আলোকপাত

ড. আকবর আলি খান ছিলেন নিষ্ঠাবান ব্যক্তি

ড. আকবর আলি খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন ইতিহাস, কানাডার কুইন্স ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতি। পিএইচডি গবেষণাও অর্থনীতিতে। আমলা হিসেবে পেশাজীবনের প্রধান ধারার (সরকারের সচিব, এনবিআরের চেয়ারম্যান, অর্থ সচিব) পাশাপাশি ছিলেন শিক্ষকতায়ও। অবসর নেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে। ২০০২-০৫ সালে তিনি বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি

. আকবর আলি খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন ইতিহাস, কানাডার কুইন্স ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতি। পিএইচডি গবেষণাও অর্থনীতিতে। আমলা হিসেবে পেশাজীবনের প্রধান ধারার (সরকারের সচিব, এনবিআরের চেয়ারম্যান, অর্থ সচিব) পাশাপাশি ছিলেন শিক্ষকতায়ও। অবসর নেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে। ২০০২-০৫ সালে তিনি বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে বিকল্প কার্যনির্বাহী পরিচালক (অল্টারনেটিভ এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর) ছিলেন। দেশে ফিরে দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত শিক্ষকতা করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হয়েছিলেন, দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতার মুখে করেন পদত্যাগ। অবসরের পর তার আবির্ভাব ঘটে পূর্ণকালীন লেখক এবং মিডিয়া সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে দেশের আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক-প্রশাসনিক বিষয়ে বিশ্লেষক হিসেবে। অর্থনীতি, ইতিহাস, সমাজবিদ্যা, সাহিত্যবিচিত্র বিষয়ে বিশেষ রীতিতে রচিত তার গবেষণাশ্রয়ী পর্যালোচনামূলক বই পাঠকের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। তার লেখায় বিচার-বিশ্লেষণ অভিজ্ঞান উৎসারিত মহাজন বাক্য-বক্তব্য যেমন মেলে তেমনি অন্নদা শঙ্কর রায়ের রচনাশৈলীর সাক্ষাৎ পাই। ইতিহাসধর্মী রচনায় গবেষণার, অর্থনীতিবিষয়ক রচনায় অভিজ্ঞতালব্ধ তথ্য-উপাত্তের উপান্তে উপসংহার, সমাজ রাজনীতি প্রশাসনবিষয়ক রচনায় তির্যক সমালোচনা দৃঢ়চিত্ত অবস্থান গ্রহণ এবং আত্মজৈবনিক রচনায় সময় সমাজের গতিপ্রকৃতির নির্মোহ উপস্থাপনা প্রধান উপজীব্য হিসেবে কাজ করে চলেছে।

আকবর আলি খান প্রথমা প্রকাশিত পুরানো সেই দিনের কথায় তার পারিবারিক পরিচয় তুলে ধরেছেন। অনেক অজানা তথ্য সেখানে আছে যেটাতে আমরা সমকালীন আর্থসামাজিক পরিবেশ প্রেক্ষাপটের পরিচয় পাই। তিনি অসম্ভব পড়ুয়া ছিলেন। পাঠকজীবনে অর্জিত-অধিত অভিজ্ঞতা তার লেখক জীবনকে ঋদ্ধ করেছে, চানক্য, খনা, বীরবল, মোল্লা দোপিঁয়াজা, মোল্লা নাসির উদ্দীন হোজ্জার বুদ্ধিমত্তা তার রচনায় উঠে আসে বারবার। দৃঢ়চিত্ত মনোভাব কর্মজীবনে এবং পরবর্তী কর্মমুখর বিশ্লেষক হিসেবে ব্যাখ্যায় তাকে আত্মস্থ হতে দেখি। ১৯৭২ সালে তাকে রাজাকারদের সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হলে তিনি যথাযুক্তি দিয়ে তার বক্তব্য/মতামত উপস্থাপন করেছিলেন, যা সমকালীন পরিবেশে ছিল বড় স্পষ্টীকরণ সাহসী সংকেত। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন একই বলিষ্ঠতার সঙ্গে। বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রচুর খাদ্য অপচয়-অপব্যবহারের প্রতিবাদে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতির জীবনে বৈষম্য আচরণবিমুখ বিভিন্ন পদক্ষেপ-কর্মকাণ্ডে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। এমনকি মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহায়তা-সমর্থনের যুক্তিতে ভারতের প্রতি স্বাধীন বাংলাদেশের বেশি নির্ভরশীল না হওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ রেখেছিলেন।

তিনি ইতিহাসের ছাত্র ছিলেন, অধ্যাপনাও করেছেন। গবেষণার প্রতি তার বিশেষ আগ্রহ ছিল। বাংলার দাসপ্রথা কিংবা জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন আবিষ্কারের কাহিনীকে আশ্রয় করে তিনি বিশেষ গবেষণায় হাত দিয়েছিলেন। আমি যখন ইআরডিতে, ওয়াশিংটন থেকে তিনি আমার কাছে বাংলার দাসপ্রথা, আঞ্চলিক অর্থায়ন অবস্থা-ব্যবস্থা সম্পর্কে তথ্য-বিশ্লেষণ জানতে চেয়েছিলেন। দাপ্তরিক দায়িত্বে তার সঙ্গে অর্থ বিভাগে সরাসরি কাজ করেছি। কিন্তু তার আগে পরে লেখালেখি, গবেষণা অনুসন্ধান বিষয়ে আমাদের যোগাযোগ-সংশ্লিষ্টতা ছিল বেশি। এশিয়াটিক সোসাইটিতে তিনি নানা অবয়বে যুক্ত সংশ্লিষ্ট সহায়কের ভূমিকায় ছিলেন। সেখানে তিনি তার প্রয়াত স্ত্রীর নামে একটি ট্রাস্ট ফান্ড প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আমি ওই ট্রাস্ট ফান্ড ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ছিলাম। ট্রাস্ট ফান্ডের প্রথম বক্তৃতা দেয়ার জন্য তিনি তার স্ত্রীর সম্মানীয় এক শিক্ষককে মনোনীত করেছিলেন। সোসাইটি থেকে ওই বক্তা সম্পর্কে কিছু সীমাবদ্ধতার মনোভাব প্রকাশ করা হলে তিনি কঠোর অবস্থান নেন এবং প্রত্যাশা করেন সোসাইটি মুক্তবুদ্ধি জ্ঞান গবেষণার প্রতিষ্ঠান হিসেবে দল-মত নির্বিশেষে পাণ্ডিত্যকে-গবেষণা পারঙ্গমতাকে সম্মান প্রদর্শন করা উচিত। স্যারের অটল অবস্থানের কারণে সোসাইটি থেকে শেষ পর্যন্ত সেই সম্মানিত অধ্যাপক মহোদয়ই প্রথম বক্তৃতা দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বক্তৃতার সময় স্যার সোসাইটির সম্মতিতে যাকে বক্তা নির্বাচন করা হয় সেখানে বক্তা যে বিষয়ে বক্তৃতা দিয়েছিলেন তার সঙ্গে সব বিষয়ে একমত হতে পারেননি বিধায় সভাতেই তিনি তার ভিন্নমত দৃঢ়তার সঙ্গে তুলে ধরেছিলেন।

অর্থনীতিবিদ হিসেবে রসাত্মক অথচ বাস্তব উদাহরণ সহকারে বুদ্ধিজীবী সাধারণের বোধগম্যকরণে রসাশ্রিত বাক্ প্রতিমার আশ্রয় নেন। তার লেখা পাঠ করলে বোঝা যায় প্রবুদ্ধ আলোচনায় ছিলেন তিনি নিবেদিত নিষ্ঠাবান। . আকবর আলি খানের সঙ্গে আয়কর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (স্যার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন) নিয়ে আলোচনা সভায় যোগ দিয়েছি, ভিন্ন মতামত পেশ করেছি। তিনি সব সময় আমাকে অত্যন্ত স্নেহের দৃষ্টিতে দেখতেন বলেই কখনো কোনো ভুল বা বিব্রতকর কিছু বললে বা চাইলে তিনি ইন্টারভেন (দ্বিমত)- শুধু করতেন না পথ-পন্থা বাতলানোর ব্যাপারেও ছিলেন সোচ্চার। তাকে আমি অনুসরণের চেষ্টা করি তার উপলব্ধি সত্য ভাষণের কারণে—‘যদি কোনো বিষয়ে আমার নিজের কোনো বক্তব্য না থাকে, তাহলে সেটি নিয়ে আমি লিখি না। আমার প্রতিটি বই- আমার নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা। আমার নিজস্ব বক্তব্যটি কারো কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে, না- হতে পারে। কিন্তু সেটি পাঠককে আকর্ষণ করে। যেমন ধরুন, আমি তো বাংলা সাহিত্যে বিশেষজ্ঞ নই। কিন্তু চাবিকাঠির খোঁজে: নতুন আলোকে জীবনানন্দের বনলতা সেন বইটা কারণেই জনগণের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করেছে যে আমি নতুন একটি দৃষ্টিকোণ থেকে জীবনানন্দ দাশকে দেখার চেষ্টা করেছি।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় পরিবর্তন আনতে পারলে বাংলাদেশের প্রশাসনেও বড় পরিবর্তন আসবে বলে তিনি মনে করতেন। তার অভিমত, সব দেশেই নাগরিক সমাজের ভূমিকা থাকে, কিন্তু তারা কখনো দেশ শাসন করবে না। তাদের যদি রাজনীতিকদের বিকল্প বা দেশ শাসনে সমর্থ ভাবা হয়, তারা আর নাগরিক সমাজ থাকে না। তারাও রাজনীতিবিদ হয়ে যায়। নাগরিক সমাজের অনেকে রাজনৈতিক চাপের কারণে কথা বলতে পারেন না। আবার রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতায় অনেকে কথা বলেন। যারা শুধু সংগঠন করেন, তারাই নাগরিক সমাজ নন; শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, আইনজীবীসব পেশার মানুষই এর অংশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে আমরা শিক্ষকদের মধ্যে দলাদলি দেখেছি; কিন্তু জনস্বার্থ বিষয়ে শিক্ষক সমিতি সব সময় ঐকমত্য থাকত। আইনজীবীদের মধ্যেও তেমনটা ছিল, এখন আসলে তারা ভাগ হয়ে গেছেন। এখন একটা পেশাও পাবেন না, যেখানে পরস্পরবিরোধী সংগঠনগুলো একমত হতে রাজি হবে। কোনো জায়গায় ঐক্য দেখতে পাই না।

. আকবর আলি খান বিশ্বাস করতেন যে, স্বাধীনতা বিশাল একটা ব্যাপার, আমরা সেটা অর্জন করেছি। এখন এটিকে সুসমন্বিত সুন্দর করার জন্য আমাদের ত্যাগ করতে হবে, সেটি হয়তো পাঁচ বা ১০ বছরে হবে না; কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশ নিশ্চয়ই একটি মর্যাদাবান দেশ হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। বেদনার জায়গাটা হলো আমরা অনেক কিছু আরো আগে করতে পারতাম। এখন সেটি নিয়ে বসে না থেকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। 

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পরিবেশ পরিস্থিতি এবং উন্নয়ন উপায় সম্পর্কে তার তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ স্পষ্ট—‘১৯২১ সালে ভারতে খেতমজুরদের ৪৯ শতাংশ ছিল দারিদ্র্যসীমার নিচে; এই হার ১৯৩১ সালে ৭৫ শতাংশে উন্নীত হয়। ১৯৭৫ সালে আরেকজন গবেষক দেখাচ্ছেন যে ১৯৬৩-৬৪ সালে গ্রামীণ বাংলাদেশে দারিদ্র্যের সংখ্যা ছিল ৯২ শতাংশ। ১৯৭৩-৭৪ সালে এই হার দাঁড়ায় ৮৩ শতাংশে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ২৪ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে বাংলাদেশ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। মাথাপিছু আয় প্রকৃত অর্থে প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। খাদ্য উৎপাদন প্রায় চার গুণ বেড়েছে। গড় আয়ুর প্রত্যাশা ১৯৭০ সালে ছিল ৪২ বছর। বর্তমানে এই হার দাঁড়িয়েছে ৭০ দশমিক বছরে। দারিদ্র্য নিরসনে বাংলাদেশের এই অসাধারণ অর্জনের পেছনে রয়েছে বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের ভূমিকা। প্রথমত, ৯০ লাখের বেশি অদক্ষ শ্রমিক প্রতি বছর ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন। বাংলাদেশের অদক্ষ এবং প্রধানত নারী শ্রমিকদের তৈরি করা পোশাকশিল্প থেকে বিশ্বের বাজারে বিক্রি করে প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার আয় হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, ক্ষুদ্রঋণের সুবিধা নিয়ে প্রায় চার কোটি নতুন উদ্যোক্তা বাজারে প্রবেশ করেছেন। তৃতীয়ত, সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারীদের অবদান উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

. আকবর আলি খান স্বভাবসিদ্ধভাবে শনাক্ত করেন, বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশের একটি বড় সমস্যা হলো, এখানে দরিদ্রবান্ধব ব্যবসায়ের উদ্যোক্তার অভাব রয়েছে। দরিদ্রদের জন্য যেসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে, সেগুলো বেশির ভাগই লোকসান করে। দরিদ্রদের পণ্য প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বাজারজাত করা সম্ভব হয় না।

তিনি লক্ষ করেন, বাংলাদেশে সিভিল সার্ভিসকে দুর্বল বানানো হয়েছে। আইনের শাসন, সুশাসন মেধার মূল্যায়ন করতে হবে। আগামী ৫০ বছরেও এসব সংস্কার হবে না, যদি দাবিগুলো জনগণের পক্ষ থেকে না করা হয়। জনগণই পারে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে। যেকোনো শাসন ব্যবস্থায় টেকসই দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান শর্ত শাসনকাঠামোর সর্বস্তরে কার্যকর জবাবদিহি নিশ্চিত করা। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। আগে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র, এটা কোনো কাজের কথা নয়।

হবিগঞ্জের মহকুমা প্রশাসক থাকার সময় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্বে সংগঠক হিসেবে তার ভূমিকা ছিল অনন্যসাধারণ। আজীবন তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের মূল্যবোধ চেতনাকে বিভিন্ন পরিবেশ পরিস্থিতির আলোকে উচ্চারণ করেছেন। তিনি মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য আমরা অত্যন্ত গর্বিত। জন্য গর্বিত নই যে বাংলাদেশ হয়েছে বলে আজ অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি করেছি বা আমাদের লোকজন দেশ শাসন করছে। বরং আমি কারণে গর্বিত যে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। স্বাধীনতার চেয়ে বড় অর্জন মনে হয় কিছু হতে পারে না। যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, সে জন্য আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য সব সময় গর্ববোধ করি। তবে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের মধ্যে বিভিন্ন আন্তঃরাজনীতিক কোন্দল ছিল; অনেক সমস্যা ছিল, যেগুলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে অসুবিধা সৃষ্টি করেছে। এসব সত্ত্বেও তিনি মনে করেন যে বাঙালি জাতির জীবনের সবচেয়ে বড় অধ্যায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

আশাবাদী আকবর আলি খান তার অবস্থান পরিষ্কার করেন, আপাতদৃষ্টে এখন মনে হয় যে দেশের পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। আমরা আসলে একটা পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। ভেতরে ভেতরে পরিবর্তন ঘটছে। আমাদের এখানেও হয়তো আগামী ২০-৩০ বছরে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসবে। সেই পরিবেশ তৈরি করার ক্ষেত্রে সমাজের সব স্তরের মানুষকে দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। তার মতে, নাগরিক সমাজ একা কিছু করতে পারবে না। রাজনৈতিক দলগুলোকেও নাগরিক সমাজের সঙ্গে একত্রে কাজ করতে হবে। ষাটের দশকে বুদ্ধিজীবী, নাগরিক সমাজ, অধ্যাপক-শিক্ষক-ছাত্রদের যে ভূমিকা ছিল, সেটা তো এখন নেই। এখন ছাত্র, তরুণ বুদ্ধিজীবী সমাজ সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। যারা লেখক চিন্তক, গবেষক, তাদের বিষয়ে চিন্তা করতে হবে। আরো লিখতে হবে, ভাবতে হবে। যদি সত্যিকার অর্থে পরিবর্তন আনতে হয়, তাহলে সামগ্রিকভাবে পরিবর্তন করতে হবে। সেই সামগ্রিক পরিবর্তনের কোনো প্রয়াস বাংলাদেশে এখনো দেখা যায়নি। তার মতে, সবকিছু সমাজতান্ত্রিক না হলেও চিকিৎসা ব্যবস্থা রাষ্ট্রকে পরিচালনা করতে হবে। বেকারদের সমস্যাও রাষ্ট্রকে সমাধান করতে হবে। শিক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে। ধরনের বিষয়গুলো সামনে আসবে।

গত সেপ্টেম্বর তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান। তার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।

 

. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ: সাবেক সচিব এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান

 

আরও