অভিমত

জিআই পণ্য নিয়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর হঠাৎ নিদ্রাভঙ্গ

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে টাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশনস) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়। ভারতের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ১ ফেব্রুয়ারি তাদের ফেসবুক পেজে এ সংবাদ প্রকাশের পর থেকেই এ নিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা চলছে। বলা যায়, এ নিয়ে

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে টাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশনস) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়। ভারতের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ১ ফেব্রুয়ারি তাদের ফেসবুক পেজে এ সংবাদ প্রকাশের পর থেকেই এ নিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা চলছে। বলা যায়, এ নিয়ে চতুর্দিকে রীতিমতো এক ধরনের তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনও এ ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচিও পালন করেছে। এমনকি দেশের অতিসাধারণ মানুষকেও এ নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দেখা গেছে। কিন্তু নীরব শুধু দেশের পরিচালকরা। সংবাদটি ১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ হওয়ার পর এরই মধ্যে পাঁচদিন পেরিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও এবং এ মুহূর্তে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে থাকার পরও বিষয়টি নিয়ে সংসদে কথা বলার ব্যাপারে জাতীয় সংসদের কোনো সদস্যই বিন্দুমাত্র কোনো দায় ও আগ্রহ বোধ করেননি। 

সে যা-ই হোক, সামগ্রিকভাবে জিআই পণ্য নিয়ে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ধারাবাহিক নিস্পৃহতার যেসব খবর এরই মধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে তাতে মোটামুটিভাবে এটি স্পষ্ট যে ভারত সরকার কর্তৃক টাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতিদানের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ না হলে (‘বণিক বার্তা’ই ৩ ফেব্রুয়ারি এ খবর বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যমে প্রথম প্রকাশ করে) বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো হয়তো ঘুমিয়েই থাকত। এ নিদ্রাবস্থার প্রমাণ মেলে যখন বাংলাদেশ কারুশিল্প পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জানান যে গত মাসে ভারতের এ কার্যক্রমের বিষয়টি জানতে তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করলে বুঝতে পারি, তিনি এ-সংক্রান্ত কিছুই জানেন না। এ-সংক্রান্ত ফাইল দুই মাস ধরে পড়ে আছে। ফলে ভারতের কাছে আপত্তি বা আবেদন জানানোর সুযোগ থাকলেও তা করা যায়নি। (প্রথম আলো, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪)।

টাঙ্গাইল শাড়িকে বাংলাদেশ পর্যায়ে জিআই পণ্য হিসেবে ঘোষণার দায়িত্বের সঙ্গে সরাসরি জড়িত দুটি প্রতিষ্ঠানের একটি হচ্ছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড (বিএইচবি) এবং অন্যটি হচ্ছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)। প্রথমটি অর্থাৎ বিএইচবি আনুষঙ্গিক কাগজপত্র ও দলিল-প্রমাণাদিসহ সংশ্লিষ্ট পণ্যকে (এক্ষেত্রে টাঙ্গাইল শাড়ি ও অন্যান্য) জিআই পণ্য হিসেবে ঘোষণার জন্য ডিপিডিটির কাছে পাঠাবে। এরপর বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই করে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণপূর্বক তারা সেটিকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জিআই পণ্য হিসেবে ঘোষণা করবে। অধিকন্তু তারা এটি জাতিসংঘের আওতাধীন বিশ্ব মেধাস্বত্ব সংস্থা (ডব্লিউআইপিও) বা তার ট্রেডমার্ক, শিল্পনকশা ও ভৌগোলিক নির্দেশক আইনসংক্রান্ত স্থায়ী কমিটিকে অবহিত করবে। আর এটি শুধু টাঙ্গাইল শাড়ির ক্ষেত্রে নয়—জিআই পণ্য হিসেবে বাংলাদেশ কর্তৃক এ পর্যন্ত ঘোষিত ২১টি এবং ভবিষ্যতের সব পণ্যের ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে অতীতের ২১টি পণ্যের ক্ষেত্রে সেটি করা হয়েছে কিনা আমরা তা জানি না। তবে যদি না করা হয়ে থাকে, তাহলে অবিলম্বে তা যেন অবশ্যই করা হয়।

জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির দাবি নিয়ে একাধিক দেশের মধ্যে কোনো বিরোধ দেখা দিলে আনুষঙ্গিক কাগজপত্র ও দলিলাদির ভিত্তিতে উপরোক্ত কমিটি ওই বিরোধের নিষ্পত্তি করবে। বর্তমানে টাঙ্গাইল শাড়িকে ভারত কর্তৃক সে দেশের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতিদানের ফলে যে জটিলতা তৈরি হলো তা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশের জন্য আশু করণীয় হবে আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক এটিকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতিদান। এরপর এ বিষয়ে ভারতের দাবি কেন অযৌক্তিক এবং এর বিপরীতে বাংলাদেশের দাবি কেন যৌক্তিক তার উপযুক্ত যুক্তি-প্রমাণ ও দলিলাদিসহ অবিলম্বে তা ডব্লিউআইপিওর উল্লিখিত স্থায়ী কমিটির কাছে প্রেরণ করে বিষয়টি নিয়মিত ফলোআপ করতে হবে। ওই আবেদনের সঙ্গে যদি বড় অংকের ফি জমা দিতে হয় তাহলে সে ব্যবস্থাও সম্ভব দ্রুততম সময়ের মধ্যে করতে হবে। ডিপিডিটির বাজেটে যদি এ খাতে বৈদেশিক মুদ্রায় কোনো বরাদ্দ না থেকে থাকে, তাহলে সেটিও শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে দ্রুত সংস্থান করতে হবে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে এ ধরনের বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে আপিলের জন্য ডিপিডিটির বাজেটে কি বৈদেশিক মুদ্রায় নিয়মিত বরাদ্দ রাখার ব্যবস্থা আছে? না থাকলে এখন থেকে এটি নিয়মিতভাবে রাখতে হবে। কারণ অদূর ভবিষ্যতে টাঙ্গাইল শাড়ির ন্যায় অন্য বিভিন্ন পণ্য নিয়েও এ ধরনের বিরোধ দেখা দিতে পারে এবং সে আশঙ্কাই এখন সর্বাধিক, যা দিনে দিনে আরো বাড়বে।

টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে আবেদনের সময় ডব্লিউআইপিওর বিরোধ নিষ্পত্তি-সংক্রান্ত উল্লিখিত স্থায়ী কমিটির কাছে আবেদন পেশ করার সময় কয়েকটি আইনগত বিষয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে আইনের সূক্ষ্ম মারপেঁচে আমরা হেরে না যাই। এসব সূক্ষ্ম মারপেঁচের মধ্যে রয়েছে ‘টাঙ্গাইল শাড়ি’ শব্দ যুগলের বাংলা ও ইংরেজি বানান। আমরা হয়তো লিখে দিলাম ‘টাংগাইল শাড়ি’। কিন্তু ভারত হয়তো এটিকে ‘টাঙ্গাইল শাড়ি’ কিংবা ‘টাংগাইল শাড়ী’ কিংবা ‘টাঙ্গাইল শাড়ী’ লিখে ভিন্ন পণ্য বলে দাবি করে বসল, যা ঘটার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। পেটেন্ট, ট্রেডমার্কস, কপিরাইট ও জিআই-সংক্রান্ত মামলার ক্ষেত্রে এ ধরনের সূক্ষ্ম মারপেঁচের ঘটনা দেশে-বিদেশে অহরহই ঘটতে দেখা যাচ্ছে। ফলে এ পুরো বিষয়গুলোই যেন সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে পেশকৃতব্য প্রস্তাবে যথাযথভাবে তুলে ধরা হয়। শব্দদ্বয়ের ইংরেজি বানানগুলোও এক্ষেত্রে স্পষ্টতার সঙ্গে উল্লেখ করতে হবে। মনে রাখা দরকার যে প্রতিটি বিকল্প বাংলা শব্দযুগলের বিপরীতে ইংরেজি বানানগুলোও ভিন্ন ভিন্ন হতে বাধ্য। এক্ষেত্রে আরো একটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করতে হবে যে টাঙ্গাইলের অবস্থান বাংলাদেশ ভূখণ্ডের একেবারে কেন্দ্রে—এটি ভারতসংলগ্ন কোনো সীমান্তবর্তী জেলা নয়। তদুপরি এটি একটি ঐতিহ্যবাহী বিখ্যাত জেলা শহর।

বাংলাদেশের চলমান আমলাতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা কখনই সেবাগ্রহণকারী উদ্যোক্তা বা জনগণের দুয়ারে যেতে অভ্যস্ত নন। তারা ধরেই নিয়েছেন, উদ্যোক্তা বা জনগণ শুকতলা ক্ষয় করে হলেও মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে তাদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরবেন। যদি বিপরীতটি হতো তাহলে আজ আর টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতি নিয়ে এ জটিল পরিস্থিতি তৈরি হতো না কিংবা ২০১৩ সালে এ-সংক্রান্ত আইন পাস হওয়ার পর গত ১১ বছরে জিআই পণ্যের সংখ্যা মাত্র ২১টি হতো না—এরই মধ্যে অন্তত ১২১টিতে উন্নীত হতে পারত। এক্ষেত্রে এরই মধ্যে বিএইচবি ও ডিপিডিটির দায়িত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক), বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি), বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি ও শিল্পসংক্রান্ত উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠানেরই দায়দায়িত্ব রয়েছে বলে মনে করি।

উল্লিখিত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত হবে অবিলম্বে নিজেদের আয়ত্তাধীন সম্ভাবনাময় পণ্যগুলোর জিআই স্বীকৃতির জন্য ডিপিডিটির কাছে প্রস্তাব পেশ করা। মুক্তবাজার অর্থনীতির এ বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে এ ধরনের পণ্য বিপণন কৌশল শুধু গুরুত্বপূর্ণই নয়—এ জাতীয় কৌশল যত বৃদ্ধি করা যাবে, পণ্য বাজারকরণের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের পক্ষে এগিয়ে থাকা ততই সহজ হবে। এ-জাতীয় সনদ ও স্বীকৃতি বিভিন্ন পণ্যের সঙ্গে যুক্ত করা গেলে বর্তমানের সমসংখ্যক পণ্য থেকেই আরো অনেক বেশি পরিমাণ উপার্জন নিশ্চিত করা সম্ভব, যেমনটি লক্ষণীয় জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে। বর্তমানে যতসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী বিদেশে কাজ করে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন, তাদের যদি অধিকতর দক্ষ করে পাঠানো যেত, তাহলে এ প্রবাসীরাই বর্তমানের চেয়ে অন্তত চার গুণ অধিক আয় করতে পারতেন। একই কথা প্রযোজ্য জিআই পণ্যের ক্ষেত্রেও। জিআই স্বীকৃতি থাকলে এ সমপরিমাণ পণ্য থেকেই অন্তত দ্বিগুণ আয় করা সম্ভব। তাছাড়া এক্ষেত্রে শুধু জিআই স্বীকৃতি নয়—পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কসেরও বিশেষ গুরুত্ব ও ভূমিকা রয়েছে। এ বিষয়ে উদ্যোক্তা উন্নয়নসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্যোক্তাদের বিশেষভাবে উৎসাহিত করতে পারে বলে মনে করি। পণ্য রফতানিতে প্রণোদনা দান, কর ও শুল্ক অব্যাহতি, সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা ইত্যাদি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রবর্তন করা যেতে পারে যে ডিপিডিটি-সংক্রান্ত এসব স্বীকৃতি যাদের থাকবে, উল্লিখিত সুবিধাদি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তারা বিশেষ অগ্রাধিকার পাবেন। ভবিষ্যতে শিল্পনীতি প্রণয়ন বা সংশোধনের সময়ও বিষয়টি বিবেচনায় রাখা যেতে পারে। তবে এ বিষয়টিকে কোনোভাবেই বাধ্যতামূলক করা যাবে না। কারণ সেটি করা হলে উদ্যোক্তার উপকার করতে গিয়ে উল্টো তাকে হয়রানির মধ্যে ফেলে দেয়ার ঝুঁকি থাকবে।

জিআই স্বীকৃতি পাওয়া উল্লিখিত ২১টি পণ্য ছাড়া আর কী কী নতুন পণ্য জিআই স্বীকৃতি ও উল্লিখিত ধরনের সনদায়নের জন্য বিবেচনা করা যেতে পারে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জামালপুর ও যশোরের নকশিকাঁথা, ধামরাইয়ের তামা-কাঁসা ও পিতলজাত হস্তশিল্প, রাঙ্গামাটির আদিবাসী বস্ত্র, কক্সবাজারের ঝিনুকের মালা, রূপচাঁদা, কোরাল ও শুঁটকি, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, বগুড়ার দই, সাতক্ষীরার গলদা চিংড়ি ও ন্যাংড়া আম, অষ্টগ্রামের পনির, সিলেটের মণিপুরী বস্ত্র ও বেতজাত হস্তশিল্প, টেরাকোটা ও অন্যান্য নকশার মৃৎশিল্প, কিশোরগঞ্জের বালিশ মিষ্টি, দিনাজপুরের কাটারিভোগ ও নাজিরশাইল চাল, জলিরপাড়ের কৃত্রিম গহনা, আড়িয়ালবিল ও চলনবিলের কই মাছ, শেরপুরের বেগুন ইত্যাদি। প্রস্তাবিত এ তালিকার সঙ্গে নিঃসন্দেহে আরো অনেক সম্ভাবনাময় পণ্যই যোগ করার সুযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে বিসিক কর্তৃক প্রকাশিত ক্র্যাফটস ফ্রম বাংলাদেশ, কারুপল্লী, বাংলাদেশের মেলা, গহনা, পণ্য ডাইরেক্টরি প্রভৃতি গ্রন্থের সাহায্য নেয়া যেতে পারে। তদুপরি এক্ষেত্রে আড়ংয়ের পণ্যতালিকা এবং বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলাক্র্যাফটস প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রকাশনাকে সহায়ক গ্রন্থ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

সব মিলিয়ে বিষয়টি দাঁড়াচ্ছে এই যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সর্বসাম্প্রতিক কৌশল, হালনাগাদ তথ্য ও সর্বশেষ হালচাল সম্পর্কে আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ধারণা ও জ্ঞান, যথাযথ সম্মান রেখে বলি, প্রত্যাশা অনুযায়ী পর্যাপ্ত নয়। তারা শুধু পণ্যের সংখ্যা ও পরিমাণ বাড়িয়ে উপার্জন বাড়াতে চান। কিন্তু সেটি না বাড়িয়েও (বাড়াতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে না) নানা কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে, যে কৌশলের মধ্যে একটি এই জিআই স্বীকৃতি, বিদ্যমান পণ্য থেকেই যে উল্লিখিত উপার্জনকে আরো বহুগুণে বাড়িয়ে তোলা সম্ভব, সেটি তাদের চিন্তায় প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু ধারণা ও তথ্যে হালনাগাদ হওয়ার চেয়ে ক্ষমতা ও প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষায় এগিয়ে থাকার চেষ্টা যাদের কাছে অগ্রাধিকারযোগ্য করণীয়, তাদের ক্ষেত্রে এমনটি হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু তার পরও বলব, সরকারি প্রতিষ্ঠানের এ কর্মীরাই কিন্তু বাংলাদেশ সমাজের অপেক্ষাকৃত মেধাবী সদস্যগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ। ফলে তারা চাইলে ২০১৩ সালে জিআই-সংক্রান্ত আইন প্রণীত হওয়ার পর গত ১১ বছরে যেখানে মাত্র ২১টি পণ্যের জিআই স্বীকৃতি প্রদান করা হলো, আগামী ১১ মাসেই সেটিকে অন্তত ৫০টিতে উন্নীত করা সম্ভব। আর এটি শুধু কথার কথা নয়, বুঝে-শুনে দায়িত্ব নিয়ে বলা। আশা করব যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোও এ ধরনের একটি অঙ্গীকারকে দায়িত্বের সঙ্গে গ্রহণ করবে।

আবু তাহের খান: সাবেক পরিচালক

বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়

আরও