করোনা ও বাংলাদেশ

প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে কিছু কথা কিছু সুপারিশ

(গতকালের পর) ৩. স্বাস্থ্য খাতের অন্য মৌলিক সংস্কার প্রায় এক লাখ ব্যক্তি কারাবন্দি আছেন, জেল হাসপাতাল দুর্নীতির আখড়া এবং চিকিৎসকস্বল্পতা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। দেশের রাজনৈতিক নেতারা, আমলা ব্যবসায়ীদের, ভরসা সামরিক বাহিনীর হাসপাতাল সিএমএইচ, সব কারাগার, পুলিশ, অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আনসার ও বর্ডার গার্ড, হাসপাতালগুলো সরাসরি আর্মি মেডিকেল করপোরেশন কর্তৃক পরিচালিত হলে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে, চিকিৎসকের অভাব হবে না। আর্মি মেডিকেল করপোরেশন হবে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ, সব চিকিৎসক, সেবিকা ও টেকনিশিয়ানদের পদবি হবে সামরিক বাহিনীর— আর্মি মেডিকেল করপোরেশনের। তারা সুযোগ-সুবিধা বেশি পাবেন। তাই তাদের কাজে থাকবে প্রশান্তি ও আনন্দ এবং সময়মতো পেশায় অগ্রগতি।


(গতকালের পর)

. স্বাস্থ্য খাতের অন্য মৌলিক সংস্কার

প্রায় এক লাখ ব্যক্তি কারাবন্দি আছেন, জেল হাসপাতাল দুর্নীতির আখড়া এবং চিকিৎসকস্বল্পতা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। দেশের রাজনৈতিক নেতারা, আমলা ব্যবসায়ীদের, ভরসা সামরিক বাহিনীর হাসপাতাল সিএমএইচ, সব কারাগার, পুলিশ, অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আনসার বর্ডার গার্ড, হাসপাতালগুলো সরাসরি আর্মি মেডিকেল করপোরেশন কর্তৃক পরিচালিত হলে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে, চিকিৎসকের অভাব হবে না। আর্মি মেডিকেল করপোরেশন হবে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ, সব চিকিৎসক, সেবিকা টেকনিশিয়ানদের পদবি হবে সামরিক বাহিনীর আর্মি মেডিকেল করপোরেশনের। তারা সুযোগ-সুবিধা বেশি পাবেন। তাই তাদের কাজে থাকবে প্রশান্তি আনন্দ এবং সময়মতো পেশায় অগ্রগতি।

বেসামরিক অনেক সরকারি হাসপাতাল বর্তমানে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে আর্মি মেডিকেল করপোরেশনের চিকিৎসকদের দ্বারা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সব সদস্য পরিবার সামরিক বাহিনীর সমান সুযোগ পাবে। সামরিক বাহিনীর মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরতরা এমবিবিএস পাস করে পাঁচ বচর আর্মি মেডিকেল করপোরেশনে চাকরি করতে বাধ্য থাকবেন, নতুবা ক্ষতিপূরণ দেবেন ৩০ লাখ টাকা।

. ঢাকা শহরে জেনারেল প্র্যাকটিশনার্স রেফারেল পদ্ধতির প্রবর্তন

ঢাকা শহরে ১০০ ওয়ার্ডে প্রস্তাবিত ২০২০-২১ বাজেটে জেনারেল প্রাকটিশনার্স রেফারেল পদ্ধতির জন্য হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিন। দুই কোটি নগরবাসীর জন্য খুব বেশি বরাদ্দ নয়। ঢাকা শহরের সব জেনারেল প্র্যাকটিশনার্স সেন্টারে চিকিৎসকের কাছে লিপিবদ্ধ নাগরিকরা বিনা ফিতে পরামর্শের পাশাপাশি ইসিজি, আম্বুবেগ, অক্সিজেনপালস অক্সিমিটার নেবুলাইজার সুবিধা, ফার্মেসি, ছোট ল্যাব, এএনসি-পিএনসি ফিজিওথেরাপি সুবিধা পাওয়া যাবে। অতিরিক্ত থাকছে স্বাস্থ্য শিক্ষা, স্কুল স্বাস্থ্য কার্যক্রম হোমভিজিট বাড়িতে যেয়ে রোগী দেখা এবং প্রেসক্রিপশন অডিট ব্যবস্থাপনা। অতিরিক্ত ওষুধের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার অপচয় বটে, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকরও বটে।

রোগীরা ন্যায্যমূল্যে সরকারি ওষুধ কোম্পানি ইডিসিএলের সব ওষুধ পাবেন অল্প খরচে। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সব রোগী বিনা ফিতে চিকিৎসকের পরামর্শ পাবেন, বিকাল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ পাবেন সরকারি নির্ধারিত একটা ন্যায্য ফিতে। কেবল জিপি চিকিৎসকরা রোগীদের নির্দিষ্ট হাসপাতালে অধিকতর চিকিৎসার জন্য রেফার করতে পারবেন, রোগীর হয়রানি কমবে। এচ হাসপাতালের চিকিৎসকদের মধ্যে সৌহার্দ্য পেশাসংক্রান্ত সম্পর্ক গভীর হবে। হোম ভিজিট করলে এচ অতিরিক্ত ফি পাবেন এবং বয়োবৃদ্ধের চিকিৎসাসেবার সুবিধা হবে। ফলে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপ্রয়োজনীয় ভিড় কমবে।

কতক জেনারেল প্র্যাকটিশনার্স নিকটবর্তী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খণ্ডকালীন শিক্ষকতার দায়িত্বও পালন করতে পারবেন আনন্দের সাথে, পাবেন শিক্ষকতা ভাতা। সাথে তার পছন্দমতো বিষয়ে সার্টিফিকেট কোর্সে অংশগ্রহণ করে, পরীক্ষায় পাস করে জুনিয়র বিশেষজ্ঞ পদ পাবেন, সঙ্গে আনুমানিক ২০ হাজার টাকার অতিরিক্ত ভাতা।

. পুষ্টি ব্যতীত স্বাস্থ্য অকল্পনীয়

দেশে দুই কোটি দরিদ্র নিম্ন আয়ের পরিবারকে করোনা উদ্ভূদ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আগামী ছয় মাস ফ্রি রেশন দেয়া সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। চার-ছয়জনের পরিবারের জন্য প্রতি মাসে চাল ২০ কেজি, আটা কেজি, আলু ১০ কেজি, সরিষার তৈল লিটার, সয়াবিন তেল লিটার, পিঁয়াজ কেজি, মসুর ডাল কেজি, আদা ২০০ গ্রাম, রসুন ২০০ গ্রাম, শুকনো মরিচ ২০০ গ্রাম, লবণ / কেজি, চিনি / কেজি সাবান দুটিসহ মোট খাদ্য প্যাকেটে ব্যয় হবে অনধিক হাজার টাকা। ফ্রি খাদ্য রেশনে কেন্দ্রীয় সরকারের মাসিক ব্যয় মাত্র হাজার কোটি টাকা। খাদ্যগুদামে স্থান বাড়বে যা কৃষকের শস্য উৎপাদনে আকর্ষণ বাড়াবে।

স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রতি মাসে প্রতি পরিবারকে আরো দিতে হবে দুই কৌটায় ২০০ আয়রন ট্যাবলেট, ৬০ মিলিলিটারের এক বোতল প্যারাসিটামল সাসপেনশন, ৩০টি ৫০০ মিলিগ্রামের প্যারাসিটামল ট্যাবলেট, ১০০ মিলিটার ক্লোরহেক্সাডিন এবং ৫টি ওআরএস সাসেটস, এতে ব্যয় হবে মাসে অনধিক ২০০ টাকা। সঙ্গে উঠানে সবজি চাষে সহযোগিতা। গর্ভবতী, শিশু বয়োবৃদ্ধদের প্রতি সপ্তাহে একবার দুধ, ডিম খাওয়ার সুবিধার জন্য মাসে ৫০০ টাকা নগদ সহযোগিতা দেয়া কাম্য হবে। স্মরণ রাখতে হবে, নগদ অনুদান অধিকতর দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি করে। সুতরাং নগদ অনুদানের পরিমাণ যথাসাধ্য কম রাখতে হবে। খাদ্য সহযোগিতা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে হবে, সর্বদলীয় রাজনৈতিক কর্মী, ছাত্র এনজিওদের সহায়তায়, সঙ্গে থাকবেন সামরিক বাহিনীর দেশপ্রেমিক সেনানীরা।

. অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাস সামাজিক বৈষম্য নিরসনের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি

) নতুন সিনিয়র সচিব নয়

নিত্যনতুন সিনিয়র সচিব সৃষ্টি কাম্য নয়, কোনো আমলাকে চাকরিতে এক্সটেনশন দেয়া অনভিপ্রেত। এরা রাজনীতিবিদদের প্রতিপক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচনবিরোধী, সুখের পায়রা, জনগণ বিচ্ছিন্ন। জনগণের স্বার্থের চেয়ে নিজেদের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি এবং জবাবদিহিতা বিহীন প্রশাসনে এদের বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে।

) সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি করপোরেট কর্মকর্তাদের বেতন হ্রাস

ইনসপেকটার থেকে আইজিপি, ক্যাপ্টেন থেকে জেনারেল, সেকশন অফিসার থেকে সিনিয়র সচিব, লেকচারার থেকে উপাচার্য, করপোরেট কর্মকর্তা, ব্যাংকার, বিচারক থেকে বিচারপতি, সাংসদ, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্টের আগামী এক বছর ২০ শতাংশ বেতন ভাতা হ্রাস করা হবে করোনা সৃষ্ট পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য এবং দেশের সার্বিক অধিক অবস্থার বিবেচনায় যৌক্তিক কার্যক্রম। একশ্রেণীর নাগরিক তারা প্রাচুর্যে জীবন যাপন করবেন আর শ্রমিকরা অর্ধাহারে কালাতিপাত করবেন, তা সভ্য নয়।

) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া সব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের টিউশন ফি ২৫ শতাংশ হ্রাস বাঞ্ছনীয়।

) বিদেশে সরকারি অর্থে চিকিৎসা সুবিধা রহিতকরণ

সরকারি অর্থায়নে বিদেশে চিকিৎসা সুবিধা পাবেন না সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট বা অন্য কোনো নাগরিক। সবাইকে নিজ দেশে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে।

) ক্ষতিপূরণ ব্যতিরেকে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার কুইক রেন্টাল ২০২০ বাজেট থেকে প্রত্যাহার। দেশবাসী আর কতদিন ব্যবসায়ীর হাতে প্রতারিত হবেন। মেগা প্রকল্পের লাগাম কিছুদিন ধরে রাখুন।

) জনপ্রশাসন (আমলাতন্ত্রের) বিভাগের ব্যয় ৫০ শতাংশ হ্রাসের ব্যবস্থা নিন।

) প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীসহ সব ভিআইপিদের নিরাপত্তা ব্যয় ৫০ শতাংশ কমানো হলে পুলিশ এলিট ফোর্সের সদস্যরা দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অধিক মনোযোগ দেয়ার সুযোগ পাবেন, খুনখারাবি কমবে এবং রাহাজানি, ছিনতাই, পথেঘাটে যৌন নিপীড়ন কমবে, সফলতার জন্য পুলিশ পুরস্কৃত হবে। পুলিশ হবে জনগণের সত্যিকারের বন্ধু।

) মাদ্রাসাশিক্ষায় এত বেশি বিনিয়োগ কি পর্যাপ্ত ডিভিডেন্ড দিচ্ছে? অধিক হারে মসজিদভিত্তিক বেকার সৃষ্টি নয় কি? বিজ্ঞানশিক্ষাকে মাদ্রাসাশিক্ষার সাথে যুক্ত করে সব সম্প্রদায়ের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। মসজিদকে কি প্রাক-স্কুল হিসেবে ব্যবহার করা যায়?

) ব্যয় হ্রাসের অজুহাতে কোনো শ্রমিক ছাঁটাই চলবে না।

. রাষ্ট্রের আয় বৃদ্ধি উন্নয়নের জন্য অত্যাবশ্যক

) নগণ্য নিবন্ধিত আয়করদাতা

দেশে বর্তমানে মাত্র ২২ লাখ ব্যক্তি আয়কর নিবন্ধিত আছেন। এটা হতে হবে কমপক্ষে কোটি। ফেরিওয়ালা, নিরাপত্তা প্রহরী, চাওয়ালা, ছোট দোকানদার, ভ্যানচালক, রিকশাচালক, কার ড্রাইভার, বেবি ট্যাক্সি ড্রাইভার ফুটপাতের ফল হোটেল মালিক, সিগারেটের দোকানদার, সবজিওয়ালা, সরকারি-বেসরকারি নিম্নশ্রেণীর কর্মচারী, কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক, অনভিপ্রেত কোচিং সেন্টার মালিক সবাইকে নিবন্ধিত হতে হবে। গৃহকর্মীদেরও নিবন্ধিত হতে হবে। তবে গৃহকর্মীদের নিবন্ধন ফি দেবেন গৃহকর্ত্রীরা। বার্ষিক নিবন্ধন ফি হাজার টাকার, বিনিময়ে পাবেন পুলিশের হয়রানি থেকে রক্ষা এবং ব্যাংক, স্বাস্থ্য, শিক্ষা জেনারেল প্রাকটিশনার্স পরামর্শ ফ্রি স্বাস্থ্য সুবিধা, কতক ওষুধ বড় হাসপাতালে পূর্বাহ্নে নির্ধারিত রেফারেল সুবিধা। সরকারের আয় বাড়বে হাজার কোটি টাকা।

) আয়করমুক্ত করসীমা লাখ টাকা

আয়করমুক্ত করসীমা দশমিক ৫০ লাখের পরিবর্তে দশমিক লাখে নির্ধারণ করুন, বয়োবৃদ্ধ বিধবাদের জন্য অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা। বয়োবৃদ্ধদের ব্যক্তিস্বাস্থ্য খাতে ব্যয় অত্যধিক, যৌক্তিক আয়কর হবে থেকে ৩০ শতাংশ। ব্যাংক করপোরেট ট্যাক্স ন্যূনতম ৪৫ শতাংশ নির্ধারিত থাকা বাঞ্ছনীয়। সঙ্গে বাধ্যতামূলক বিনিয়োগ শর্তও থাকবে।

) সিগারেট, বিড়ি, জর্দা গুল এবং প্রসাধনীর মূল্যবৃদ্ধি

স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, পরিবেশের জন্য অমঙ্গলকর ধূমপান, জর্দা, পান সেবন, মাদকাসক্তি অপ্রাকৃতিক খাদ্যোৎপাদন এবং ক্ষতিকর প্রসাধনী উৎপাদন বিপণন হ্রাস করার জন্য ১০০ শতাংশ শুল্ক ধার্য যৌক্তিক উদ্যোগ। নিম্নস্তরের প্রতি শলাকা সিগারেট ১৫ টাকা (১০০% সম্পূরক শুল্কসহ) মধ্যম শ্রেণীর প্রতি শলাকা সিগারেট ২৫ টাকা এবং উচ্চস্তরের প্রতি শলাকা সিগারেট ৫০ টাকা এবং ফিল্টার বিহীন প্রতি ১০ শলাকার বিড়ির প্যাকেটের মূল্য হবে ৫০ টাকা (সম্পূরক শুল্কসহ), ফিল্টারযুক্ত ১০ শলাকার বিড়ির প্যাকেটের মূল্য ৬০ টাকা নির্ধারণ করুন, নাগরিকদের ক্ষতি কমবে, পরিবেশ উন্নত হবে এবং সরকারের আয় কমপক্ষে কয়েক হাজার কোটি টাকা বাড়বে। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দা গুলের মূল্য (সম্পূরক শুল্কসহ) যথাক্রমে ১২০ ১০০ টাকা ধার্য করুন।

একইভাবে লিপস্টিক অন্য প্রসাধনী পারফিউমের ওপর ২০০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করুন। অতিরিক্ত লিপস্টিক প্রসাধনী শরীরের জন্য ক্ষতিকর এবং পুঁজিবাদী প্রচারণাও বটে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থাপনায় নারীর সৌন্দর্য বিক্রয়যোগ্য পণ্য। বিষয়টি সম্পর্কে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের নারীদের অজ্ঞতা দুঃখ বিপজ্জনক। নারীর তথাকথিত সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ক্ষতিকর প্রসাধনী ব্যবহার বৃদ্ধির ন্যায় পুঁজিবাদী মাধ্যমে প্রতারণা থেকে সতর্ক করার জন্য শিক্ষা কার্যক্রম ব্যবহার করুন। স্মরণ রাখবেন, বিভিন্ন ধরনের অনেক ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কারসিনোজেন সংযুক্ত থাকে লিপস্টিক প্রসাধনীতে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে।

হাটবাজার, ট্রেন, বাস স্টেশন, পার্ক, লঞ্চ ঘাটে প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়, ব্যত্যয় ঘটলে প্রতিবার জরিমানা হবে ১০০ টাকা, অর্জিত জরিমানা অর্ধেক পাবে পুলিশ, বাকি টাকা যাবে সরকারি তহবিলে। পানের পিক ফেললেও জরিমানা হবে, পার্কে বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে পান সেবন দৃষ্টিকটু, স্বাস্থ্য ক্ষতিকর।

) যানবাহনের রেজিস্টেশন রোড ট্যাক্স বাড়ান

দেশে প্রায় ৪৪ লাখ যানবাহন আছে তন্মধ্যে ৫০ হাজার বাস, লাখ ৫৩ হাজার ট্রাক, তিন লাখ অটোরিকশা, প্রায় দেড় লাখ, কাভার্ড উন্মুক্ত ভ্যান এবং পিকআপ, ৩০ লাখ মোটরসাইকেল, জিপ ৬৫ হাজার মাইক্রো মিনিবাস লাখ ৩৫ হাজার, প্রাইভেট প্যাসেঞ্জার কার লাখ ৬০ হাজার, সামরিক যানবাহন হিসাব প্রকাশ্য জ্ঞাত নয়। সব সরকারি-বেসরকারি মোটরযান মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন ফি বাড়ান, বার্ষিক রোড ট্যাক্স হওয়া উচিত ন্যূনতম লাখ টাকা। তবে মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে ২৫ হাজার টাকা পর্যাপ্ত। সরকারি-বেসরকারি পাবলিক ট্রান্সপোর্টের রোড ট্যাক্স বৃদ্ধি বাঞ্ছনীয় নয়। আইন-শৃঙ্খলা সামরিক বাহিনীর সব যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক এবং রোড ট্যাক্স হবে বেসামরিক যানবাহনের সমতুল্য। কৃষি যানবাহন, ট্রাক্টর রেজিস্ট্রেশন রোড ট্যাক্সের আওতায় আসবে। সব সরকারি, বেসরকারি কোম্পানির প্রত্যেক যানবাহনের রেজিস্টেশন ফি প্রতি পাঁচ বছরে লাখ টাকার অনধিক হওয়া বাঞ্ছনীয় হবে না, সমহারে বার্ষিক রোড ট্যাক্স বাড়বে। পরিবার দ্বিতীয় গাড়ি ব্যবহার করলে দ্বিতীয় মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন ফি রোড ট্যাক্স হবে প্রথম গাড়ির দ্বিগুণ। পরিবেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে সপ্তাহের একদিন সব প্রাইভেট গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখার চেষ্টা করা উচিত। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারে জনগণকে উৎসাহিত করতে হবে। ছাত্ররা অর্ধেক ভাড়ায় মাসিক পাসে এবং বয়োবৃদ্ধরা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারের সুবিধা পাবেন বিনা ভাড়ায় বেলা ১টা থেকে ৩টা অবধি। নগর পিতারা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট পরিচালনার দায়িত্ব নেবেন, প্রত্যেক ট্রান্সপোর্ট মালিক তার গাড়ি নগর পুলে যুক্ত করবেন, তার দায়িত্ব শেষ। সমান পরিমাণ লাভ পাবেন, তাদের বিনিয়োগ আয়করমুক্ত। নারী ড্রাইভার হবে নারী নির্যাতন রোধের প্রধান প্রতিষেধক। অহেতুক প্রতিযোগিতা না থাকায় নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনা সহজ হবে। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট চলবে সকাল ৬টা থেকে সারা রাত, তবে রাতের ফ্রিকোয়েন্সি প্রতি ঘণ্টায় একবার, কিন্তু দিনের বেলায় প্রতি ১৫ মিনিট পরপর। এককালীন রেজিস্ট্রেশন প্রতি বছরের রোড ট্যাক্স বাবদ সরকারের আয় বাড়বে প্রায় ৩০ হাজার কোটি চাকা। প্রাচুর্যে বসবাসের জন্য তো একটা ন্যূনতম মূল্য দিতে হবে। আর্টিকুলেটেড লরি, ট্রাক, বাস ড্রাইভারদের ক্রমাগত উচ্চতর ট্রেনিং ব্যবহার, নারীদের প্রফেশনাল ড্রাইভিং প্রশিক্ষণে ব্যয় রাস্তায় দুর্ঘটনা কমাবে। ট্রান্সপোর্টে যৌন নিপীড়ন হ্রাস পাবে। নারীদের ড্রাইভিং শেখানোর পাশাপাশি কারাতে অন্যান্য আত্মরক্ষার পদ্ধতিও শেখানো হবে। প্রশিক্ষণ ব্যয় হবে বছরে হাজার কোটি টাকার অনধিক কিন্তু প্রশিক্ষণ আয় বছরে হাজার কোটি টাকা হওয়া সম্ভব। নারীদের বিদেশে ড্রাইভিং কর্মসংস্থান সম্ভব হবে। বিশেষত মুসলিম দেশে অতিরিক্ত আকর্ষণ। স্মরণযোগ্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১৯৮২ সালে প্রথম নারী ড্রাইভিং শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছিল। সালেহা বাংলাদেশের প্রথম প্রফেশনাল নারী ড্রাইভার, তার মেয়ে আজ ম্যাজিস্ট্রেট, নিজে ইউনিসেফে গাড়ি চালান। আরেক নারী গাড়ি চালক রেখা আখতার সাবেক বিশ্বব্যাংক প্রধান ক্রিশ্চিয়ানা ওয়ালিসের গাড়ি চালক সহকর্মী, ইংরেজি শিখেছিলেন গণবিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র তিন মাসে, অপূর্ব প্রতিভা দরিদ্র কন্যার। কেবল প্রয়োজন দরিদ্র নিম্নবিত্তদের প্রশিক্ষণের জন্য দ্বার খুলে দেয়ার। 

(ঙ) কোর্ট ফি বৃদ্ধি কোর্টে নৈরাজ্য কমাবে: ন্যূনতম কোর্ট ফি উচিত হবে ৫ হাজার টাকা। তিন বারের অতিরিক্ত প্রতিবার সময় প্রার্থনার জন্য বাধ্যতামূলক ফি হবে ৫ হাজার টাকা; শাস্তিমূলক কোর্ট ফি জমা দেবার পর নতুন তারিখ পাবেন।এক বৎসরের মধ্যে সমস্যার নিষ্পত্তি না হলে প্রতিবার ১০ হাজার টাকা কোর্ট ফি জমা দিতে হবে। সরকার পাবেন ৫০% এবং প্রতিপক্ষ পাবেন ৫০%। এতে অনাকাঙ্ক্ষিত মামলা কমবে।

ফৌজদারী মানহানী মামলার ন্যূনতম কোর্ট ফি হবে ২০ হাজার টাকা। সিভিল মানহানি মামলার কোর্ট ফি হবে দাবী অনুসারে- যত বেশি ক্ষতিপূরণ দাবী করবেন, তত বেশি কোর্ট ফি জমা দিতে হবে। তবে ৫০ হাজার টাকার কম দাবি চলবে না; অগ্রীম কোর্ট ফি জমা না দিলে পুলিশ মামলা লিপিবদ্ধ করবে না। অভিযোগকারী হারলে সব টাকা হারাবেন। ঠুনকো মান-অভিমানের অবকাশ নেই। অযথা হয়রানি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। কেবলমাত্র মানহানি মামলার কোর্ট ফি জমা দেবার পর থানা মামলা লিপিবদ্ধ করবে, তৎপূর্বে নয়।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার বন্ধ করা অত্যাবশ্যক। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় হারলে মামলাকারী অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ন্যূনতম এক লাখ টাকা ক্ষতিপুরণ দিতে ও ক্ষমা চাইতে বাধ্য থাকবেন। ক্ষতিপূরণের ৫০% পাবেন কোর্ট এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি পাবেন ৫০%। রাজনীতিবিদদের মধ্যে হাস্যরস কাম্য।

হাইকোর্টের বিভিন্ন ছুটি হ্রাস মামলার জট কমানোতে সহায়ক হবে। সুপ্রিম কোর্টে  পাঁচটি স্থায়ী বেঞ্চ সৃষ্টি সময়ের দাবি- (১) ক্রিমিনাল, (২) সিভিল, (৩) শ্রমিক অধিকার ও কোম্পনী বিষয়ক, (৪) সংবিধান ও মৌলিক অধিকার এবং (৫) নারী নির্যাতন নিবারণ, নারী অধিকার ও পারিবারিক সমস্যা নিরসন। ন্যূনতম ২-৩ জন স্থায়ী বিচারপতি একত্রে বেঞ্চ পরিচালনা করবেন। প্রধান বিচারপতি সরকারি হস্তক্ষেপে স্থায়ী বেঞ্চের বিচারপতি বদলাতে পারবেন না। 

বিভিন্ন (রিভিউ) মামলায় প্রত্যেক বেঞ্চের প্রধানরা অংশ নেবেন কমপক্ষে বছরে ১২ বার। সুপ্রিম কোর্টে ন্যূনতম ২৭ জন সিনিয়র বিচারপতির নিয়োগ হবে যুক্তিসঙ্গত পদক্ষেপ। হাইকোর্টের জন্য ২০২০-২১ বাজেটে ন্যূনতম ১০০০ কোটি বরাদ্দ প্রয়োজন। ২২২ কোটি নয়, যা অত্যন্ত অপ্রতুল।

সুপ্রীম কোর্ট ও তার ৫টি স্থায়ী বেঞ্চের অবস্থান হবে কেন্দ্রীয় রাজধানী ঢাকায় এবং ৬৪ হাইকোর্ট বসবে স্ব স্ব জেলা স্টেটে। দ্রুত ন্যয়বিচার নিশ্চিতকরণই লক্ষ্য।

(চ) কয়েকটি শুল্ক বৈষম্য ও ছাপার ভূত: স্বাস্থ্যের জন্য অপ্রয়োজনীয় বা ক্ষতিকর সকল প্রকার মিনারেল ওয়াটার, বিয়ার, ভরমুথ, স্কচ, স্পিরিট, ইথাইল এলকোহল, এক্সটাক্ট, এসেন্স, চিনি, লবণ, চুরুট, রিকনসটি উটেড তামাক, টেস্টিং সল্টস, (মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট), রোস্টেড কফি, নন এলকোহলিক এনার্জি ডিংকসের শুল্ক বাড়িয়ে ২৫% থেকে ১০০% এ উন্নীত করা হবে যৌক্তিক কাজ। এতে রাষ্ট্রের আয় বৃদ্ধি হবে এবং নাগরিকদের স্বাস্থ্য উন্নতি হবে, স্থূলতা (Obesity) কমবে, উচ্চরক্তচাপ ও বহুমূত্র সম্ভাবনাও কমবে।

ওষুধের কাঁচামাল আমদানীর উপর কয়েক ধরনের শুল্কহার আছে। এন্টিবায়োটিকের জন্য দুটো- দর সকল পেনিসিলিন, স্ট্রেপটোমাইসিন,  টেট্রাসাইক্লিন ও ক্লোরামফেনিকল ০%, এজিত্রিমাইসিন ও ইরিত্রোমাইসিনে ১৫% অযৌক্তিক। সকল এন্টিবায়োটিকের জন্য একটি শুল্ক দর থাকা বাঞ্ছনীয়, যাতে কাস্টমস হাউসে দুর্নীতির দরাদরি না হয়।

সকল ঘুমের ওষুধ, ভিটামিনস, ক্যানসার চিকিৎসার ওষুধ এন্টিম্যালেরিয়া, এন্টি যক্ষা, এন্টিকুষ্ট, হৃদরোগ নিবারক, এন্টিহেপাটিক কেপালোপেথিক, কিডনি ডায়ালাইসিস সলিউশন, পরিবার পরিকল্পনার ওষুধ ও দ্রব্যাদি, এন্টিসেরা ও ব্লাড ফ্রাকসন, হেপাটাইটিস-সি-এর ওষুধ, থালাসোমিয়ায় ওষুধ, মানুষ ও প্রাণীর ভ্যাকসিন, ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু নির্ণয় কিট প্রভৃতির আমদানী শুল্ক ০%; তবে কুইনাইন, কেফিন, ইফিড্রিন, কেটামিন, বিভিন আবেদনকারী এনাসথেটিকস, মাদকাসক্তি (Narcotics), আরগোমেট্রিন প্রভৃতির আমদানী শুল্ক রয়েছে ৫%- যা ২৫% হওয়া উচিত।

সকল ঘুমের ওষুধের শুল্ক ০%-এর পরিবর্তে ২৫% হওয়া বাঞ্ছনীয় স্বাস্থ্য রক্ষার স্বার্থে। ডায়াগনস্টিক রিএজেন্টস, ব্লাডগ্রুপ রিএজেন্টস এন্টিসেরা, জীবাণুমুক্ত স্টেরাইল গজ, সুচার, এডহেসিভ ড্রেসিং-এর একই দর হওয়া উচিত- ৫% বা ১০%। ভিন্ন ভিন্ন দর ভিন্ন প্রক্রিয়ায় হয়রানি ও দুর্নীতি সৃষ্টি করে।

ডেন্টাল ক্লিনিকের বেলায়ও আমার মতে, দুটো দরই যথেষ্ট ০% ও ১০%। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সকল প্রকার এনার্জি ড্রিংকসের জন্য শুল্ক ১০০% বাঞ্ছনীয়। অন্য কয়েকটি অসঙ্গতি ইসিজি, আলট্রাসনিক যন্ত্রপতির ট্যাক্স ১%; কিন্তু রোগী মনিটরের শুল্ক ৫%। খালি প্রিফিল্ড ইনজেকশন শুল্ক, ইউভি কেনুলা, ফিডিং টিউব, ফিষ্টুলা নিউল, ড্রেনেজ ব্যাগ, স্ক্যালপ ভেইন, সাকসন ক্যাথেটারে ১০% শুল্ক; কিন্তু ইনসুলিন কার্টিজে শুল্ক ০%। উভয় ক্ষেত্রে ০% বা ৫% দরে শুল্ক স্থির করা যৌক্তিক কাজ হবে; হিয়ারিং এইডস ও পেসমেকারস (Pace Makers), হার্ট ভালব মেডিসিন ছাড়া বা মেডিসিন যুক্ত করোনারি স্টেন্টের (Stent) শুল্ক ০%। কিন্তু স্টেন্ট চার্জ এখন খুব বেশি, ২৫ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা।

দুর্নীতির খাঁচার মুখের প্রহরী দুর্নীতির জন্য দায়ী কি চিকিৎসক, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ না স্টেন্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ? সকল মেডিকেল যন্ত্রপতির শুল্ক করে ১% সীমিত করলে আপত্তির কারণ থাকবে না। ইনফিউশান ২৫% ইসিজি পেপারে ১০% ভুল সিদ্ধান্ত। একই হার যুক্তিসঙ্গত। দেশে কাঁচামাল উৎপাদিত হলে আমদানি পুরো বন্ধ, রপ্তানির নামেও নয়; রপ্তানির জন্য ন্যূনতম আমদানি শুল্ক ২৫%  হওয়া বাঞ্ছনীয়। সকল মেডিকেল যন্ত্রপাতির ট্যাক্স ১% সীমিত থাকবে।

রেফারেল ও গ্রাজুয়েটের স্টাডিজের বই ০% শুল্ক; অন্যদের ৫%-এ সীমিত করুন। বিদেশি ক্যালেন্ডার ও আকর্ষণীয় অভিনন্দন কার্ডের শুল্ক ২৫%-এর পরিবর্তে ১০০% ধার্য করুন। বিলাসিতার একটা মূল্য তো দিতে হবে।

এয়ারক্র্যাফটস, অ্যারোপ্লেন ০% শুল্ক; কিন্তু বাস, ট্রাক, ট্যাক্সি, ট্যাঙ্ক, আরমারড ভেহিকলস, এয়ার কমব্যাট সিমুলেটরস ৫% শুল্ক; বেলুন গ্লাইডারসে ১০%। সেইলবোট, ইয়াটে ২৫% শুল্ক যথেষ্ট নয়, ১০০% হওয়া বাঞ্ছনীয়। মোটর সাইকেলে ২৫% শুল্ক যুক্তিসঙ্গত।

আমদানি শুল্কের কারণে ওষুধের মূল্য বাড়ে না; বাড়ে ওষুধ কোম্পানির অতিরিক্ত লোভ-লালসা ও প্রতারণা- অভ্যাসের দরুন এবং সরকারের সাথে অনৈতিক বন্ধুত্বের কারণে। ১৯৮২ সনে জাতীয় ওষুধ নীতির মূল্যনির্ধারণ নীতিমালা যথাযথ ভবে প্রয়োগ না করলে ওষুধের খুচরা মূল্য কমবে না। ক্রমাগত দাম বাড়াবে ওষুধ প্রস্তুত কোম্পানিরা; সঙ্গে বাড়বে ভেজাল (Counterfeit) ও নিম্নমানের (Substandard)) ওষুধের ব্যাপক সরবরাহ; যার ভারে ও ভিড়ে সঠিক গুণের (Standard)) ওষুধ চাপা পড়ে যায়।

অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার ১১৬ ও ১১৯ পৃষ্ঠায় ২০২০-২১ বরাদ্দে কিছু ভিন্নতা ছাপা হয়েছে। ছাপার ভূত ভর করেছে।

(৮) উপসংহার: শেখ মুজিবের স্বপ্নের বাস্তবায়ন এবং করোনার সাথে যুদ্ধ ব্যয়

অনতি বিলম্বে করণীয় বিষয়সমূহ ও প্রয়োজনীয় বিশেষ বরাদ্দ:

(১) গভর্নর  নিয়োগ ও সংবিধান সংস্কার: ৬৪ জেলা স্টেট কমিশন ও গর্ভনর নিয়োগ এবং ছয় মাসের মধ্যে সংবিধান সংশোধন করে শেখ মুজিবের স্বপ্নের বাস্তবায়ন শুরু করুন। প্রয়োজনীয় বিশেষ বরাদ্ধ ৮০ হাজার কোটি টাকা। 

(২) খাদ্য নিরাপত্তা: ২ কোটি দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবারকে ৬ মাস ফ্রি মাসিক খাদ্য রেশন সুবিধা দিন যাতে প্রতি পরিবারের জন্য ব্যয় হবে ২০০০ টাকা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে ২০০ টাকা অনধিক এবং শিশু, বয়োবৃদ্ধ ও প্রসূতির ডিম, দুধ খাওয়ার জন্য ৫০০ টাকা ক্যাশ ইনসেনটিভ, এনজিও সম্পৃক্ত করতে হবে। প্রত্যেক বাড়ির সবজি বাগান সৃষ্টিতে সহযোগিতা প্রদান। প্রয়োজনীয় বিশেষ বরাদ্দ ৩২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। 

(৩) সঠিক নিবন্ধন দুর্নীতি থেকে উত্তরন গবেষণা ও  তদারকি কাজের জন্য BIDS ও অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহকে দেয় অনুদান। প্রয়োজনীয় বিশেষ বরাদ্দ ২ হাজার কোটি টাকা। 

(৪) কৃষিতে ব্যাপক বিনিয়োগ: ব্যাপক কর্মসংস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তা সৃষ্টির পাশাপাশি  রপ্তানিও সম্ভব। বেসরকারি খাতে কৃষি, মৎস্য, প্রাণী সম্পদ, ডেইরি ও পোলট্রির উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সুদবিহীন ব্যাপক সরকারি বিনিয়োগ তদারকি করবে এনজিও'রা। সময়মতো ঋণ পৌঁছানোর জন্য BIDS ও অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব গ্রহণ করবে, তদারকি করবে, সঠিক চিত্র প্রকাশ করবে। প্রয়োজনীয় বিশেষ বরাদ্দ ৩০ হাজার কোটি টাকা।

এনজিও'রা ঋণদান কর্মসূচি ভালোভাবে পরিচালনার জন্য শস্য উৎপাদিত ও আহরনের ৬ মাস পর টাকা আদায় করে দেবার জন্য পাবে ২.৫%। কৃষকের ওপর কোনো সুদ বর্তাবে না। প্রয়োজনীয় বিশেষ বরাদ্দ দেড় হাজার কোটি টাকা। 

(৫) তৃণমূল স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ আবশ্যক: (ক) করোনা প্রতিরোধের জন্য। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের নিরাপত্তা বেষ্টনি, চিকিৎসক ও অন্যদের বাসস্থান, ডরমিটরি, এবং ২০ শয্যার হাসপাতাল ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহে ব্যয়;  প্রয়োজনীয় বিশেষ বরাদ্দ ২৫ হাজার কোটি টাকা।

(খ) Corona Risk Allowance; প্রয়োজনীয় বিশেষ বরাদ্দ এক হাজার কোটি টাকা।

(গ) চিকিৎসকদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন বিষয়ে ৩ মাস মেয়াদী সার্টিফিকেট কোর্স প্রবর্তন এবং অবস্থানের পর ন্যূনতম দুই বৎসর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রে সার্বক্ষণিকভাবে বিশেষ ভাতা পাবেন। প্রয়োজনীয় বিশেষ বরাদ্দ ১ হাজার কোটি টাকা। 

(৬) ঢাকা শহরের ১০০টি ওয়ার্ডে জেনারেল প্রাকটিশনার্স ও রেফারেল পদ্ধতির প্রচলন। বরাদ্দ ২ হাজার কোটি টাকা। 

(৭) সিএমএইচ, কারাগার হাসপাতাল, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর হাসপাতালের সংযুক্তিকরণ এবং সামরিক মেডিকেল কোরের (এএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীনে আনা নতুন আধুনিক ব্যবস্থাপনার অংশ। প্রয়োজনীয় বিশেষ বরাদ্দ দুই হাজার কোটি টাকা। 

(৮) প্রবাসী দুর্দশাগ্রস্ত পরিবারকে রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একত্রে মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব ও আফ্রিকা পরিভ্রমণ প্রয়োজন এবং অভিবাসীদের আর্থিক সাহায্য প্রদান। প্রয়োজনীয় বিশেষ বরাদ্দ পাঁচ হাজার কোটি টাকা। 

(৯)  বয়োবৃদ্ধদের চিকিৎসাসেবা এবং স্কুল স্বাস্থ্য কার্যক্রম। প্রয়োজনীয় বিশেষ বরাদ্দ পাঁচ হাজার কোটি টাকা। 

(১০) যৌন নিপীড়ন নিবারনে ও যানবাহনে নারীর নিরাপত্তা প্রদানের জন্য ভিআইপি ডিউটি থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত এলিট পুলিশ ও সামরিক সদস্যদের নতুন দায়িত্ব দিন পথে ঘাটে, যানবাহনে, হাটে বাজারে নারীদের নিরাপত্তা প্রদান ও যৌন নিপীড়ন নিবারন, নারী নির্যাতন ও যৌন নিপীড়ন অবসানের ভূমিকা রাখার জন্য মাদ্রাসা, মসজিদ ও অন্যান্য শিক্ষকদের মানবিক উন্নয়ন প্রকল্প নিন, শহরে গ্রামে শত শত পথ নাটক পরিচালিত হলে নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা সহজ হবে। নারী নির্যাতিত হলে রাষ্ট্র ও জাতির মর্যাদা হয় না। যৌন নিপীড়নের চেয়ে বড় কোনো ন্যাক্কারজরক ঘটনা নেই। প্রয়োজনীয় বিশেষ বরাদ্দ ৫ হাজার কোটি টাকা। 

(১১) নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে বিশেষ অনুদান। প্রয়োজনীয় বিশেষ বরাদ্দ ১ হাজার কোটি টাকা। 

সর্বমোট: ১,৯২,৯০০ (এক লাখ বিরানব্বই নয় শত হাজার) কোটি টাকা

২০২০-২১ বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ দাবি বৃহত্তর জনগোষ্ঠির অন্যায় আবদার নয়। ন্যায্য অধিকার আদায়ের অংশ।

বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর উন্নয়নই শেখ মুজিবের স্বপ্নের বাস্তবায়ন এবং তা হবে তার জন্মশতবার্ষিকীতে শ্রেষ্ঠ শ্রদ্ধার্ঘ। জয় হোক জনতার।

[ঈষৎ সক্ষেপিত]


জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী: ট্রাস্টি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র

আরও