বাংলাদেশের মতো সীমিত
সম্পদের দেশে
একটা শিশুর
জন্ম থেকে
শুরু করে
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন
পর্যন্ত পিতা-মাতাকে অপরিসীম
ত্যাগের পাশাপাশি পরিবারকে অনেক সম্পদ
ব্যয় করতে
হয়। দুঃখজনক
হলেও সত্য,
উচ্চশিক্ষিতের একটা
বড় অংশ
কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ
করতে পারছে
না, তথা
বেকার। একজন
কর্মক্ষম মানুষ
কাজ করার
সুযোগ না
পেলে একদিকে
নিজে যেমন
হতাশায় ডুবে
যায়, অন্যদিকে তারা পরিবার এবং
দেশের বোঝা
হিসেবে পরিগণিত
হয়। গুণগত
ও মানসম্পন্ন গবেষণার অভাবে দেশে
প্রকৃত বেকারের
সংখ্যা এখনো
অজানাই রয়ে
গেছে। পত্রপত্রিকায় মাঝে মধ্যে যে
প্রতিবেদন প্রকাশ
হয় তা
সচারাচর সাদামাটা এবং অসম্পূর্ণ যেখানে
ডিসিপ্লিন বা
ক্ষেত্রভিত্তিক বেকারত্বের পরিসংখ্যান অনুপস্থিত। শিক্ষা
খাতের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ভর্তির বিজ্ঞপ্তিতে চাকরির বাজার নিয়ে
আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দিলেও তার বাস্তবতা অন্তঃসারশূন্য। তাই পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে দেশের
বেকারত্বের বিষয়টি
অন্ধের হাতি
দর্শনের মতো
অবস্থা, যে
যার মতো
করে ব্যাখ্যার সুযোগ পায়।
উচ্চশিক্ষিতদের ক্যারিয়ার সংক্রান্ত বিষয়ে
প্রকাশিত বই
‘বিসিএস নাকি
বিদেশে উচ্চশিক্ষা?’-এর আলোকে তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে
বেকারত্বের বিষয়টি
তুলে ধরছি।
পাঠকের অবগতির
জন্য বলে
রাখা দরকার,
ব্যক্তিগতভাবে প্রায়
২০ বছর
ধরে গ্র্যাজুয়েটদের ক্যারিয়ার গঠন নিয়ে
ঘাঁটাঘাঁটি এবং
সচেতনতা গড়ে
তোলা, দেশের
সুনামধন্য ফার্মা
ইন্ডাস্ট্রিতে (সিনিয়র
ম্যানেজার) এবং
দেশে-বিদেশের
একাডেমিয়া এবং
গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজের আলোকে বইটি
রচনা করতে
অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। বিভিন্ন সেক্টরে ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ-সুবিধা
নিয়ে সেই
সেক্টরে সিনিয়র
লোকদের সঙ্গে
যোগাযোগ করে
মোটামুটি ধারণা
দেয়ার প্রচেষ্টা ছিল বইটিতে।
দেশে উচ্চশিক্ষিত বেকার সংকটের গভীরতা আসলে কতটুকু?
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৭ সালের সর্বশেষ শ্রমশক্তি সমীক্ষা অনুযায়ী, মোট কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মাত্র ৪ দশমিক ২ শতাংশ বেকার তথা ২৭ লাখ বেকার; কিন্তু এ সংখ্যা প্রশ্নবিদ্ধ। কেননা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) যে সংজ্ঞার ওপর ভিত্তি করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ত্রুটি বা অসম্পূর্ণতা রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বিবিএস দেশের জন্য আরেকটি মানদণ্ড বা সংখ্যা ব্যবহার করেছে, যেখানে কোনো কর্মক্ষম মানুষ যদি সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টার কম কাজের সুযোগ পায়, তবে তাকে ছদ্ম বেকারই বলা হয়। সে হিসাবে দেশে এমন ছদ্ম বেকারের সংখ্যা হচ্ছে ৬৬ লাখ, যারা পছন্দমতো কাজ পায় না। এদের বড় অংশই রাইড-শেয়ারিং, টিউশনি ও বিক্রয়কর্মীসহ নানা ধরনের খণ্ডকালীন কাজ করতে বাধ্য হয়।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব
ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) দুটি জরিপ
অনুযায়ী, দেশের
স্নাতক (অনার্স)
ডিগ্রিধারীদের ৩৭
থেকে ৬৬
শতাংশ বেকার।
অ্যাকশন এইডের
(২০১৯) গবেষণা
অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটের ৪৬ শতাংশের
বেশিই বেকার।
বিশ্বব্যাংক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর জরিপ
করেছিল। তাতেও
দেখা গেছে,
স্নাতক পাস
করা শিক্ষার্থীদের ৪৬ শতাংশ বেকার,
যারা তিন
বছর ধরে
চাকরি খুঁজছে।
ব্রিটিশ সাময়িকী
ইকোনমিস্টের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ)
প্রতিবেদন অনুযায়ী,
বাংলাদেশের ৪৭
শতাংশ স্নাতকই
বেকার, যেখানে
ভারতে ৩৩
শতাংশ, পাকিস্তানে ২৮, নেপালে ২০
ও শ্রীলঙ্কায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ বেকার।
এসব তথ্য
পর্যালোচনা করে
ধারণা করা
যায় যে
প্রতি বছর
কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ
করা ২০-২২ লাখ
মানুষের প্রায়
অর্ধেক (১০
লাখ) বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট কিন্তু চাকরি
পাচ্ছে না।
করোনা অতিমারীর কারণে উচ্চশিক্ষিত বেকারের
সংখ্যা আরো
বেড়ে গেছে।
গুটিয়ে আসছে
চাকরির বাজার,
তৈরি হচ্ছে
না নতুন
কর্মক্ষেত্র, করোনার
কারণে পুরনো
প্রতিষ্ঠানে বাড়ছে
চাকরি থেকে
ছাঁটাই। দেশের
পাবলিক সেক্টরে
(সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত কিংবা স্থানীয় সরকার)
কাজ করে
মাত্র ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি অর্জন আগের তুলনায় সহজলভ্য
এ উপমহাদেশে এমন
সময়ও ছিল,
যখন এন্ট্রান্স (এসএসসি) পরীক্ষায় পাস
করলেও এলাকাবাসী দেখতে ভিড় জমাত।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি
হওয়া তো
ছিল বিরাট
ব্যাপার। ১৯৯০
সাল পর্যন্ত
বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় ছিল মাত্র ১০টি।
সে সময়
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে পাস করে
ক্যারিয়ার গঠনে
এক ধরনের
মোটামুটি মাপের
নিশ্চয়তা ছিল।
এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৫৮টি। এর
মধ্যে পাবলিক
বিশ্ববিদ্যালয় ৫৩টি
এবং ১০৫টি
হচ্ছে প্রাইভেট। প্রতি বছর প্রায়
৮ লাখ
বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট বা স্নাতক ডিগ্রিধারী কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে;
কিন্তু সেই
তুলনায় জব
বাড়েনি। বর্তমানে দেশে ১০ লাখ
গ্রাজুয়েট বেকার
পড়ে আছে।
যে সেক্টরগুলোয় চাকরির সুযোগ ছিল সেগুলোতেও সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে
যেসব সেক্টরগুলো নিয়ে সমাজে এক ধরনের পজিটিভ ধারণা ছিল (যেমন- টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, চিকিৎসা, ফার্মেসি) সেই সেক্টরগুলোতেও বর্তমান সময়ে ক্যারিয়ার গঠন করা অনেক কঠিন হয়ে গেছে, অর্থাৎ হতাশা বিরাজ করছে। বেশির ভাগ পিতা-মাতার কাছে পর্যাপ্ত তথ্যটাই নেই যে, ভবিষ্যতের সুযোগ কোথায় তৈরি হবে। শিক্ষকরাও তথ্যের অভাবে সঠিক দিক-নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হন। অবস্থা অনুধাবন করার জন্য একটি উদাহরণ তুলে ধরছি। মফস্বল শহরের পিতা-মাতা চান সন্তান ফার্মেসিতে পড়ুক। কেননা ফার্মেসি পাস করলে দেশে ভালো বেতনের চাকরি হবে। তাদের ধারণার ভিত্তি পত্রপত্রিকায় ওষুধ শিল্প সম্পর্কে কিছুটা তথ্য এবং পাড়ায় পাড়ায় ফার্মেসির দোকানের আধিক্য। এমনও হতে পারে যে দূরসম্পর্কীয় কেউ ২০ বছর আগে ফার্মেসি গ্র্যাজুয়েট হয়ে আজ প্রতিষ্ঠিত; কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ২০ বছর আগে দেশে খুব অল্পসংখ্যক ফার্মাসিস্ট বের হতো। দেশে প্রতি বছর ৪১টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০০+ ফার্মেসি গ্র্যাজুয়েট হচ্ছে, কিন্তু সেই তুলনায় ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রির সংখ্যা বাড়েনি। হাতে গোনা ২০টি ফার্মা কোম্পানি ভালো করছে। অন্যরা মূলত টোল বা কন্ট্রাক প্রডাকশন করে বড় কোম্পানিগুলোর। তেমনিভাবে মাইক্রোবায়োলজিস্ট, বায়োকেমিস্টদের নিজস্ব কর্মক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ খুব সীমিত।
আমাদের
সময় দেশে
মাইক্রোবায়োলজি গ্র্যাজুয়েট হতো প্রতি বছর
২০ জন।
এখন পাবলিক-প্রাইভেট মিলে
মাইক্রোবায়োলজি গ্র্যাজুয়েট হচ্ছে চার-পাঁচশর
মতো। বিজনেস
ডিসিপ্লিন থেকে
কয়েক লাখ
পাস করছে,
কিন্তু তেমন
জব পাচ্ছে
না। পেলেও
বেতন গাড়ির
ড্রাইভারদের চেয়েও
কম অফার
করে। দেশে
প্রায় সব
ডিসিপ্লিনের একই
অবস্থা। টেক্সটাইল সেক্টর- বস্ত্রশিল্প দেশের
রফতানি এবং
বিদেশী শ্রমিকদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রার
ওপর দেশের
অর্থনীতি মূলত
দাঁড়িয়ে আছে।
১০-১৫
বছর আগেও
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য যে সুযোগ
ছিল সাম্প্রতিককালে তা কমে এসেছে।
বর্তমানে কমপক্ষে
দেশের ৩৩টি
বিশ্ববিদ্যালয় (পাবলিক
ও প্রাইভেট), ৮টি টেক্সটাইল কলেজ,
১০টি টেক্সটাইল ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট এবং
৩১টি ভকেশনাল
ইনস্টিটিউট থেকে
প্রতি বছর
প্রায় ১০
হাজারের মতো
গ্র্যাজুয়েট, ডিপ্লোমাধারী এবং অন্যান্য দক্ষ
জনশক্তি বস্ত্র
খাতের জন্য
তৈরি হচ্ছে;
কিন্তু সে
অনুপাতে দেশে
চাকরির ক্ষেত্র
তৈরি হচ্ছে
না। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর
২০-২৫
হাজার টাকার
বেতন অফার দেয়া
হয়, যেখানে
৮ ঘণ্টার
অফিস সময়ের
চেয়েও বেশি
কাজ করতে
হয়। এ কারণে গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে হতাশা কাজ
করে।
চিকিৎসা সেক্টরে বেকারত্ব
৩০ বছর আগে
(১৯৯০ সালের
দিকে) মেডিকেল
কলেজের সংখ্যা
ছিল মাত্র
আটটি। বর্তমানে পাবলিক ও প্রাইভেট মিলে এর সংখ্যা
হচ্ছে ১১২টি।
ডেন্টাল কলেজ
প্রায় ৪০টির
মতো। ২০১৬
সালের সরকারি
জরিপ অনুযায়ী
দেশে প্রয়োজনের তুলনায় ১১ হাজারেরও বেশি চিকিৎসক ছিলেন।
সেই সময়
দেশে প্রতি
১ হাজার
৮৪৭ জন
মানুষের জন্য
চিকিৎসক ছিলেন
একজন। সরকারি
নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন
প্রতি ৬ হাজার ৫৭৯
জনে একজন।
২০২৬ সালে
দেশে প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় ১ লাখ ২৫
হাজারের মতো
চিকিৎসক বেশি
তৈরি হতে
যাচ্ছে, যা
নিয়ে সংসদে
আলোচনা হয়েছিল।
অর্থাৎ, এত
পরিশ্রম করে
পড়াশোনা করার
পরও অনেক
চিকিৎসক বেকারত্ব বরণ করবেন। পাস
করা একজন
চিকিৎসক মাত্র
২০-২৫
হাজার টাকায়
চাকরি শুরু
করেন প্রাইভেট হাসপাতালে, ১০-১২
ঘণ্টা খাটতে
হয়। নিকট
ভবিষ্যতে এ অবস্থা থেকে
মুক্তির লক্ষণ
দেখা যাচ্ছে
না।
উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন জনশক্তির সংকট
অবাক করা বিষয়
হচ্ছে, একদিকে
দেশে উচ্চশিক্ষা অর্জনের হার বাড়ছে,
কিন্তু অন্যদিকে দেশের প্রধান চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষ মানবসম্পদের অভাবে ভুগছে। এ অভাব পূরণে
প্রতিষ্ঠানগুলো ভারত
ও শ্রীলংকাসহ অন্যান্য দেশ থেকে
উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন জনশক্তি (টেকনিক্যাল ও ম্যানেজারিয়াল) আমদানি
করায় বাংলাদেশকে বিরাট অংকের বৈদেশিক
মুদ্রা খরচ
করতে হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ভারতের
প্রায় দুই
লাখ মানুষ
আমাদের দেশের
বিভিন্ন (মূলত
বস্ত্র খাত,
কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি, ওষুধ শিল্প) সেক্টরে
কাজ করে
প্রতি বছর
কমপক্ষে ৪ বিলিয়ন মার্কিন
ডলার তাদের
দেশে রেমিট্যান্স হিসেবে পাঠাচ্ছে।
উদ্যোক্তা হতেও অনেক বাধা
দেশে উদ্যোক্তা তৈরিতে
পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ এবং তাদের সহযোগিতা করার জন্য রাষ্ট্রীয় কোনো সাপোর্ট সিস্টেম
গড়ে ওঠেনি।
বিশ্বব্যাংকের ২০২০
সালের রিপোর্ট
অনুযায়ী, ইজ
অব ডুয়িং
বিজনেস সূচকে
১৯০টি দেশের
মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ১৬৮তম। প্রথম
স্থানে নিউজিল্যান্ড এবং শেষের স্থানে
সোমালিয়ার অবস্থান। নতুন ব্যবসা বা
উদ্যোগ প্রতিষ্ঠা করতে অর্থসংস্থান নিয়ে
বাধা; বিভিন্ন
ধরনের অনুমতি
বা লাইসেন্স, আয়কর প্রদান, সরকারি
বা ব্যাংক
ঋণসংক্রান্ত তথ্য
পাওয়ার জন্য
এখন পর্যন্ত
কোনো সহজবান্ধব প্রতিষ্ঠানও গড়ে ওঠেনি।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নাগরিক সেবা পেতে
অনেক ঝামেলা
পোহাতে হয়।
তরুণদের মধ্যে
উদ্যোক্তা হওয়ার
প্রবণতা দেখা
দিলেও উদ্যোক্তা হিসেবে টিকে থাকা
তাদের পক্ষে
বেশ দুরূহ
ব্যাপার। নতুন
কোনো উদ্যোগ
নিতে বিভিন্ন
রকমের পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হয়।
নারীদের জন্য
উদ্যোক্তা হওয়া
তো আরো
কঠিন; থাকে
নানা পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা। এসব কারণে দিনশেষে
ব্যর্থতার পাল্লাই
ভারী হয়।
উচ্চশিক্ষিত বেকারত্ব সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান কী হতে পারে?
মিডিয়ায় আজকাল প্রায়ই
দেখা যায়
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র
বা গ্র্যাজুয়েটের আত্মহত্যার খবর, যার
নেপথ্যে থাকে
জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দুশ্চিন্তা তথা
স্বপ্নভঙ্গের ঘটনা।
বস্তুত আশা
বা স্বপ্ন
মানুষকে বাঁচিয়ে
রাখে, মানুষকে
কাজ করতে
শক্তি জোগায়।
দেশে যোগ্যতার মাপকাঠিতে মূল্যায়ন সিস্টেম
এখনো গড়ে
ওঠেনি। এজন্যও
অনেকে নিগ্রহের শিকার হয়। কেউ
কেউ তা
সহ্য না
করতে পেরে
নিজের মূল্যবান জীবনটাকেই ধ্বংস করে
দেয়। এর
মাধ্যমে পিতা-মাতার অনেক
ত্যাগ, পরিশ্রম
ও সম্পদের
বিনিয়োগ এক
নিমেষেই ধ্বংস
হয়ে যায়।
বিশ্বজুড়ে কিন্তু অনেক সুযোগ
তৈরি হয়েছে,
যা আমাদের
দেশের গ্র্যাজুয়েটরা জানে না অথবা
বিষয়টি তারা
অনুধাবন করতে
পারছে না;
তাই দেশের
এ ছোট্ট
গণ্ডির মাঝেই
নিজেদের স্বপ্ন
ধারণের চেষ্টা
করে তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় গ্র্যাজুয়েটদের সময়োপযোগী ক্যারিয়ার গঠনের বিশেষ
উদ্যোগ তেমন
চোখে পড়ে
না। বিশ্বায়নের যুগে পরিশ্রমী ও মেধাবী মানুষের
অনেক কদর
রয়েছে বিশ্বব্যাপী। এজন্য নিজেকে সেভাবে
তৈরি করতে
হয়। প্রতি
বছর যারা
গ্র্যাজুয়েট হচ্ছে,
তাদের মধ্যে
১১ শতাংশ
বিজ্ঞান অনুষদ/বিভাগ, ২৪
শতাংশ বাণিজ্য
অনুষদ, ৩০
শতাংশ কলা
অনুষদ ও ২৮ শতাংশ
সমাজবিজ্ঞান অনুষদ
থেকে। উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশে পাড়ি জমায়
মূলত বিজ্ঞান
ও প্রকৌশল
গ্র্যাজুয়েটরা, যদিও
তারা মোট
গ্র্যাজুয়েটের মাত্র
১১ শতাংশ।
নব্বইয়ের দশক
থেকে সায়েন্সের অ্যাপ্লায়েড ফিল্ডে চাকরির
বাজার সংকুচিত
ছিল।
প্রসঙ্গত, বুয়েট থেকে পাস
করাদের জন্য
দেশে তেমন
সুযোগ ছিল
না। টেলিকমিউনিকেশন শিল্পের যখন প্রসার
হচ্ছিল তখন
এই সেক্টরে
জব ছিল,
কিন্তু বর্তমানে সে সুযোগ অনেক
কমে গেছে।
কয়েক বছর
ধরে ডাটা
সায়েন্স তথা
কম্পিউটার সায়েন্স
এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ফিল্ডের বিশ্বব্যাপী প্রসার
ঘটছে, সেজন্য
কিছুটা সুযোগ
তৈরি হচ্ছে
সেই ফিল্ডে।
কিন্তু বাকি
ইঞ্জিনিয়ারিং ফিল্ডগুলোয় জব সেক্টর স্যাচুরেটেড হয়ে গেছে (অর্থাৎ
সুযোগ অনেক
কম)।
নন-সায়েন্স ডিপার্টমেন্টগুলোর (কলা, সমাজবিজ্ঞান) শিক্ষার্থীরা ধরেই নেয় যে
তাদের সুযোগ
সীমিত, বিএসএস
বা সরকারি
জব ছাড়া
উপায় নেই।
বাণিজ্য অনুষদের
আবহ হচ্ছে
করপোরেট বা
বেসরকারি চাকরি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়ে, তারা
শুরু থেকেই
এক ধরনের
হীনম্মন্যতায় ভুগতে
থাকেন। বিশ্বে
এত এত
সুযোগ থাকতেও
বিসিএস-কেন্দ্রিক স্বপ্ন (যেখানে ব্যর্থ
হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশেরও বেশি)
দেখার যে
সংস্কৃতি গড়ে
উঠেছে, তা
রীতিমতো বিস্ময়কর। নন-সায়েন্স ডিসিপ্লিনে বিশ্বব্যাপী উচ্চশিক্ষার্থে স্কিল
অর্জনের অনেক
সুযোগ রয়েছে
যার সুযোগ
নিতে পারছে
না আমাদের
দেশের শিক্ষার্থীরা। এর মূল কারণ
হচ্ছে ‘তথ্য
গ্যাপ’। কীভাবে নিজেকে
উচ্চশিক্ষার জন্য
যোগ্য করে
তুলতে হবে,
কোন দেশে
সুযোগ রয়েছে—এ ডিসিপ্লিনগুলোয় সে সম্পর্কে আলোচনা
প্রায় অনুপস্থিত। বিশ্বায়নের যুগে বিদেশের
উচ্চ দক্ষতাপূর্ণ এ সুযোগগুলো কাজে
লাগিয়ে চীন
ও ভারতের
অর্থনীতি এবং
জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিকাশ ঘটেছে। এ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক
পিছিয়ে রয়েছে।
ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন: সহযোগী অধ্যাপক, ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ (আইইউবি); নির্বাহী পরিচালক, বায়োমেডিকেল রিসার্চ ফাউন্ডেশন (বিআরএফ), বাংলাদেশ; বিসিএস নাকি বিদেশে উচ্চশিক্ষা? বইয়ের লেখক