্থাপন করার জন্য স্টোনহেঞ্জকে একটি বিশেষ স্থানে পরিণত করেছিল।
গবেষকরা মনে করেন, এই পাথরগুলো স্থানান্তরের সময় বিভিন্ন সম্প্রদায় একত্রিত হয়ে কাজ করেছিল। যাত্রাপথে বিভিন্ন উৎসব এবং সমবেত কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষদের একত্রিত করা হতো। স্টোনহেঞ্জ শুধু ধর্মীয় বা জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক কাজে ব্যবহৃত হতো না। এটি ব্রিটেনের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষদের জন্য একটি ঐক্যের প্রতীক ছিল। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী পাথরগুলো এখানে স্থাপন করে ব্রিটেনের মানুষের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছিল।
গবেষকদের ধারণা, স্টোনহেঞ্জ পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে প্রাচীন ব্রিটেনের জনগণ নিজেদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে ধরে রাখার চেষ্টা করেছিল।
বর্তমানে বিজ্ঞানীরা আল্টার স্টোনের সঠিক উৎসস্থল খুঁজে বের করার জন্য কাজ করছেন। এই গবেষণা স্টোনহেঞ্জের ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং প্রাচীন ব্রিটেনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক সম্পর্কে নতুন ধারণা দিয়েছে। এটি দেখিয়েছে কীভাবে একটি স্থাপত্য শুধুমাত্র একটি নিদর্শন নয়, বরং পুরো একটি সমাজের ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছিল।