অভিমত

সুষ্ঠু নির্বাচন ও সুশাসনের জন্য নির্দিষ্ট মেয়াদে অন্তর্বর্তীকালীন সর্বদলীয় সরকারের করণীয়

প্রমাণিত সত্য যে, বাংলাদেশে কোনো দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক নির্বাচন সম্ভব নয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন নীতিতে আস্থা সৃষ্টি, সুশাসন করা এবং কয়েকটি ক্ষেত্রে সংবিধান পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ ও গণভোটে নির্বাচিত মাত্র দুই বছর মেয়াদি একটি সর্বদলীয় সর্বজনস্বীকৃত জাতীয় সরকার। জাতীয় সরকারের সদস্যরা,

প্রমাণিত সত্য যে, বাংলাদেশে কোনো দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক নির্বাচন সম্ভব নয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন নীতিতে আস্থা সৃষ্টি, সুশাসন করা এবং কয়েকটি ক্ষেত্রে সংবিধান পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ গণভোটে নির্বাচিত মাত্র দুই বছর মেয়াদি একটি সর্বদলীয় সর্বজনস্বীকৃত জাতীয় সরকার। জাতীয় সরকারের সদস্যরা, ন্যায়পাল বিভিন্ন কমিশনের চেয়ারম্যানরা ২০২৮ সাল পর্যন্ত কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তাদের সব আর্থিক তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে।

জাতীয় সরকারের প্রধান করণীয়গুলো

. প্রথম তিন মাসের মধ্যে নতুন করে নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচনী আইনের কয়েকটি ধারার সংস্কার, গণভোট এবং না ভোটের প্রচলন, প্রশ্নবিদ্ধ সংসদ সদস্যকে ৫০ হাজার ভোটারের স্বাক্ষরে প্রত্যাহার ব্যবস্থা, জনস্বার্থ সম্পর্কিত বিভাগে ন্যায়পাল নিয়োগ, প্রকাশ্যে পান সেবন ধূমপান নিষিদ্ধকরণ এবং ১৯৮২ সালের জাতীয় ওষুধনীতি পুরোপুরি কার্যকর করে, ওষুধ, শৈল্যচিকিৎসা রোগ নিরীক্ষার দর সরকার স্থির করে দেবে। পর্যাপ্ত লাভ দিয়েও ওষুধের সর্বোচ্চ বিক্রিমূল্য অর্ধেকে নেমে আসবে, অপ্রয়োজনীয় প্রতারণামূলক ওষুধ বাতিল হবে। সব ওষুধ কোম্পানিকে একাধিক কাঁচামাল উৎপাদনে প্রণোদনা দেয়া হবে।

মানহানির মামলা করতে হলে ক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা কোর্ট ফি দিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির শহরে ফৌজদারি মামলা করতে হবে। একই মামলা বিভিন্ন জেলার একাধিক আদালতে করা যাবে না।

. পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে () বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াসহ সব রাজনৈতিক কর্মী আলেমের জামিন নিশ্চিত করে এক বছরের মধ্যে তাদের বিচার শেষ করে রায় কার্যকর করা হবে।

() সুশাসন সব অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশকে ১৫/১৭টি প্রদেশ/স্টেটে বিভক্তকরণ, প্রত্যেক প্রদেশে/স্টেটে ছয়-সাতজন বিচারপতি সমন্বিত হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠা এবং সুপ্রিম কোর্টে একটি সর্বক্ষণিক সাংবিধানিক বেঞ্চ সৃষ্টিসহ সুপ্রিম কোর্টে ছয়টি স্থায়ী বেঞ্চ থাকবে() ফৌজদারি, () দেওয়ানি, () নির্বাচন মৌলিক অধিকার, () কোম্পানি বিরোধ আয়কর সংক্রান্ত, () সব ধরনের দুর্নীতি বিষয়, () যৌন নিপীড়ন নারীদের অধিকার।

বিচারাধীন মামলার সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসা অবধি আদালতের সাপ্তাহিক ছুটি একদিন করা হবে।

() সরকারি চাকরিতে শিক্ষিত বেকাররা ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত অংশ নিতে পারবে। তবে পুলিশ সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে ৩০ বছরের মধ্যে যোগ দিতে হবে। শিল্প কৃষিতে স্বল্প শিক্ষিতদের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকবে। শিক্ষিত নবীন বেকাররা ছয় মাস বয়োবৃদ্ধ সেবায় প্রশিক্ষণ নিয়ে উন্নত দেশগুলোয় অধিক আয় করতে পারবে।

() চিকিৎসা পেশাজীবীদের স্বল্পতা নিরসনে, সুস্থ থাকলে ৭৫ বছর পর্যন্ত মেট্রোপলিটন শহরের বাইরে কর্মে পুনর্নিয়োগ পাবেন।

() জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচন নিশ্চিত করা হবে।

. পরবর্তী নয় মাসের মধ্যে

() দুই কোটি দরিদ্র পরিবারের জন্য সাপ্তাহিক রেশনিং চালু হবে, মাসিক ১০০ টাকায় তিন বাল্বের বিদ্যুৎ সুবিধা এবং মাসিক ২০০ টাকার প্রিমিয়ামে ওষুধসহ সব প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা পাবেন।

() দুর্নীতি তথ্যের শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।

() ভোটার তালিকা সংশোধন, জাতীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন সহজ করা, তিন-চার প্রদেশে/স্টেটে অফিস থাকলে চলবে, প্রত্যেক শাখায় চাঁদা দেয়া কমপক্ষে দুই হাজার সদস্য থাকতে হবে যার মধ্যে এক-পঞ্চমাংশ নারী। জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দলীয় ব্যানারে মিউনিসিপ্যালটি, ইউনিয়ন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

() পেশাজীবী, বয়োজ্যেষ্ঠ অবসরপ্রাপ্ত রাজনীতিবিদ সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তিদের নিয়ে জাতীয় প্রাদেশিক সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে।

() ইলেকট্রনিক ভোটার মেশিন প্রত্যাহার করে নয় মাসের মধ্যে সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন সমাপন।

ইভিএমে ভোট কারচুপির সম্ভাবনা সমধিক।

() () সুষ্ঠু সুলভ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে প্রতি বছর ২০ হাজার ছাত্র ভর্তি করা হবে, সমসংখ্যক ছাত্র দন্ত, ফিজিওথেরাপি, নার্সিং অন্যান্য প্যারামেডিকেল কোর্সে ভর্তি করা হবে।

() প্রত্যেক সরকারি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ন্যূনতম ১০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্ব নেবে। ছাত্ররা প্রতি সেশনে এক মাস সেখানে অবস্থান করে শিক্ষা নেবে, শহীদদের কবর জেয়ারত করবে এবং একদিন একটি দরিদ্র পরিবারে অবস্থান করে দরিদ্রতা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করবে।

() নবীন চিকিৎসকদের ইন্টার্নশিপের মেয়াদ হবে দুই বছরএক বছর নিজ নিজ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং দ্বিতীয় বছর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের বিভিন্ন শাখায়।

() বেসরকারি ক্লিনিকগুলো কেবল বেসরকারি প্রাইভেট চিকিৎসক এবং অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চিকিৎসক দিয়ে পরিচালনা করতে হবে। প্রাইভেট ক্লিনিকে কোনো সরকারি চিকিৎসককে সার্বক্ষণিক বা খণ্ডকালীন নিয়োগ দেয়া চলবে না।

() জেনারেল প্র্যাকটিশনার্স, রেফারেল চিকিৎসা প্রাতিষ্ঠানিক প্রাইভেট প্র্যাকটিস পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নেয়া হবে এবং স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো হবে।

() জাতীয় সরকারের প্রথম বাজেটে বার্ষিক ব্যক্তিগত আয় লাখ টাকা পর্যন্ত আয়কর মুক্ত হবে, সব মেডিকেল যন্ত্রপাতি সামগ্রী আমদানি শুল্কমুক্ত হবে। শতাংশ সুদে কৃষিতে ব্যাপক বিনিয়োগ হবে এনজিওদের মাধ্যমে। গড়ে প্রতি ৫০ হাজার লোকের বাসস্থান ইউনিয়নে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের নিরাপত্তাবেষ্টনী, গভীর নলকূপ, ইলেকট্রিক সাবস্টেশন, চিকিৎসক, নার্স টেকনিশিয়ানদের জন্য ৬০০-৮৫০ বর্গফুটের ১০টি বাসস্থান নির্মাণ, ছাত্রদের ডরমিটরি, ল্যাবরেটরি অপারেশন থিয়েটারের আধুনিকীকরণে প্রয়োজন হবে মাত্র ১০ কোটি টাকা। জাতীয় সরকারের মেয়াদকালে অন্তত এক হাজার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু হবে, প্রাথমিক অবস্থায় দুজন সার্বক্ষণিক চিকিৎসক প্রদেশ/স্টেট থেকে নিয়োগ দেয়া হবে। পাঁচজন নবীন চিকিৎসকের নিয়োগ ব্যবস্থা থাকবে আকর্ষণীয় বেতন প্রশিক্ষণ সুবিধায়ইউনিয়ন পর্যায়ে সার্বক্ষণিক অবস্থান ভাতা, বিশেষজ্ঞ ভাতা, শিক্ষকতা ভাতা, বিনা ভাড়ায় বাসস্থান, স্কুল স্বাস্থ্য কার্যক্রম পরিদর্শন ভাতা প্রভৃতি প্রতি মাসে পাবেন।

() কারাগার, পুলিশ সামরিক বাহিনীর হাসপাতালগুলো সরাসরি এএমসি (আর্মি মেডিকেল কোর) কর্তৃক পরিচালিত নিয়ন্ত্রিত হবে, ফলে দুর্নীতি বিলুপ্ত হবে।

() প্রত্যাগত প্রবাসীদের জন্য বিমানবন্দরে ভিআইপি সেবার ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে, শবদেহ সরকারি খরচে দেশে আনা হবে। প্রত্যেক প্রবাসী ৫০ লাখ টাকার জীবন বীমা সুবিধা পাবেন।

. আইন-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।

একই সঙ্গে প্রদেশ/স্টেট সংসদের নির্বাচন পরিচালনা করা হবে। কেন্দ্রীয় সরকার প্রদেশ/স্টেট গভর্নর মনোনয়ন দেবেন, তারা নির্বাচিত হতে পারেন প্রাদেশিক সংসদ সদস্যের মাধ্যমে। (সংক্ষেপিত)

 

জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী: ট্রাস্টি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র

আরও