সুশাসন ও দক্ষ আমলাতন্ত্র ছাড়া বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ সম্ভব নয়

২০০০ সালের দিকে যখন দেশে-বিদেশে পোভার্টি রিডাকশন স্ট্র্যাটেজি পেপার (পিআরএসপি) নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছিল, তখন বিদেশী সহায়তা নিয়ে আমার বিশেষ আগ্রহ জন্মায়।

ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল, সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (স্যানপা)। সহযোগী গবেষক (অনাবাসিক), ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট পলিসি, ইউনিভার্সিটি অব অনটার্প, বেলজিয়াম। পলিসি স্পেশালিস্ট হিসেবে চার বছর দায়িত্ব পালন করেন ইউএনডিপিতে। জননীতি, জনপ্রশাসন এবং উন্নয়ন নীতির রাজনৈতিক-অর্থনীতি নিয়ে তিনি গবেষণা করেন। লন্ডনভিত্তিক প্রকাশনী রুটলেজ থেকে তার দুটি বই প্রকাশ হয়েছে। ২০২৪ সালে প্রকাশিত সর্বশেষ বইটি হচ্ছে ‘ফরেন এইড অ্যান্ড বাংলাদেশ: ডোনার রিলেশনস অ্যান্ড রিয়ালপলিটিক’। বাংলাদেশে বিদ্যমান আমলাতন্ত্রের সংকট ও বৈদেশিক ঋণ ও সহায়তানির্ভর অর্থনীতির নানা জটিলতা নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেন বণিক বার্তায়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাবিদিন ইব্রাহিম

আপনার লেখা বই ‘ফরেন এইড অ্যান্ড বাংলাদেশ: ডোনার রিলেশনস অ্যান্ড রিয়ালপলিটিক’-এর আলোকে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের বৈদেশিক সহায়তা ও ঋণনির্ভরতার বিষয়ে জানতে চাই।

২০০০ সালের দিকে যখন দেশে-বিদেশে পোভার্টি রিডাকশন স্ট্র্যাটেজি পেপার (পিআরএসপি) নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছিল, তখন বিদেশী সহায়তা নিয়ে আমার বিশেষ আগ্রহ জন্মায়। সে সময়ই আমি দাতা সংস্থাগুলোর ভূমিকা সম্পর্কে গভীরভাবে গবেষণা করার সিদ্ধান্ত নিই এবং পিএইচডি করার মাধ্যমে বিষয়টি আরো নিবিড়ভাবে অনুসন্ধান করি। গবেষণার কারণে মূলত বিদেশী সহায়তার নানা দিক বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হই।

বিদেশী সহায়তার ক্ষেত্রে দুটি প্রধান দিক রয়েছে। একদিকে এটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের মধ্য দিয়ে মানুষের পারস্পরিক সহযোগিতার দীর্ঘ ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। অন্যদিকে এটি একটি বিশেষ কাঠামোবদ্ধ রূপ গ্রহণ করার ইতিহাস। বিশেষত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে এটি আনুষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। পাশাপাশি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে তৃতীয় বিশ্বের নব্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে বৈদেশিক সহায়তা বিশেষভাবে সংযুক্ত হয়। তবে বিদেশী সহায়তার কার্যকারিতা এবং এর বাস্তব ফলাফল নিয়ে অনেক সমালোচনা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সহায়তার তুলনায় প্রত্যাশিত ফলাফল পাওয়া যায়নি। বরং অনেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। উইলিয়াম ইস্টারলি, ডামবিসা মোয়ো, হা-জুন চ্যাং বৈদেশিক সহায়তার কার্যকারিতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন তুলেছেন।

যা হোক, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) গ্রহণের পর উন্নয়ন সহযোগীরা নীতি স্বাধীনতার নতুন প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। তারা সহায়তা গ্রহণকারী দেশগুলোকে স্বাধীনভাবে নীতি গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে ঋণগ্রহীতা দেশগুলোর ওপর শর্তারোপের প্রবণতা আগের মতোই থাকে। এতে স্বাধীন নীতি গ্রহণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বাংলাদেশ বৈদেশিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, যার প্রভাব আমাদের উন্নয়ন নীতি ও অর্থনীতিতে এখনো দৃশ্যমান।

আমার বইটিতে বিদেশী সহায়তার বহুমাত্রিক দিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বিশেষ করে ২০০০ সালের পর এমডিজি ঘোষণার পর উন্নয়ন সহযোগীরা নীতি স্বাধীনতার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার বাস্তবতা এখানে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আমি রাজনৈতিক-অর্থনীতির লেন্সে আমার বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেছি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা যে দেশগুলো থেকে ঋণ পাই, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ট্র্যাডিশনাল ডোনার (যেমন জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র), বহুপক্ষীয় সংস্থা (যেমন এডিবি ও বিশ্বব্যাংক) এবং উদীয়মান শক্তির দেশগুলোর (যেমন ভারত ও চীন) সহায়তা নীতি ও উদ্দেশ্য বিশ্লেষণ করেছি।

আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে—কেন বাংলাদেশের বিদেশী সহায়তার ওপর দীর্ঘস্থায়ী নির্ভরতা লক্ষ করা যায়, যখন অনেক দেশ ধীরে ধীরে এর নির্ভরতা কমিয়ে এনেছে? এ পরিবর্তনের পেছনে কী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা কাজ করছে? বইটিতে এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি।

স্বাধীনতা-পরবর্তীতে জাপান বাংলাদেশের সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও যোগাযোগ খাতের সমস্যাগুলো এখনো সমাধান হয়নি। জাপান কেন সড়ক অবকাঠামোয় এত বেশি সহায়তা করল এবং আমাদের পরিবহন খাতের মূল সমস্যা কোথায়?

শুধু কোনো বিশেষ উন্নয়ন সহযোগীর আলোকে না দেখে সামগ্রিকভাবে আমাদেরকে বৈদেশিক সহায়তার বিষয়টি বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। তবে জাপান আমাদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ জাপান বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী। তারা বর্তমানে অবকাঠামো সহায়তার ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় এবং ১৯৮০-এর দশক থেকে বিশেষভাবে আমাদের সড়ক অবকাঠামোয় সহায়তা দিয়ে আসছে। তবে বিদেশী সহায়তার একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো, এর সঙ্গে সহায়তা প্রদানকারীদের ব্যবসায়িক স্বার্থ সবসময় জড়িত থাকে। জাপানের গাড়ি শিল্পের উন্নয়ন বা ব্যবসায় আমাদের সড়ক যোগাযোগের উন্নয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টও থাকতে পারে।

তবে সামগ্রিকভাবে বিশ্লেষণ করলে বলতে হবে আমাদের এখানে নীতি প্রণয়নে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। সমীক্ষা থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত আমাদের সাধারণভাবে দাতা সংস্থার পরামর্শকদের ওপরই নির্ভর করতে হয়। স্বাধীনভাবে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা দৃশ্যত কঠিন। এ ঘাটতি ৫০ বছর ধরে চলছে। দাতা সংস্থাদের শর্তাবলি একটা বাস্তবতার অংশ। তবে আমাদের অভ্যন্তরীণ নীতি সক্ষমতা ও দক্ষ নেতৃত্ব থাকলে আমরা এ নির্ভরতা কমাতে পারতাম।

রুয়ান্ডা আমাদের জন্য একটি সাম্প্রতিক উদাহরণ হতে পারে। দুর্নীতি দমন এবং শক্তিশালী আমলাতন্ত্রের মাধ্যমে তারা দাতা সংস্থার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে একটি জবাবদিহিমূলক কাঠামো তৈরি করেছে। ফলে তারা জাতীয় সক্ষমতা তৈরি করতে পেরেছে।

রুয়ান্ডার উন্নয়ন মডেল অনুসরণ করতে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো কী?

রুয়ান্ডার উন্নয়ন মডেল অনুসরণ করলে বাংলাদেশকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করতে হবে। তবে প্রথমে বলে রাখা দরকার যে রুয়ান্ডায় রাজনৈতিক স্বাধীনতা কিছুটা সীমিত। ফলে গণতান্ত্রিক কাঠামোর আলোকে আমাদেরকে বিষয়গুলো বুঝতে হবে। রুয়ান্ডার নীতি সক্ষমতা অত্যন্ত শক্তিশালী। কিন্তু আমাদের দেশে সরকারি কার্যক্রম ও নীতি গ্রহণের প্রক্রিয়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রভাবিত হয়। যে কারণে উন্নয়ন কৌশলের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র এখনো পেশাদারত্বের মানদণ্ডে পৌঁছায়নি, যা রুয়ান্ডায় অনেকটাই দৃশ্যমান। রুয়ান্ডা অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়নশীল দেশ হলেও সুশাসনের ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান উন্নত দেশের পর্যায়ে। রাষ্ট্রের সফলতা অনেকাংশে দক্ষ, নিরপেক্ষ ও কার্যকর আমলাতন্ত্রের ওপর নির্ভর করে। এটি আমাদের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত দুর্বল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশের সাংবিধানিক কাঠামো পেশাদার আমলাতন্ত্র তৈরিতে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করেছে। সরকারি চাকরিতে ২৫ বছর পার হলে এখানকার আমলারা চাকরিচ্যুত হওয়ার একটি অযাচিত ঝুঁকিতে পড়েন, যা তাদের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করে। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সমস্যা তৈরি হয়।

রাজনৈতিক সংঘাতও রুয়ান্ডার উন্নয়ন মডেল অনুসরণের ক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। রুয়ান্ডা গৃহযুদ্ধ থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজনৈতিক সংঘাত নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আমলাতন্ত্রের রাজনৈতিকীকরণ আমাদের অনেক সমস্যার মূল কারণ। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বোঝাপড়ার সম্পর্কের সংকট ও রাজনৈতিক স্বার্থের প্রাধান্য নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা উন্নয়ন কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে।

রুয়ান্ডা এসব ক্ষেত্রে সতর্ক ছিল। সেখানে গণহত্যার পর তাদের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় পুনর্গঠন করা হয়। গৃহযুদ্ধের পর মাত্র সাতজন কর্মী নিয়ে মন্ত্রণালয়টি যাত্রা শুরু করে। অবস্থাটা এতটাই নাজুক ছিল। কিন্তু আজ এটি একটি বৈশ্বিক মডেল হিসেবে স্বীকৃত। এ সাফল্য সম্ভব হয়েছে দুর্নীতিমুক্ত, পেশাদার আমলাতন্ত্র এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের দৃঢ়তা ও যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণে।

বাংলাদেশে এ মডেল অনুসরণ করতে হলে আমলাতন্ত্রকে কার্যকর, পেশাদার ও দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল করতে হবে যাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও নীতি গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা না আসে। পাশাপাশি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগ্রহণের সময় অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে প্রাধান্য দিতে হবে, যাতে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা যায় এবং রাজনৈতিক ঝুঁকিগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।

আমরা স্বাধীন, স্বতন্ত্র আমলাতন্ত্র কেন পেলাম না যারা বাংলাদেশকে প্রকৃত উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে পারতেন?

এ আলোচনায় আমরা প্রায়ই উপনিবেশবাদের প্রসঙ্গ টেনে আলোচনাটিকে সংকুচিত করে তুলি। অথচ আমরাই একমাত্র ব্রিটিশ উপনিবেশ নয়। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আরো দেশ উপনিবেশের অংশ ছিল। এসব দেশের অনেকে অর্থনৈতিক ও সুশাসনে সাফল্য লাভ করেছে। উপনিবেশ শাসন নিবর্তনমূলক শাসন ব্যবস্থা হওয়ায় আমরা এর নিন্দা করি। তবে এটি রাজনৈতিক স্বাধীনতা না দিলেও এর প্রাতিষ্ঠানিক কার্যকারিতা ছিল। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কীভাবে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে সেটা নির্ভর করে রাজনৈতিক নেতাদের ওপর। তাই এক্ষেত্রে আমি উপনিবেশকে দায় দিতে পারি না।

স্বাধীনতার পর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা সবচেয়ে জরুরি ছিল এবং প্রয়োজন ছিল সব ক্ষেত্রে মেধা ও সুশাসনকে প্রাধান্য দেয়া। একই সঙ্গে জরুরি ছিল আমলাতন্ত্রকে রাজনীতির বাইরে রাখা। যেটা সিঙ্গাপুরের দিকে তাকালে লক্ষ করা যায়। তারা আমলাতন্ত্রকে রাজনীতির প্রভাবমুক্ত রেখেছে এবং তাদের আমলাতন্ত্র দুর্নীতিগ্রস্ত নয়। ভারতের আমলাতন্ত্রের দিকে তাকালেও তা মোটামুটি লক্ষ করা যায়। এমনকি ভারতের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩১১-এর মাধ্যমে আমলাতন্ত্রকে সুরক্ষা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে সম্পূর্ণ বিপরীত ঘটনা ঘটেছে। প্রতিষ্ঠান সুরক্ষা ও সুশাসন এখানে সে অর্থে কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা হিসেবে আসেনি, ফলে আমাদের যা হওয়ার তাই হয়েছে।

আমাদের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রেও অন্যতম বাধা। আপনার পর্যবেক্ষণ কী বলে?

দক্ষ ও কার্যকর আমলাতন্ত্র ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমলাতন্ত্রের মাধ্যমে সাফল্যের অন্যতম উদাহরণ হলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশ জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, বর্তমান ভিয়েতনাম, হংকং, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান ইত্যাদি দেশ। এদের সামগ্রিকভাবে ডেভেলপমেন্টাল স্টেটস হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

Chalmers Johnson ১৯৮২ সালে জাপানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে MITI and the Japanese Miracle: The Growth of Industrial Policy, 1925-1975 নামক একটি বিখ্যাত বই লেখেন। বইটিতে জাপানের আমলাতন্ত্রকে অর্থনৈতিক আমলাতন্ত্র (ইকোনমিক ব্যুরোক্রেসি) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। একই কথা ডেভেলপমেন্টাল স্টেটসের অন্য দেশগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সেখানে আমলাতন্ত্র এত চমৎকারভাবে কাজ করেছে যে তাকে অর্থনৈতিক আমলাতন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর এর পেছনে দুটি বিষয় কাজ করেছে। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকা এবং পেশাগত সক্ষমতা। এর ফলে আমলাতন্ত্র বেসরকারি খাতকে সফলভাবে নেতৃত্ব দেয়। এ দুটো বিষয় আমাদের এখানে অনুপস্থিত। যে কারণে এখানে আমলাতন্ত্র পরিবর্তনের অনুষঙ্গ হতে পারেনি। আবার অকার্যকারিতার দায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের ওপর বর্তায়।

এখানে আমলাতন্ত্র ভালো হলে বৈদেশিক সহায়তা ছাড়াও সফল হওয়া যেত। যেভাবে চীন সফল হয়েছে। সুশাসন ও দক্ষ আমলাতন্ত্র ছাড়া বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ সম্ভব নয়। আমাদের যে কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা আছে সেগুলো কেবল একটি সৃজনশীল ও সৎ আমলাতন্ত্র উত্তরণ ঘটাতে পারে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।

আরও