স্পেনে মিললো সবচেয়ে প্রাচীন ‘সাবার-টুথড’ প্রাণী

এক সময় এই প্রাণীরা ছিল ভূমি অঞ্চলের প্রধান শিকারি। আকারে কেউ ছিল ছোট বিড়ালের মতো, আবার কেউ ছিল বিশাল মেরুভালুকের সমান। তবে মলোরকায় পাওয়া এই জীবাশ্মটি ছিল মধ্যম আকারের কুকুরের মতো, যার ওজন ছিল প্রায় ৩০ থেকে ৪০ কেজি।

স্পেনের মলোরকা দ্বীপের এক প্রাচীন পাহাড়ি এলাকায় কল্পনার চেয়েও প্রাচীন এক শিকারি প্রাণীর অস্তিত্বের চিহ্ন আবিষ্কৃত হয়েছে। গর্গনোপসিয়ান নামে পরিচিত এ শিকারি প্রাণী পৃথিবীর মাটিতে প্রায় ২৭০ থেকে ২৮০ মিলিয়ন বছর আগে বিচরণ করত। তার ধারালো, লম্বা দাঁত আর তীক্ষ্ণ চোয়াল তাকে ওই সময়ের শিকারি প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম করে তুলেছিল।

এ গর্গনোপসিয়ান ছিল স্তন্যপায়ী প্রাণীদের পূর্বপুরুষদের শাখার একটি অংশ। এক সময় এই প্রাণীরা ছিল ভূমি অঞ্চলের প্রধান শিকারি। আকারে কেউ ছিল ছোট বিড়ালের মতো, আবার কেউ ছিল বিশাল মেরুভালুকের সমান। তবে মলোরকায় পাওয়া এই জীবাশ্মটি ছিল মধ্যম আকারের কুকুরের মতো, যার ওজন ছিল প্রায় ৩০ থেকে ৪০ কেজি।

২০১৯ এবং ২০২১ সালের অভিযানের সময় মলোরকার মাটিতে লুকিয়ে থাকা এই জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়। এর মধ্যে ছিল ধারালো দাঁত, চোয়ালের অংশ, মেরুদণ্ডের কশেরুকা, লেজের হাড় এবং পেছনের একটি পায়ের প্রায় সব হাড়। এতদিন পর্যন্ত গর্গনোপসিয়ানদের জীবাশ্ম কেবল দক্ষিণ আফ্রিকা ও রাশিয়ার শুষ্ক অঞ্চলেই পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু মলোরকার এই সন্ধান নতুন এক দিক উন্মোচন করেছে।

নতুন আবিষ্কৃত গর্গোনোপসিয়ানের জীবাশ্মের অংশগুলো দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এর তীক্ষ্ণ দাঁত, চোয়ালের কিছু অংশ, মেরুদণ্ডের হাড়, পাঁজরের হাড়, লেজের হাড়, পায়ের আঙুলের হাড় এবং পিছনের পায়ের হাড়।

বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই অনুমান করছিলেন যে থেরাপসিড নামে পরিচিত গর্গনোপসিয়ানদের মতো প্রজাতির শিকারিরা প্রায় ৩০০ মিলিয়ন বছর আগেই পৃথিবীতে উপস্থিত ছিল। কিন্তু এই সময়কালের প্রমাণ এতদিন কোথাও পাওয়া যায়নি। মলোরকার জীবাশ্মটি সেই শূন্যস্থান পূরণ করল।

মজার ব্যাপার হলো, মলোরকা ছিল প্রাচীন সুপারকন্টিনেন্ট প্যাঙ্গেয়ার একটি অংশ। সেই সময়ে এই অঞ্চলটি ছিল গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়ার অন্তর্গত। গবেষকরা ধারণা করছেন, স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ অনেক ঘটনাই সম্ভবত এই গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে ঘটেছিল। কিন্তু এতদিন এখানে কেউ তেমনভাবে খোঁজ করেনি।

মলোরকার এই আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের মনে এক নতুন আশা জাগিয়েছে। তারা ভাবছেন, পৃথিবীর আরো এমন অনেক অঞ্চল রয়েছে যেখানে লুকিয়ে আছে প্রাচীন প্রাণীদের গল্প। এই গল্পগুলো শুধু আমাদের অতীতকেই নয়, ভবিষ্যতের জন্য আমাদের বিজ্ঞানচর্চাকে আরো প্নেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।

আরও