অভিমত

করদাতাসহ সব নাগরিককে পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আনা হোক

জীবনধারণের জন্য প্রতিটা মানুষের ন্যূনতম জীবিকার সংস্থানের প্রয়োজন হয়। মানুষ সারা জীবন অন্ন সংস্থানের প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের কর্মে নিয়োজিত থাকে। লেখাপড়া শেষে সবার অন্যতম লক্ষ্য থাকে একটা চাকরি জোগাড় করার।

জীবনধারণের জন্য প্রতিটা মানুষের ন্যূনতম জীবিকার সংস্থানের প্রয়োজন হয়। মানুষ সারা জীবন অন্ন সংস্থানের প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের কর্মে নিয়োজিত থাকে। লেখাপড়া শেষে সবার অন্যতম লক্ষ্য থাকে একটা চাকরি জোগাড় করার। দেশে দুই ধরনের চাকরির সীমিত সুযোগ রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি। সরকারি চাকরির বাজার সীমিত থাকায় সবার ভাগ্যে সরকারি চাকরি জোটে না। বাধ্য হয়ে অনেকেই তখন বেসরকারি চাকরির দিকে ঝোঁকে। আবার অনেকেই চেষ্টা করে স্বকর্মে নিয়োজিত হতে।

বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে যারা সরকারি চাকরি পান তারা অনেক ভাগ্যবান। কারণ সরকারি চাকরির নিশ্চয়তা অন্য চাকরির চেয়ে আলাদা। আবার চাকরির শেষে থাকে আজীবন পেনশন সুবিধা। কিন্তু যারা বেসরকারি চাকরি করেন তাদের অনেক ক্ষেত্রে প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটির থাকলেও সর্বক্ষেত্রে এ সুবিধাটা নেই। অন্যদিকে সরকারি চাকরির মতো আজীবন পেনশন সুবিধা কোনো বেসরকারি চাকরিজীবীর জন্য নেই। দীর্ঘদিনের দাবির মুখে সব পর্যায়ের মানুষের জন্য পেনশন সুবিধার কথা বলে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৮-৫০ বছর বয়সী যেকোনো বাংলাদেশী নাগরিকের জন্য স্বেচ্ছায় সর্বজনীন ব্যবস্থার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করে এ সুবিধা নিতে পারেন। পেনশন পেতে হলে একজন নাগরিককে কমপক্ষে ১০ বছরের জন্য নিজে টাকা জমা করে অবদান রাখতে হবে। এ সুবিধা পুরোপুরি অংশগ্রহণমূলক, অর্থাৎ নিজে যে পরিমাণ টাকা জমা করবেন তার লাভসহ আপনি পরবর্তী ১০ বছরের জন্য নির্দিষ্ট হারে পেনশন পেতে পারেন। ভবিষ্যতে এ পেনশন সবার জন্য বাধ্যতামূলক হবে। সরকার পরিচালিত জাতীয় পেনশন স্কিমে সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৩ লাখ ৭২ হাজার ৩৮৭ জন রেজিস্ট্রি করেছেন এবং এতে সবচেয়ে বেশি রেজিস্ট্রেশন সমতায়—২ লাখ ৮৫ হাজার ৮৮৪ জন। কারণ সমতায় সরকার টাকা দিচ্ছে। উল্লেখ্য সরকার প্রচলিত চার ধরনের পেনশন স্কিম চালু রয়েছে—প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা।

সবার জন্য পেনশন সুবিধা চালুর একটা ভিত্তি হতে পারে—নিয়মিত করদাতাদের জন্য তাদের প্রদত্ত করের টাকায় পেনশন সুবিধা চালু করা। এটা করদাতাদের অধিকার। আমার করের টাকায় যাদের বেতন হয়, তারা আমার করের টাকাতেই পেনশন নেবেন। কিন্তু আমি করও দেব, নিজের পেনশনের জন্য টাকাও দেব, তা কী করে হয়? ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিক অ্যাফেয়ারের বই ‘পেনশন প্রভিশন: গভর্নমেন্ট ফেইলিউর অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’। সেখানে লেখকরা দেখিয়েছেন, উন্নত বিশ্বে যেখানে কর থেকে সরকার মানুষকে পেনশন দেয় তারা বেশ সফল। যারা বেসরকারি চাকরি বা স্বকর্মে নিয়োজিত থাকেন তাদের জন্য কর্মজীবন শেষে সরকারি চাকরিজীবীদের মতো পেনশন সুবিধা থাকে না। তাদের জন্য সরকারের তরফ থেকে কর প্রদানের হার বা মোট কর প্রদানের হিসাবে অবসরকালীন সময়ে আজীবন পেনশন সুবিধা চালু করা হোক। বিভিন্ন উন্নত দেশে এ সুবিধা চালু রয়েছে। ফলে মানুষ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কর প্রদান করে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সামাজিক নিরাপত্তা, চাকরিভিত্তিক, আনফান্ডেড ও ব্যক্তিগত পেনশন। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সামাজিক নিরাপত্তা পদ্ধতির আওতায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ৯৪ শতাংশ কর্মক্ষম লোক। গ্রাহকের কর ও ট্রাস্ট ফান্ডে জমা হওয়া অর্থ বিনিয়োগের মুনাফা থেকে এ পেনশন দেয়া হয়। এ পদ্ধতিতে বছরে চারবার ১ হাজার ৪১০ ডলার করে জমা অর্থাৎ ১০ বছরে ৫৬ হাজার ৬০০ ডলার জমা হলেই পেনশনের প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন করা যায়। একই পদ্ধতি অনুসরণ করে আমাদের দেশের করদাতাদের জন্য এই পেনশন ব্যবস্থা চালু করলে করের মাধ্যমে সরকারের আয় বৃদ্ধি পাবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। সামাজিক নিরাপত্তা ও কর প্রদানে উৎসাহিত করার জন্য নিয়মিত করদাতা এবং অন্যান্য বেসরকারি কর্মে নিয়োজিতদের জন্য পেনশন সুবিধা চালুর জোর দাবি জানাচ্ছি।

আনোয়ার ফারুক তালুকদার: অর্থনীতি বিশ্লেষক

আরও