আলোকপাত

জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব কেবল অতিধনীদের থাকবে?

রাজনীতি, সংসদে প্রতিনিধিত্ব যে ধীরে ধীরে ধনী, অতিধনী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের হাতে চলে যাচ্ছে তার সর্বসাম্প্রতিক উদাহরণ হচ্ছে প্রার্থীদের সম্পদের হিসাব। সম্পদের হিসাব মানে যে হিসাব নির্বাচনে দাঁড়ানো প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনে হলফনামা করে জমা দিয়েছেন। কিছুদিন ধরেই দেশবাসী অবাক বিস্ময়ে খবরের কাগজে প্রার্থীদের সম্পদের হিসাব দেখে আসছে। প্রায় সব কাগজেই ছবিসহ এসব সংবাদ ছাপা

রাজনীতি, সংসদে প্রতিনিধিত্ব যে ধীরে ধীরে ধনী, অতিধনী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের হাতে চলে যাচ্ছে তার সর্বসাম্প্রতিক উদাহরণ হচ্ছে প্রার্থীদের সম্পদের হিসাব। সম্পদের হিসাব মানে যে হিসাব নির্বাচনে দাঁড়ানো প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনে হলফনামা করে জমা দিয়েছেন। কিছুদিন ধরেই দেশবাসী অবাক বিস্ময়ে খবরের কাগজে প্রার্থীদের সম্পদের হিসাব দেখে আসছে। প্রায় সব কাগজেই ছবিসহ এসব সংবাদ ছাপা হয়েছে। ওই সংবাদে আছে বর্তমান সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীদের হিসাব। আছে নতুন প্রার্থীদের হিসাব। পিলে চমকানোর মতো সম্পদ। ভাবা যায় না কারা দেশের সেবা করতে আসছেন। আসছেন বলছি কেন? গত নির্বাচনের সময়ও আমরা প্রার্থীদের হিসাব খবরের কাগজে পড়েছি। যাদের সম্পদের হিসাব তখন দেয়া হয়েছিল তাদের এবারের সম্পদের হিসাবও আমরা পেয়েছি। কী পার্থক্য? ভাবা যায় না। শুধু গত পাঁচ বছরে তারা কী পরিমাণ সম্পদ-সম্পত্তি বানিয়েছেন। শুধু সম্পদের পরিমাণই ছিল না, এবারের হিসাবে সম্পদ-সম্পত্তি অর্জনের উৎসের কথাও উল্লেখ করেছেন প্রার্থীরা। দেখা যাচ্ছে প্রায় সবারই উৎস হচ্ছে ব্যবসা। ভাবা যায় না যে বাঙালিরা কত বড় বড় ব্যবসায়ী হয়েছেন। যারা ব্যবসা দেখাননি তাদের কেউ কেউ বলেছেন টেলিভিশনের টক শো থেকে প্রাপ্ত টাকা তাদের আয়ের উৎস। এছাড়া রয়েছে অবিশ্বাস্য সব তথ্য। এসব তথ্য কেউ বিশ্বাস করে, কেউ করে না। কারণ ছোট্ট দেশ, কে কী করেন মোটামুটি সবাই তা জানে। এ কারণে তথ্যের ওপর সন্দেহ মানুষের। সবচেয়ে বড় গরমিল ও সন্দেহ হচ্ছে সম্পদের হিসাবে। কারণ প্রার্থীরা সম্পদের বিবরণ এবং এসবের যে মূল্য দেখিয়েছেন তা রীতিমতো হাস্যকর। এ হাস্যকর হিসাবেই তারা প্রায় সবাই কোটিপতি, শতকোটিপতি। সম্পদের মূল্যায়নে তারা কী পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন জানি না। তবে সম্পদের মূল্য দেখলে অবাকই হতে হয়। উদাহরণ দিই। একটি খবরের কাগজে দেখলাম ৯০ বিঘা জমির দাম দেখানো হয়েছে ২ হাজার টাকা। আরেক ক্ষেত্রে বারিধারা ডিওএইচএসে একটি ফ্ল্যাটের দাম দেখানো হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৩ হাজার টাকা। আরেকজন প্রার্থী বলেছেন, তার পাঁচ কাঠা প্লটের দাম মাত্র ৪০০ টাকা। আরেকজন প্রার্থী ১৪৮ ভরি স্বর্ণের দাম দেখিয়েছেন ৪০ হাজার টাকা। এ ধরনের হিসাব মূল্যায়ন আমরা দেখে দেখে শেষ পর্যন্ত ক্লান্ত হয়ে পড়ি। আর ভাবি, এই হচ্ছে দেশের সম্ভাব্য সংসদ সদস্যদের নমুনা। এক কথায় এ সম্পদের হিসাবের ওপর কোনো আলোচনা চলে না। তবে মনে অনেক প্রশ্ন জাগে। প্রথম প্রশ্ন, নির্বাচন কমিশন এসব তথ্য দিয়ে কী করে? তারা কি এ হিসাবগুলো আয়কর নথির সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন? তারা কি বার্ষিক বৃদ্ধির হিসাবগুলো তলিয়ে দেখেন। পাঁচ বছরের বৃদ্ধিগুলো বা ১০ বছরের বৃদ্ধিটুকু কতটুকু যুক্তিসংগত তা কি তারা পরীক্ষা করে দেখেন। জানি না। নির্বাচন কমিশন এসব হিসাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে এমন খবর জানা নেই। জানা নেই তাদের এ এখতিয়ার আছে কিনা। আয়কর বিভাগ তা দৃশ্যতই দেখতে পারে। কিন্তু এমনটি হয়েছে তাও খুব বেশি জানা যায় না। দুদক জাতীয় অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, তারা কি এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখেছে কখনো? এটাও আমরা জানি না। তবেই প্রশ্ন, কেন এসব হিসাব, সম্পদ-সম্পত্তির হিসাব নেয়া হয়? কোন সম্পদের উৎস কী এ খবর নেয়া হয়? এসবের উদ্দেশ্য কী তা দেশবাসীর জানা উচিত।

সাধারণভাবে কোনো নাগরিকের সম্পদের হিসাব জনসাধারণের জানার কথা নয়। এসব গোপন তথ্য। একমাত্র ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ও বিভাগ এসব তথ্য জানতে পারে এবং ব্যবস্থা নিতে পারে। যদি তা-ই হয় তাহলে কোনো প্রার্থীর সম্পদের হিসাব কেন কাগজে ছাপা হবে প্রকাশ্যে। উদ্দেশ্য বোধ হয় একটাই যে দেশবাসী জানুক যাকে তিনি ভোট দিতে যাচ্ছেন তার এত পরিমাণ সম্পদ আছে। এখানে মুশকিল হচ্ছে যদি তিনি এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার টাকা দেখান তাহলে প্রকৃত হিসাবটা কীভাবে হবে। আর এক ভরি স্বর্ণই আছে, না এক ভরির ভেতর ঢুকে আছে আরেক ভরি? বড়ই মুশকিলের খবর।

এতসবের পরেও কথা আছে। অনেক কথা আছে। ধরা যাক স্বর্ণের কথাই। ধরা যাক একজন প্রার্থীর ১০০ ভরি স্বর্ণ আছে। তার উৎস কী? হতে পারে বাবা-মায়ের দেয়া স্বর্ণ, যা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। দ্বিতীয়ত, হতে পারে বিবাহ সূত্রে শ্বশুরবাড়ি থেকে প্রাপ্ত স্বর্ণ। হতে পারে বিবাহকালে উপহার হিসেবে পাওয়া স্বর্ণ। মোটা দাগে আমরা যদি তিন সূত্রে প্রাপ্ত ধরে নিই, তাহলে অনেক প্রশ্নের জবাব থাকবে না। প্রথম প্রশ্ন, উত্তরাধিকারমূলে প্রাপ্ত স্বর্ণের দাম কী? এটা তো কেউ কেনে না। এটা কেউ সাধারণত বিক্রিও করে না। একটি প্রশ্ন উপহার হিসেবে পাওয়া অথবা শ্বশুরবাড়ি থেকে প্রাপ্ত স্বর্ণ সম্পর্কেও। এ সম্পদের মূল্যায়ন কীভাবে হবে? এ সম্পর্কে কি কোনো আইন-বিধি আছে? এমন কোনো বিধি-নিয়ম-আইন কি আছে যে মূল্যায়ন করতে হবে বাজারমূল্যের ভিত্তিতে? অথবা ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে? এখন দেখা যাচ্ছে স্বর্ণের উৎস এমন যা ক্রীত নয়। হ্যাঁ ক্রীত স্বর্ণ হলে তার রসিদ থাকবে। যে বছর কেনা সেই বছরের মূল্যায়ন থাকবে। কিন্তু এর সঙ্গে বাজারমূল্যের পার্থক্য হবে বিরাট। তাহলে দেখা যায়, বাজারমূল্যে দাম ধরা হলে সম্পদের মূল্য হবে ১০০-২০০-৫০০-১০০০ গুণ। এখন এর ওপর যদি সম্পদ কর চাপানো হয় তাহলে কী দাঁড়ায়? তাহলে দাঁড়ায় যে সম্পদ থেকে কোনো আয় নেই, তার ওপর কর দিতে হচ্ছে। এই হচ্ছে এক সমস্যা। আরো সমস্যা আছে। এ কারণে বোধ হয় সংশ্লিষ্ট বিভাগ স্বর্ণের মূল্যায়নে কোনো কড়াকড়ি আরোপ করেনি। অতএব, প্রার্থীদের সম্পদের হিসাব থাকবে ‘আন্ডারভ্যালুড’ বা অবমূল্যায়িত। মজার ঘটনা হচ্ছে, অবমূল্যায়িত দামেই আমাদের প্রার্থীরা, ভবিষ্যৎ সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীরা ধনী, অতিধনী, ধনাঢ্য ব্যক্তি, কোটিপতি, শতকোটিপতি। শুধু স্বর্ণ নয়, জমি, ফ্ল্যাট, বাড়ি ইত্যাদির ক্ষেত্রেও তাই। প্রথম প্রশ্ন, এসব সম্পদ একজন পেয়েছেন কোত্থেকে? হতে পারে তা দানের সম্পত্তি। হতে পারে ক্রীত সম্পত্তি। হতে পারে তা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি। এখন প্রশ্ন, এ বিভিন্ন ধরনের সম্পত্তি-সম্পদের মূল্যায়ন কীভাবে হবে? এলাকাভেদে, নির্মাণ গুণভেদে, আকারভেদে একটি ফ্ল্যাটের নানা দাম হতে পারে। যেহেতু এসব ক্ষেত্রে দাম নির্ধারণে বহু সমস্যা, তাই দেখা যাচ্ছে বর্তমানে সরকার এলাকাভেদে ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রি মূল্য ঠিক করে দিয়েছে। জমির দাম, ফ্ল্যাটের দাম যতই হোক না কেন তার রেজিস্ট্রি মূল্য হবে নিম্নতম সরকারি মূল্য। এর ওপরই ট্যাক্স ও অন্যান্য সরকারি পাওনা দিতে হবে। মজা হচ্ছে, এতে কত টাকার ফ্ল্যাট, জমি কত টাকায় রেজিস্ট্রি হচ্ছে তার কোনো হিসাব নেই। অবিশ্বাস্য সব কাণ্ড। কিন্তু তা প্রতিদিন ঘটছে হাজারে হাজারে। সৃষ্টি হচ্ছে প্রচুর কালো বা আনট্যাক্সড মানি। জমি, ফ্ল্যাটের যে মূল্য আয়করে দেখানো হয় তা অবিশ্বাস্য বিষয়। কিন্তু তা দেখানো হচ্ছে, আয়কর বিভাগ এটি গ্রহণ করছে। এক্ষত্রে কী করণীয়? ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট কি পারত না ফ্ল্যাটের বা জমির সঠিক মূল্য নির্ধারণ করতে? পারত। কিন্তু তা সময়সাপেক্ষ, ব্যয়সাপেক্ষ, দক্ষতাসাপেক্ষ বিষয়। এভাবে কাজ করলে এক বছরের কাজ করতে হবে পাঁচ বছরে। সত্যিকার উদ্দেশ্য পরিপূরণ হবে না। এ দুর্বলতার কারণে লোকে সম্পত্তি বা ফ্ল্যাটের মূল্য অবমূল্যায়িত করে দেখাচ্ছে। এখানে কথা আছে, যেখানে অবমূল্যায়িত মূল্যও বিস্ময়করভাবে কম তার কী হবে? এর উত্তর এখানে দেয়া কঠিন। কারণ খবরের কাগজে অবমূল্যায়িত মূল্য দেখেছি, কিন্তু ওই সম্পত্তির মালিক তিনি কীভাবে হয়েছেন তা বলা হয়নি। কোন সূত্রে মালিক তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মূল্যায়নের প্রশ্নে। আবার গুরুত্বপূর্ণ সরকারি আইনও। অনেক সময় সরকারি আইনই অবমূল্যায়নে সহায়তা করে। ধরা যাক শেয়ারের কথা। একজন লোকের ধরা যাক ১ কোটি টাকার শেয়ার আছে এবং এসব শেয়ার বিভিন্ন কোম্পানির। আইনানুসারে শেয়ারের মূল্য দেখানো হয় ক্রয়মূল্যে। অথচ শেয়ারের মূল্য বা প্রকৃত মূল্য হয়তো পাঁচ গুণ, ১০ গুণ বা আরো বেশি। অথচ তা দেখানো হচ্ছে ক্রয় মূল্য। আগে কেনা থাকলে বা প্রাইমারি শেয়ার হলে শেয়ারের মূল্য পড়ে অনেক অনেক। এ দামই দেখানো হচ্ছে। এখন যদি বলা হয়, না, মূল্যায়ন করতে হবে বাজারমূল্যের ভিত্তিতে। কী দাঁড়াবে অবস্থা? শেয়ারবাজারের কোনো ঠিক নেই। আমাদের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের অভিজ্ঞতায়ই দেখা যাচ্ছে যে শেয়ারের মূল্য ৫-৭-১০ বছর আগে ছিল ১০০ টাকা, এখন তার দাম ২০-৩০ টাকাও নয়। তাই যদি বাজারমূল্যে হিসাব করতে হয় তাহলে একজনের সম্পদ বাড়বে-কমবে জলের স্রোতের মতো। এ সম্পদ কোটি টাকা, এ সম্পদের পরিমাণ ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা। দারুণ অস্থিতিশীলতার বিষয়। এর সমাধান কী? 

মজার বিষয় হচ্ছে, সরকারি প্রচলিত নিয়মের ফাঁকে জমির ফ্ল্যাটের, বাড়ির মূল্য কম দেখিয়েও আমাদের আগামী দিনের সংসদ সদস্যরা ধনী, অতিধনী, ধনাঢ্য ব্যক্তি। যদি প্রকৃত হিসাব করা যেত তাহলে হয়তো দেখা যেত অসম্ভব বিস্ময়কর পরিমাণের সম্পদের মালিক তারা। আরো বিষয় আছে। অনেকেরই বিদেশে সম্পদ-সম্পত্তি আছে। কোন নামে, কীভাবে আছে তা আমরা কেউ জানি না। ওইসব সম্পত্তির হিসাব নেয়া তো সহজ কাজ নয়। কেউ হিসাব দেবে না। প্রথম সমস্যা এ সম্পদের উৎস কী তা তিনি বলতে পারবেন না। কারণ বাংলাদেশ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনো সম্পদ/টাকা/অর্থ বিদেশে ট্রান্সফার করা যায় না। এ কারণে বর্তমান অর্থমন্ত্রী দেশে টাকা ফেরত আনার যে সুযোগ দিয়েছিলেন সে সুযোগ কেউ গ্রহণ করেনি।

পরিশেষে আরেকটি কথা বলা দরকার। আমরা সবাই কোটি কোটি টাকা বলে অভ্যস্ত। কিন্তু এখানে এখন প্রশ্ন আছে। পাকিস্তান আমলে লাখ টাকার মালিক হলে তার বাড়িতে ঘির বাতি জ্বলত। লাখপতি ছিল বিশাল ব্যাপার। আর আজ? আমরা এখন সরকারি হিসাবই লাখ টাকায় করি না। কিছুদিন মিলিয়নে (১০ লাখ) হিসাব করা হয়েছে। এখন হিসাব করা হয় বিলিয়নে (শতকোটি)। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। বাজার অর্থনীতির কারণে মানুষের হাতে টাকা এসেছে। লাখ টাকার কোনো মূল্য নেই। সাধারণ একটা ফ্ল্যাটের মূল্যই কোটি টাকা। এ প্রেক্ষাপটে আমাদের সম্পদের মূল্যায়ন করা দরকার। ধনী কে, অতিধনী কে, ধনাঢ্য ব্যক্তি কে এসব বিষয়ের ওপর আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্তে আসা দরকার। লাখ টাকা, কোটি টাকা, শতকোটি টাকার ‘‌ওজন’ কত তার একটা তুলনামূলক বিচার করা দরকার। ওই নিরিখে আগামী দিনের সংসদ সদস্যরা কে কোন ক্যাটাগরিতে পড়েন তা ঠিক করা দরকার।

এক্ষেত্রে আয়কর বিভাগের বর্তমান ফর্মুলাই বিচার-বিবেচনা করা যেতে পারে। বর্তমান আইনানুসারে সাড়ে ৩ লাখ টাকা সাধারণভাবে আয় হলে তিনি করমুক্ত। অর্থাৎ করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা। এদিকে সম্পদ করের ব্যবস্থা এখন নেই। প্রয়াত অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেব সম্পদ করের ব্যবস্থা করে পরে তিনি নিজেই তুলে দিয়ে ‘‌সারচার্জ’ চালু করেন। এক অর্থে একে সম্পদ করই বলা যায়। কারণ তা সম্পদের ওপরই ধার্য করা হয়। দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে ৪ কোটি টাকা পর্যন্ত সম্পদ হলে কোনো সারচার্জ বা সম্পদ কর দিতে হয় না। ৪ কোটির ওপরে কিন্তু ১০ কোটির নিচে পর্যন্ত ১০ শতাংশ সারচার্জ। সম্পদ ১০ কোটির ওপরে কিন্তু ২০ কোটির নিচে হলে সারচার্জ ২০ শতাংশ। সম্পদ ২০ কোটির ওপরে কিন্তু ৫০ কোটির নিচে হলে সারচার্জ ৮০ শতাংশ। এর ওপরে হলে ৩৫ শতাংশ সারচার্জ। এ ক্যাটাগরিতে যদি আমরা ধনী, অতিধনী, ধনাঢ্য ও শতকোটিপতি হিসেবে ধরে নিই তাহলে এবারের নির্বাচনে প্রার্থীরা কোন ক্যাটাগরিতে পড়বেন বলে ধারণা। মুশকিল হচ্ছে, অবমূল্যায়িত সম্পদের হিসাবই সাধারণভাবে আয়কর বিভাগকে গ্রহণ করতে হয়। আবার এ হিসাবায়ন পদ্ধতি সরকারি বিভাগ কর্তৃক স্বীকৃত। তাহলেই প্রশ্ন বর্তমান হিসাব পদ্ধতিতে কতজন প্রার্থী ধনী, অতিধনী, ধনাঢ্য ও শতকোটিপতি। এর উত্তর যা হবে তা শত শত প্রশ্নের জন্ম দেবে। কোনোভাবেই আমাদের সাধারণের ধারণার সঙ্গে এর মিল থাকবে না। আমাদের ধারণা, কোটি কোটি টাকার মালিকরাই সংসদ সদস্য হচ্ছেন। কোটি কোটি বলতে অনেক কিছু বোঝায়। এর সীমা, হিসাবায়ন ও সম্পদের উৎস নির্ধারিত হওয়া দরকার।

ড. আর এম দেবনাথ: অর্থনীতি বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক

আরও