শ্রমবাজারের পরিবর্তন ও আমাদের প্রস্তুতি

সারা বিশ্বে কাজের বাজার দ্রুত বদলাচ্ছে। কাজের জোগান, চাহিদা, কাজের চরিত্রে পরিবর্তন, মজুরি সবই প্রচলিত ধারণা থেকে সরে যাচ্ছে। ব্যাপক হারে কর্মী ছাঁটাই হচ্ছে, আবার নানা ধরনের কাজে উপযুক্ত কর্মীর খোঁজ চলছে, নিয়োগ হচ্ছে। এই টানাপড়েনে শ্রমের সমস্যার স্বরূপটি তেমন স্পষ্ট হয়ে উঠছে না। কাজ হারানো আর পাওয়ার মধ্যে কিছুটা সময়ের ব্যবধান, অনিশ্চয়তা, অপেক্ষা, এটাই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার, কাজ থাকলেও তার সময়ের সীমা বাঁধা নেই, মজুরি নির্দিষ্ট নেই, সুযোগ-সুবিধাও নেই। কেউ চাইলে ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে পারে আবার কেউ ৪ ঘণ্টাও করতে পারে। মজুরি তেমন হারেই নির্ধারিত হচ্ছে।

সারা বিশ্বে কাজের বাজার দ্রুত বদলাচ্ছে। কাজের জোগান, চাহিদা, কাজের চরিত্রে পরিবর্তন, মজুরি সবই প্রচলিত ধারণা থেকে সরে যাচ্ছে। ব্যাপক হারে কর্মী ছাঁটাই হচ্ছে, আবার নানা ধরনের কাজে উপযুক্ত কর্মীর খোঁজ চলছে, নিয়োগ হচ্ছে। এই টানাপড়েনে শ্রমের সমস্যার স্বরূপটি তেমন স্পষ্ট হয়ে উঠছে না। কাজ হারানো আর পাওয়ার মধ্যে কিছুটা সময়ের ব্যবধান, অনিশ্চয়তা, অপেক্ষা, এটাই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার, কাজ থাকলেও তার সময়ের সীমা বাঁধা নেই, মজুরি নির্দিষ্ট নেই, সুযোগ-সুবিধাও নেই। কেউ চাইলে ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে পারে আবার কেউ ৪ ঘণ্টাও করতে পারে। মজুরি তেমন হারেই নির্ধারিত হচ্ছে। 

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য বলছে, নিয়োগ বাড়ছে সেই সব কাজে যেগুলো অস্থায়ী। অর্থাৎ যেখানে শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা, ন্যূনতম মজুরিসহ নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা দিতে বাধ্য নন নিয়োগকর্তারা। ফলে গড় মজুরি কমে যাচ্ছে দ্রুত। এতে নিয়োগকর্তার লাভের হার বেড়েছে এবং পণ্যের উৎপাদন ব্যয় কমছে। এটা আরো সহজ হয়েছে ‘ভার্চুয়াল’ পণ্য ও পরিষেবার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায়। আইএলওর হিসাবে, বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় ২০০ কোটি মানুষ অনানুষ্ঠানিক ক্ষেত্রে কাজ করে। তাদের সমস্যা কাজের অভাব অতটা নয়, যতটা মজুরিতে পতনের সংকট। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী জিডিপিতে শিল্প ও পরিষেবার সম্মিলিত অবদান ৮৮ শতাংশ,  যদিও সেখানে কাজ করে কর্মরত শ্রমশক্তির প্রায় ৫৫ শতাংশ। অনানুষ্ঠানিক খাতের প্রাধান্য এখানে অনেক বেশি। এখানেই প্রতিনিয়ত পুরনো ধরনের কাজ মিলিয়ে যাচ্ছে, নতুন কাজ তৈরি হচ্ছে। কাজের চাহিদা হচ্ছে ডিজিটাল মিডিয়া, সমাজমাধ্যম, স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রভৃতি ক্ষেত্রে। এছাড়া অ্যাপনির্ভর ডেলিভারি, বিবিধ পরিষেবা, বিনোদন, মেরামত, মেইনটেন্যান্স ইত্যাদি কাজের প্রসার হয়েছে। উবার, পাঠাও, ওভাইয়ের মতো পরিবহন শিল্পে ব্যাপক সম্প্রসারণের ফলে চালক ও মেরামত কর্মীর চাহিদা প্রচুর। এমনকি শৌচাগার, বাড়ির পানির ট্যাংক, উঠান, রান্না করা, ঘর পরিষ্কার করার কাজও একটি পৃথক নিয়োগক্ষেত্র হয়ে উঠছে। এসব ‘নতুন’ কাজে শ্রমিক সুরক্ষা আইনের প্রয়োগ নেই, নেই বিধিসম্মত কাজের পরিস্থিতি পরিবেশ, নেই ৮ ঘণ্টার মেয়াদের আশ্বাস। এ নতুন ব্যবস্থায় শ্রমিক সাধারণত সরাসরি মালিকদের মুখোমুখি হয় না। আবার এ কাজগুলোর ক্ষেত্রেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার হচ্ছে। ফলে শ্রমের চরিত্র, শ্রমের চাহিদার ধরন দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে।

ফ্রিল্যান্সাররা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বড় বড় কাজের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। তাদের কাজ করতে কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হচ্ছে না, আয়ও ভালো। স্বাধীনভাবে কাজ করা যায় বলে মানুষের মধ্যে আগ্রহও বাড়ছে। প্রতিষ্ঠানের ব্যয় কমে আসে বলে ফ্রিল্যান্সনির্ভর হয়ে পড়ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। স্বল্পমেয়াদি কাজ, অন ডিমান্ড পজিশনের জন্য ভবিষ্যতে কর্মী নিয়োগ আরো বাড়বে। এভাবে কাজের কারণে কর্মীরা নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী কাজ বাছাইয়ের সুযোগ পাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানগুলোও কাজের পরিমাণ ও দক্ষতা অনুসারে কর্মী নিয়োগের সুযোগ পাচ্ছে। অ্যাডোবি, উবার, ডেলের মতো প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানে এমন ধরনের কাজের সুযোগ ধীরে ধীরে বাড়ছে। ভবিষ্যতে নানা ধরনের ‘স্মার্ট’ কাজের সংখ্যা ও পরিধি বাড়বে। একদিকে যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর কাজের ধরন বাড়ছে, তেমনি মানুষ ও যন্ত্রের সংযোগে নতুন নতুন কাজ তৈরি হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নির্বাহী ও কর্মীদের আরো বেশি সৃজনশীল কাজে যুক্ত করছে। রোবোটিকস ও অটোমেশনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে মানুষের অংশগ্রহণ কমে আসছে। প্রযুক্তির কল্যাণে আরো নানা ধরনের পেশা ও কাজ সৃষ্টি হচ্ছে। প্রযুক্তিনির্ভর উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন নামে নতুন পদে কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে। হিল্টন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস, জেরক্স, সেলস ফোর্সসহ বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কাজের জন্য কর্মীদের উদ্ভাবনী দক্ষতা ও সৃজনশীলতাকে গুরুত্ব দিচ্ছে।

লাখ লাখ চাকরির খবর মিলছে মাত্র এক ক্লিকে। শুধু তাই নয়, অফিসে না গিয়েও কাজ করছেন অনেকে। এমনও আছে দেশে কোনো অফিসের অস্তিত্বও নেই, বিদেশ থেকে পরিচালিত হচ্ছে। কর্মসংস্থানের গতি এখন আর কোনো একটি ভূখণ্ডে সীমাবদ্ধ নেই। পুরো বিশ্ব এখন কর্মক্ষেত্র। ফলে প্রতিযোগিতা আরো বেড়ে উঠছে। দেশে যারা কাজ করছেন তারা নিজের বাসাকেই অফিসে পরিণত করেছেন। বাংলাদেশে বসেই ইউরোপের কাজ করছেন নিয়মিত। কেনাকাটা করা আরো সহজ হয়েছে। বিদেশের পণ্য সরাসরি দেশে চলে আসছে কয়েক দিনের মধ্যে। পেমেন্ট ব্যবস্থাও অনেক উন্নত ও সহজ হয়েছে প্রযুক্তির কল্যাণে। পণ্য ডেলিভারি বা রাইডশেয়ার ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। একসময়ে মানুষ এটি ভাবতেও পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে বর্তমানে একটি চাকরির জন্য ঝুলে থাকার পরিবর্তে, আজকের লক্ষ্য হলো সক্ষম হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা। এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার বিকাশ ঘটানো। 

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাবকিতাব এখন অনেকটাই অটোমেটিক। কিন্তু আগামী দিনে হয়তো মানুষের ব্যবহার কমে যাবে বেশ খানিকটা। শুধু ‘তথ্য বিশ্লেষক’ হিসেবে মানুষ থাকবে অগ্রগণ্য। তার মানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ফুলটাইম কাজ করা মানুষের সংখ্যা কমে যাবে, থাকবে শুধু একজন মডারেটর। বাকি সবাই কাজ করবে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে। তার মানে ম্যানেজারের কাজটা হয়তো সমান গুরুত্বপূর্ণ থাকবে। নেতৃত্বগুণ বেশ দামি হিসেবে পরিগণিত হতে থাকবে।

পরিবর্তনগুলো হচ্ছে ধাপে ধাপে। আজ যা ঘটছে আমেরিকা, ইউরোপে ঠিক তাই বা কাছাকাছি কিছু ঘটতে যাচ্ছে কাল বাংলাদেশে। গার্মেন্ট ব্যবসা থেকেই উদাহরণ দেয়া যাক। আজ থেকে ২০০ বছর আগে বর্তমানের গার্মেন্ট ব্যবসা ছিল ইংল্যান্ড, স্পেনের দিকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের ব্যবসার ধরন পাল্টে গেছে। কাপড় তৈরি হয় এখন বাংলাদেশ, পাকিস্তানের মতো দেশগুলোয়। ৫০ বছরের মাঝে এ ব্যবসা আফ্রিকায় স্থানান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। তাই এটি বলা যায় যে বাইরের দুনিয়ায় খেয়াল রাখা দরকার নিজেদের প্রয়োজনেই। 

দক্ষতা ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে উন্নত দেশগুলোর কথা বলতে গেলে বেশকিছু দেশের নাম সামনে চলে আসে। এর মধ্যে আছে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য এবং আরো অনেক দেশের নাম। কেন এ দেশগুলো এত উন্নত তা একটু ভাবলেই সবার আগে তাদের প্রযুক্তির কথাই মনে পড়বে। জাপানের বিশেষজ্ঞদের উন্নত মানের গবেষণা তাদের প্রযুক্তিতে অভাবনীয় পরিবর্তন এনে দিয়েছে। তাদের উন্নতির কারণ খুঁজলে সামনে চলে আসবে দেশটির শিক্ষা ব্যবস্থা। ১৯৫৮ সাল থেকেই জাপানে নিম্ন মাধ্যমিক লেভেলেই প্রযুক্তি শিক্ষার ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বৃত্তিমূলক প্রযুক্তি শিক্ষাকে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে রাখা হয়। নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রযুক্তি শিক্ষার উদ্দেশ্যই ছিল শিক্ষার্থীদের বাস্তবিক অভিজ্ঞতা লাভের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তি হাতে-কলমে শেখা এবং বাস্তবিক অর্থেই আধুনিক মেশিন তৈরি এবং চালনা করার মাধ্যমে জীবন ও প্রযুক্তির মধ্যকার সম্পর্ক বোঝা এবং আধুনিক প্রযুক্তির উন্নতি সাধন করা, যাতে দৈনন্দিন জীবনের মান বৃদ্ধি পায়। শুধু স্কুলে নয়, অভিজ্ঞ শিক্ষক গড়তে তিন বছর মেয়াদি প্রযুক্তিশিক্ষা প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। ১৯৮০ সালে নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে কম্পিউটার শিক্ষা কোর্সের প্রচলন করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকেও কারিগরি শিক্ষায় জোর দেয়া হয়েছে। এভাবেই দিনের পর দিন জাপানের শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার লাভ করেছে। তারাই প্রযুক্তির উন্নয়নে অসামান্য ভূমিকা রাখছে। জাপানের মতো বাংলাদেশও মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রযুক্তিনির্ভর বৃত্তিমূলক কোর্সের ব্যবস্থা করতে পারে। এতে শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারেন। শুধু পুঁথিগত বিদ্যা নয়, থাকতে হবে বাস্তবিক প্রয়োগ। 

দক্ষতা উন্নয়নে সরকারিভাবে বাড়ানো হচ্ছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সংখ্যা। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতও বড় মাত্রায় যুক্ত হচ্ছে। তবে এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কার্যকারিতা ও মান নিয়ে রয়েছে বিস্তর প্রশ্ন। অনেক প্রতিষ্ঠান ভুগছে দক্ষ প্রশিক্ষকের ঘাটতিতে। আবার বিচ্ছিন্নভাবে কিছু প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নিজস্ব ম্যানুয়াল আছে বটে, কিন্তু সেগুলো যুগের চাহিদা মেটাতে পারছে না। নেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও অন্য সুবিধাও। এরই মধ্যে যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তিতে বিশ্ব অনেক এগিয়ে গেছে। অথচ প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সনাতনী সরঞ্জামের মাধ্যমে। ফলে প্রশিক্ষণ ও বাস্তব কর্মজগতের মধ্যে দক্ষতার বিপুল ঘাটতি রয়ে যাচ্ছে। তদুপরি প্রশিক্ষণ খাতে অনিয়মও কম নয়। কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রশিক্ষণ না দিয়েই অর্থের বিনিময়ে সনদ বাণিজ্যের অভিযোগ আছে। এমনকি কিছু প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সরকারি নিবন্ধনও নেই বলে খবর মিলছে। এতে ভুয়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোয় মানুষের প্রতারণার সুযোগও থেকে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে বিদ্যমান প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা দক্ষতা উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।

ইউকে কমিশন ফর এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড স্কিলসবিষয়ক গবেষণায় সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে, উচ্চদক্ষতা উৎপাদনশীলতার ওপর ধনাত্মক প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে নিম্ন দক্ষতার প্রভাব ঋণাত্মক হয়। এজন্য দক্ষতা অর্জনে গুরুত্বারোপ করে প্রশিক্ষণের ওপর সর্বোচ্চ জোর দিতে বলা হয়েছে। উল্লেখ করা হয়েছে, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতাপূর্ণ শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ ৫ শতাংশ বাড়লে উৎপাদনশীলতা বাড়ে ৪ শতাংশ পর্যন্ত। এর প্রত্যক্ষ প্রভাবে মজুরিও ১ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে। কারণ উৎপাদন বাড়লে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের নিট মুনাফা বেড়ে যায়। শুধু তাই নয়, প্রশিক্ষণের পর উৎপাদনশীলতার ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটে বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে। যেখানে মজুরি বাড়ে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। আর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শ্রমিকের সঙ্গে অদক্ষ শ্রমিকের উৎপাদনশীলতার পার্থক্য ৮ শতাংশ পর্যন্ত ঘটে। কিন্তু বাংলাদেশে প্রশিক্ষণই সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। দেশে সনদপ্রাপ্ত শিক্ষিত মানুষের অভাব নেই। কিন্তু পেশাগত জ্ঞানের অভাবে তাদের বেকারত্ব বরণ করতে হচ্ছে। কাজের প্রাথমিক পর্যায়ে শ্রমিকের অভাব হয় না। কিন্তু মধ্যম পর্যায়ে শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে। এজন্য অনেককে চাকরি হারাতে হয়েছে। পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়টি দেশের ২২টি মন্ত্রণালয় দেখাশোনা করছে। কিন্তু কাজের সমন্বয় নেই।

সরকারের একার পক্ষে প্রতিটি পেশার দক্ষতা উন্নয়ন সম্ভব নয়। এখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণও জরুরি। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বেসরকারি খাতের সম্পদ, অভিজ্ঞতা ও মতামতকে প্রাধান্য দেয়া দরকার। অন্যথায় যেকোনো উদ্যোগ সফলতা থেকে বঞ্চিত হতে পারে। শ্রমিক ও বিনিয়োগকারীদের সুবিধা-অসুবিধাগুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে। সাময়িক প্রশিক্ষণের কথা চিন্তা না করে বেসরকারি খাতে প্রয়োজনীয় জনশক্তি সৃষ্টি বা তাদের সঙ্গে সংযোগ সৃষ্টি করতে হবে। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিনিয়োগ। বিনিয়োগ ছাড়া কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এসডিজির নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন অসম্ভব। শ্রমের চাহিদা ও কাজের বাজারের বিবর্তন অনুযায়ী দক্ষ শ্রমিক গড়ে তুলতে হবে। এজন্য সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া দরকার।

এম এম মুসা: সহযোগী সম্পাদক, বণিক বার্তা

আরও