প্রায়
প্রতি বছরই
প্রাক-বাজেট
আলোচনায় বাজেটে
কর না
বাড়িয়ে আওতা
বাড়ানোর কথা
বলা হয়।
কিন্তু বাস্তবে
বা পরিশেষে
দেখা যায়
তার প্রায়
উল্টো, অর্থাৎ
যারা নিয়মিতভাবে
কর দিচ্ছেন,
তাদের ওপরই
পড়ে বাড়তি
চাপ। কয়েক
বছর ধরে
নতুন করদাতা
নিবন্ধন বাড়ানোর
হিসাব দেয়া
হলেও বাস্তবে
সংখ্যাটি খুবই
কম। এমনকি
প্রাতিষ্ঠানিক বা
করপোরেট কর
পাওয়া যায়,
এমন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের
সংখ্যাও তেমন
বাড়েনি। ফলে
প্রতি বছরই
এনবিআর কর্তৃক
১০-১৫
শতাংশ রাজস্ব
আদায়ের বাড়তি
চাপ নিতে
হয় মূলত
নিয়মিত সৎ
করদাতা বিশেষভাবে
পেশাজীবী সম্প্রদায়
ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে।
ব্যবসায়ীদেরও নিয়মিত
অভিযোগ, দেশের
কর ব্যবস্থা
মোটেও ব্যবসাবান্ধব
নয়।
করের ভিত্তি
বৃদ্ধি না
পাওয়ায় ঘুরেফিরে
পুরনো করদাতাদের
কাছেই যেতে
হয় এনবিআরকে।
এখন আবার
করোনার কারণে
রাজস্ব আদায়
কমছে। পর্যাপ্ত
রাজস্ব আয়
না থাকায়
সরকার নিজের
টাকায় এমনকি
প্রণোদনা প্যাকেজও
দিতে পারেনি।
আমরা দেখেছি,
সোয়া লাখ
কোটি টাকার
প্রণোদনা তহবিলের
৮০ শতাংশই
ব্যাংক ঋণনির্ভর।
এতে দেশের
প্রায় আড়াই
কোটি নতুন
দরিদ্রের জন্য
আর্থিক প্রণোদনা
দেয়াও সম্ভব
হবে না।
বৈশ্বিক অবস্থানের
দিক থেকেও
মোট দেশজ
উৎপাদনের (জিডিপি)
অনুপাতে করের
পরিমাণের দিক
থেকে (কর-জিডিপি
অনুপাত) বাংলাদেশ
দক্ষিণ এশিয়ায়
আট দেশের
মধ্যে অষ্টম।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য-উপাত্ত
অনুযায়ী, দক্ষিণ
এশিয়ায় সবচেয়ে
বেশি কর-জিডিপি
অনুপাত নেপালের
প্রায় ১৯
শতাংশ। এরপর
ভুটানের কর-জিডিপি
অনুপাত, ১৬
শতাংশ, ভারতের
১২ শতাংশ,
শ্রীলংকার ১১
দশমিক ৬
শতাংশ, পাকিস্তানের
১১ শতাংশ,
আফগানিস্তানের ৯
দশমিক ৯
শতাংশ এবং
মালদ্বীপের ৯
দশমিক ১
শতাংশ।
উন্নত বিশ্বের
দেশগুলোর কর-জিডিপির
গড় অনুপাত
৩৬ শতাংশের
মতো। উদীয়মান
এশীয় দেশগুলোর
অনুপাতও গড়ে
প্রায় ২৭
শতাংশ এবং
আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর
গড় অনুপাত
সাড়ে ১৮
শতাংশ। এমনকি
সাব-সাহারা
খ্যাত আফ্রিকার
দেশগুলোর কর-জিডিপির
গড় অনুপাত
প্রায় ১৮
শতাংশ। সরকারের
দলিলেই টেকসই
উন্নয়ন লক্ষ্য
(এসডিজি) অর্জনে
অভ্যন্তরীণ উৎস
থেকে কর
আহরণের ওপর
জোর দেয়া
হয়েছে। পরিকল্পনা
কমিশনও ২০৪১
সালের মধ্যে
কর-জিডিপি
অনুপাত ২৪
শতাংশে উন্নীত
করার লক্ষ্য
তৈরি করেছে।
এমনিতেই কয়েক
বছর ধরে
কর-জিডিপি
অনুপাত ৮
শতাংশের ঘরে।
করোনার কারণে
এ অনুপাত
৭ শতাংশের
ঘরে নেমে
গেছে। এতে
প্রায় ১৪
বছর আগের
অবস্থায় ফিরে
গেছে বাংলাদেশ।
অংক বলছে,
দেশের কর-জিডিপি
অনুপাত ১
শতাংশ বাড়াতে
পারলেই বছরে
প্রায় ২৮
হাজার কোটি
টাকার বেশি
রাজস্ব আদায়
সম্ভব। আর
এ অনুপাত
১০ শতাংশ
করা সম্ভব
হলে করোনা
সংকট মোকাবেলায়
প্রণোদনা তহবিলের
পুরো টাকাই
হয়তো সরকার
দিতে পারত।
আগেই বলেছি,
ব্যবসায়ী নেতারা
অনেকদিন ধরেই
বলে আসছেন,
এ দেশে
করপোরেট করহার
প্রতিযোগিতামূলক নয়।
আশপাশের দেশের
চেয়ে অনেক
বেশি। আবার
কর ব্যবস্থাও
ব্যবসাবান্ধব নয়।
এ দেশের
কর ব্যবস্থার
বিভিন্ন পর্যায়ে
উেস কর
কেটে রাখা
হয়। ফলে
কার্যকরভাবে করহার
অনেক বেশি।
উেস করকে
চূড়ান্ত কর
হিসেবে কেটে
রাখায় কোনো
কোনো ক্ষেত্রে
৫০ শতাংশের
বেশি করপোরেট
করহার আরোপ
হয়ে যায়।
শোনা যায়,
বাংলাদেশের ৯৯
শতাংশ মানুষই
কর দিতে
চায়। কিন্তু
হয়রানির ভয়ে
কর দেয়
না। অনেকেরই
ভয় যে
কর দিলে
একবার নিরীক্ষায়
পড়লে নানা
ধরনের হয়রানিরও
শিকার হতে
হয়।
দেশের মোট
জনগোষ্ঠীর মাত্র
১ শতাংশের
মতো আয়কর
দেয়। জাতীয়
রাজস্ব বোর্ড
(এনবিআর) করজাল
সম্প্রসারণ করার
চেয়ে সহজে
কর আহরণে
বেশি মনোযোগী।
সহজে কর
আহরণের উপায়
হিসেবে উেস
কর ও
অগ্রিম করেই
তাই কর
কর্মকর্তাদের বেশি
আগ্রহ লক্ষণীয়।
এ কারণে
গত দেড়
দশকে বাংলাদেশে
কর-জিডিপি
অনুপাত বেড়েছে
মাত্র ১
শতাংশের মতো।
জনসংখ্যার অনুপাতে
বাংলাদেশে সবচেয়ে
কম লোক
আয়কর দেয়—মাত্র
১ শতাংশ।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা
১৭ কোটি
পেরিয়ে গেছে।
দেশে প্রায়
৫২ লাখ
মানুষের কর
শনাক্তকরণ নম্বর
(টিআইএন) আছে।
কিন্তু বছর
শেষে আয়কর
বিবরণী বা
রিটার্ন জমা
দেয় মাত্র
২০-২১
লাখ। তাদের
মধ্যে কমপক্ষে
১০ শতাংশ
রিটার্ন দেয়,
কিন্তু কর
দেয় না।
সেই হিসাবে
মোট জনগোষ্ঠীর
মাত্র ১
দশমিক ১
শতাংশ মানুষ
কর দেয়।
পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর
মধ্যে ভুটান
ও নেপালের
বেশি মানুষ
কর দেয়,
এর হার
১১ শতাংশ।
আর শ্রীলংকার
২ কোটি
১৬ লাখ
জনসংখ্যার বিপরীতে
আয়কর দেয়
৭ শতাংশ
মানুষ। তবে
ভারতে দেড়
শতাংশ মানুষ
কর দেয়।
পাকিস্তানের অবস্থা
অনেকটা বাংলাদেশেরই
মতো।
বাংলাদেশে লাভ-লোকসান
নির্বিশেষে কর
দিতে হয়।
দেশে শেয়ারবাজারে
তালিকাভুক্ত নয়,
এমন কোম্পানির
জন্য করহার
সাড়ে ৩২
শতাংশ। আর
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত
হলে ২৫
শতাংশ কর
দিতে হয়।
এছাড়া ব্যাংক,
সিগারেট কিংবা
সেলফোন অপারেটর
হলে সাড়ে
৩৭ থেকে
৪৫ শতাংশ
কর দিতে
হবে।
করপোরেট করহারসহ
কর ব্যবস্থা
মূল্যায়ন করেই
বিদেশী কোম্পানিগুলো
একটি দেশে
বিনিয়োগ করে।
তাই করপোরেট
করহারও বিনিয়োগ
আকর্ষণে ভূমিকা
পালন করে।
প্রতিদ্বন্দ্ব্বী ভারত,
ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া,
মালয়েশিয়া, পাকিস্তানসহ
বিভিন্ন দেশের
করপোরেট করহার
বাংলাদেশের চেয়ে
কম। এসব
দেশে করপোরেট
করহার ২০-২৫
শতাংশের মধ্যেই
আছে।
অভিযোগ রয়েছে
ব্যবসা সহায়ক
পরিবেশ সৃষ্টি
না করে
বরং কর
আহরণে বেশি
জোর দিচ্ছেন
দেশের নীতিপ্রণেতারা।
অনেক সময়
প্রাক বাজেট
আলোচনায় কর
সম্প্রসারণের জন্য
কিংবা কর
ফাঁকি রোধে
অভিনবত্ব আনার
কথা বললেও
শেষ সময়ে
এসে আমরা
বছরের পর
বছর একটি
গতানুগতিক বাজেট
বা ফিন্যান্স
বিল পাচ্ছি।
ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন
ধরে অভিযোগ
করে আসছেন,
যেসব প্রতিষ্ঠান
কর দেয়,
সেসব প্রতিষ্ঠানের
ওপরে কর
দেয়ার চাপ
বেশি। নতুন
করে তেমন
করদাতা প্রতিষ্ঠান
বাড়ছে না।
গত কয়েক
বছরে এনবিআর
খুব বেশি
করদাতা প্রতিষ্ঠান
বাড়াতে পারেনি।
এমনকি বৃহৎ
করদাতা প্রতিষ্ঠানের
তালিকাও সম্প্রতি
ছোট করে
ফেলা হয়েছে।
৩৪টি কোম্পানি
বাদ দিয়ে
এখন কোম্পানির
সংখ্যা ১১০।
ব্যক্তি ও
প্রতিষ্ঠান উভয়
শ্রেণীর সংখ্যা
ও রাজস্বের
পরিমাণ গত
কয়েক বছরে
খুব বেশি
বাড়াতে পারেনি
এনবিআর। এসব
কারণে সহজে
কর আদায়
করা যায়,
সাধারণত এমন
পথেই এগোয়
এনবিআর। আয়করের
প্রায় ৮৪
শতাংশই আদায়
হয় উেস
কর ও
অগ্রিম কর
হিসেবে। এনবিআরের
বার্ষিক প্রতিবেদন
পর্যালোচনা করে
দেখা গেছে,
যত টাকা
উেস বা
অগ্রিম আয়কর
আদায় হয়,
তাদের ২২
শতাংশই আসে
ঠিকাদারদের বিল
পরিশোধের সময়
কেটে রাখা
উেস কর
থেকে। আমদানিকারকরা
পণ্য আমদানিকালে
যে অগ্রিম
কর দেন,
এর পরিমাণ
প্রায় ২০
শতাংশ। আর
ব্যাংকের রাখা
স্থায়ী ও
চলতি আমানতের
ওপর উেস
কর থেকে
আসে প্রায়
১৬ শতাংশ
কর। উেস
কর
এনবিআরের কর্মকর্তারা
সরাসরি আদায়
করেন না।
এগুলো সাধারণত
সরকারের বিভিন্ন
সংস্থা ও
ব্যাংকগুলো বিলের
বিপরীতে কেটে
রেখে সরকারি
কোষাগারে জমা
দিয়ে দেয়।
২০১২ সালে
করদাতার সংখ্যা,
কর-জিডিপি
অনুপাত, অটোমেশনসহ
কিছু খাতে
লক্ষ্য ঠিক
করেছিল এনবিআর।
এর মধ্যে
২০১৬ সালের
মধ্যে কর-জিডিপি
অনুপাত ১৩
শতাংশে উন্নীত
করার লক্ষ্য
এখনো অর্জিত
হয়নি। এছাড়া
২০১৬ সালের
মধ্যে রিটার্ন
দাখিল, পরিশোধসহ
সব সেবা
অনলাইনে করার
কথা ছিল,
তাও হয়নি।
তদুপরি ২০১৮-১৯
সালের মধ্যে
টিআইএনধারীর সংখ্যা
এক কোটিতে
উন্নীত করতে
চেয়েছিল এনবিআর।
এ পর্যন্ত
মাত্র অর্ধেক
লক্ষ্য অর্জিত
হয়েছে।
এমনকি প্রত্যক্ষ
কর বা
আয়করের ভিত্তি
শক্তিশালী করার
জন্য ২০২০-২১
অর্থবছরের মধ্যে
এনবিআরের মোট
আয়ের ৫১
শতাংশ প্রত্যক্ষ
কর থেকে
আহরণের লক্ষ্য
ছিল। সর্বশেষ
গত অর্থবছরে
এনবিআর তার
মোট আয়ের
মাত্র ৩৪
শতাংশ আয়
করেছে আয়কর
থেকে। অবশ্য
এ খাতে
বেশ উন্নতি
হয়েছে। ১৯৭২-৭৩
অর্থবছরে এনবিআরের
মোট আয়ের
মাত্র ৯
দশমিক ৮
শতাংশ এসেছিল
আয়কর থেকে।
ব্যবসায়ীরা নানা
সময়ে কর
কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে
হয়রানির অভিযোগ
করেন। নাগরিক
সমাজ এমনকি
কর অফিসগুলোয়ও
করদাতাদের হয়রানির
বিষয়টি দীর্ঘদিন
ধরেই একটি
আলোচিত বিষয়।
অন্যদিকে একশ্রেণীর
ব্যবসায়ী আছেন,
যারা কর্মকর্তাদের
সহযোগিতায় শুল্ক-কর
ফাঁকি দেন।
কর ফাঁকি
দিয়ে বিদেশে
টাকা পাচারের
প্রধানতম পথ
হলো আমদানি-রফতানি
প্রক্রিয়া বা
ট্রেড বেজড
মানি লন্ডারিং।
দেশ থেকে
যত টাকা
পাচার হয়,
এর বড়
অংশই আমদানি-রফতানি
প্রক্রিয়ায় মিথ্যা
ঘোষণার মাধ্যমে
হয় বলে
গণমাধ্যমে বিভিন্ন
সময়ে প্রতিবেদন
প্রকাশ হয়েছে।
এনবিআর বলছে,
বাংলাদেশে করহার
বেশি বলে
অনেক বহুজাতিক
কোম্পানি অন্য
দেশে থাকা
(যেখানে করহার
কম) সহযোগী
প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ
থেকে পণ্য
বা সেবা
আমদানি করে।
অতিরিক্ত করহার
এড়িয়ে যাওয়ার
চেষ্টা করে।
অন্যদিকে আবার
দেশের প্রচলিত
আইনি সুযোগ-সুবিধার
কারণেও অনেক
ব্যবসায়ী পার
পেয়ে যাচ্ছেন।
যেমন বাড়ি-গাড়িসহ
বিলাসী জীবনযাপনের
খরচের অনেকটা
অংশ নিজের
প্রতিষ্ঠান থেকে
নেন। এসব
প্রতিষ্ঠানের খরচ
হিসেবে দেখানো
হয়। এসব
কারণে বিলাসবহুল
জীবনযাপন করলেও
ব্যক্তি করের
আওতার বাইরে
থেকে যাচ্ছেন।
সংগত কারণেই
গ্রাহক হয়রানি
এড়াতে নব্বইয়ের
দশকে জাতীয়
রাজস্ব বোর্ডের
(এনবিআর) কার্যক্রমে
অটোমেশন শুরু
হয়। এজন্য
একাধিক প্রকল্প
হাতে নেয়া
হয়। কিন্তু
ব্যক্তিশ্রেণীর টিআইএন
নেয়া ছাড়া
আর কোনো
সেবা পান
না করদাতারা।
অনলাইনে রিটার্ন
জমার সুযোগ
তৈরির জন্য
বিরাট খরচের
একটি প্রকল্পও
হাতে নেয়া
হয়। তবে
২০১৬ সালে
চালুর চার
বছর পর
তা বন্ধ
হয়ে যায়।
সব ভ্যাট
কমিশনারেটেও অনলাইনে
ভ্যাট রিটার্ন
দেয়ার ব্যবস্থা
করা যায়নি।
শুল্ক কার্যক্রমও
পুরোপুরি অটোমেশনের
আওতায় আনা
সম্ভব হয়নি।
সামগ্রিক ডিজিটাইজেশনের
ব্যাপারটি চলছে
অনেকটা ঢিমেতালে।
প্রাক বাজেট
আলোচনায় কয়েক
বছর ধরে
এ নিয়ে
খোদ এনবিআর
চেয়ারম্যানদের উষ্মা
প্রকাশ করতে
দেখেছি।
এসব কারণে
আমরা যেন
অনেকটা মহামতী
লেনিনের ‘এক
কদম আগে,
দুই কদম
পেছনে’ কিংবা
অনেক কদম
পেছনে চলছি।
রাজস্ব ব্যবস্থায়
আমূল সংস্কারের
এজেন্ডাটিও বারবার
রেফ্রিজারেটরের ‘কুল
চেম্বারে’ চলে
যাচ্ছে। ‘আধমরাদের
ঘা মেরে
বাঁচা’তে
না পারলে
দেশের অগ্রগতির
অর্থায়ন তাই
ক্রমাগত চ্যালেঞ্জের
মুখোমুখি হতেই
থাকবে।
মামুন রশীদ: অর্থনীতি বিশ্লেষক