আলোকপাত

ডলার সংকটে দেশের অর্থনীতি গতিশীলতা হারাচ্ছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ ক্রমেই কমে যাচ্ছে। এটা একদিনে বা হঠাৎ করে ঘটেনি। এর কারণ জানতে হলে আমাদের একটু পেছনের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। একসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ৪৮ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের সেই রিজার্ভের পরিমাণ ছিল সার্ক দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। একমাত্র ভারতের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের অংক

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ ক্রমেই কমে যাচ্ছে। এটা একদিনে বা হঠাৎ করে ঘটেনি। এর কারণ জানতে হলে আমাদের একটু পেছনের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। একসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ৪৮ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের সেই রিজার্ভের পরিমাণ ছিল সার্ক দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। একমাত্র ভারতের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের অংক বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ছিল। কিন্তু সেই রিজার্ভ ধরে রাখা যায়নি বা যাচ্ছে না। রিজার্ভ ক্রমাগত কমতে শুরু করে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড (বিপিএম৬) অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। ডলারের বিনিময় হারসহ বেশকিছু বিষয় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্ফীত রিজার্ভ গড়ে তোলা হয়েছিল। বহুল ব্যবহৃত বৈদেশিক মুদ্রা, বিশেষত ডলারের বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। করোনাকালে পণ্য আমদানি কমে যায়। আমদানিকারকরা বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি কমিয়ে দেন। ফলে আমদানি বাবদ যে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হতো তা অনেকটাই সাশ্রয় হয়। রফতানি আয় সেই সময় মোটামুটি ঠিকই ছিল। প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রেরিত রেমিট্যান্সের পরিমাণও তখনো খুব একটা কমেনি। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের চাপ অনেকটাই কমে গিয়েছিল। মূলত এসব কারণেই সে সময়ও বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। করোনা-উত্তরকালে আমদানি বাড়তে শুরু করে। এরপর শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এ অপ্রত্যাশিত যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ সব ধরনের পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশ মূলত একটি আমদানিনির্ভর দেশ। ফলে আমদানি খাতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় বৃদ্ধি পায়। সেই সময় পণ্য রফতানি আয় কিছুটা বাড়লেও আমদানি ব্যয় যেভাবে বেড়েছে রফতানি আয় সেভাবে বাড়েনি। করোনাকালীন অবস্থায় হুন্ডি ব্যবসা অনেকটা স্তিমিত হয়ে পড়ে। ফলে প্রবাসী বাংলাদেশীরা বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রেরণ করতে থাকেন। কিন্তু করোনার প্রভাব শেষ হয়ে গেলে প্রবাসী বাংলাদেশীরা আবারো হুন্ডিতে ফিরে যান। ব্যাংকিং চ্যানেলের সঙ্গে কার্ব মার্কেটের ডলার রেটের সঙ্গে পার্থক্য বেড়ে ১০-১২ টাকায় উন্নীত হয়। হুন্ডির মাধ্যমে পাঠালে প্রতি মার্কিন ডলারে যদি ১০-১২ টাকা বেশি পাওয়া যায় তাহলে প্রবাসী বাংলাদেশীরা কেন বৈধ চ্যানেলে অর্থ দেশে প্রেরণ করবেন? পণ্য আমদানি ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি রফতানি আয় ঠিক মতো দেশে আসেনি। ফলে দ্রুত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ যে পর্যায়ে আছে তা আরো কমে গেলে দেশের অর্থনীতি ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। বেশ কয়েক মাস হলো এলসি খোলা বিলম্ব বা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর প্রভাবে উৎপাদনের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি কমে যাচ্ছে, যার সুদূরপ্রসারী আমদানি-রফতানি সংকট তথা অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়তে পারে। 

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ চীন, ভারত, রাশিয়া, জাপানসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট হার্ডটার্ম স্বল্পমেয়াদি ঋণ গ্রহণ করেছে। সেসব ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ বাবদ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে।\

২০১১ সালে কোনো ধরনের প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র ছাড়াই ব্যক্তি খাতে বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়। সব রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের জন্য প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়েছে। রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের জন্য যেসব উপকরণ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়েছে বা হচ্ছে তার মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রায়। আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্য এবং উৎপাদন উপকরণের মূল্য হঠাৎ করে বাড়ার কারণে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের চাহিদাও বেড়ে যায়। যেভাবে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের চাহিদা বৃদ্ধি পায় সেই তুলনায় বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়েনি। একই সময় সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিট পরিশোধের সময় চলে আসে। সব মিলিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। পদ্মা সেতুতে টোল বসানো হলো। সেই টোল আদায়ের দায়িত্ব নিজেদের কাছে না রেখে দেয়া হলো কোরিয়ান ও চীনা কোম্পানিকে। চীনা ও কোরিয়ান কোম্পানি পদ্মা সেতুতে যে টোল আদায় করবে তা তাদের হিস্যা বা পাওনা নিজ দেশে নিয়ে যাবে মার্কিন ডলারে। ফলে আমাদের মার্কিন ডলার রিজার্ভের ওপর অহেতুক চাপ বাড়ে। 

বাংলাদেশে গ্যাস পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকলেও গ্যাস অনুসন্ধানের পরিবর্তে সরকার আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এলএনজি আমদানির জন্য চেষ্টা চালায় বা চালাচ্ছে। ব্রুনাইয়ের সঙ্গে দুই দুইবার (২০১৯ ও ২০২৩) যৌথ ঘোষণা সত্ত্বেও সে দেশসহ বিভিন্ন উৎস থেকে প্রতিযোগিতামূলক শর্ত বা দরে আমদানি না করে অন্য দেশ থেকে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববাজারে এলএনজির মূল্য অনেক বেড়েছে। ফলে এলএনজি আমদানি বাবদ বাংলাদেশকে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হচ্ছে। এ ধরনের বিভিন্ন কারণে মার্কিন ডলারের চাহিদা এবং ব্যয়ের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

একটি দেশের রিজার্ভ বাড়ার পেছনে কয়েকটি কারণ কাজ করে। এর মধ্যে পণ্য রফতানি আয়, জনশক্তি রফতানি খাতে অর্জিত রেমিটান্স আয় এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ ও সহায়তা/ঋণ উল্লেখযোগ্য। যেসব উপকরণ রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অবদান রাখে ২০২০ সালের পর তার প্রায় সবগুলোই নেতিবাচক পর্যায়ে চলে যায় অথবা মন্থর হয়ে পড়ে। অন্যদিকে আমদানি ব্যয় ব্যাপকভাবে বাড়ে। পণ্য রফতানিকারকদের অনেকেই বিদেশে পণ্য রফতানি করে তার পুরো অর্থ দেশে আনছে না। তারা বিদেশেই ডলার রেখে দিচ্ছেন। আমদানিকারকদের অনেকেই আমদানীকৃত পণ্যের অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে দেশ থেকে ডলার বিদেশে পাচার করছেন। 

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ থেকে সাম্প্রতিক সময়ে অর্থ পাচার ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশ থেকে অর্থ পাচার বেড়ে যায়। যারা বিদেশে অর্থ পাচার করেন তারা স্থানীয় মুদ্রার বিনিময়ে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে তা বিদেশে পাচার করে থাকেন। দেশ থেকে অর্থ পাচার কীভাবে বেড়েছে তার একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশ।  অর্থবছর শেষে ১০ দশমিক ৫৮ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। কিন্তু দেখা গেল, একই সময়ে শিল্পে ব্যবহার্য কাঁচামাল আমদানি কমেছে ১৪ শতাংশ। মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি কমে যায় প্রায় ২৪ শতাংশ এবং ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি কমে যায় প্রায় ৩৭ শতাংশ। তাহলে প্রশ্ন জাগে, ব্যক্তি খাতে যে ব্যাংক ঋণ দেয়া হয়েছিল তা কোথায় গেল? অনেকেই অভিযোগ করেন, ব্যক্তি খাতে যে ঋণ মঞ্জুর করা হয় তা অন্য খাতে প্রবাহিত করা হয়েছে। এর একটি অংশ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। সেই সময় ব্যাংক ঋণ গ্রহণ তুলনামূলকভাবে সস্তা ছিল। মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি রোধ করার জন্য বিশ্বের অন্য অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকও বারবার নীতি সুদহার বা পলিসি রেট (যে সুদ হারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শিডিউল ব্যাংকগুলোকে স্বল্পকালীন সময়ের জন্য ঋণ প্রদানকেও বাড়িয়েছে। মনে করা হয়, পলিসি রেট বাড়ানো হলে শিডিউল ব্যাংকগুলোর ফান্ড সংগ্রহের সময় বেশি ব্যয় করতে হবে। ফলে তারা যখন উদ্যোক্তা বা সাধারণ ঋণ গ্রহীতা পর্যায়ে ঋণ প্রদান করবে স্বাভাবিকভাবেই তার সুদের হার আগের তুলনায় বেশি হবে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক পলিসি রেট বারবার বাড়ালেও ব্যাংক ঋণের ‘আপার ক্যাপ’ দীর্ঘদিন পর্যন্ত ৯ শতাংশ বহাল রাখে। ফলে এক শ্রেণীর ঋণ গ্রহীতা ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে তা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেন। এমনকি তারা সেই ঋণের অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ব্যাংক ঋণের আপার ক্যাপ অনেক দিন ধরে বজায় রাখার ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যস্ফীতি কমেনি। মূল্যস্ফীতির কশাঘাতে সাধারণ মানুষ এখন বিপর্যয়ের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের অন্তত ৭৭টি দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রধানতম হাতিয়ার হিসেবে পলিসি রেট বাড়িয়েছে। যেসব দেশ পলিসি রেট বাড়িয়েছে তাদের অধিকাংশই উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ পলিসি রেট বারবার বাড়িয়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি লক্ষণীয়ভাবে কমাতে পারছে না। বাংলাদেশে পলিসি ঘোষণার পর তার বাস্তবায়নকালে অর্থনীতিতে তার অভিঘাত কেমন পড়ছে তা তদারকিতে মনোযোগ দেয়া দরকার। অতিসম্প্রতি অফশোর বিনিয়োগ-সংক্রান্ত যে আইন পাস হতে যাচ্ছে তার প্রেক্ষাপট ও প্রয়োগ ফলাফল নিয়ে নানা মুনির নানা মত প্রকাশ পাচ্ছে। রোগী মারা যাওয়ার পর ডাক্তার ডাকার মতো অবস্থা আর কি? 

অর্থ পাচার একটি দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত মারাত্মক ক্ষতিকর। যে অর্থ নিজ দেশের উন্নয়নে ব্যয় হতে পারত তা অন্য দেশের উন্নয়নে ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু নানাভাবে চেষ্টা করেও অর্থ পাচার ঠেকানো যাচ্ছে না। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) কয়েক বছর আগে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল, বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ অর্থ পাচার হয়। তাদের মতে, প্রতি বছর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে এ দেশ থেকে আন্ডার ইনভয়েসিং এবং ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। আমদানি-রফতানির আড়ালে অর্থ পাচার করা সবচেয়ে সহজ। এমনও দেখা গেছে, পণ্য রফতানি করা হয়েছে, কিন্তু সঠিক সময়ে অর্থ দেশে আসেনি। রফতানিকারকদের অনেকেই এখন বিদেশে পণ্য রফতানি করে সঙ্গে সঙ্গে অর্থ দেশে আনছেন না। তারা মনে করছেন, আগামীতে মার্কিন ডলারের মূল্য আরো বাড়বে। কাজেই রফতানি আয় কিছুদিন বিদেশে ধরে রাখতে পারলে তুলনামূলক বেশি স্থানীয় মুদ্রা পাওয়া যাবে। এখানে একটি বিষয় লক্ষ করার মতো তাহলো, রফতানিকারকরা সব সময় স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন কামনা করেন। কারণ স্থানীয় মুদ্রার মান কমে গেলে আগের মতো একই পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রা বেশি পাওয়া যাবে। অথচ এজন্য তাদের কোনো বাড়তি ব্যয় করতে হবে না। আর আমদানিকারকরা চান বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার মূল্য বৃদ্ধি পাক। তাহলে আগের সমপরিমাণ স্থানীয় মুদ্রার বিনিময়ে তুলনামূলকভাবে বেশি পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া যাবে। 

বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েক বছর আগে বাজেটের আগে একটি সার্কুলার জারি করে। আগে নিয়ম ছিল, প্রবাসী বাংলাদেশীরা ৫ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত দেশে আনতে পারবে। এজন্য কোনো ট্যাক্স প্রদান করতে হবে না। কিন্তু নতুন সার্কুলারে বলা হলো, এখন যে কেউ বিদেশ থেকে ৫ হাজার মার্কিন ডলারের বেশিও দেশে আনতে পারবে। অর্থাৎ প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিক এবং সাধারণ রেমিটারের মধ্যে আর কোনো পার্থক্য থাকল না। সবাইকে আড়াই শতাংশ নগদ আর্থিক প্রণোদনা দেয়া শুরু হলো। এর এক মাস পর ২০২২-২৩ বাজেটে বলা হলো, বিদেশ থেকে যে অর্থ প্রেরণ করা হবে তার ওপর [বিশেষ সুযোগের আওতায়] সাড়ে ৭ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হবে। যারা সাধারণভাবে অর্থ প্রেরণ করে তাদের দেখানো হলো তোমার ট্যাক্স কমিয়ে দিলাম। আর প্রবাসী শ্রমিকদের রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে বাড়তি ট্যাক্সের পরিমাণ দাঁড়াল সাড়ে ৫ শতাংশ (৭.৫০ - ২.৫০ = ৫)। কারণ তাকে মোট আয়ের ওপর আড়াই শতাংশ নগদ আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। এ ব্যবস্থাপনা এখন কোন পর্যায়ে আছে তার প্রকৃত অবস্থা সার্কুলার জারিকারক সংস্থা সবাইকে খোলাসা করতে পারে। কেননা এক পর্যায়ে প্রবাসী বাংলাদেশীরা বৈধ চ্যানেলে অর্থ দেশে প্রেরণের ক্ষেত্রে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। বিনিময় হারের এলোপাতাড়ি পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ হুন্ডির কবলে চলে যায়। 

মূলত নানা কারণে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আগমনের হার কমে যায়, যা রিজার্ভের ওপর নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করছে। মিস্টার ডলারের অস্বাভাবিক অসুস্থতায় গোটা অর্থনীতি গতিশীলতা হারাচ্ছে। 

ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ: উন্নয়ন ও রাজস্ব অর্থনীতির বিশ্লেষক; সাবেক চেয়ারম্যান, এনবিআর

আরও