অভিমত

বৈচিত্র্যহীন বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ খাত ও অর্থনৈতিক সংকটের আশঙ্কা

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রার সংস্থান হয় প্রধানত দুটি উপায়ে। রফতানীকৃত তৈরি পোশাক এবং রেমিট্যান্স। বাংলাদেশ প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক জনশক্তি রফতানি করে। বিদেশের মাটিতে পরিশ্রম করে দেশে থাকা নিজ পরিবারের সদস্যদের অপেক্ষাকৃত ভালো থাকার নিশ্চয়তার জন্য বিদেশে কাজ করা আমাদের শ্রমিক সমাজ কখনো প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিতে দ্বিধা করে না। অন্যদিকে

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রার সংস্থান হয় প্রধানত দুটি উপায়ে। রফতানীকৃত তৈরি পোশাক এবং রেমিট্যান্স। বাংলাদেশ প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক জনশক্তি রফতানি করে। বিদেশের মাটিতে পরিশ্রম করে দেশে থাকা নিজ পরিবারের সদস্যদের অপেক্ষাকৃত ভালো থাকার নিশ্চয়তার জন্য বিদেশে কাজ করা আমাদের শ্রমিক সমাজ কখনো প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিতে দ্বিধা করে না। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রায় ৪৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা তৈরি পোশাক খাত থেকে আসে আমাদের রফতানি আয়ের সিংহভাগ। 

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কর্মমুখী না হওয়ায় যদিও আমরা যথেষ্টসংখ্যক প্রশিক্ষিত জনশক্তি রফতানি করতে পারি না। আমাদের জনশক্তি রফতানি মূলত অদক্ষ শ্রমিককেন্দ্রিক। তাই বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার যে অংশ রেমিট্যান্স থেকে আসে তা মূলত আমাদের সমাজের অপেক্ষাকৃত বঞ্চিত ও স্বল্প দক্ষ জনগোষ্ঠীর অবদান। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আয়বৈষম্য প্রকট হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার জোগানদাতা অপেক্ষাকৃত দরিদ্র শ্রেণী আবার যাপিত জীবনে খুব একটা সুবিধাভোগী হতে পারে না। বরং ধনিক শ্রেণীর জন্যই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের যাবতীয় আয়োজন। নিশ্চিতভাবেই আমাদের রাজনৈতিক অর্থনীতির কাঠামো এমন অদ্ভুত যেখানে শিক্ষিত ও ধনিক শ্রেণীর জীবন ক্রমান্বয়ে উন্নত থেকে উন্নততর হওয়ার জন্য অবারিত পথ উন্মুক্ত। অন্যদিকে দরিদ্র ও স্বল্প শিক্ষিতদের জন্য দেশের কর্মক্ষেত্র যেমন ক্রমশ সংকীর্ণ হচ্ছে তেমনি তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অধিক দরিদ্রে পরিণত হচ্ছে।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর সত্তরের দশকের শেষ দিকে বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষি থেকে উৎপাদনমুখী শিল্পের দিকে ধীরে ধীরে ঝুঁকে পড়তে শুরু করে। বাংলাদেশ সরকার জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাগলা ঘোড়ার গতিতে লাগাম টানতে ব্যর্থ হলেও আমাদের কৃষিতে দেশীয় প্রযুক্তির বদলে আধুনিক প্রযুক্তির পরিচয় ঘটা, কৃত্রিম সেচ পদ্ধতি চালু হওয়া, রাসায়নিক সার এবং বিশেষত দেশীয় বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টায় উচ্চ উৎপাদনশীল ফসলের বীজ আবিষ্কৃত হলে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। প্রযুক্তির বিকাশ একদিকে যেমন আমাদের কৃষিকে যান্ত্রিক শ্রমনির্ভর করে তোলে, তেমনি ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার আবাসের প্রয়োজনে কৃষিজমির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। এ রকম একটি পরিবর্তনশীল সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি যখন কিছুটা অস্থিতিশীল তখন বাংলাদেশের কিছু সাহসী ব্যবসায়ী পোশাক শিল্পের পরিধি বৃদ্ধি করে রফতানিমুখী উৎপাদনের মতো একটি অভূতপূর্ব পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। মূলত মো. রিয়াজউদ্দিনের হাত ধরে বাংলাদেশে রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের যে সূচনা আজ তা দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।

রিজার্ভ সংকট বিগত ২০২৩ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সংকট ছিল। আমাদের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রার সংস্থানে পোশাক শিল্পের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিগত কয়েক বছরে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ঋণমান কমে যাওয়া এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি দুর্বল ও রক্ষণশীল হওয়ার দরুন আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্পের উৎপাদন আশঙ্কাজনক কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে ন্যূনতম মজুরি, কর্মক্ষেত্রে শ্রমিক নিরাপত্তা, রাজনৈতিক পরিবেশসহ নানা কারণে সৃষ্ট চলমান শ্রমিক অসন্তোষের কারণ এবং পশ্চিমা বাজারে পরিবেশ ও মানবাধিকারসচেতন ক্রেতাদের দিক থেকে একটি নেতিবাচক মনোভাবের কারণে বাংলাদেশী পোশাকের চাহিদা প্রভাবিত হতে পারে। অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভূরাজনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট কারণে প্রায় একমাত্রিক রফতানিপ্রধান শিল্প তথা অর্থনীতির লাইফলাইন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে আগামী দিনগুলোয় বেশ কঠিন সময় আসতে পারে। এটি এমন একটি দুষ্টচক্র যাতে একবার প্রবেশ করলে খুব দ্রুত বেরিয়ে আসা প্রায় অসম্ভব। 

এ অবস্থায় বাংলাদেশ সরকার রেমিট্যান্স সংগ্রহের দিকে গভীরভাবে মনোযোগ দিয়েছে। ২০২৩ সাল ছিল বাংলাদেশের জন্য রেকর্ডসংখ্যক জনশক্তি রফতানির বছর। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যমতে, ২০২৩ ও ২০২২ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের ১৩০টির অধিক দেশে যথাক্রমে ১ দশমিক ৩০ ও ১ দশমিক ১৩ মিলিয়ন জনশক্তি রফতানি করেছে। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে জনশক্তি রফতানির অতি উচ্চ হারও আমাদের রেমিট্যান্স প্রবাহের গতিতে বিশেষ পরিবর্তন আনেনি। ২০২২-এ অর্জিত ২১ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স প্রবাহ ২০২৩ সালে ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ২১ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছে। রেমিট্যান্স প্রবাহের এই অংক নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত। 

বাংলাদেশের রফতানীকৃত জনশক্তির প্রায় সিংহভাগের প্রধান গন্তব্য মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুর। এই অঞ্চলের দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে দক্ষ ও অদক্ষ উভয় শ্রেণীর কর্মী নিয়ে থাকে। দক্ষ খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে ড্রাইভার, পরিচর্যাকারী, গৃহকর্মী, আতিথেয়তা কর্মী, ইলেকট্রিশিয়ান, কোয়ালিটি কন্ট্রোল সুপারভাইজার, রেফ্রিজারেশন ও এয়ারকন্ডিশনার টেকনিশিয়ান ইত্যাদি। অন্যদিকে অদক্ষ খাতের অধীনে নির্মাণ শ্রমিক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, রাজমিস্ত্রি প্রভৃতি পেশার জন্য তারা অপেক্ষাকৃত কম খরচে কর্মী নিয়ে থাকে, যাদের উপর্যুক্ত দেশগুলোয় স্থায়ীভাবে বসবাস কিংবা সম্পত্তি করার সুযোগ প্রায় শূন্যের কোটায়। 

আমাদের রফতানীকৃত জনশক্তি তাদের উপার্জনের সিংহভাগই নিজ পরিবারের সদস্যদের কাছে প্রেরণ করে। বিদেশ যাত্রার প্রারম্ভিক খরচের বাকি পরিশোধ শেষে পারিবারিক অবকাঠামো স্থাপন, উন্নয়ন, সংস্কার কিংবা পরিবারের অন্য সদস্যদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের খরচ জোগাতে অবশিষ্ট অর্থ ব্যয় হয়। বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানির সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে রেমিট্যান্স প্রবাহ না বাড়ার কারণ অনুসন্ধান করতে গেলে অবৈধ পথে বা হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রেরণ, তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ট্যাক্স-হ্যাভেন ঘোষিত দেশগুলোয় অবৈধ বিনিয়োগ, জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্পষ্ট ব্যক্তিগত চুক্তির কারণে প্রতারণার শিকার হওয়া ইত্যাদি নজরে আসে। বিগত চার-পাঁচ বছরে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ সরকারি ও বেসরকারি খাতে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের মাঝে বড় অংকের পার্থক্য। সরকারি প্রণোদনা সত্ত্বেও যে কারণে বৈধ উপায়ে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ ক্রমেই কঠিন হয়ে যাচ্ছে এবং হুন্ডি জনপ্রিয় হচ্ছে। 

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইউরোপে অবশ্য ডাক্তার, নার্স, প্রকৌশলী, প্রযুক্তিবিশেষজ্ঞ, শিক্ষক প্রভৃতি উচ্চশিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি রফতানি করার সুযোগ রয়েছে। ২০২৩ সালে উপর্যুক্ত ক্যাটাগরির আওতায় বাংলাদেশ ৫০ হাজারের কিছু বেশি দক্ষ কর্মীকে বিদেশে পাঠিয়েছে। অবশ্য উপর্যুক্ত শ্রেণীর কর্মীদের অধিকাংশের পক্ষেই শিক্ষা, যোগ্যতা ও দক্ষতার কারণে ইউরোপ-আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করার সুযোগ অর্জন করে ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতা কিংবা দেশের সার্বিক আর্থসামাজিক পরিবেশও তাদেরকে নির্দিষ্ট সময় পরে বাংলাদেশে ফেরত আসতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। অনেকেই উন্নত দেশগুলোয় উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমেও সেখানে উচ্চ উপার্জনক্ষম এবং সম্মানজনক পেশায় স্থায়ী হন। বিদেশে চাকরি করে উচ্চ হারে উপার্জন করা বাংলাদেশী নাগরিকদের খুব স্বল্প অংশ বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকে। তারা সঞ্চয়ের অধিকাংশই বিদেশে স্থায়ী নিবাস স্থাপন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পেছনে ব্যয় করে থাকেন। ফলে উচ্চশিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি রফতানি করে রেমিট্যান্স সংগ্রহ বৃদ্ধির সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ।

বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম সংকটের জায়গা হলো বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের সংকীর্ণ পথ। একটি দেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি মোটাদাগে তৈরি পোশাক রফতানি এবং রেমিট্যান্সনির্ভর হওয়া খুবই আশঙ্কার ব্যাপার। আইএমএফের হিসাবমতে, নতুন বছরের শুরুতে বাংলাদেশের প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ মাত্র ১ হাজার ৬৭৫ কোটি মার্কিন ডলার। এ অবস্থায় বাংলাদেশের জনগণ আসন্ন দিনগুলোয় তীব্র খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ার দ্বারপ্রান্তে। 

বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতায় পশ্চিমাবলয়ের দেশগুলোয় তৈরি পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকে তা বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কোনো কারণে এই অবস্থার পরিবর্তন হলে বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনৈতিক অচলাবস্থা সামাল দেয়া অত্যন্ত কঠিন হবে। বাংলাদেশের পোশাকের বাজার ধরতে চীন, ভারত কিংবা তুরস্ক এক ধরনের অদৃশ্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে। এদের পাশাপাশি পাকিস্তান কিংবা ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোও বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বাজারের প্রকাশ্য প্রতিযোগী। বাংলাদেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নাগরিকের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা কিংবা জননিরাপত্তা প্রভৃতি ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যে অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গি তাতে পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিযোগী রাষ্ট্রগুলোর সামান্য ইন্ধন বর্তমান রফতানির বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান রাতারাতি পরিবর্তিত করে দিতে পারে। সর্বশেষ খবর হলো বিদায়ী ২০২৩ সালের প্রথম ১১ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী তৈরি পোশাক রফতানি কমেছে ২২ দশমিক ৪০ শতাংশ।

এদিকে বাংলাদেশী নাগরিকদের নানান অসৎ ও আর্থিক কেলেঙ্কারিতে যুক্ত হওয়ার প্রমাণ মেলায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোয় জনশক্তি রফতানি অদূরভবিষ্যতে বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। ওমান, কাতার, ইউএই কিংবা কুয়েতের মতো দেশগুলোয়ও বাংলাদেশী শ্রমিক রফতানি অদূরভবিষ্যতে বর্তমানের মতো সহজ হবে না। প্রায় একই খরচে ভারত-নেপালের মতো দেশগুলো থেকে অপেক্ষাকৃত দক্ষ শ্রমিক পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকায় জনশক্তি রফতানির বাজারে বাংলাদেশকে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি যে দুষ্টচক্রের ফাঁদে পড়েছে তা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমাদের সুশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা জরুরি। যেকোনো সমস্যা দ্রুত চিহ্নিত করে তার কারণ অনুসন্ধানে প্রয়োজন তথ্যের নিরাপদ ও অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে উপযুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব নিয়ে নিজ দায়িত্ব পালনের স্বাধীনতার পথে বাধা সৃষ্টি না করা অবশ্য কর্তব্য। অন্যথায় প্রায় দুই অংকের ঘরে পৌঁছে যাওয়া মূল্যস্ফীতি, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যকার তীব্র প্রতিযোগিতা, বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক রাজনীতির প্রভাব, যুদ্ধবিগ্রহ কিংবা অসাধু শ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর দৌরাত্ম্য আসন্ন দিনগুলোয় বাংলাদেশে তীব্র জ্বালানি সংকট, রফতানির বাজার সংকোচন, খাদ্য সংকট তথা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পরিবেশকে ভয়ংকর রকম উত্তপ্ত ও অস্থিতিশীল করে তুলতে পাবে। এই আশঙ্কা যে কোনোভাবেই ভিত্তিহীন নয় তার প্রমাণ রাষ্ট্রক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল আসীন পদে থাকা ব্যক্তিবর্গের সাম্প্রতিক সময়ের বক্তব্যেই পরিষ্কার হয়ে যায়। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সেবা খাতের বিপুল বিস্তার কিংবা চামড়া-চা-পাট শিল্পের নবজাগরণ নিশ্চিতের জন্য হাতে সময় খুব অল্প। অবহেলা করে নষ্ট করার মতো ততটা সময় আমাদের হাতে নেই, একেবারেই নেই।

কায়সুল খান: শিক্ষার্থী ও গবেষক

নোভা ইউনিভার্সিটি অব লিসবন, পর্তুগাল

আরও