আলোকপাত

প্লাস্টিকদূষণ: কারণ, প্রভাব ও প্রতিকার

গতকাল পালিত হলো বিশ্ব পরিবেশ দিবস। আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে, তা নিয়েই আমাদের পরিবেশ। এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার’ বা ইকোসিস্টেম রিস্টোরেশন। বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেম হচ্ছে জৈব, অজৈব পদার্থ ও বিভিন্ন জীব-সমন্বিত এমন প্রাকৃতিক একক, যেখানে বিভিন্ন জীবসমষ্টি পরস্পরের সঙ্গে এবং তাদের পারিপার্শ্বিক জৈব ও অজৈব উপাদানের

গতকাল পালিত হলো বিশ্ব পরিবেশ দিবস। আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে, তা নিয়েই আমাদের পরিবেশ। বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার বা ইকোসিস্টেম রিস্টোরেশন। বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেম হচ্ছে জৈব, অজৈব পদার্থ বিভিন্ন জীব-সমন্বিত এমন প্রাকৃতিক একক, যেখানে বিভিন্ন জীবসমষ্টি পরস্পরের সঙ্গে এবং তাদের পারিপার্শ্বিক জৈব অজৈব উপাদানের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে একটি জীবনধারা গড়ে তোলে। পৃথিবীতে নানা রকম ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্র রয়েছে, যেমন পুকুরের ইকোসিস্টেম, ধানক্ষেতের ইকোসিস্টেম, নদীর ইকোসিস্টেম, সমুদ্রের ইকোসিস্টেম ইত্যাদি। বিজ্ঞান প্রযুক্তির বিকাশের ধারায় মানবসভ্যতার অনেক অগ্রগতি হয়েছে। মানবেতিহাসে শিল্প বিপ্লব সবুজ বিপ্লব প্রকৃতির ওপর মানুষের প্রভাবকে সবচেয়ে বাড়িয়েছে। কিন্তু দুটি বিপ্লবই মানুষের বসবাসের একমাত্র গ্রহ পৃথিবীর পরিবেশ প্রতিবেশকে বিপন্ন করে তুলেছে। জলবায়ু পরিবর্তন পরিবেশ দূষণ পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্বের জন্য দুটি বড় চ্যালেঞ্জ। আজ আমরা আলোচনা করব মানবসৃষ্ট প্লাস্টিকদূষণ নিয়ে, যা পৃথিবীতে নানা রকম বাস্তুতন্ত্রের (ইকোসিস্টেমের) জন্য এক ভয়ংকর বিপদ হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। বিপন্ন করে তুলেছে পৃথিবীতে মানুষ অন্যান্য জীবের অস্তিত্বকে।

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে যা যা ব্যবহার করি, তার অধিকাংশই প্লাস্টিকের তৈরি। প্লাস্টিক হচ্ছে কৃত্রিমভাবে তৈরি পলিমার, যা মূলত জীবাস্ম জ্বালানি বা প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে রাসায়নিক উপায়ে তৈরি করা হয়। প্লাস্টিক সাধারণভাবে সহজেই বাঁকানো যায় (নমনীয়), ক্ষয়রোধী, দীর্ঘস্থায়ী এবং সস্তা। আলেকজান্ডার পার্কস ১৮৫৫ সালে প্রথম মানবসৃষ্ট প্লাস্টিক আবিষ্কার করেন এবং এর নাম দেন পার্কেসিন। এটি তৈরি করা হয়েছিল উদ্ভিদের সেলুলোজ নাইট্রিক অ্যাসিডের মধ্যে বিক্রিয়া করে। তবে ১৯০৭ সালে লিও বেকল্যান্ড সম্পূর্ণ সিনথেটিক প্লাস্টিক আবিষ্কার করেন এবং এর নাম দেন বেকেলাইট। তিনিই প্রথম প্লাস্টিক শব্দটি ব্যবহার করেন।  এছাড়া যে দুজন বিজ্ঞানী প্লাস্টিক উৎপাদনে অনন্য অবদান রাখেন, তারা হলেন নোবেলজয়ী হারমেন স্টাওডিংগার (পলিমার রসায়নের জনক) এবং হারমেন মার্ক (পলিমার পদার্থবিদ্যার জনক) ডুপনট করপোরেশন কর্তৃক উদ্ভাবিত নাইলন ছিল বাণিজ্যিকভাবে সফল সিনথেটিক থার্মোপ্লাস্টিক পলিমার। ক্রমে অ্যাক্রাইলিক, পলিস্টাইরিন, পলিভিনাইল ক্লোরাইড, সিনথেটিক রাবার, পলিইথিলিন (পলিথিন) ইত্যাদি প্লাস্টিকের আবিষ্কারের ফলে জীবনের সব স্তরে প্রয়োজনীয় প্রায় সব দ্রব্য দ্রব্যাদির অংশবিশেষ প্লাস্টিক দ্বারা তৈরি হচ্ছে। প্রাকৃতিক ধাতব, প্রাণিজ উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে তৈরি যেকোনো দ্রব্যের চেয়ে প্লাস্টিক সস্তা, ব্যবহারবান্ধব এবং দীর্ঘস্থায়ী। ফলে বিদ্যুত্গতিতে প্লাস্টিকের ব্যবহার বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং অবচেতন মনেই আমরা জল, স্থল অন্তরীক্ষের সবকিছুকে প্লাস্টিকদূষণে দূষিত করে ফেলেছি। প্লাস্টিকদূষণ আজ মানুষসহ অন্য সব জীবের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলছে।

পরিবেশে পচনরোধী প্লাস্টিকজাতীয় দ্রব্য, উপজাত, কণিকা বা প্লাস্টিকের দ্রব্য নিঃসরিত অণুর সংযোজন; যা মাটি, পানি, বায়ুমণ্ডল, বন্যপ্রাণী, জীববৈচিত্র্য মানবস্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে, তাকে সাধারণভাবে প্লাস্টিকদূষণ বলা হয়। গত ৫০ বছরে পৃথিবীতে মাথাপিছু এক টনের বেশি প্লাস্টিকের দ্রব্য উৎপাদন করা হয়েছে। এসব পচনরোধী প্লাস্টিক বর্জ্যের শতকরা ১০ ভাগ পুড়িয়ে ধ্বংস করা হলেও বাকি ৯০ শতাংশের বেশি বিশ্ব পরিবেশকে নানাভাবে বিপন্ন করে তুলেছে। এসব ক্ষতিকর পচনরোধী বর্জ্য পরিবেশে ৪০০ থেকে হাজার বছর পর্যন্ত থাকতে পারে এবং নানা রকম মাইক্রো বা ন্যানো কণা বা ক্ষতিকর পদার্থ নিঃসরণ করে প্রতিবেশে মানবস্বাস্থ্যে ভয়ংকর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পৃথিবীতে প্রতি বছর ৪৫ কোটি টনের বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশে যোগ হচ্ছে। বর্জ্যের ৫১ শতাংশ উৎপাদন হচ্ছে এশিয়া মহাদেশে। প্লাস্টিকদূষণ বিশ্বের সব দেশে এবং সব পরিবেশে এমনকি মাউন্ট এভারেস্টের চূড়া, গভীর সমুদ্রের তলদেশ এবং মেরু অঞ্চলেও বিস্তৃত।

পরিবেশে অপচনশীল নানা রকম প্লাস্টিক বর্জ্যের সঙ্গে অতিবেগুনি রশ্মি এবং পরিবেশের অন্যান্য উপাদানের মিথস্ক্রিয়ার ফলে মাইক্রো ন্যানো প্লাস্টিকের কণা এবং নানা রকম ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ, যেমন বিসফেনল- পরিবেশে নির্গত হয়। এসব মাইক্রো ন্যানো কণা এবং নিঃসৃত ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মানুষ অন্যান্য জীবের হরমোনাল সিস্টেম নষ্ট করতে পারে। ফলে প্লাস্টিকদূষণ মানুষ অন্যান্য জীবের প্রজননক্ষমতা নষ্ট করে এবং স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রান্ত করে নানা রকম দুরারোগ্য ব্যাধি সৃষ্টি করে। এছাড়া এসব প্লাস্টিক ন্যানো কণা এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মানুষ অন্যান্য জীবের কোষাভ্যন্তরে অবস্থিত ডিএনএ আরএনএ অণুর মধ্যে পরিবর্তন করে ক্যান্সার বা স্নায়ুতন্ত্র বিকল করতে পারে। তবে একক ব্যবহার পলিথিন ব্যাগ প্লাস্টিক বর্জ্যের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক। কারণ এদের যত্রতত্র ব্যবহার এবং ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনার ফলে নিষ্কাশন নালা, খাল নদীর প্রবাহ বিনষ্ট হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। আক্রান্ত হচ্ছে জলজ প্রাণী এবং উদ্ভিদের শিকড়ের বিস্তার। এছাড়া এসব পলিথিন বর্জ্যের সর্বশেষ গন্তব্যস্থল হচ্ছে সমুদ্র। প্লাস্টিক বর্জ্য কর্তৃক সামুদ্রিক প্রতিবেশ বিপন্ন হচ্ছে। ফলে মত্স্য, তিমি এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যু সামগ্রিকভাবে সামুদ্রিক প্রতিবেশকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আমাদের পানীয় জলের শতকরা ৮০ ভাগ পানি মাইক্রো ন্যানো প্লাস্টিকের কণা দ্বারা দূষিত। এসব অদৃশ্য প্লাস্টিকের কণা হরমোনাল সিস্টেমের প্রভাবকারী প্লাস্টিক নিঃসৃত বিষাক্ত দ্রব্যাদি খাদ্যচক্রের মাধ্যমে মানবস্বাস্থ্যকে আরো ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। প্লাস্টিক বর্জ্য নিঃসৃত বিষাক্ত পদার্থ মাটি, পানি বায়ুমণ্ডলকে বিষাক্ত করে চলছে। প্লাস্টিক বর্জ্য  পোড়ানোর ফলে ২০১৯ সালে বায়ুমণ্ডলে দশমিক কোটি টন কার্বন ডাই-অক্সাইড যোগ হয়েছে। এক হিসাবে দেখা যাচ্ছে বিশ্বের উষ্ণায়নের ১০-১৩ শতাংশ অবদান হচ্ছে প্লাস্টিক বর্জ্য পোড়ানোর মাধ্যমে। পৃথিবীতে পর্যন্ত প্রায় ৩০ কোটি টন প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হয়েছে। তার মধ্যে ৭৯ শতাংশ নানাভাবে পরিবেশে জমা হয়ে মানবস্বাস্থ্যসহ প্রকৃতির অন্যান্য জীবের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলেছে। পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় ৩৮১ কোটি টন প্লাস্টিক প্লাস্টিকজাত দ্রব্য উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ হচ্ছে একবার ব্যবহারযোগ্য (সিঙ্গেল ইউজ) শুধু শতকরা ভাগ পুনর্ব্যবহার করা হয়। বর্তমান ধারা চলতে থাকলে ২০৩১ সাল নাগাদ পৃথিবীতে প্লাস্টিকের দ্রব্য উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ হবে। প্লাস্টিকদূষণের ফলে প্রতি বছর ১০ লাখ সামুদ্রিক পাখি এবং লাখ সামুদ্রিক প্রাণী মৃত্যুবরণ করে। প্লাস্টিকদূষণের সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছে সামুদ্রিক প্রতিবেশ। বিজ্ঞানীরা হিসাব করে দেখেছেন, বর্তমানে সমুদ্রে দশমিক ২৫ ট্রিলিয়ন মাইক্রো ম্যাক্রো প্লাস্টিকের কণা জমা হয়েছে। প্রতি বর্গমাইল সমুদ্রে ৪৬ হাজার টুকরা/কণা প্লাস্টিক জমা হয়েছে। সমুদ্রে জমাকৃত প্লাস্টিকের মোট ওজন লাখ ৬৯ হাজার টন। প্রতিদিন ৮০ লাখ টুকরা প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে পতিত হচ্ছে। এভাবে জমতে জমতে বড় বড় মহাসাগরে প্লাস্টিক বর্জ্য জমাকৃত এলাকা (প্যাচ) তৈরি হয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রশান্ত মহাসাগরে বর্তমানে প্লাস্টিক বর্জ্যের প্যাচের আয়তন প্রায় ১৬ লাখ বর্গকিলোমিটার। অনুরূপ প্লাস্টিক বর্জ্য জমাকৃত এলাকা অন্যান্য মহাসাগর এবং সাগরেও সৃষ্টি হয়েছে। শুধু সমুদ্রের তলদেশ নয়, সমুদ্রের পানির উপরিস্তরের প্রায় শতকরা ৮৮ ভাগ কম-বেশি প্লাস্টিকদূষণে দূষিত। প্লাস্টিক বর্জ্যের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক দূষণ সৃষ্টি করছে প্লাস্টিক ব্যাগ বা পলিথিন ব্যাগ। প্রতি মিনিটে ১০ লাখ প্লাস্টিক ব্যাগ আমরা ব্যবহারের পর ফেলে দিচ্ছি। সারা পৃথিবীতে প্রতি বছর প্লাস্টিক ব্যাগ বর্জ্য ৫০ হাজার কোটি। প্রতি বছর ৮৩০ কোটি প্লাস্টিক ব্যাগ প্লাস্টিকের টুকরা আমরা অসচেতনভাবে সমুদ্রসৈকতে ফেলে আসছি। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, ২০২৫ সালে সমুদ্রে মাছের সংখ্যার  চেয়ে প্লাস্টিকের দ্রব্য কণার সংখ্যা বেশি হবে। বর্তমানে সমুদ্র থেকে আহরিত প্রতি তিনটি মাছের মধ্যে ১টি মাছের পেটে প্লাস্টিকের দ্রব্য পাওয়া যাচ্ছে। প্লাস্টিকের দ্রব্যের মধ্যে মাইক্রোবিডস থাকে, যা সহজেই পরিবেশ দূষণ করতে পারে। এসব মাইক্রোবিডস জনস্বাস্থ্য পরিবেশের অন্যান্য জীবের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। প্লাস্টিক বর্জ্য পোড়ানোর ফলে অদৃশ্য মাইক্রো প্লাস্টিকের কণা ভয়ংকরভাবে বায়ুদূষণ ঘটায়, যা নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের সঙ্গে আমাদের ফুসফুসে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন এবং দূষণে চীন পৃথিবীর সর্বোচ্চে।

বাংলাদেশে প্রতিদিন আট লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়, তার মধ্যে শতকরা ৩৬ ভাগ পুনর্চক্রায়ণ, ৩৯ ভাগ ভূমি ভরাট এবং বাকি ২৫ ভাগ সরাসরি পরিবেশে দূষক হিসেবে যোগ হচ্ছে। প্লাস্টিকের দ্রব্যাদি মূলত জীবাস্ম জ্বালানি (পেট্রোলিয়াম অয়েল) থেকে পলিমার হিসেবে তৈরি করা হয়। তবে প্রস্তুতকালে নানা রকম সংযোজনকারী জৈব যৌগ যোগ করা হয়। পরিবেশে প্লাস্টিক বর্জ্য নানা রকম মারাত্মক বিপজ্জনক জৈব যৌগ নিঃসরণ করে। তার মধ্যে বিসফেনল-, ফথেলেটস, বিসফেনোন, অর্গানোটিনস, পার- এবং পলি ফ্লোরোঅ্যালকাইল পদার্থ এবং ব্রোমিনেটেড ফেইম রিটারডেন্টস উল্লেখযোগ্য। এসব রাসায়নিক পদার্থ মানুষসহ অন্যান্য জীবের হরমোনাল সিস্টেম নষ্ট করে শুক্রাণু ডিম্বাণু উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। এছাড়া প্লাস্টিক বর্জ্য নিঃসৃত এসব রাসায়নিক পদার্থ স্নায়ুতন্ত্র এবং মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে নানা রকম রোগ সৃষ্টি করতে পারে। ন্যানো প্লাস্টিক বর্জ্য এবং প্লাস্টিক বর্জ্য নিঃসৃত রাসায়নিক পদার্থ জীবের শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন করতে পারে এবং ক্যান্সারসহ নানা রকম দুরারোগ্য ব্যাধির কারণ হতে পারে।

ঢাকা শহরে প্রতিদিন গড়ে ৬৪৬ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। আমাদের প্রিয় শহরে আমরা কোটি ৪০ লাখ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে অবচেতন মনে অন্যান্য বর্জ্যের সঙ্গে ফেলে দিচ্ছি। একশর বেশি ফ্যাক্টরিতে এসব পলিথিন ব্যাগ তৈরি হয়। পলিথিন ব্যাগের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে জলাবদ্ধতাসহ ঢাকা শহর কতটা বাসযোগ্যহীন এবং আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে, তা সবার জানা। পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করে দেশে আইন হয়েছে এক দশকের বেশি আগে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আইনের প্রয়োগের অভাব। পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়ার পর গত এক দশকে ঢাকা শহরে পলিথিনের উৎপাদন ব্যবহার বেড়েছে তিন গুণ। কী সাংঘাতিক পরিসংখ্যান! অর্থনৈতিক সামাজিক নানা সূচকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, অথচ নিজ শহরে ভয়াবহ প্লাস্টিকদূষণে নিজেরা প্রতিদিনই অবদান রাখছি। শুধু কি আইনের প্রয়োগের অভাব বলেই আমরা প্রিয় শহর ঢাকাকে বিশ্বখ্যাত বর্জ্যের শহরে পরিণত করব? নাগরিক হিসেবে আমাদের কি কোনো করণীয় নেই। নিশ্চয়ই আছে। আসুন, আমাদের করণীয় নিয়ে কিছু আলোকপাত করি। প্রতিদিনের বাজারে এবং কেনাকাটায় আমারা কি সহজে পচনশীল পাট কাপড়ের তৈরি মোড়ক ব্যবহার শুরু করতে পারি নাপাতলা পলিথিনের পরিবর্তে বারবার ব্যবহারযোগ্য কাপড়, পাট কিংবা শক্ত প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করে আমরা কি একক ব্যবহার পাতলা পলিথিনকে বিদায় জানাতে পারি না? লন্ড্রিতে সম্পূর্ণভাবে পলিথিনের ব্যাগ বন্ধ করে বারবার ব্যবহারযোগ্য কাপড়ের ব্যাগ চালু করা কি খুবই কঠিন? দুধ পানীয়জাত দ্রব্যের প্লাস্টিকে বাজারজাত করা বন্ধ করে কাঁচের বোতল ব্যবহার কি বাধ্যতামূলক করা যাবে না? সব রকম পলিথিন প্লাস্টিক বর্জ্য আলাদাভাবে প্রতিটি বাসা থেকে সংগ্রহের উন্নত বিশ্বের প্রচলিত কৌশল কি সিটি করপোরেশন আশু শুরু করতে পারে না? আলাদাভাবে প্লাস্টিক বর্জ্য প্রতিটি ঘর থেকে সংগ্রহ করতে পারলে তা পুনর্চক্রায়ণ করে নতুন উৎপাদন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে নাগরিক সমাজ, সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্লাস্টিকের দ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে একযোগে কাজ করতে হবে। ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট এবং অন্যান্য গণ সামাজিক মাধ্যমে প্লাস্টিকদূষণের কারণ, ক্ষতিকর দিক পরিত্রাণের উপায় নিয়ে ব্যাপক প্রচার করে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা আশু প্রয়োজন নয় কি?

পাটকে বাংলাদেশের সোনালি আঁশ নামে অভিহিত করা হতো। এটি এক বিশ্বময়কর প্রাকৃতিক আঁশ, যা ১০০-১২০ দিনে পাট গাছের কাণ্ডে তৈরি হয়। একসময় দেশের রফতানি আয়ের সিংহভাগ আসত পাট পাটজাত দ্রব্য থেকে। কিন্তু প্লাস্টিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের এক মহাবিস্ফোরণ, ভূরাজনীতিতে আমাদের অদক্ষতা এবং গবেষণার মাধ্যমে ব্যবহারবান্ধব পাটজাত দ্রব্য উৎপাদনে আমাদের দুর্বলতায় সোনালি আঁশের গৌরব হারিয়েছি। পাটের সুতা মূলত সেলুলোজ, লিগনিন হেমিসেলুলোজ দ্বারা গঠিত। সেজন্য পাটজাত দ্রব্যের বর্জ্য সহজে পরিবেশে পচে মৃত্তিকার উর্বরা শক্তি বাড়ায়। কোনো ক্ষতিকর প্রভাব নেই। বাংলাদেশে পাটের হারানো গৌরব ফেরত আনার জন্য বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো . মোবারক আহমেদ খান পাট দিয়ে পলিথিনের আনুরূপ ব্যাগ তৈরি করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিলেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী তার আবিষ্কৃত ব্যাগের নাম দিয়েছিলেন সোনালি ব্যাগ পাঁচ-ছয় বছর ধরে . মোবারকের আবিষ্কৃত প্রযুক্তি আমরা নানা গণ সামাজিক মাধ্যমে শুনে আপ্লুত হচ্ছি, অথচ ব্যবহারিক ক্ষেত্রে প্রযুক্তির কোনো অস্তিত্ব নেই! কেন আমরা দীর্ঘকাল ধরে সোনালি ব্যাগের বাণিজ্যিক ব্যবহার করতে পারলাম না? পলিথিন ব্যাগের চেয়ে দামে কিছুটা বেশি হলেও নিজস্ব প্রাকৃতিক পাট থেকে তৈরি এবং স্বাস্থ্য পরিবেশসম্মত ব্যাগ বাণিজ্যিকীকরণ করে নিজের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানির মাধ্যমে পাটের সোনালি অতীত ফিরিয়ে আনতে কেন বিলম্ব করছি, তা আমার বোধগম্য নয়। উচ্চমানসম্পন্ন জীবন, পরিবেশ সুরক্ষা এবং মানবস্বাস্থ্যে প্লাস্টিকের কুফল থেকে বাঁচার অনন্য নিজস্ব প্রযুক্তি আমাদের জাতীয় অহংকার হিসেবে আবির্ভূত হোক। একসময়ের অত্যন্ত দামি ঢাকাই মসলিনের ন্যায় সোনালি ব্যাগ আমাদের মানচিত্র পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ুক। সেজন্য সরকার শিল্পোদ্যোক্তাদের একসঙ্গে কাজ করা আশু প্রয়োজন। জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতির বিশ্বে আমাদের নিজস্ব প্রযুক্তির বিশ্ববাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে সোনালি ব্যাগ হোক এক শুভসূচনা।  আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাট রফতানির টাকা পূর্ব পাকিস্তানে ব্যবহার না করে পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার একটা বড় যৌক্তিক কারণ ছিল। যদিও বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিকদূষণ নিয়ে ব্যাপক গবেষণায় এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অনেক জ্ঞান অর্জিত হয়েছে। উন্নত দেশগুলোয় সেজন্য প্লাস্টিকদূষণ রোধে নানা আইন নীতিমালা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে প্লাস্টিকদূষণ সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য মৌলিক  গবেষণা নেই বললেই চলে।

আমাদের নদীমাতৃক কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিবেশ অঞ্চলে (ইকোসিস্টেমে) মাইক্রো প্লাস্টিক, ন্যানো প্লাস্টিক প্লাস্টিক বর্জ্য নিঃসৃত জীবের হরমোন এবং স্নায়ুতন্ত্র নষ্টকারী মারাত্মক ক্ষতিকর জৈব যৌগের পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য গবেষণা আশু প্রয়োজন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষেণায় বিশ্বে চ্যাম্পিয়ন দেশ। সীমিত সম্পদ ব্যবহার করে ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনের দ্বারপ্রান্তে। মাইক্রো, ন্যানো প্লাস্টিক বর্জ্য নিঃসৃত মারাত্মক ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ফসল উৎপাদন, হাঁস-মুরগি, ডিম মত্স্য উৎপাদনে কতটা প্রভাব ফেলছে, বিষয়ে আমাদের ধারণা অস্পষ্ট। এমনকি আমরা যেসব কৃষিজাত খাবার খাচ্ছি, তার মধ্যে প্লাস্টিক ন্যানো কণা প্লাস্টিক বর্জ্য নিঃসৃত ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের কোনো উপস্থিতি আছে কিনা, তা আমাদের জানা নেই। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিষয়ে সমন্বিত গবেষণা আশু প্রয়োজন। কারণ উন্নত বিশ্বের প্রতিটি দেশের ইকোসিস্টেমে মাইক্রো ন্যানো প্লাস্টিক এবং প্লাস্টিক নিঃসৃত জীবের হরমোন সিস্টেম নষ্টকারী রাসায়নিক পদার্থের পরিমাণ নিয়মিত মনিটরিং করা হয়। পরিশেষে বলতে চাই, প্লাস্টিকদূষণ আমাদের স্বাস্থ্য, প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, উন্নত জীবনযাপন এবং নিরাপদ খাদ্যের জন্য এক বিরাট হুমকি। সময়োপযোগী আইন তৈরি, আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং প্লাস্টিকদূষণের ক্ষতিকর দিক করণীয় নিয়ে সমাজের সব স্তরে সচেতনতা সৃষ্টি একান্ত প্রয়োজন। বাংলাদেশের সোনালি আঁশের মাধ্যমে তৈরি সোনালি ব্যাগসহ প্লাস্টিকের বিকল্প অন্যান্য পাটজাত দ্রব্য ব্যবহারে জনগণের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত করার জন্য সরকার, নাগরিক সমাজ গণমাধ্যমকে একযোগে কাজ করতে হবে। দেশের সুনীল অর্থনীতির প্রাকৃতিক সম্পদ বঙ্গোপসাগর আজ প্লাস্টিকদূষণে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত। ভারত নেপাল থেকে উৎসারিত অর্ধশতাধিক নদী দেশের বুক চিরে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। এসব নদী উজানের দেশগুলো এবং বাংলাদেশের প্লাস্টিক বর্জ্য বহন করে নিয়ত আমাদের সুনীল অর্থনীতির প্রাকৃতিক সম্পদ বঙ্গোপসাগরকে বিপন্ন করে তুলছে। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আঞ্চলিক উদ্যোগ জরুরি। দেশে প্লাস্টিকদূষণের মাত্রা প্রকৃতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানলাভ এবং দূষিত প্রতিবেশকে পুনরুদ্ধারের জন্য জাতীয়ভাবে আন্তঃবিভাগীয় সমন্বিত গবেষণা প্রয়োজন।       

করোনাকালে অনলাইন শপিং অনলাইন ফুড ডেলিভারিতে ব্যবহূত নানা রকম প্লাস্টিকের মোড়ক, ওয়ানটাইম/ডিম্পোজিবল চামচ, গ্লাস ইত্যাদি প্লাস্টিকদূষণের গতিতে নতুন মাত্রা যোগ করছে। প্লাস্টিকদূষণ রোধে প্রাকৃতিক পলিমারের মাধ্যমে বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক তৈরির প্রযুক্তি আবিষ্কার হয়েছে। প্লাস্টিক বর্জ্য সচেতনভাবে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে বাণিজ্যিক পুনর্চক্রায়ণ, প্লাস্টিকের বিকল্প পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার, একক ব্যবহার পলিথিন ব্যবহারের পরিবর্তে কাপড়ের, কাগজের কিংবা বহুবার ব্যবহারযোগ্য ব্যাগের ব্যবহার এবং প্লাস্টিকদূষণ সম্পর্কে স্কুলের পাঠ্যসূচিতে তথ্য সংযোজনের মাধ্যমে সচেতন নাগরিক তৈরি কার্যকরী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত।

প্লাস্টিকদূষণ বিশ্বব্যাপী এক জটিল সমস্যা; যা পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, অর্থনীতি মানবস্বাস্থ্যের জন্য এক বিরাট হুমকি। পরিবেশকে বিপন্নকারী পৃথিবীর শতকরা ৫১ ভাগ প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হচ্ছে শুধু এশিয়া মহাদেশের দেশগুলোয়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশে যোগ হচ্ছে, যা সব ধরনের বর্জ্যের শতকরা ভাগ। বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি এশিয়ান বিজ্ঞান একাডেমিগুলোর দুদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে প্লাস্টিকদূষণ মোকাবেলায় যেসব সুপারিশ গৃহীত হয় তা হচ্ছে: ) বিশ্বব্যাপী আঞ্চলিক পর্যায়ে প্লাস্টিকদূষণ ব্যবস্থাপনা প্রণীত আইন নীতিমালাকে হালনাগাদ করতে হবে; ) বাংলাদেশে প্লাস্টিকদূষণ ব্যবস্থাপনায় প্রণীত আইনের কঠোর বাস্তবায়ন করতে হবে; ) পরিবেশ সুরক্ষা নীতি প্লাস্টিকদূষণ নীতিমালাকে সমন্বয় করে আধুনিক জ্ঞানের ভিত্তিতে তা হালনাগাদ করতে হবে; ) প্লাস্টিকের দ্রব্যকে বারবার ব্যবহার পুনর্চক্রায়ণকে (রিসাইক্লিং) উৎসাহিত করতে হবে; ) যদিও আমাদের জীবনে প্লাস্টিকের দ্রব্যের ভূমিকা স্বীকার্য, তবে তা ব্যবহারে সতর্কতা এবং পরিমিতি আবশ্যক; ) পরিবেশে সহজে পচনশীল (বায়োডিগ্রেডেবল) প্লাস্টিকের ব্যবহারকে উৎসাহিতকরণ এবং পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগ অন্যান্য পাটজাত দ্রব্যকে প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহারে প্রণোদনা প্রদান করতে হবে; ) বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করে পলিথিন প্লাস্টিকের অন্যান্য দ্রব্যের ব্যবহার সীমিতকরণ এবং পরিবেশ মানবস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া নিম্নোক্ত সুপারিশমালা জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্যও আহ্বান জানানো হয়:

) দেশে বর্তমানে ৫৫ মাইক্রন পুরুত্বের পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের আইন রয়েছে, তবে বাস্তবায়ন নেই। সেজন্য জরুরি ভিত্তিতে পরিবেশ সুরক্ষা পুলিশ ফোর্স গঠন করে পলিথিনের উৎপাদন, বিপণন ব্যবহারে প্রণীত আইনের কঠোর বাস্তবায়ন সময়ের দাবি; ) পূর্ণবয়স্ক মানুষের অভ্যাসের পরিবর্তন করা দুরূহ। কিন্তু শিশুদের জ্ঞানের পরিবর্তনের জন্য পাঠ্যপুস্তকে প্লাস্টিকদূষণের ভয়াবহতা এবং এর বিকল্প পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহারের সুবিধাগুলো শিক্ষা দিয়ে জাতিকে পরিবেশসচেতন ভবিষ্যৎ নাগারিক উপহার দিতে হবে; ) ১৪-১৫ মিলিয়ন পলিথিন ব্যাগ প্রতিদিন ঢাকায় জলাবদ্ধতার মূল কারণ। পাটের সেলুলোজ দিয়ে সোনালি ব্যাগ তৈরি, যা সহজে কম্পোস্টে পরিণত হয়ে মৃত্তিকায় কার্বনের পরিমাণ বাড়ায়। সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে পাটের তৈরি বিকল্প সোনালি ব্যাগ উৎপাদনে জরুরি উদ্যোগ গ্রহণ। সোনালি আঁশের প্রডাক্টে সাবসিডি দিতে হবে; বিকল্প পাট/চাহিদা মেটানোর জন্য পাট উৎপাদন বাড়াতে হবে। বারোমাসি পাটের জাত আবিষ্কার করতে হবে। গবেষণার মাধ্যমে জৈবিক রোগ দমন এবং উৎপাদন বাড়াতে হবে। লবণাক্ততা সহনশীল পাটের জাত তৈরি করে উপকূলীয় এলাকায়ও পাট উৎপাদন করতে হবে; ) বাংলাদেশ টেলিভিশন, অন্যান্য স্যাটেলাইট টিভি, গণমাধ্যম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্লাস্টিকদূষণ সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি এবং পরিবেশসম্মত পাটজাত সোনালি ব্যাগ এবং অন্যান্য দ্রব্য ব্যবহারে উৎসাহিত করা। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দূষণমুক্ত প্রাকৃতিক সম্পদ উপহার দেয়ার লক্ষ্যে এবং একবিংশ শতাব্দীতে ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি অর্থনীতিকভাবে উন্নত সোনার বাংলা রূপায়ণে প্লাস্টিকদূষণ মোকাবেলায় জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের এখনই সময়।

 

. তোফাজ্জল ইসলাম: ফেলো, বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি

অধ্যাপক, ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইবিজিই), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

আরও