শীতে কুবি ক্যাম্পাস যেন কুয়াশা ও সূর্যের লুকোচুরির খেলাঘর

বাংলাদেশে শীতের আগমন ঘটে প্রকৃতির স্বাভাবিক পরিবর্তনের ধারায়। আর এ প্রকৃতির ছোঁয়া লেগে থাকে গ্রাম থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রতিটা স্থানে। একেক ঋতুর একেক রূপ নানা ভাবে রঙিন করে দেশের প্রকৃতিকে। পৌষ ও মাঘ মাস মিলিয়ে শীতকাল। এ ঋতুতে নানাভাবে সাজে প্রকৃতি। চারিদিকে রিক্ততা, ভোরে কুয়াশা ও ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দুতে প্রকৃতি হয়ে উঠে অনন্য।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছুঁয়ে যায় প্রকৃতির সব ঋতুই। গ্রীষ্ম বর্ষা ও হেমন্তে যেমন কুবির প্রকৃতি সাজে নানা রঙে তেমনি শীতকালেও কুবির প্রকৃতি সজ্জিত হয় আরেক রঙের ছোঁয়ায়। শীতকালে এই ক্যাম্পাসে দেখে মেলে কয়েকটি রূপের। কখনো ভোরে সূর্য উঁকি দেয় ক্যাম্পাসের গাছপালা ভেদ করে। সূর্যের আলোতে ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু জ্বলজ্বল করে কোনো মূল্যবান পাথরের মতো। শীতের ক্যাম্পাসে চোখে পড়ে আরেকটি রূপ। সারাদিনও সূর্যের দেখা পাওয়া যায় না। এমন দিনে ক্যাম্পাসের প্রকৃতি ও শিক্ষার্থীদের মাঝে যেন ভর করে বিষণ্নতা। রোদের দেখা না মিললেও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ব্যস্ততা থেমে থাকে না। সকালে বাস ধরে ক্যাম্পাসে আসা, আবার বিকেল পাঁচটার বাস ধরে টিউশন ও নানান কাজে শহরে যাওয়া নিত্য অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায় শিক্ষার্থীদের।

শীতকালে ক্যাম্পাসে নিত্য দেখা মেলে যে চিত্রের সেটা হলো- ব্যাডমিন্টন খেলা। ক্যাম্পাসের খালি জায়গাগুলোতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো করে ব্যাডমিন্টন কোর্ট করে খেলে।

প্রতিটি ঋতুই কুবি ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে, তবে শীত ব্যতিক্রম ছোঁয়া দেয়। কখনো রোদ, কখনো কুয়াশা। যেন সূর্যের সঙ্গে কুয়াশার চলে নিত্য লুকোচুরি।

শরতের কাশফুল ও হেমন্তের শুভ্রতা শেষে শীত তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে এবারও কুবিতে আগমন ঘটিয়েছে। চারপাশে লালমাটির পাহাড় আর সমতটের বৃক্ষরাজি এক অপরূপ সৌন্দর্যের আস্ফালন ঘটায়।

প্রকৃতি তার আপন হাতে সমৃদ্ধশালী রুচিবোধ নিয়ে সাজিয়েছে এ ক্যাম্পাসকে। কুয়াশার চাঁদর ভেদ করে সকালের সূয্যিমামা উঁকি দেয় মুক্তমঞ্চের কাঁঠাল গাছের ফাঁক দিয়ে। পাখির কিচির-মিচির ডাক শুনে ভোরের আলোতে শীতকে উপভোগ করতে বেরিয়ে পড়ে অনেক শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থীদের পদচারণায় রুক্ষতা, শূন্যতা কাটিয়ে ক্যাম্পাস আবার সজীব হয়ে ওঠে। বিবিএ ফ্যাকাল্টির সামনের রাস্তা দিয়ে পাহাড় বেয়ে ওঠার সময় সূর্যের চিকচিক আলো শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে দান করে সৌন্দর্য, শরীরে দেয় আরাম।

মধ্যাহ্নে পুরো ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের গুঞ্জরণে মুখরিত হয়ে থাকে ক্লাস, মিডটার্ম আর সেমিস্টার ফাইনালের আমেজে। গোধূলি লগ্নে জীবনের প্রয়োজনে হিম বায়ুতে গায়ে গরম কাপড় জড়িয়ে টিউশনের জন্য বেরিয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা।

কুয়াশা জড়ানো ভোর, পাতাঝরার দিন, কাকডাকা ভোরে খেজুর গাছ থেকে গাছির রস আহরণ, কিংবা শিউলির পাপড়িতে শিশিরের জলকণা শীতকালে কুবির নিত্য চিত্র।

নতুন বছরে শীত ঋতু শিক্ষার্থীদের জন্য বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ ও প্রাপ্তি। প্রতিটি প্রাণের হোক স্বপ্নপূরণ।

লেখক: আকাশ আল মামুন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (শিক্ষার্থী)

আরও